আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের লাঠিপেটা, বুট দিয়ে লাথি মারা ও গরম পানি নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শিক্ষকরা গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার সময় দুপুরে শাহবাগ থানার সামনে এ ঘটনা ঘটে।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিক্ষকরা হলেন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মো. মনসুর আলী (৫৩), শিক্ষক মেজবাউর রহমান (৪৭), ইদ্রিস আলী (৫৬), শহিদ মিয়া (৪৫) ও ওমর ফারুক (৪০)। পুলিশের পিটুনি, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে গরম পানি ও বুটের লাথির আঘাতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে স্মারকলিপি দিতে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে রওয়ানা হন তাঁরা। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ের কাছে পেঁৗছলে পুলিশ বাধা দেয়।
একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা, বুট দিয়ে লাথি ও জলকামান থেকে গরম পানি ছোড়ে। এ সময় রাস্তায় অবস্থান নেওয়া কয়েক হাজার শিক্ষকের অনেকেই আহত হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার নুরুল ইসলাম তাঁদের বলেন, 'শিক্ষকদের মনোনীত প্রতিনিধিকে
স্মারকলিপিসহ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পেঁৗছে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। '
পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য শোনার পর বিক্ষোভকারী শিক্ষকদের পক্ষে বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের মহাসচিব আবদুর রহমান বাচ্চু বলেন, 'স্মারকলিপি জমা দিতে হাতেগোনা কয়েকজন প্রতিনিধিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর প্রস্তাবে আমরা রাজি নই।
হয় সবাইকে একযোগে স্মারকলিপি জমা দিতে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে, নয়তো নিজেদের অবস্থানে আমরা অনড় থাকব। '
ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষকরা জানান, এরপর পুলিশ তাঁদেরকে সামনের দিকে এগোতে বাধা দেওয়ার জন্য ব্যারিকেড দেয়। দুপুর ২টার পর পুলিশের ব্যারিকেড ডিঙিয়ে শিক্ষকরা শাহবাগ মোড়ে চলে এসে মূল সড়ক অবরোধের চেষ্টা চালান। পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করে শাহবাগ মোড় থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর শিক্ষকরা শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেন।
সেখানেও পুলিশ তাঁদের মারধর করে।
শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে তাঁরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। পুলিশের বাধার মুখে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যেতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীর অফিসের দিকে যাওয়ার সময় তাঁদের শাহবাগ থানার সামনে আটকে দেওয়া হয়। কোনো রকম উসকানি ছাড়াই পুলিশ তাঁদের মারধর ও গরম পানি নিক্ষেপ করেছে।
শিক্ষকরা বলেন, 'কী অপরাধ আমাদের? রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীকরণের দাবিতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছি আমরা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করার জন্য গত দুই দিন ধরে শহীদ মিনারে অবস্থান করছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। এ কারণে আমরা নিজেরাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাচ্ছিলাম। '
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রাস্তা অবরোধ করে মিছিল করার সময় বেসরকারি শিক্ষকদের বাধা দেওয়া হয়।
এ সময় শিক্ষকরা পুলিশের ওপর ইট-পাথর ছুড়লে তারা হালকা লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত রমনা বিভাগের পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষকরা শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন। পুলিশ বাধা দিলে শিক্ষকরা তাঁদের ওপর হামলা করেন। এ সময় চার শিক্ষককে আটক করা হলেও পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মনছুর আলী সাংবাদিকদের বলেন, জলকামান থেকে পুলিশ তাঁদের ওপর গরম পানি নিক্ষেপ করে।
পুলিশ বিনা উসকানিতে তাঁদের ওপর হামলা করেছে। শিক্ষকদের আটক করে থানায় নেওয়া হয়। পুলিশ তাঁদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছে। বিশেষ করে শাহবাগ থানার ওসি তাঁদের সঙ্গে বর্বর আচরণ করেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।