সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!! সারাদেশের বেসরকারি স্কুল ভর্তিতে সাংসদেরা কোটা পাচ্ছেন। আজকের ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলোতে এমনি আতকে ওঠার মতো একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকা দুটোর রিপোর্ট প্রায় একই রকমের। অবশ্য রিপোর্টারের নাম ভিন্ন দেখানো হয়েছে। রিপোর্ট দুটোর মতে আজকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে নির্ধারণ করা হবে সাংসদদের অনুকূলে কত পার্সেন্ট আসন বরাদ্দ করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সাংসদদের জন্য ২% কোটার সুপারিশ করেছে। এখন দেখার বিষয় মন্ত্রণালয় কত পার্সেন্ট কার্যকর করে। রিপোর্ট দুটো হতে জানা যায় মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা বা তাদের নাতি-নাতনির জন্য ৫ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য বর্তমানে ২ শতাংশ কোট নির্ধারণ আছে। ঢাকা মহানগরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ আছে ২ শতাংশ। এছাড়াও এ বছর থেকে প্রবাসীদের সন্তান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখা হচ্ছে।
এ হিসেবে সাংসদদের প্রস্তাবিত কোটা সহ ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী সাত ধরণের কোটায় ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমাদের সাংসদদের দৌরাত্ম সম্পর্কে আমরা সবাই কম-বেশি অবহিত। দুই শতাংশ কেন ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে স্বনামধন্য স্কুলগুলোতে তারা এর চেয়ে অনেক বেশি ছাত্র ভর্তি করান। শুধু তাই নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক প্রশাসনিক বিষয়েও তারা অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করেন। এখন মন্ত্রণালয় যদি তাদেরকে ছাত্র ভর্তিতে ২% কোটার অধিকার দেন তবে ছাত্রভর্তি প্রক্রিয়ায় তাদের আইনগত অধিকার কায়েম হবে।
ফলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় তাদের প্রভাব এবং দৌরাত্ম স্বাভাবিকভাবেই আরো বৃদ্ধি পাবে।
সব পিতা-মাতাই তাদের সন্তানদের একটি ভাল স্কুলে পড়াতে চান। ঢাকার ভাল স্কুলগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়ার অসম্ভব প্রতিযোগিতা সম্পর্কে আমরা সবাই অবহিত। বাড়তি জনসংখ্যার গরীব দেশে এ প্রতিযোগিতা খুবই স্বাভাবিক এবং এটা এড়ানো অন্তত বর্তমানে অসম্ভব। তবে যেকোন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রের উচিত হবে তার শ্রেষ্ঠ নাগরিকদের বাছাই করে বের করে আনা।
শিক্ষার ক্ষেত্রে সেটা আরো বেশি প্রযোজ্য। কারণ এ শিক্ষার্থীরাই আগামীতে দেশকে নেতৃত্ব দিবেন। শিক্ষার অধিকার যেহেতু সাংবিধানীক তাই এতে সবার অংশগ্রহণের অধিকার সমান। তবে এই অধিকার গ্রহণের ক্ষেত্রে যারা অতিরিক্ত মেধা এবং যোগ্যতার প্রমাণ দিবেন রাষ্ট্রের নিজের স্বার্থেই উচিত হবে এদেরকে অগ্রে আনার ব্যবস্থা নেবার।
ভর্তির ক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠানে ১৪ শতাংশ কোটা অনেক বেশি।
আমাদের সংবিধানে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে অন্যান্যদের সমপর্যায়ে তুলে আনার নিমিত্ত কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তনের জন্য রাষ্ট্রকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে কোটার সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই কোটার কোন তুলনা চলেনা। এ কোটার মাধ্যমে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের কোন প্রচেষ্টা নেই। প্রতিবন্ধী বা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রবর্তিত কোটাটা স্বাভাবিকভাবে নেয়া যায়। কিন্তু অন্য কোটাগুলো কোন অবস্থায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর স্বার্থে নয়, এটি স্রেফ শ্রেণীস্বার্থ রক্ষার একটি প্রচেষ্টা।
আমাদের এম.পি মহোদয়রা তাদের জন্য সংরক্ষিত ২% কোটাকে গরীব জনগোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহার করবেন এর কোন নিশ্চয়তা নেই। আমি নিশ্চিত তাদেরকে এ বিষয়ে কোন নির্দেশনাও দেয়া হবেনা। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা তাদের অধিকারগুলো রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পিছনেই কাজে লাগাবেন। এক্ষেত্রে মেধা বা আর্থিক অবস্থা নয়, রাজনৈতিক বিবেচনায়ই ছাত্ররা তাদের মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ পাবেন। এতে করে স্বনামধন্য স্কুলগুলোর শিক্ষার পরিবেশ এবং সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি হবে।
তাছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি নেতিবাচক চারিত্রিক মনোভাবও গড়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। তারা এমন ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠবে যে, মেধা বা যোগ্যতা নয়, শক্তিমানের সুপারিশই জীবনে কোন কিছু অর্জনের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর।
আরেকটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, দেশের নামকরা স্কুলগুলোতে যেখানে ছাত্র ভর্তি হওয়ার জন্য রীতিমত যুদ্ধ চলে সেখানে অনেক স্কুল আছে যেখানে পর্যাপ্ত ছাত্র পাওয়া যায়না। অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং কম মেধার ছাত্ররা সেখানে ভর্তি হতে পারে। আমার বক্তব্য এখানে পরিস্কার, শিক্ষার ক্ষেত্রে মেধাই হবে প্রধান যাচিত বিষয়।
তবে আমাদের সংবিধানে যেহেতু পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে অন্যান্যদের সমপর্যায়ে তুলে আনার জন্য কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তনের নির্দেশনা আছে সেক্ষেত্রে এম.পি সাহেবদের জন্য নয় বরং ন্যূনতম মেধা নির্ধারণ সাপেক্ষে সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কোটা সিস্টেম চালু করা যেতে পারে। সেটাই হবে নৈতিক এবং রাষ্ট্রের জন্য অধিক কার্যকর।
এ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীদের তুলনায় মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আমার আস্থা অনেক বেশি। একটা সময়ে তিনি বাম রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। মানুষের মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের জন্য কোনটা বেশি প্রয়োজনীয় সে বিষয়ে ওনার স্পষ্ট ধারণা আছে।
সে বিশ্বাস থেকেই এই শেষ মুহূর্তে ওনার কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ থাকবে এই কাজটি না করার জন্য। যদি মাননীয় মন্ত্রী এমনটা করেন তাহলে যে নৈতিকতার কথা তিনি বলেন তার সাথে এটি সাংঘর্ষীক হবে।
তবে আমরা জানি রাজনৈতিক কারণে মন্ত্রীকে অনেক সময়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়। সুবিধাভোগী একটি ক্ষমতাধর শ্রেণীর চাপ তার উপর নিশ্চয়ই আছে। সে কারণে শেষ পর্যন্ত যদি তিনি এটাতে সায় দেন তাহলে দেশের বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, ছাত্রসমাজের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর।
আজ যদি এটা বন্ধ না করা যায় তাহলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি রাজনীতিকরণের শিকার হবে। মেধাবীদের স্থান রাজনৈতিক দলে সাথে সংশ্লিষ্টদের পোষ্যরা নিয়ে নিবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।