ফারিয়াজ দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের দ্বিমুখী আচরণ। তারা একদিকে শেয়ার ক্রয় সংক্রান্ত এসইসির নির্দেশনা এবং এসইসির ২সিসি ধারার বিরুদ্ধে রিট করছেন অন্যদিকে পদ হারানোর ভয়ে শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা দিচ্ছেন। ফলে সামাগ্রিকভাবে এটি প্রমানিত হয়েছে যে, উদ্যোক্তা পরিচালকরা এসইসির নির্দেশনা মানতে নারাজ কিন্তু ভয়ও আছে তাদের মনে, যদি পদ হারাতে হয়! যে কারণে তারা একের পর এক রিট করে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে কিংবা এসইসিকে এক প্রকার জিম্মি করে অনৈতিকভাবে পদ ধরে রাখতে চান।
এ বিষয়ে ডিএসইর আইনজীবী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম আজ আদালতকে বলেন, একদিকে পরিচালকরা রিট করবেন অন্যেদিকে শেয়ার ক্রয়ের অর্ডার দিবেন এটা হতে পারে না। রিটের মাধ্যমে পরিচালকরা পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির পায়তারা করে বলে তিনি আদালতকে অবহিত করেন।
অপরদিকে পরিচালকদের সার্বিক বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা যায়, শেয়ার ক্রয় সংক্রান্ত এসইসির নির্দেশনার বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে এনসিসি ব্যাংকের পরিচালক হতে ইচ্ছুক জনৈক আব্দুল মোমিন। তিনি গত ৮ এপ্রিল এসইসির নির্দেশনার বিরুদ্ধে রিট করেন। ওই রিটে ৪ সপ্তাহের রুল জারি করা হয়।
রিটের প্রস্তুতি নিয়েও ২০ লাখ শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় উঠে আসেন সিটি ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক আজিজ আল মাহমুদ।
তিনি গত ৮ মে শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা দেন। ওই সময় থেকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের পরিকল্পিত অস্থিরতা সৃষ্টির পায়তারার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।
এর আগে গত ৭ মে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক আবুল বাশার এসইসির নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। আদালত ওই রিটে ২ সপ্তাহের রুল জারি করে। শুনানি শেষে গত ২১ মে আদালত সব রিট খারিজ করে দেয়া হয়।
শেয়ার ক্রয় সংক্রান্ত নির্দেশনার রায়ের পরদিনই ৫ প্রতিষ্ঠানের ২৪ জন পরিচালক এসইসির ২সিসি ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করেন। এর মধ্যে এনসিসি ব্যাংকের পরিচালক মাহবুবুল আলম তারাসহ ৯ পরিচালক ছিলেন।
এর মধ্যে পরিচালকদের আরো একটি বিষয় হাস্যরসের সৃষ্টি করে। তা হলো, গত ২২ মে এনসিসি ব্যাংকের পরিচালক নূরুল ইসলাম শেয়ার ক্রয়ের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদনে সাড়া না দেয়ায় এসইসির বিরুদ্ধে রিট করেন। তিনি গত ১৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে শেয়ার ক্রয়ের সময়সীমা ৬ মাসের পরিবর্তে ৬ বছর নির্ধারণের আবেদন জানান।
ঊর্ধ্বমুখী বাজারে উদ্যোক্তা পরিচালকরা হাতে থাকা নিজ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করে ব্যাপক মুনাফা করছেন বলে নাজুক পরিস্থিতিতে তাদের বাজারকে সাপোর্ট দিতে হবে। এই যুক্তিতে এসইসি উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিজ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয়ের নির্দেশনা দিলেও পরিচালকরা এসসির নির্দেশনা মানতে নারাজ। তাই একের এক রিট করে তারা বাজারের গতিরোধ করতে চান।
সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হচ্ছে এসইসির বিরুদ্ধে রিট করার পরও পদ হারানোর ভয়ে এনসিসি ব্যাংকের পরিচালকরা একের পর এক শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা দিতে থাকেন।
এর মধ্যে ২৪ মে নূরুল ইসলাম এবং তোফাজ্জল হোসাইন প্রত্যেকে নিজ প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ করে শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা দেন।
এরপর গত ৩ জুন এনসিসি ব্যাংকের পরিচালক ফখরুল আনোয়ার ১ লাখ শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা দেন। এরপর ৪ জুন পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭৫০টি শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা দেন। একই ধারাবাহিকতায় গত ৫ জুন পরিচালক নূরুল ইসলাম ১ লাখ শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা দেন। যা আদালতকে ডিএসইর আইনজীবি আমির উল ইসলাম অবহিত করেন।
উদ্যোক্তাদের এমন দ্বিমুখী আচরণে যে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে উঠেছে তা হলো বাজারে পরিকল্পিত অস্থিরতা সৃষ্টি করতেই তারা একের পর এক রিট করেন।
বিষয়টি রাষ্ট্র্র পক্ষের আইনজীবীগণ উপলব্ধি করায় পরিচালকদের দ্বিমুখী আচরণের বিষয়টি আদালতকে অবহিত করবেন বলে জানা গেছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।