আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গরীব দেশের গরীব মানুষের কথাঃ আমাদের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং পরাশক্তির দাবার চাল (ভাষাগত কারণে ১৮+)

অনেকদিন আমার ভাইয়ের সাথে দাবা খেলিনা। দাবা খেলায় সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং যেটা মনে হয়, সেটা হচ্ছে, পরবর্তী কয়েক চালের জন্য পরিকল্পনা করা, প্রতিপক্ষ কি চাল দেবে, সেটা ভেবে পরবর্তী চাল ঠিক করে রাখা। আজকাল যেমন কম্পিউটার দাবা খেলে, তেমনি, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবক বা ভ্যারিয়েবল গুলোকে সিমুলেট করার মত প্রোগ্রাম আজকের দিনের পরাশক্তিরা ব্যবহার করে কিনা, জানতে ইচ্ছে করে। আলেকজান্ডারের রণ-কৌশল ছিল, যুদ্ধের ময়দানের High Ground বা সর্বোচ্চ স্থান দখল করা। ব্রিটিশরা অন্য সব ছল-চাতুরীর সাথে শক্তিশালী নৌবহরের উপর নির্ভর করত।

ব্রিটিশদের জাহাজে থাকত মিশনারী আর সৈনিক, আসত বণিকের ছদ্মবেশে। এখন আর ব্রিটিশরা বিশ্ব-প্রভু নয়। মার্কিন প্রভুর পদতলে এখন বিশ্ব। এখনো সবচেয়ে শক্তিশালী নৌবাহিনীর অধিকারীই বিশ্ব-ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক। এছাড়াও তাদের আছে শক্তিশালী থিংক ট্যাংক, যাদের কাজ হচ্ছে, বিশ্ব-ব্যাপী বিভিন্ন রকম ঘটনা-প্রবাহকে প্রভাবক হিসেবে খাটিয়ে মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করা।

তাদের এইসব পলিসি বাস্তবায়নে হয়ত কোলাটেরাল ড্যামেজ থাকে। কিন্তু, মানুষ মারা যাবে বলে কোনদিন কোন যুদ্ধ থেমে থাকেনি। ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের কারণে আমাদের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও, গ্রীন হাউজ এফেক্টের জন্য বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ডুবে যাবে, তবুও এতে এই এলাকার গুরুত্ব বিন্দুমাত্র কমছেনা। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে পরাশক্তির নজর নতুন কিছু নয়।

তবে, পলাশীর আম্রকাননের গুরুত্ব বুঝতে আমাদের যেমন সময় লেগেছিল, তেমনি কোথায় আমাদের আসল পরাজয় হয়ে গেছে, সেটাও আমরা এখনি বুঝতে পারবনা। তবু, বর্তমানের প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যতের আশংকা নিয়ে কিছু তুলনামূলক আলোচনা করা যায়। প্রথমেই মার্কিন প্রভুর সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এতে আমার সাথে বেশিরভাগই একমত হবেন, সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হচ্ছে চীন ও মুসলিম সমাজ। কম্যুনিজম বা ভারত আর প্রতিপক্ষ হিসেবে নেই।

নেহেরুর আত্ম-মর্যাদা সম্পন্ন ভারতের বদলে এখন আমরা দেখতে পাই সেই ভারতকে, যে মার্কিনীদের তোষণের জন্য নিজের পেছন দিক পেতে উপুড় হয়ে আছে। পাকিস্তানিদের কথা বলতে গেলে করুণা হয়, তাদের তুলনা হচ্ছে বেশ্যা পল্লীর সবচেয়ে সস্তা মাগী। কমিউনিস্ট চীন এখন আর মাওয়ের বৈষম্যনূলক সমাজের পথে নেই। তারা পুঁজিবাদী হিসেবেই মার্কিন সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের সাম্রাজ্যকে দাঁড় করাতে যাচ্ছে। আর মুসলমানরা প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাদের সীমান্তবিহীন জাতীয়তার কারণে।

