সিমপ্লেসট ইন টেস্ট বাট স্যাটিসফাইড অনলি উইথ দা বেস্ট পহেলা বৈশাখের পরদিন আমাদের স্কুলে একটা ব্যাপার হত। ওই দিন ক্লাস ৭ থেকে ক্লাস ১০ পর্যন্ত সবাইকে বাধ্যতামূলক শাড়ি পরতে হত। (কিছু জেদি বালিকা পড়ত না অবশ্য)।
সেই শাড়ি পড়ার থেকে না পড়া ভাল। শাড়ি হতে হবে বিশুদ্ধ সুতি।
কেউ যদি ভুল করে( অথবা ইচ্ছা করেই) অন্য ফেব্রিক এর শাড়ি পড়ত তাহলে ভবিষ্যৎ একটা বছর তার জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলতেন আপারা। শাড়ির কাপড়কে পলিথিন, ট্রান্সপারেন্ট ইত্যাদি বলে অভিহিত করা হত। এবং পুরো এক বছর সেই পলিথিন পরিহিত রমণীকে আমরা ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখতাম।
শাড়ির সাথে চুলে বাঁধতে হবে দুই বেণি। বেনিতে তেলের পরিমান কম থাকলে ঘোরতর বিপদ।
আমাদের ক্লাসে এক বিশাল কেশ বিশিষ্ট বালিকা ছিল। ওই দিন তার প্রধান কর্মই ছিল চুল বাধা এবং খোলা। বাসা থেকে সে ২ বেনি করেই আসত। যেখানে নিয়মের কড়াকড়ি সেখানেই নিয়ম ভাঙ্গার উৎসাহ বেশি থাকে। কাজের চিরুনি এবং রাবার ব্যান্ড আমাদের হাতেই থাকত।
ক্লাসের দুর্ধর্ষ ম্যাডামের ক্লাস শেষ হতেই আমাদের ২ বেনি ১ বেনি হয়ে যেত। সেই কেশবতি বালিকা তখন তার ২ বেনি খুলে যেই মাত্র তার ১ বেনির কাজ শেষ করেছে তখনি শোনা যেত পিটি আপা ( আকবরি আপা) অথবা আবেদা বা রোকেয়া আপার কেউ আসছেন। শেষের ২ জন আবার চড় মারতে সিধ্যহস্ত আর প্রথম জনকে তো কোন গাছের এক বাকা ডাল ছাড়া দেখেছি কিনা মনেই পড়ছে না। । কাজেই পত্রপাঠ কেশবতি আবার ২ বেনি করতে শুরু করত।
বেনির শেষ পর্যায়ে দেখা যেত ম্যডাম চলে গেছে এবং আমরা আবার ১ বেনি করে ফেলেছি। সেই হতাস বালিকা তখন পুনরায় ১ বেনি করতে শুরু করত। বলা বাহুল্য এই ৩ বিপদজনক ম্যাডামের মধ্যে আকবরি আপা আমার এক প্রকার আত্মীয়, এবং রোকেয়া আপা কোন এক অজানা কারনে আমাকে বিশেষ পছন্দ করায় নিয়ম ভাঙ্গার খুটির জোর আমার বেশ ভালই ছিল। কিন্তু কিছু করতে গেলে খুটির জোরের বাইরে যেটা লাগে তা হল সাহস। ওই বস্তু আমার কিঞ্চিত কম ছিল।
অতএব স্কুল কলেজে বাধ্য বালিকা হিসেবে আমার বিশেষ নাম ছিল বলা যায় ।
সেই তৈলাক্ত এক বেনির ডগায় বাঁধতে হত সাদা ফিতা। পায়ে পিটি শু এবং মোজা পরতে হত বাধ্যতামুলক ভাবে। হাতে চুড়ি পরা নিশিদ্ধ। এবং কানে রিং ব্যাতিত দুল পরা যাবে না।
ফলে সেই দিন আমাদের আসলে ইউনিফরম এর জায়গায় শাড়িটা পরতে হত। বাকি সব কিছুই আগের মত। এমন কি কাজল দিলেও ওই কাজল বাথরুমে পাঠিয়ে ধুইয়ে আনা হত।
সাদা শাড়ি লাল পাড় পরে ফিতা সহ ২ বেনি ঝুলিয়ে ব্লু কেডস পরে আমাদের যখন বিকাল বেলায় অডিটোরিয়ামে নেয়া হত তখন আমাদের দেখতে লাগত কলকাতার কিছু বাংলা মিডিয়ামের ছাত্রিদের মত। তাদের লাল পাড় সাদা শাড়ি স্কুল উইনিফরম এবং তারাও ২ ঝুটি/ বেনি করে ফিতা বেধে পিটি শু পরে স্কুলে যায়।
সেখানে খাওয়ানো হত খই, নাড়ু আরও কিছু খাবার যেগুলর নাম আমি এখনো জানি না। বাংলাদেশের গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খাবার সেগুলো।
৪ বছর হয়ে গেছে। রোকেয়া আপা রিটায়ার করেছেন, পিটি আপাও হয়ত আগের মত রাগ করেন না। আমি জানিনা এখনো ভিকারুন্নিসায় এমন কড়াকড়ি আছে কিনা।
মাঝে মাঝে কয়েকজন ছাত্রিকে চোখে পড়ে। তখনকার আমাদের সাথে তাদের মিল খুব কম। তাদের চুল রিবন্ডিং করা যেটা আমাদের সময় শাস্তি যোগ্য অপরাধের সামিল ছিল। তারা ভ্রু প্লাক করে, তাদের চুলে ব্যাংস কাটা। এখন হয়ত পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে তাদের তেল দিয়ে ২ বেনি করতে হয় না।
তবু এই যে নিয়মের বাড়াবাড়ি ছিল এতেই সৃতিগুলি অনেক বেশী আনন্দের স্মৃতি হয়ে গেছে। ওরা কোনোদিনও বুঝবে না তেলতেলে চুল নিয়ে ফিতা বেধে সৌন্দর্য উদাসিন হয়ে শুধুই নিরমল আনন্দে খই আর নাড়ুর সাথে বাউল গান শুনতে কতোটা ভাল লাগে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।