আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কালো আর ধলো? বর্ণ নয়, ধন(?) বৈষম্য-

কয়েকদিন যাবৎ খালেদা জিয়ার আস্ফালন দেখছি, কালো টাকা সাদা করার সুযোগের সমালোচনা করছেন, অথচ তিনি নিজেও তার অর্থমন্ত্রী সহ কালো টাকা সাদা করেছেন। এটা তো দেশবাসী জানেন। আমরা জানি- বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দেশে দুর্নীতি এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের এক কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। বিশেষ করে দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল। হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারেক-কোকো অগাধ ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে গঠিত সেনা প্রভাবিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরী অবস্থাকালীন রাজনৈতিক নেতা-আমলা-ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য সত্য-মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ সব মামলার অধিকাংশেই ছিল দুর্নীতির অভিযোগ এবং আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন। উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এ সময় পরিকল্পিত মিথ্যা মামলা দায়েরের বেশ কিছু ঘটনাও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। দু'জাতীয় নেতৃত্ব শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াসহ অনেককেই তাদের সম্পদের বিবরণী দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এ সময় সরকার নির্দিষ্ট হারে জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার একটি সুযোগ প্রদান করে।

এই সুযোগে বহু ব্যবসায়ী, আমলা এবং কোন কোন রাজনীতিবিদ জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত টাকা বৈধ করে নেয়। জরিমানা দিয়ে এ অপ্রদর্শিত টাকা বৈধ করাকে আমাদের সমাজে কালো টাকা সাদা করা বলা হয়। এটি বাস্তব যে, বৈধ কোন আয় বা অর্থ সচেতন কোন মানুষ গোপন রাখে না। যখন অর্জিত আয়ের উৎস বেআইনী হয় অথবা সম্পদ অর্জনকারী আয়কর না দিয়ে তা ভোগ করতে চায় তখনই তার অপ্রদর্শিত সম্পদ জমা হতে থাকে এবং সে বিপুল কালো টাকার মালিকে পরিণত হয়। বিগত তত্ত্বাবাধায়ক সরকারের সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তাঁর অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান নির্দিষ্ট হারে জরিমানা দিয়ে তাদের অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করেন।

সে সময়ে সংবাদপত্র এ খবর পড়ে দেশবাসী বিস্মিত হয়েছে, হতবাক হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং চাকরিজীবীরা দুর্মূল্যের বাজারে অতিকষ্টে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন সংগ্রাম করার পরও আয়কর প্রদান করছেন অথচ দেশের প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী নিজেই অপ্রদর্শিত সম্পদের মালিক হন এবং আয়কর ফাঁকি দেন সেই সরকারের চরিত্র সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা অন্যায্য নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক বেগম খালেদা জিয়ার কালো টাকা সাদা করার অভিযোগের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার আয়কর আইনজীবী আহমেদ আজম খান। সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বিএনপি নেতৃবৃন্দ এবং আয়কর আইনজীবী খালেদা জিয়ার কালো টাকা সাদা করার অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং এ ধরনের অভিযোগ তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার চক্রান্ত বলে মত প্রকাশ করেন। অথচ আমরা পত্রিকায় দেখেছি- বেগম খালেদা জিয়া তাঁর ক্ষমতার পাঁচ বছরে অবৈধভাবে অর্জিত ১ কোটি ৩৩ লাখ ১৪ হাজার ৭১০ টাকাকে বৈধ করতে সোনালী ব্যাংক ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট শাখায় ২০০৭ সালের ২৯ ও ৩১ জুলাই পাঁচটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে জরিমানা ও আয়কর বাবদ মোট ৩৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৫ টাকা জমা দিয়েছেন।