আসলে, মুসলমানদের জীবনযাত্রাই পুঁজিবাদী সমাজের প্রতি বিরূপ। এটা ছাড়াও, তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে সবচেয়ে লোভনীয় তাদের নেতৃত্ব ও সমন্বয়হীনতার কারণে। আমার এই লেখাটি একটু বড় হয়ে যেতে পারে শত চেষ্টার পরেও। কারণ, এখানে যে কৌশলের কথা আলোচনার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটা কোন সহজ সাবজেক্ট নয়। এতে জড়িত আছে অনেক ভ্যারিয়েবল এবং দাবার অনেকগুলো চাল।

প্রথমেই বলেছি, বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এর দিকে নজর আছে ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ সবার। বাংলাদেশে হয়ত বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ না থাকতে পারে। কিন্তু, এটি অবস্থানগত ভাবেই খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এই বিষয়ে স্মরণযোগ্য, আফগানিস্তান তেল-গ্যাসে মোটামুটি সমৃদ্ধ হলেও তাদের আক্রমণের পেছনের কারণ ছিল মধ্য এশিয়ার তেল-গ্যাস।

তালেবানদের প্রতি মার্কিন প্রস্তাব ছিল, সোনার কার্পেট অথবা বোমার কার্পেট। আমাদের প্রতি নজর দেবার পেছনের কারণটা তাহলে দেখা যাক। ভারত যখন ট্রানজিট দাবী করে, তখন অনেকরকম আলোচনা শোনা যায়। এটা নাকি বাংলাদেশের জন্য অনেক লাভজনক হবে, বিনিময়ে পাওয়া যাবে হাজার কোটি ডলার, ভূটান ও নেপালে ট্রানজিট পাওয়া যাবে, এতে নাকি বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সিংগাপুরে পরিণত হবে। পরে দেখা গেল, তিস্তা চুক্তি না হলে ট্রানজিট হবে না।

আরো দেখা গেল, ট্রানজিট সইয়ের দরকার নেই, ১৯৭৪ সালের নৌ-প্রটৌকলের আওতায় এমনিতেই বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে দিয়েছে। এমনও বলা হচ্ছে, এখন পরীক্ষামূলক ভাবে ট্রানজিটের মালপত্র যাচ্ছে বা অল্প মাত্রায় যাচ্ছে বা বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য মালপত্র যাচ্ছে। এশিয়ান হাইওয়েতে আবার ট্রানজিট ফি কিসের। কিন্তু, বিজ্ঞজনেরা বুঝবেন, বঙ্গবন্ধুর পরীক্ষামূলক ভাবে ফারাক্কা চালুর অনুমতি দেয়ার মত আমরা আরেকবার মাড়া খেয়ে গেলাম (got f***ed)। ট্রানজিটের আলোচনাতে শুরু থেকেই বলে আসছিলাম, শুধু নেপাল-ভূটানে ট্রানজিট কেন, চীন-পাকিস্তান পর্যন্ত ট্রানজিট নয় কেন? রেল-ট্রানজিট দিয়ে ইরান বা আরো দূর পর্যন্ত নয় কেন? যাই হোক, আমাদের অযোগ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রীর শুধু দোষ দেবনা।

সরকার ও প্রশাষণে যোগ্য লোকের সংখ্যা প্রায় শুন্যের কোঠায় (tends to zero)। চামচা দিয়ে পা চাটানো যায়, কাজের কাজ করা যায় না। বলছিলাম, চীন পর্যন্ত ট্রানজিটের কথা। ট্রানজিট যদি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে (সেভেন সিস্টার্স) কে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেয়া হত, তবে তারা যেমনি লাভবান হত, তেমনি, চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশেরও এপথে বাণিজ্য সুবিধা হত। চীন অনেক চেষ্টা করেছিল।

