মো. মামুনুর রশীদ
বাংলাদেশে সংসদীয় শাসন পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থার ইতিহাসে বোধকরি রাষ্ট্রপতি পদটি কখনোই এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ৮-৯ মাস বাকি। বর্ষিয়ান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের প্রয়াণের মধ্য দিয়ে দেশের রাষ্ট্রপতির পদ এখন শূণ্য। ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব রাষ্ট্রপতি পদ শূণ্য উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন বরাবর। সেই মোতাবেক নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে।
তবে সেটা সংবিধানের ১১৯ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী। সংবিধানের ৫৪ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বর্তমানে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে আছেন মাননীয় স্পিকার অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন। ২০ মার্চ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেশের ১৯ তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। সব ভেদাভেদ ভুলে দলমত নির্বিশেষে জিল্লুর রহমানের জানাজায় শরিক হন সর্বস্তরের মানুষ।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন সরকার ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে সংকটাপন্ন অবস্থায় পতিত হয়েছে। তখনই রাষ্ট্রপতির মৃত্যু রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের সূচনা করেছে। সেই মেরুকরণে আমরা উভয় দলকে শ্রদ্ধায় অবনত হতে দেখেছি। বিরোধী দল সরকার ঘোষিত রাষ্ট্রীয় শোকের প্রতি সম্পূর্ণ একাত্মতা ঘোষণা করে সকল দলীয় কার্যক্রম স্থগিত করে। বিরোধীদলীয় নেতা রাষ্ট্রপতিকে সম্মান জানাতে ছুটে যান বঙ্গভবনে।
রাষ্ট্রপতির পরিবারের সাথে দেখা করে সমবেদনা জানান। বিরোধী দলীয় নেতার যারা কট্টোর সমালোচক তাদেরও দেখা যায় বেগম জিয়ার প্রশংসায় মুগ্ধ হতে। তবে সরকারপক্ষ কিছুটা সমালোচনার মুখে পড়েছেন। কেননা বঙ্গভবনে বেগম জিয়ার আগমনে কোন শুভেচ্ছা জানান হয়নি । এটি অনেকেই অশোভন বলে মন্তব্য করেন।
সংবিধানের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে সে অনুযায়ী ১৭ জুনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে হবে। কিন্তু সবারই উৎকন্ঠা কে হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি? এই সংশয় উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে চারিদিকে নানা গুঞ্জন। নানা মতের কথা শোনা যাচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি স্পিকার আব্দুল হামিদ থেকে শুরু করে নাম শোনা যাচ্ছে এয়ার মার্শাল এ কে খন্দকার , ডেপুটি স্পিকার কর্ণেল (অব শওকত আলী। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চেীধুরি, মতিয়া চৌধুরি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আজাদ চৌধুরি সহ অনেক নাম।
কিন্তু সংশয় রয়েছে এসব সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে থেকে শেষ পর্যন্ত কেউ আদৌ রাষ্ট্রপতি হবেন কিনা? তবে নাগরিক সমাজ আনিসুজ্জামানকে বেশি গ্রহনযোগ্য বলে মনে করছে। এরকম জটিলতার মুখে কেউ কেউ শেখ হাসিনার কাছে বার্তা দিচ্ছেন তার উপদেষ্টা এসএ মালেককে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়ার। কিন্তু সামনে যে জটিল রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে সেটি সামাল দেয়ার জন্য শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের এখন প্রয়োজন প্রত্যয়ী রাষ্ট্রপতি। যিনি জিল্লুর রহমানের মত বয়স্ক হলেও মানসিক স্থিরতা নিয়ে সুক্ষভাবে জটিল পরিস্থিতি পারি দিতে পারবেন।
জনমনের একাংশেও এরকম প্রবল আলোচনা রয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা নিজেই রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হবেন।
বর্তমান রাজনৈতিক জটিলতার কারণে এ ধরনের আলোচনা উঠে এসেছে। তবে কে রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সেটা এখনও রহস্যাবৃৃত হলেও সবাই যে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দিকেই ঝুকে আছেন এতে কোন সন্দেহ নেই।
বিরোধী দলও অবশ্য স্পিকারের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে বলে জানা গেছে। সকল কিছুই বোঝা যাবে প্রধানমন্ত্রী কি সিদ্ধান্ত নেবেন তার উপর। রাষ্ট্রপতি পদটি অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও অনেক গুরত্বপূর্ণ।
