.. শত বছর ধরে জমিয়ে রাখা স্বৃতির বাক্স খুললাম আজ , কোন ধুলোবালির গন্ধ নয় , কাঠগোলাপের সুবাস বেরিয়ে আসল যেন । এতো সুন্দর সুবাস মনকে চঞ্চল করে তলে, চোখের কনায় পানি জমায়। মনটা হু হু করে ওঠে সেই দিন গুলিতে ফিরে যাবার জন্য । তিব্র একতা শূল বিঁধল বুকে যেন।
এই সৃতি গুলো এত সুবাস কেন ছড়ায় জানি না ।
কোন প্রাপ্তির আশ্বাস ছিল না ওই দিনগুলিতে , তোমার সকালে ইস্কুল ছিল আর আমার দুপুরে। তোমাকে দেখার অছিলায় প্রতিদিন সকালে হাটতে বের হতাম । আর বাসায় ফিরতাম ঠিক ওই সময় যখন তোমার ইস্কুলের বাস আসতো , যাতে তোমার সাথে একটু দেখা হয় । আমার মনে আছে বৃহস্পতি বার আমার হাফ ইস্কুল হত আর ইস্কুল শেষে কতদিন দৌড় পাল্লা দিয়ে বাসায় ফিরেছি যাতে তোমার ইস্কুল ছুটির পর তোমার সাথে দেখা হয়।
আজব কিছু টান ছিল সেই সময়, আমি সিঁড়িতে দাড়িয়ে থাকতাম তুমি আমার দিকে তাকিয়ে চলে যেতে , তোমার কোন প্রস্ন ছিলনা আমার ও কিছু ছিলনা জিজ্ঞাসা করার মত ।
মনে পড়ে তোমার সেই গানের কলি খেলার কথা ? ট্রান্সফরমার নষ্ট হবার সুবাদে দীর্ঘ সময় ইলেক্ট্রিসিটি ছিলনা ওই রাতে , ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলাম সবাই । পরিবেশগত কারনে ওই সময়ের আড্ডা গুলো জমত ছেলে মেয়েদের আলাদা আলাদা করে। ওই দিন তোমার এক বান্ধবি এসে বলল চল আমরা গানের কলি খেলি । তোমার সাথে কথা বলার এই সুযোগ মিস করতে চাইলামনা তাই যোগ দিলাম তোমাদের গান গান খেলায়। যদিও তুমি খেলেছিলে তোমার বান্ধবিদের দলে কিন্তু আমার পক্ষেই গান করছিলে যেন ।
ওই দিন আমি আজও ভুলতে পারিনা । যদিও গানের বাইরে তোমার সাথে কথা হয়নি কোন ।
মনে পড়ে যায় বাবার ট্রান্সফার হয়ে যাবে শুনে খুব কেঁদেছিলাম , বন্ধুদের টান এবং তোমার প্রতি টান যেন প্রবল হয়ে উঠল আরও । যাবার আগের দিন পর্যন্ত প্রতিদিন তোমার জন্য সিঁড়িতে ফুল নিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম লাজ লজ্জা ভুলে , আর আমাকে অবাক করে তুমি ফুল নিয়ে চলে যেতে কোন কথা না বলে। তুমিও কি আমার মত করে নির্বাক হয়ে যেতে যখন দেখা হত আমাদের? তুমি বিশ্বাস কর তুমি যতবার তোমার ছোট বোনকে দিয়ে বই নিয়ে আবার ফেরত দিয়েছ, আমি পাগলের মত প্রতি বার খুজেছি তোমার কোন চিহ্ন বইয়ের বুকে স্বর্ণ খোঁজার মত করে।
আমার চলে যাবার দিন তুমি উকি দিয়ে দেখেছ যখন, আমি আমাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম , পন করেছিলাম কথা বলেই যাব কিন্তু তোমার পাড়াতো বড় বনের কল্যাণে হয়েছিলনা তা ।
মোবাইল তখন হাতের নাগালে এসে পারেনি , তাই চিঠি দিয়ে বন্ধুদের কাছথেকে খবর নিতাম তোমার। এভাবে বছরখানেক যাবার পর আমাদের পাশের বাসার আপু মোবাইল কিনল , আমি আমার বন্ধুদের কাছে আপুর নাম্বার দিয়েছিলাম যাতে খুব মন চাইলে কল দিতে পারে। শুনলাম একদিন তোমার নামের এক মেয়ে নাকি আপুর কাছে ফোন দিয়ে আমাকে খুজেছে । যেহেতু আপুকে আমি তোমার নাম বলিনাই কোনোদিন তাই বুঝলাম আপু মিথ্যা বলছে না ।
তবে কপাল এতই খারাপ যেদিন তুমি কল করলে সেদিন আমি প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিলাম স্যার এর বাসায় । পরদিন আপুর কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে কল করেছি কিন্তু তোমাকে পাইনাই পাইছি বাসার পাশের ফোনের দোকানদারকে , ওই বয়সে এত সাহস হয়নাই যে আঙ্কেল কে বলব তোমাদের বাসায় খবর পাঠাতে । এর পর অনেক দিন অপেক্ষা করেছি তোমার ফোনের কিন্তু আর ফোন আসেনি তোমার কাছ থেকে।
SSC and HSC শেষ করে ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হলাম তাই তোমার শহরে ফেরত আসলাম আবার । বাবা অবসরে গেলেন , আমাকে একা ছাড়তে চাইলেননা তাই তোমার শহরে বাসা ভাড়া নেওয়া হল ফেরত পেলাম কিছু পুরনো বন্ধুদের , তাদের সুবাদে জানতে পারলাম তুমি ও আমাদের বাসার পাশেই থাক ।
তাই বাসায় আসা যাবার পথে সতর্ক থাকি যাতে তোমার সাথে দেখা হয় একবার । বন্ধু মহলে সুনাম থাকায় এবং ভাল ভার্সিটিতে পড়ার কারনে যে চিত্র দাঁড়িয়েছে তাতে তোমাদের বাসার সামনে উকি ঝুকি দিতে পারিনা। একদিন সিগারেট খেতে নিজেদের গলি ছেরে তোমাদের গলিতে গিয়েছিলাম যাতে কেউ চিনতে না পারে , আমি অন্য দিকে ফিরে সিগারেট ধরালাম , সিগারেট ধরিয়ে যখন সামনে তাকালাম তখন দেখলাম দুইটি মেয়ে হেটে যাচ্ছে তোমাদের বাসার দিয়ে আমি আমার সাথের বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করতে সে অবাক হয়ে জবাব দিল , তুই খেয়াল করিস নি এটা তো সাম্মি(ছদ্ম)। আবার ও এমন ভাবে দেখা হল যেখানে কথা হল না , এভাবেই প্রায় ভার্সিটির লং লাইফ শেষের দিকে এখন আমি । আর কোন দিন কথা হবে কিনা জানিনা ।
সত্য বলতে আমি আজও সেই ছোটো বেলার মত তোমাকে ফিল করি । তবে হয়তো এমনি ভাবেই কেটে যাবে বাকি সময় তোমার সাথে কথা হবেনা কোনোদিন । ইদানিং শুনছি তোমার বিয়ের কথা চলছে ......... আর আমার চলছে বন্ধু মহলে প্রেম না করে ছ্যাকা খাওয়ার পায়তারা ও নানা ধরনের ছ্যাকার আনুষ্ঠানিকতা সামলানোর ঝক্কি ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।