Bangladesh Deep Sea Port লিখে গুগল করলে সার্চ-রেজাল্টের প্রথম পৃষ্ঠায় চীনের আগ্রহ এতটাই দেখা যাবে যে, প্রতিটি রেজাল্টে থাকবে চীনের কথা। মায়ানমার হয়ে সড়ক ও রেল যোগাযোগ থেকে শুরু করে গভীর সমুদ্র-বন্দর নির্মাণ করে দেয়ার মত অনেক চেষ্টাই চীন করেছিল। অবাক হতে হয়, শ্রীলংকায় চীনের গভীর সমুদ্র-বন্দর তৈরি শেষ। আর আমাদের সরকার এই প্রকল্পকে ধামাচাপা দিয়ে নতুন বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর ও সাহারাকে দিয়ে নতুন রাজধানী নির্মাণের মত আত্মঘাতী পরিকল্পনা নিয়ে আছে। সরকার এখনো পদ্মা সেতু নির্মাণে দিশা করতে পারেনি।

পিপিপি (পাব্লিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) এর কোন নীতিমালা করতে পারেনি। বাজেট বা কোন পরিকল্পনাতেও নেই পিপিপি দিয়ে কোন প্রজেক্ট অর্থায়নের কথা। আর পিপিপি দিয়ে গভীর সমুদ্রবন্দরতো আরো দূরের কথা। স্পষ্টতই, এখানে চীনের স্বার্থরক্ষা হচ্ছে না। ফলাফল, চিরকাল চীন থেকে থেকে সামরিক সাহায্য পেয়ে আসা এই বাংলাদেশকে এখন চীন যুদ্ধবিমান বিক্রি করতে অস্বীকার করেছে।

অবশ্য অন্য অস্ত্র নির্মাতারা ঘুষ নিয়ে প্রস্তুত আছে অস্ত্র বিক্রীর জন্য। আর, ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের ক্যাপাসিটি ফুল হয়ে যাওয়া নিয়ে কারো কোন মাথা-ব্যাথা নেই। তাহলে দেখা যাক, ভবিষ্যত সুপার পাউয়ার চীনের স্বার্থ-রক্ষা হচ্ছে না কার স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে। কারা বঙ্গোপসাগরে চীনের উপস্থিতি ঠেকাতে চায়, কারা বঙ্গোপসাগরে নিজের প্রভাব বাড়াতে চায়? এখানে বলে রাখা ভাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি কারো বন্ধু হয়, তবে তার শত্রুর দরকার হয় না। বাইবেলের সেই ডেভিলের মত, যে বন্ধু সেজে এসে বলেছিল, “আমি তোমাদের ভাল চাই।

স্রষ্টা চাননা, তোমরা এই সুখের জীবনে অনন্তকাল থাকো। স্বর্গে অনন্ত জীবন পেতে হলে এই গাছের ফল খাও”। কিছুদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী রডহ্যাম ক্লিনটন বাংলাদেশে এসে ঘুরে গেলেন। এখানে উল্লেখ্য, উনার এই ঘুরে যাওয়া মানে আমাদের শোপিস মন্ত্রীদের মত ঘোরাঘুরি নয়। উনি এখানের কাজের গুরুত্বের জন্যই এখানে এসেছিলেন।