তবে যে মুহুর্তে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান চলে গেলেন সে মুহুর্তে পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক বিবেচনায় এ পদ আরো বেশি গুরত্বপূর্ণ ও ঝুকি পূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রথমত আর কয়েকমাস পরেই বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে স্বভাবতই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সামনে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সমাগত নির্বাচন তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধিনে করার দাবিতে বিরোধী দলগুলো সে ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতির বিষয়ে ইতোমধ্যে বিরোধী বিএনপি মতামত দিয়েছে। বিএনপি বলেছে রাষ্ট্রপতি পদে তারা কোন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে দেখতে চায়। যিনি হবেন সব দলের প্রতি সহনশীল এবং সবার কাছ যার গ্রহনযোগ্যতা থাকবে।
তবে পদটি এ মুহুর্তে পদটি গুরত্বপূর্ণ এজন্য যে বর্তমানে যিনি রাষ্ট্রপতি হবেন তার মেয়াদ কাল হবে আগামী পাচঁ বছর। আগামীতে ক্ষমতার পালাবদল হলে ভিন্নমতাবলম্বীদের সাথে কাজ করতে হবে। বিশ্লেষকরা বলেছেন চলমান রাজনীতির যে অবস্থা তাতে আগামী রাষ্ট্রপতিকে অনেক চ্যালেঞ্জর মুখোমুখি হতে হবে। যে চ্যালেঞ্জ গুলো হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ। শুধু দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশে রাষ্ট্র ও জনগণ উভয়ে ক্ষতির সম্মুখিন হবে।
এদিকে বিএনপি তত্ত্ববধায়ক সরকারের জন্য রাজপথে নেমেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃ প্রতিষ্ঠা তাদের লক্ষ্য। কোন অন্তর্বতীকালীন সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচন করবে না। আন্দোলনের পরিক্রমায় ১৮ দলীয় জোট সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করেছে। বিএনপি যে আন্দোলন করছে তার প্রেক্ষাপট তৈরী করছে আওয়ামী লীগ।
কেননা ক্ষমতা গ্রহনের পর সকলের আশা ছিল অন্তত মহাজোট সরকার জোট সরকারের চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম থাকবে। কিন্তু সেটা আর হলো কোথায়! সকল ব্যর্থতার চাদরে আওয়ামীলিগের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। আজ দেশ পরিচালনায় তাদের ব্যর্থতা সম্পর্কে অভিযোগ কম নয়। সরকারি কোষাগার থেকে শুরু করে নিজ দলের মেধাবী ছাত্র হত্যা এমনকি বয়োবৃদ্ধ গুরুজন তাদের হাতে নাস্তানাবুদ হয়েছে।
আবার সেসব ব্যর্থতাকে নির্লজ্জের মতো ঢাকতে অপপ্রয়াসের চেষ্টা চালাতে আমরা দেখেছি।
তবে দেশের এখন যে পরিস্থিতি তাতে সামনে দেশের রাজনীতির গৃহপট আরো বেশি উত্তপ্ত হচ্ছে এতে কোন সংশয় নেই। এ অবস্থায় যদি রাষ্ট্রপতি পদে একজন সর্বগ্রহণযোগ্য দেশপ্রেমিক ব্যক্তিকে নির্বাচন না করা হয় তাহলে সেটা পুরো পরিস্থিতিকে আরো ঝুকিপূর্ণ করবে। ক্ষমতা যে কারো হাতের খেলার পুতুল নয়। এটি নিয়ে সঠিক ব্যবহারের সকলের অধিকার রয়েছে। তবে বরাবরই যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের ভুল হবেই এটা যেন তাদের একধরনের বীরত্ব অহমিকা।
তবে আওয়ামীলিগ এর মধ্যে সেই অহমিকা আমরা দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে যেন তাদের মতের বাহিরে আর কেউ নেই। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর নির্বাচন নিয়ে জনগণের মনে ইতোমধ্যেই নানা প্রশ্ন উকি দিচ্ছে। আসলে নির্বাচন হবে না আবারো দেশ ওয়ান ইলেভেনের ফাঁদে পড়বে? মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রয়াণের মধ্যে দিয়ে দলমত নির্বেশেষে মানুষের হ্নদয়ে একধরনের ঐক্যের সূচনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সে ঐক্যের দোহাই দিয়েই বলতে হয় যেহেতু দেশের আপামর জনতা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকেই গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
সেহেতু এ ঐক্যের বাধঁনকে একত্রে গেঁথে আওয়ামী লীগকে প্রমাণ করতে হবে তারা কতটা দলমতের উর্ধ্বে উঠতে পারে। প্রধানমন্ত্রী জনগণের জন্য চমক দেখাবেন সেটাই এখন অপেক্ষার প্রহর গুনা। তার চমকের নির্ভর করছে রাষ্ট্রের আগামী দিনগুলি কেমন হবে। তবে জনমতকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হলে সেটাই দেশের জন্য কল্যাণকর। আর পিপাসু জনগণের সেই প্রত্যাশার জায়গাটা পূর্ণ হলে দলমত নির্বেশেষে লাভবান হবে লাল সবুজের উত্তরাধিকারিরাই।
সাংবাদিক ও সাব এডিটর
সাপ্তাহিক সেরা খবর
শিক্ষাথী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মোবা. ০১৯৪০৩৫৬৭১১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।