আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেফাজত উত্থানের নেপথ্যে...

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে বসতে ভা্ল লাগে....। মাত্র কয়েক বছর আগে যাত্রা শুরু করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে। তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে দেশের মূলধারার রাজনীতিকে।

দেশের অধিকাংশ সংগঠনের প্রধান কার্যালয় রাজধানী ঢাকায় থাকলেও হেফাজত সেগুলোর চেয়ে ভিন্ন। এর প্রধান কার্যালয় বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। যেখানে কয়েক শ’ মাদ্রাসা রয়েছে। আর এই মাদ্রাসাগুলোতে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশগুলোতেই শিক্ষার্থীদের কেবল ধর্র্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়।

মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় আরবি ভাষাকে। হেফাজত নেতাকর্মীদের উত্থান এই মাদ্রাসাগুলো থেকেই। আর তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি খুবই কঠোর। হেফাজতে ইসলামের প্রধান নেতা আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তার বয়স এখন ৯৩ বছর।

তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডেরও সভাপতি। এই বোর্ডের অধীনেই পরিচালিত হয় দেশের সব কওমি মাদ্রাসা। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জন্ম চট্টগ্রামের বাঙ্গুনিয়ায়। তিনি বাল্যকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ দুটি মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা নেন। এরপর তিনি ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে নেন উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা।

সেখান থেকে দেশে ফিরে তিনি বাল্যকালের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। আল্লামা শফী বিভিন্ন জনসমাবেশে তার বক্তব্যে বলেন, ‘হেফাজত কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশুদ্ধভাবে ধর্ম প্রচার করা। গত ৬ এপ্রিল ঢাকায় সংগঠনটির একটি সমাবেশ হয়।

এতে প্রায় ২ লাখ মানুষের সমাগম হয়। আল্লামা শফী এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি। সংগঠনের একজন নেতা তার পক্ষে বিবৃতি পাঠ করে শোনান। এরপর ৫ মে ওই একস্থানে আরো একটি সমাবেশ করে হেফাজত।

কিন্তু এই সমাবেশে যোগ দেননি সংগঠনটির প্রধান নেতা আল্লামা শফী। হেফাজতের দাবি আল্লামা শফীর উদ্দেশ্য পরিষ্কার। তিনি চান বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নিরপেক্ষতা বিলুপ্ত করা হোক। দেশ পুরোপুরি ইসলামি আইন মোতাবেক পরিচালিত হোক। অথচ ধর্মীয় নিরপেক্ষতার বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের ঘোষিত নীতি এবং দেশের অধিকাংশ মানুষ এর পক্ষে।

‘নারী উন্নয়ন খসড়া নীতিমালা-২০০৯’ এ উত্তরাধিকার সূত্রে নারীদের সমান অধিকার দেওয়া হলে হেফাজতের উত্থান ঘটে। সংগঠনটি এই নীতিমালার বিরোধিতা করে। পরবর্তীতে হেফাজতসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের তীব্র প্রতিবাদের মুখে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ওই নীতিমালায় আংশিক পরিবর্তন এনে অর্জিত সম্পত্তিতে নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে নীতিমালাটি পাশ করে। সম্প্রতি হেফাজতের ইসলাম ১৩ দফা দাবি বা¯ত্মবায়নে আন্দোলন শুরু করে। এসব দাবির অন্যতম হচ্ছে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা নিষিদ্ধ করা।

হেফাজতের এ দাবির ব্যাপারে ঢাকার সাংবাদিক কাজী শাহরিন হক বলেন, ‘নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাসহ সংগঠনটির দাবিগুলো বা¯ত্মবায়ন করা হলে নারী উন্নয়ন ব্যাহত হবে। তারা আবারো পেছনে পড়ে যাবে। ’ কাজী শাহরিন হকের বেশ কয়েকজন নারী সহকর্মীর ওপর গত ৬ এপ্রিলের সমাবেশে হামলাও চালায় হেফাজতকর্মীরা। হেফাজতের এসব নারী বিদ্বেষী দাবির নিন্দা জানিয়েছে বেশ কয়েকটি নারীবাদী সংগঠন। এর প্রতিবাদে আগামী ৯ মে তারা সমাবেশ কর্মসূচি পালনেরও পরিকল্পনা করছে।

হেফাজতকে গণতন্ত্র বিরোধী সংগঠন অ্যাখ্যা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘সংগঠনটি ধর্মের নামে গণতন্ত্র বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা তাদের নিজস্ব মতামত অন্যদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে সম্প্রতি সোচ্চার হয়ে উঠে দেশের তরুণ ব্লগাররা। একাত্তরে মানবতাবিরোধী এসব অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শা¯িত্ম অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড ও ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ গঠনের দাবিতে তারা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। এসব দাবি নিয়ে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ রাজধানী শাহবাগ স্কয়ারে জড়ো হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলে।

