আমি যখন ছোট, তখন সেই ১৯৮৯ সালের ৯ই এপ্রিল, শহীদ বুদ্ধিজীবি নিজামুদ্দিন আহমেদের কন্যা শারমিন রিমা কে হত্যা করে তার স্বামী ধনী শিল্পপতি মুনির হোসেন। "এরশাদ কি মুনিরের বিচার করবে" জাতীয় কথা-বার্তা বড়দের মুখে প্রায়ই শুনে আর পত্রিকায় রিমার সুন্দর ছবি দেখে এই ব্যাপারে একটু খোজ-খবর নিয়েছিলাম। যা বুঝেছিলাম, ফুটফুটে বউ রেখে ডাইনীর পাল্লায় পড়লে জঘন্য অপরাধ করা হবে এবং ফলাফল হচ্ছে চুড়ান্ত পতন। ১৯৯০ সালের ২১ মে বিচার শেষে মুনির ও খুকুর ফাসির হুকুম হয়। বুঝেছিলাম, এবং মনে মনে ঠিক করেছিলাম, এমন অপরাধ কোনদিন করব না।
কারণ, কঠিন শাস্তিতে মাফ নাই। এখন ভাবি, তখনতো বিচার অনেক তাড়াতাড়িই হয়েছে। ফাসিও হয়েছে। দেশের অল্প কয়েকটা শিল্পপতির একজন হয়েও অপরাধ করে পার পেলনা। আজকালকার বাচ্চারা কি শেখে শুধু তারাই জানে।
স্বাধীনতার পর বংগবন্ধু যখন দুর্ভিক্ষ (= ভিক্ষার অভাব) আর ... নিয়ে দিশেহারা, তখন, তিনিও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন, ত্যাগ করেছিলেন পাকিস্তানী যুদ্ধপরাধী জেনারেলদের বিচারের দাবী। আজ অনেকেই অনেক কথা বলে, কিন্তু, বিদেশীদের স্বীকৃতি আর ভিক্ষার জন্য উনি যা করেছিলেন, তা নিতান্ত বাধ্য হয়েই করেছিলেন, পারেননি বলেই। এই কথায় পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই অনেক কিছু বলবেন। কিন্তু, আপনারা যারা শেয়ার বাজারে ধরা খেয়েছেন, তারা কি এখন ফটকাবাজদের বিচার চান? আপনারা যদি ভাবতে পারেন, ফটকাবাজদের বিচার করতে গেলে শেয়ারের দাম আরো কমে যাবে, তবে, আপনারা নিজেরাই নিজেদের বিচার করুন।
আমার বন্ধুরা যারা কিনা উচ্চশিক্ষিত, সুদর্শন ও ধনী, তাদের চোখে আমি খুব পরিচিত একরকম চাহনী দেখি শেয়ার বাজারের তদন্ত প্রতিবেদনের কথা উঠলেই।
"কেন শুধু শুধু এই তদন্ত প্রতিবেদন? যেই টাকা গেছে, তা আর ফিরে আসবেনা। উলটা, চাপ দিলে ওরা আরো তাদের সব টাকা উঠাইয়া নিবে। তখন দাম আরো কমে যাবে। ওদের বিচার তো আর করতে পারবে না। উল্টা তাদের চাপ দিয়া যদি আবার ওদের টাকাগুলা যদি মার্কেটে ঢুকানো যায়..." এসময় ওদের এই চাহনীটা আমরা প্রায়ই দেখি।
আমাদের খুব পরিচিত। দামী খাবারের ডিসপ্লের সামনে কাচের অপর পারে দাঁড়ানো কিশোর টোকাইয়ের চোখে এই চাহনী দেখি। আমার সুদর্শন বন্ধুর চোখে এই অসহায় চাহনী মানায় না। তাদের টাকাগুলো কোথায়, তারা তা জানে, কিন্তু তা তাদের ধরা-ছোয়ার বাইরে। দুনিয়ার অন্যায়ের কাছে তারা অসহায়।
যেমনটি কিনা কিশোর টোকাইটা দুনিয়ার অন্যায়ের জন্য ক্ষুধার্ত থেকেও একটু খাবার পায় না, পরিষ্কার গ্লাসে পানি পায় না, পায় না কারো কাছ থেকে একটু কোমল ব্যবহার।
আজকাল আর কারো বিচার হতে দেখি না। তবে মাঝখান থেকে অর্ধেক রুটি চুরির জন্য ২টি পিচ্চি মেয়েকে পাবলিকের মার খেতে দেখলে মনের ভেতর আর কোন অনুভুতি বাকি থাকে না। বেশি আঘাত কোথাও লাগলে যেমন শরীরের ওই অংগ অবশ হয়ে যায়, তেমনি মনে হয় মনটাও অবশ হয়ে গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।