আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত এক বিচারককে পিটিয়েছে পুলিশ, আজ রোববার সকালে নরসিংদী জজ আদালতের মূল ফটকে ওই বিচারককে পুলিশের হেলমেট ও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। দেওয়া হয় কিল-ঘুষি।
নির্যাতনের শিকার বিচারক হলেন জেলা যুগ্ম দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারিক হাকিম মো. ইমান আলী শেখ।
ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. মোখলেছুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন। এর আগে পুলিশের পিটুনির শিকার হয়েছেন সাংসদ, আইনজীবী ও সাংবাদিক।
বিচারক, আইনজীবী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, আজ নরসিংদী জেলা আদালতে পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যা মামলার শুনানি ছিল। এ জন্য আদালত প্রাঙ্গণে ছিল অতিরিক্ত পুলিশ। আদালতের মূল ফটকে পুলিশ সবাইকে তল্লাশি করে ভেতরে ঢোকায়।
সকাল সোয়া নয়টার দিকে বিচারক ইমান আলী শেখ রিকশায় করে আদালতের মূল ফটকের সামনে আসেন। প্রবেশপথে কর্তব্যরত পুলিশ তাঁর ব্যাগটি তল্লাশি করতে চাইলে তিনি পরিচয় দেন। পুলিশ পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে বিচারক ইতস্তত বোধ করেন এবং আবারও নিজের পরিচয় দেন। কিন্তু পরিচয়পত্র ছাড়া প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানায় পুলিশ। বিচারক ইমান আলী পরিচয়পত্র বের করতেই অন্য এক পুলিশ সদস্য ফটকে আসেন।
‘তর্ক হচ্ছে কেন’ বলেই বিচারককে পুলিশের হেলমেট দিয়ে আঘাত করেন। এ সময় আরও দুই পুলিশ সদস্য এসে তিনজন মিলে বিচারককে কিল-ঘুষি দেন এবং লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। দ্রুত নরসিংদী গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশীদ এগিয়ে আসেন। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে বিচারককে আদালতে প্রবেশ করতে দেন।
জরুরি সভা: এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে আদালতপাড়ায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
তাত্ক্ষণিক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এ বি এম জহিরুল গনি চৌধুরীর অফিসকক্ষে জরুরি সভা বসে। সভায় আদালতের সব বিচারক, আইনজীবী সমিতির নেতা, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। সভায় লাঞ্ছনার শিকার বিচারক ঘটনার বর্ণনা দেন। উপস্থিত সবাই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে পুলিশ সুপারের কাছে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। বিকেলে আবার বৈঠকে বসেন বিচারক ও জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা।
পুলিশের দাবি: নরসিংদী গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামুনুর রশীদের দাবি, পুলিশ যুগ্ম জেলা দায়রা জজ মো. ইমান আলী শেখের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেনি। ওসি বলেন, ‘প্রথমে বিচারক খারাপ আচরণ করলে পুলিশ এর উত্তর দেয়। উভয় পক্ষের বাগবিতণ্ডা তুঙ্গে উঠলে বিচারক নিজের পরিচয় দেন এবং এক কনস্টেবলকে ধমক দিয়ে গায়ে হাত তুলতে উদ্যত হন। ওই দৃশ্য দেখে সহকর্মীরা এগিয়ে আসে। এতে ওনার হাত হেলমেটে লাগে।
’
মামুনুর রশীদ আরও দাবি করেন, ঘটনার সময় বিচারক খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। পুলিশ নয় বরং বিচারক ওই ঘটনার মাধ্যমে সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন।
তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তার বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী সহকারী (ক্লার্ক) জয়নাল আবেদীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জজ স্যারের (বিচারক মো. ইমান আলী শেখ) পেছনে ছিলাম। যা দেখেছি তা হলো, স্যারকে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি পুলিশ।
লাঠি ও হেলমেট দিয়ে আঘাত করেছে। ’
জয়নাল বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ এত বেপরোয়া হয়ে গেছে যে আদালতের ভেতরে বিচারককে পেটাল।
‘নিছক ভুল বোঝাবুঝি’!: বিচারককে পেটানোর ঘটনা নিছক ভুল বোঝাবুঝি বলে মন্তব্য করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত হালদার। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিছক ভুল বোঝাবুঝি। আমরা সমাধানের পথে যাচ্ছি।
প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ’
তবে কতজন পুলিশকে প্রত্যাহার এবং তাঁদের নাম জানাতে চাননি সুব্রত হালদার।
বিচারকের বক্তব্য: পুলিশি নির্যাতনের শিকার যুগ্ম দায়রা জজ মো. ইমান আলী শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তিন-তিনবার আমার পরিচয় দিয়েছি। তারা (পুলিশ) আমার কোনো কথায় কর্ণপাত না করে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।
’
‘তারা (পুলিশ) কেবল বলতে চায়, শুনতে চায় না। আমি আর এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছে। ’ বলছিলেন ইমান আলী।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ এ বি এম জহিরুল গনি চৌধুরী বলেন, ‘জেলা দায়রা জজ শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে কথা বলেছি।
তিনি মনে হয় ডিআইজির সঙ্গে কথা বলেছেন। দেখি পুলিশ আগে কী করে। তারপর আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। ’ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।