আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষামন্ত্রী সমীপেঃ বেসরকারি শিক্ষকদের ন্যায্য প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত না করার অনুরোধ

বেসরকারি স্কুল কলেজের শিক্ষক কর্মচারিরা আজ নানাভাবে উপেক্ষিত, বঞ্চিত এবং হয়রানীর শিকার। অথচ শিক্ষার ৯৮% কাজ বেসরকারি শিক্ষকরাই সম্পাদন করে থাকেন। মৌলিক অধিকার হতে তাঁদের চরমভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। চাকুরী করেও বেতন দেয়া হয় না। ফলে হাজার হাজার শিক্ষক কর্মচারি মানবেতর জীবন যাপন করছে।

দ্রব্যমূল্যের কসাঘাতে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেঃ- (১) ইনডেক্সধারী শিক্ষকরা যুক্তিসঙ্গত কারণে বিদ্যালয় ত্যাগ করে। বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব শিক্ষকরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদের এমপিও নূতন কর্মস্থলে ট্রান্সফার করার জন্য। বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব শিক্ষকরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদের এমপিও নূতন কর্মস্থলে ট্রান্সফার করার জন্যে আবেদন করে। কিন্তু এমপিও ট্রান্সফার করতে বিভিন্নভাবে হয়রানীর শিকার হতে হয়। বিভিন্ন অজুহাতে এমপিও ট্রান্সফার ঝুলিয়ে রাখা হয়।

কয়েক মাস পর এমপিও ট্রান্সফার করা হলে যে মাসে এমপিও ট্রান্সফার হয় শুধু সে মাসের বেতন দেয়া হয়। পূর্ববর্তী মাসসমূহে বকেয়া বেতন না দিয়ে বঞ্চিত করা হয়। এটা মানবাধিকারের চরম লংঘন বলে মনে করি। সরকারী স্কুলের শিক্ষকদের ট্রান্সফার করা হয় তাদের বেতন একদিনেরও কম দেয়া হয় না। স্কুল ট্রাফন্সফারের কারণে বেসরকারি শিক্ষকরা মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে চরম কষ্টে দিন যাপন করে।

দূর্মূল্যের বাজারে ছেলেমেয়ের লেখা পড়ার খরচসহ সংসারের অন্যান্য খরচ মিঠাতে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের অসুবিধার কথা একজন চাকুরীজীবি ছাড়া আর কেউ অনুধাবন করতে পারে না। বকেয়া বেতন পাওয়ার জন্যে অধিদপ্তরে আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না। (২) নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিবন্ধিত শিক্ষকদের দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না। নিবন্ধনকৃত শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা না হলে বারবার পরীক্ষা নিয়ে কেন নিবন্ধন সনদ দেয়া হচ্ছে? শুন্যপদে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হাজার হাজার নিবন্ধিত শিক্ষকদের বিগত এক বছরের বেশিদিন ধরে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না। ফলে তারা চাকুরী করে ন্যায্য প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

বি, এ, বিএড/এম, এড/এম, এ, এড ডিগ্রীধারীদের নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর শিক্ষকতা করার যোগ্যতা অর্জনের সনদ দেয়া হয়। তারপর ইন্টারভিউ দিয়ে স্কুল কলেজে নিয়োগ পেতে হয়। দীর্ঘদিন চাকুরী করে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় তারা চরম হতাশায় নিমজ্জিত। নিবন্ধিত শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত না করলে নিবন্ধিত বোর্ড গঠন করে ৩৫০ টাকা ফিস নিয়ে পরীক্ষা নেয়া হল কেন? নিবন্ধিত শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত না করলে তাদের প্রতি বড় জুলম করার শামিল হবে। (৩) বর্তমান সরকার কর্তৃক প্রণীত ২০১০ সালের ১০ সালের ফেব্রুয়ারি জারীকৃত জনবল কাঠামোতে সহকারী প্রধান শিক্ষকদের ১২০০০ টাকা বেতনের স্কেল উল্লেখ আছে।

