আমি যখন প্রথম রাশিয়াতে আসি এরাবিয়ান কাউকে দেখলেই মেজাজ খারাপ হতো। অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ জংলী টাইপের আচরণ এদের। সহ্য করার মতো নয় মোটেও। বলে রাখি এরাবিয়ানদের মধ্যে জংলীপনায় আবার সবাইকে ছাড়িয়ে যেতো প্যালেস্টেনিয়ানরা। এদের আচার আচরণ সব সময় মারমুখী আর মানুষের সহজাত যে ভয় বলে একটা বিষয়তা মোটেও এদের মধ্যে নেই।
জগতের কোন কিছুকেই এরা ভয় পায় না। এরকম একটা ধারণা যখন মোটামুটি পাকাপোক্ত তখন অনেকটা নাটকীয় ভাবেই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয়ে গেলো এক প্যালেস্টেনিয়ান। হারামিপনায় যে মোটামুটি এক নাম্বার, নাম্বার ওয়ান শাকিব খান। নাম মোহাম্মদ। অবাক করার মতো বিষয়।
ওর সাথে মিশতে গিয়ে জানলাম অনেক কিছু। নতুন করে উপলব্ধি করলাম অনেক ব্যাপার। ও ওর ল্যাপটপ থেকে আমাকে দেখাল কেমন নৃশংসভাবে ওর চাচাকে মেরেছে ইসরাইলীরা, কিভাবে ওর ভাইকে ধরে নিয়ে গেছে টেনে হেঁচড়ে, ওদের সাধের বাড়িটা বুল ড্রেজার দিয়ে ধসিয়ে দিয়েছে। আরো অনেক ফটো দেখালো সাথে বলল কত ভয়াবহ কাহিনী। যার সারমর্ম হল জন্ম ই এদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
বুঝলাম কেন এরা এমন উদ্ধত, কেন এমন নির্ভীক, কেন এমন উশৃঙ্খল। সাথে দেখলাম মানবতার কি নিষ্ঠুর পরিহাস!
আসলে ভূমিকা অংশ অনেক বড় হয়ে গেলো। কাজের কথায় আসি। আমার পরীক্ষা কিন্তু আমি পড়তে পারছি না। আমার মাথায় শুধু ঘুরছে মিয়ানমারে চলমান দাঙ্গা।
অনেকের কাছে মনে হবে আমি অতি আবেগি। মনে হলে কিছু করার নেই। হয়তো আমি হিন্দু মুসলিমের রায়ট ম্যাসাকার দেখি নি, দেখি নি একাত্তর কিন্তু আমি এগুলোর ভয়াবহতা অনুভব করি। বিশেষ করে গতকাল সারাদিন রোহিঙ্গাদের নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছি। প্রচুর ডাটা কালেক্ট করেছি, আর্টিকেল পড়েছি।
মাথার ভেতর শুধু এগুলো ঘুরছে। এটা ঠিক রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধ প্রবনতা অনেক বেশি। কিন্তু কেন? আমার মনে পড়েছে আমার ফ্রেন্ড মোহাম্মদের কথা। এই লোকগুলোর কোন দেশ নেই, কোন নাগরিকত্ব নেই, কোন পরিচয় নেই। অসহায় এক গোষ্ঠী।
মানুষের যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় মানুষ সব করতে পারে। আমি কল্পনা করি কোন একটি পরিবারের কথা যে পরিবারে কোন পুরুষ মানুষ নেই। মা সাথে দুটো নিষ্পাপ বাচ্চা। এক দিকে তীব্র আগুনের কালো ধোঁয়া অন্যদিকে পেছনে ছুটে আসছে ধর্মের মুখোশ পরা মানুষরুপী কিছু হিংস্র জানোয়ার। বাচ্চা দুটোকে বুকে নিয়ে মা ছুটছে বাঁচার আশায়।
মাইলের পর মাইল পাহাড় পর্বত, বন জঙ্গল, নদী নালা পাড়ি দিয়ে একটু আশ্রয়ের আশায় আমাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করছে আমরা ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি এবেলাতে ও সাদা ভাত সাথে মুরগী ভুনো তৃপ্তি করে খেয়েছি। আর ঐ মা হয়তো গত দু দিন কিছু খায় নি। নিজে খাবে কি বাচ্চা দুটোই অভুক্ত। এক দিকে ভয় অনাহার অন্যদিকে দিকে বাঁচবার আশা।
আর আমাদের কাছে পরিচয়, তুই মানুষ না তুই রোহিঙ্গা। কুকুরের মতো চারপেয়ো জন্তু। তুই মরলে আমার কি এসে যায়। তোর বাচ্চা খেলো কি না খেলো আমার তাতে কি। আমি তো খেয়েছি।
আমার তো থাকার একটা আশ্রয় আছে।
আমরা ভুলে গেছি একাত্তর। অথচ আমাদের ও এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। মিয়ানমারে এখন বৌদ্ধ-মুসলিম দাঙ্গা। তখন ছিল মুসলিম মুসলিম দাঙ্গা।
লাভের উপর তখন অন্য ধর্মাবলম্বী যারা বলী হয়েছে তারা ছিল বোনাস।
বিবিসি, ডয়েচ ভেল থেকে শুরু করে অনেকগুলো নিউজ পেপার মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। বিশ্বমানবতার ধ্বজাধারী আমেরিকা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলেছে, "We are deeply concerned." দায়দায়িত্ব শেষ। নির্দেশ দিয়েছে দাঙ্গা কবলিত এলাকা থেকে যেন তাদের সাদা চামড়ার প্রতিনিধিদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হয়। তাদের জীবনের মূল্য আছে অন্যদের নেই।
আমি আজ আওয়ামীলীগ, আমি আজ বিএনপি, আমি আজ জামাতি; আমি আজ ছাত্র, আমি আজ চাকুরীজীবী, আমি আজ ব্যবসায়ী; আমি আজ আস্তিক, আমি আজ নাস্তিক- সবই আছে খালি আমার ভেতর মানবতাবোধ টুকু নেই। সকল কিছুর বিনিময়ে আমি আজ বিকিয়ে দিয়েছে আমার মানবতা। চিৎকার করে ঐ কবি কামিনী রায়কে বলতে ইচ্ছে করে কবি আপনি ব্যর্থ, ব্যর্থ আপনার কবিতা-
''পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি, এ জীবন মন সকলই দাও
তার মতো সুখ কোথাও কি আছে? আপনার কথা ভুলিয়া যাও। " ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।