অবশ্য এ সংক্রাšত্ম বিচারের জন্য গত ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বাংলাদেশ সরকার। ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তদের বিচারও চলছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শা¯িত্মর দাবিতে জেগে উঠা ওইসব তরুণদের না¯িত্মক অ্যাখ্যা দেয় দেশের প্রধান ধর্ম ভিত্তিক দল জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই সংগঠনটি নড়েচড়ে বসে এবং তা বানচালে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করে। আšত্মর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের একটি রায়ে এই জামায়াত সম্পর্কে বলা হয়, ‘ শুধু নেতারা নয়, সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীও একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধদের সঙ্গে জড়িত ছিল।

’ জামায়াতের চালিকাশক্তি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী পেয়েছে মাত্র দুটি আসন। সংগঠনটি বর্তমানে নিষিদ্ধ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এমতাবস্থায় জামায়াতের কিছু নেতা হেফাজতের ছদ্মবেশে কাজ করে যাচ্ছে। কারণ, এই মুহূর্তে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালসহ সংগঠনটির উদ্দেশ্য পূরণে জামায়াতের বাইরে তাদের আরেকটি দলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। শাহবাগ আন্দোলনের একজন মুখপাত্র জানান, ‘জামায়াত হচ্ছে একটি আত্মরক্ষামূলক সংগঠন।

এর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকি¯ত্মান সমর্থক ছিলেন। এই অভিযোগে তারা এখন বিচারের মুখোমুখী। এই যখন অবস্থা, তখন তাদের নেতাদের বাঁচাতে আরেকটি ইসলামী সংগঠনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আর সে উদ্দেশ্যেই হেফাজতের উত্থান। ’ হেফাজতকে মূলত জামায়াত-ই অর্থায়ন করছে বলেও অভিযোগ করেন এই শাহবাগ আন্দোলনকারী।

তিনি বলেন, ‘জামায়াত ও শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতেই হেফাজতে ইসলাম এ ধরনের অবা¯ত্মব দাবি উত্থাপন করেছে। ’ এরইমধ্যে হেফাজতকে জামায়াতের প্রতিচ্ছবি অ্যাখ্যা দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘জামায়াতের ছত্রছায়ায় চলছে হেফাজতে ইসলাম। এটি একটি চরমপন্থী, গণতন্ত্র বিরোধী ও নারী বিদ্বেষী সংগঠন। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের সব অর্জনেরও বিরোধী এই হেফাজতে ইসলাম।

’ আল্লামা শফী যেসব ইসলামপন্থীদের নিয়ে দলটি গঠন করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা জামায়াতের নিয়মনীতির অনুসারী ছিল না। তবে ভারতের দেওবন্দের বেশির ভাগ মাদ্রাসা ১৯৪৭ এ ভারত-পাকি¯ত্মান বিভক্তির ঘোর বিরোধী ছিল। তারা অভিন্ন ভারতের পক্ষে ছিল। হিসেবে দেখা যায়- ঐতিহাসিকভাবে জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতের কোনো ভ্রাতৃত্বের বন্ধন নেই। ’ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া দুজনই আল্লামা শফীকে ব্যবহারের সুযোগ নিচ্ছেন এবং হেফাজত সৃষ্টি করছেন।

টার্গেটে ব্লগাররা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ এপ্রিল হেফাজতের সমাবেশের আগে দলটির কয়েকজন নেতাকে তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেন। এসময় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) হেফাজত নেতাদের বলেন, ‘সরকার তাদের ১৩ দফা দাবির মধ্যে কয়েকটি ইতোমধ্যেই বিবেচনায় নিয়েছে। ’ এরইমধ্যে হেফাজত যাদেরকে না¯িত্মক বলে দাবি করছে তাদের মধ্যে ৪ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এছাড়া ইসলাম বিরোধী মšত্মব্য মনিটরিংয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি কমিটিও গঠন করেছে। বলতে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম নিরপেক্ষবাদী সংগঠগুলো থেকে একটু আড়ালে থাকছেন।

এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট হেফাজতে ইসলামের ৫ মে’র ঢাকা অবরোধকে সমর্থন দিয়েছে। এই অবরোধ চলাকালে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সহিংসতায় ২ পুলিশ ও একজন বিজিবি সদস্যসহ বেশ কয়েকজনের প্রাণহানিও ঘটে। বিরোধী জোট ১৮ দলের অন্যতম শরিক ইসলামী ঐক্যজোট। এই সংগঠনের প্রধান হচ্ছেন আল্লামা শফীর জামাতা।

আল্লামা শফী ইসলামী ঐক্যজোটের পুরান ঢাকার কার্যালয়টি হেফাজতের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেন। গত ২৯ এপ্রিল আল্লামা শফী বগুড়ার সমাবেশে তার বক্তৃতায় বলেন, ‘কেউ ক্ষমতায় থাকতে হলে অথবা ক্ষমতায় আসতে হলে তাকে অবশ্যই হেফাজতের ১৩ দফা দাবি পূরণ করতে হবে। ’ এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সুস্পষ্টভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আপনাকে অবশ্যই না¯িত্মকদের সঙ্গ ছাড়তে হবে। ’ সূত্র: আল-জাজিরা এবং Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.