জনবল কাঠামো জারী হওয়ার পর শুধু একবার কিছু সংখ্যক সহকারী প্রধান শিক্ষককে উক্ত স্কেল দিয়ে অবশিষ্ট বিপুল সংখ্যক শিক্ষকদের এই স্কেল দেয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে হাজার হাজার আবেদনপত্র মহাপরিচালকের দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন অজুহাতে আবেদন কার্যকর করা হচ্ছে না। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী আবেদনপত্র কার্যকর না করে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রেখে সহকারী প্রধান শিক্ষকদের ন্যায্য প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। (৪) শিক্ষানীতির আলোকে জনবল কাঠামোতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ রয়েছে।

জনবল কাঠামোর আলোকে সরকারি বিধিমালা মেনে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী গ্রন্থাগারিক পদ রয়েছে। জনবল কাঠামোর আলোকে সরকারী বিধিমালা মেনে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী গ্রন্থাগারিকদের এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না। বছরের পর বছর সরকারী বেতন না পেয়ে স্বল্প বেতনধারী সহকারী গ্রন্থাগারিকরা চরম আর্থিক কষ্টে দিন যাপন করছে। বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এ সকল কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন। (৫) বেসরকারি শিক্ষকদের সারা চাকুরী জীবনে একটি মাত্র টাইমস্কেল দেয়া হয়।

বর্তমানে তাও দেয়া হচ্ছে না। সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর আবেদনপত্র মহাপরিচালকের দপ্তরে পৌঁছলেও বিভিন্ন অজুহাতে আটকে রেখে হয়রানী করা হয়। বেশ কয়েকমাস ঝুলিয়ে রাখার পর বকেয়া না দিয়ে শুধু চলিত মাসের বেতন দেয়া হয়। এতে ন্যায্য প্রাপ্তি হতে শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হয়। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় শিক্ষামন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, টকশোতে এবং শিক্ষক সমিতির সম্মেলনে শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যা, অসুবিধা এবং দাবী দাওয়া পূরণ করার আশ্বাস বাণী শুনিয়েছেন।

তাঁর স্পষ্ট, সুন্দর ও আকর্ষণীয় বক্তৃতায় আমরা উজ্জীবিত হতাম। আমাদের মনে আশার সঞ্চার হতো। শিক্ষকদের জন্যে তিনি পৃথক বেতন স্কেলের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো শিক্ষকদের কোন দাবীই আলোর মুখ দেখেনি। শিক্ষক সমাজ আজ চরমভাবে হতাশ।

চাকুরী করে ন্যায্য পাওনা হতে বঞ্চিত শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। আপনি শিক্ষকদের অভিভাবক, শিক্ষকদের নেতা আপনার অধিনস্থ শিক্ষক কমর্চারীদের বেতনভাতা প্রাপ্তির ব্যাপারে আপনার বাস্তব পদক্ষেপ, একান্ত মনোযোগ এবং সহানুভুতি প্রয়োজন। শিক্ষার জন্য আপনারা অনেক করেছেন। বিনামূল্যে বই দিচ্ছেন, (ধনী লোকদের এবং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে কোটিপতি শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই না দিলেও চলত) উপবৃত্তি দিচ্ছেন, একাডেমিক ভবন নির্মাণ করছেন কিন্তু সর্বাগ্রে যে সকল শিক্ষক কষ্ট করে ক্লাসে পাঠদান করছেন তাদের নূন্যতম বেতন দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিৎ। তাই ন্যায্য প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বরাদ্দ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের চেকের জন্যে অবসর বোর্ড বা কল্যাণ ট্রাস্টের অফিসে ধর্না দিতে হবে না আপনি আশ্বাস দিয়েছিলেন। চেকসমূহ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বাড়ীতে পৌঁছে যাবে বলে আপনার আশ্বাসে শিক্ষকরা খুবই আশান্বিত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো আবেদন করার দীর্ঘ ২ বছর পরও শিক্ষকরা অবসর সুবিধার টাকা পাচ্ছে না। আপনার সদয় হস্তক্ষেপ না হলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিড়ম্বনা আরও বৃদ্ধি পাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়ার জন্যে আপনাকে সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি।

সুত্রঃ দৈনিক আজাদী ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.