উনার সফরের সময় হউয়া চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী ওয়েবসাইটে তথ্য পাওয়া গেলেও আমাদের সরকার এই ব্যাপারে খুবই গোপনীয়তা রক্ষার চেষ্টা করে। ফলাফল হচ্ছে, বাংলাদেশে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে কোন জটিলতা থাকবেনা, তারা অস্ত্র বিনা শুল্কে আনতে পারবে, বাংলাদেশের সাথে তথ্য আদান-প্রদান হবে, বাংলাদেশ সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্টনার। বিজ্ঞজনেরা বুঝবেন, ঘটনা কি হয়েছে। এর আগেই গভীর সমুদ্রে কনোকো-ফিলিপসকে গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়ে গেছে। পরে ওদের কাছ থেকে সাঙ্গুর মত ডলারে গ্যাস কিনতে গেলে ডলারের যে সংকট সৃষ্টি হবে, সে ব্যাপারে কোন চিন্তা-ভাবনা নেই।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেবার মত আরো কিছু থাকলে বাংলাদেশ সেটাও দিত শুধু একটু বন্ধুত্বের জন্য। অবশ্য, শোনা যায়, এখানকার অনেকেই নাকি আবার উনাদের বিশেষ বন্ধু। সর্বশেষ দাংগার বেশ কয়েক বছর পর হঠাত করেই আবার শুরু হল মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নিধন। এখানে বলে রাখা ভাল, মিয়ানমারে এখন মার্কিনীদের রমরমা অবস্থা। কোকা-কোলা আসছে ব্যবসা করতে।

নির্বাচন হল, অং সান সুকি ইউরোপ ভ্রমণে বের হল, যেটা গত ২০ বছরের সুকি করেনি। এমনকি অনুমতি থাকার পরেও বিদেশে যায়নি মৃত্যু পথযাত্রী স্বামীকে দেখতে, যদি সামরিক জান্তা আবার ঢুকতে না দেয়, এই ভয়ে। (এমনকি ২০১০ সালের আগে বহু বছর সন্তানদেরকেও দেখা হয়নি। ) এখন, ২০০৯ সাল থেকে মার্কিন কুটনৈতিক মিশনের ফলে মায়ানমার নির্বাচন ও সুকির মুক্তির দিকে এগিয়ে আসে। আর, রোহিঙ্গা নিধনটা শুরুও হল সুকি বিদেশ থাকা অবস্থায়, মানে আরকি, উনি খুব ব্যস্ত।

মাঝে মাঝে আবার অসুস্থ দেখা যায়। সোজা কথা, সুকির এখানে কিছু করার ছিলনা (মাফিয়া মুভির মত কাহিনী)। রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারের অমানবিক আচরণ বলে শেষ করা যাবেনা। ওদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নেই। ওরা অনুমতি ছাড়া নিজেদের গ্রামের বাইরে যেতে পারে না, বিয়ে করতে পারেনা, সন্তান নিতে পারেনা।

এগুলোর জন্য গরীব মানুষগুলোকে আবার ঘুষ দিতে হয় (যদিও তারা সরকারী চাকরিতে নিষিদ্ধ)। আবার অনুমতি ছাড়া গ্রামের বাইরে গেলে আবার ফিরে আসলে প্রবেশ করতে পারবেনা, জেল অবশ্যম্ভাবী। এই অবস্থায়, তাদের পক্ষে কথা বলার মত লোকেরো অভাব। পালিয়ে অনেকে বউ-বাচ্চা নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে চলে আসছেন। আমাদের অযোগ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে এই বিপন্ন মানুষগুলোর বিরুদ্ধে বিষোদগার করলেন।

এই রকম দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাউয়া জাতি সাধারণত অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া ছাড়া আর কোন পথ পায়না। হয়ত আমাদের জামাতে ইসলামী (আওয়ামীলীগ এর লোকজনের মতানুসারে) ও ইসলামী দলগুলো এই রোহিঙ্গা মুসলমানদের অর্থ সাহায্য দেয় বা দেবে। হয়ত সৌদি আরব থেকে তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে আসবে। হয়ত রোহিঙ্গারা অস্ত্র কেনার মত পর্যাপ্ত অর্থ সাহায্য পাবে। রাষ্ট্রবিহীন একটি জাতি নিজের বাঁচার তাগিদেই লড়াই চালিয়ে যাবে।