এ তথ্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হবার পর বিএনপি পুনরায় সাংবাদিক সম্মেলন ডাকে। খালেদা জিয়ার আয়কর আইনজীবী তাঁর পূর্বেকার অবস্থান থেকে সরে এসে বলেন যে, খালেদা জিয়ার জরিমানা দিয়ে বৈধ করা অর্থ কালো টাকা নয় এগুলো তাঁর পেনশন ও গ্র্যাচুইটির অর্থ এবং গুলশানের বাড়িভাড়া হিসেবে অর্জিত বিভিন্ন বছরের আয়। প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সময় এ আয় কেন প্রদর্শন করা হয়নি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আয়কর আইনজীবী জানান যে, খালেদা জিয়া জানতেন না যে- এগুলো প্রদর্শন করতে হবে। একই সাংবাদিক সম্মেলনে তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন জানান, বেগম খালেদা জিয়া সাদা টাকা সাদা করেছেন। সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে আরেকটি বিতর্ক।

বিএনপি অভিযোগ করেছে আয়কর আইনে কোন আয়করদাতার রিটার্নের তথ্য বাইরে প্রকাশের নিয়ম নেই- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড খালেদা জিয়ার তথ্য বাইরে প্রকাশ করে তার অধিকার ক্ষুণœ করেছে- তারা প্রয়োজনে রাজস্ব বিভাগের বিরুদ্ধে মামলা করবে। সাধারণ মানুষ আইনের অত মারপ্যাঁচ বোঝে না। তারা জানতে চায়- তাদের ভাগ্য যাদের হাতে তারা তুলে দিচ্ছেন তারা সৎভাবে চলছেন কি না, আইনের প্রতি তারা নিজেরা অনুগত কি না। খালেদা জিয়ার আয়কর আইনজীবী আহমেদ আজম খানের প্রতি ৩টি প্রশ্ন করা যেতেই পারে ১. খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাড়ি ভাড়ার আয়কর ২০০২ সালের পূর্বে দিয়েছেন কি না? ২. খালেদা জিয়া যদি আয়কর রিটার্নে বাড়িভাড়া ও পেনশন গ্র্যাচুইটির অর্থ জমা দেবার বিষয়টি না বুঝে থাকেন, তবে তাঁর বিজ্ঞ আয়কর আইনজীবী হিসেবে আহমেদ আজম খান তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন কি? ৩. জরিমানা ও আয়কর দিয়ে যে অপ্রদর্শিত টাকাকে বৈধ করা হয় তাকে যদি কালো টাকা বলা না হয় তবে কালো টাকা কি ? এ দেশের মানুষ দীর্ঘদিন যাবত গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে তারা দেখতে চায়।

কিন্তু নানা ষড়যন্ত্র এবং ক্ষমতার লোভে জনগণের সে আকাক্সক্ষা বার বার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অবৈধ সামরিক শাসন এবং স্বৈরশাসনে দেশে অপরাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে এবং দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের সংস্কৃতি চালু হয়েছে। আমরা দেখতে চাই যারা দেশকে নেতৃত্ব দেবেন, রাষ্ট্রপরিচালনা করবেন তাঁরা ব্যক্তিগত লোভ-লালসা, অর্থ-বিত্তের মোহের উর্ধ্বে থাকবেন। এ কথা মানতেই হবে যে, দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব কখনও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। উচ্চ নৈতিকমান, সততা এবং দেশপ্রেম রাজনৈতিক নেতৃত্বের অবশ্যপালনীয় গুণাবলী।

কূট বিতর্ক এবং আইনের মারপ্যাঁচে সত্য কখনও হারিয়ে যায় না। সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার মধ্য দিয়েই আসল সত্য বেরিয়ে আসে। সূর্যের আলো যেমনি সত্যি ঘুটঘুটে অন্ধকারও তেমনিই সত্যি। আমরা সত্যের সন্ধানে আলোর পথে এগিয়ে যেতে চাই সত্য-সুন্দর-কল্যাণের আদর্শ প্রতিষ্ঠায়। সত্য-ন্যায়ের সংগ্রাম কখনও পরাভূত হয় না- ইতিহাস সে শিক্ষাই দেয়।

লেখার জন্য কৃতজ্ঞতা: সালমা রহমান  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.