তাদের কেউ কেউ চরমপন্থা অবলম্বন করবে। আমরা জানি, দূর্বলের শেষ হাতিয়ার হচ্ছে সন্ত্রাস। তারা ফিলিস্তিনি ভাইদের মত চিরকালীন এক সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে। মিয়ানমারকে পরাজিত করা হয়ত তাদের পক্ষে কোনদিন সম্ভব হবে না। তবু, তারা লড়াই চালিয়ে যাবে।

বাংলাদেশের কোন সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গেলে হয়ত সেই নেতার বিরুদ্ধে আঘাতো হানতে পারে (যেমনটি হয়েছিল রাজীব গান্ধীর বেলায়)। চিরকালীন একটা সমস্যা হিসেবে থেকে যাবে এই এলাকা। এখন, হিলারীর কথা বলতে গিয়ে এখানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এত কথা বললাম কেন, তা একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। আমেরিকার সবচেয়ে বড় মিত্রদের একজন হচ্ছে সৌদি আরব। ইসলামী চরম্পন্থী দলগুলো বুঝতেও পারবেনা, মার্কিন এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তারা সৌদি অর্থসাহায্যে সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলবে।

এই বাহিনী আল-কায়েদা বা আফগান মুজাহিতদের মত মার্কিন অর্থ ও অস্ত্র সাহায্যে মার্কিনীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি দাবার ঘুটিতে পরিণত হবে। এমনিতেও, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ সুখকর নয়। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন, রাজনৈতিক গুম-খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, শ্রমিক অসন্তোষ ইত্যাদি বাংলাদেশে মার্কিন সেনা ঘাঁটি করার জন্য যথেষ্ট না হলে রোহিঙ্গাদের রক্ষার জন্য বোমা হামলা করতে পারে। নয়ত, রোহিঙ্গাদের উপর ড্রোন হামলা করতে পারে। যাই করুক, ৭ম নৌ বহরকে এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য আমরাই ডেকে আনব।

আমরা না ডাকলেও আমাদের মধ্য থেকে ডাকার লোকের অভাব হবেনা। আমাদের মাঝ থেকে অনেক বড় বড় দালালের জন্ম হয়েছিল, ইতিহাসে দেখা যায়। এই অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনীর উপস্থিতি তাদের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। মাঝে মাঝে ড্রোন হামলা করা হবে সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে। রেজিম চেঞ্জের দরকার পড়লে তাও করতে পারবে অনায়াসে।

কনোকো-ফিলিপসের তেল-গ্যাস (আমাদের নয়) পাহারা দিবে, ফুলবাড়িতে উন্মুক্ত কয়লা খনি করায় এলাকাবাসী বাধা দিলে বোমা মেরে সন্ত্রাসের গোড়া উপড়ে ফেলা হবে। দেশে গণতন্রের বিকাশে মার্কিন দুতাবাস কাজ করে যাবে, “জাগো” বা এ ধরণের প্রতিষ্ঠান গুলোকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে এবং তারাই ভবিষ্যতে মার্কিন স্বার্থে কাজ করতে পারবে। পাকিস্তানে যেমন আফগান শরণার্থী আছে, পাকিস্তানের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয় জায়গাতেই ড্রোন হামলা চালানো হয়, তেমনি হয়ত আমাদের অবস্থাও পাকিস্তানের মত হয়ে যাবে। রোহিঙ্গারাতো আবার দেখতেও বাঙ্গালিদের নত, কথাও বলে বাংলায়। হয়ত, অনেক বাংগালি বন্দী হিসেবে নির্যাতিত হবে।

এই অঞ্চলে চীনের আধিপত্য খর্ব হবে। ভবিষ্যতে হয়ত তিব্বতে, দক্ষিণ চীনে নজরদারী করবে মার্কিন বিমান বঙ্গোপসাগর থেকে উড়ে গিয়ে। মিয়ানমারেরও প্রাকৃতিক সম্পদের ভাল রিজার্ভ আছে। আমরা পরাশক্তির পুতুল হয়ে সুখে-শান্তিতে(?) বসবাস করতে থাকব। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.