আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাবাশ শিক্ষামন্ত্রী!

অচেনার মাঝেও নিজেকে চেনার নিঁখুত অভিনয় করি স্কুলে ভর্তির সময় বাণিজ্য হয়ই। এটাই যেন গা সওয়া হয়ে গেছে বাংলাদেশের জন্য। নিজের কাছে এত টাকা নেই, সমস্যা কি! যেখান থেকে পারো ঋণ করে এনে দাও। টাকার জন্য কি সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ থাকবে. যেভাবে বন্ধ থাকে না যৌতুকের জন্য মেয়ের বিয়ে। এ কারণে যেখান থেকে হোক টাকা এনে দেন অভিভাবকরা।

যৌতুকের বিরুদ্ধে অনেক কথা শোনা যায়, কিন্তু এই যে শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে এত টাকা নিচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এটা কি যৌতুকে চেয়ে কোন অংশে কম? যখন ডোনেশনের নামে কোন কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভর্তি ফি লাখ টাকার মত জোর করে নেয় তখন তাকে তো যৌতুকই বলতে হয়। দেশের নীতিতে আছে শিক্ষাকে বাণিজ্যকরণ করা যাবে না। কিন্তু শিক্ষা যে কত বড় বাণিজ্য তা দেখার আদৌ কি কিছু বাকী আছে। ছোট বোনটা সরকারী গার্লস স্কুলে পড়ে। গত বার বাসায় গেলে সে জানায় ভর্তি ফি-য়ের বাহিরে অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে।

কেন! ফরম পূরণে ছবি নাকি স্ক্যান করবে এ জাতীয় একটা কারণ বললো। কোন ফি ছাড়া এ টাকা আদায় অভিযোগ করার মতই। কিন্তু অভিযোগ করলে তো ব্ল্যাক লিস্টে নাম চলে আসবে। স্কুলের বাকী জীবনগুলো অন্যরকম কাটবে। তাই অভিযোগ করার বিষয়টি মাথা থেকে আপনা আপনি সরে যায়।

অভিভাবকরা এখানেই অসহায়। তাদের এ অসহায়ত্ব দূর করার উপায় আবিষ্কার করতে হবে। এই যে এত টাকা আদায় হচ্ছে এটা কিন্তু অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। এ বছর অনেক বেড়েছে পার্থক্য এটাই শুধু। হস্তক্ষেপ করলেই প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষতি।

হস্তক্ষেপ না করলেই বরং লাভ। দেখেও চুপ করে থাকার কিছু সুবিধা আছে। বড় দালান উঠবে, নতুন গাড়ি কেনা যাবে। এম্নেই কি দুর্নীতিতে আমরা এত এগিয়ে থাকি! কি দরকার হস্তক্ষেপ করার। মিডিয়ায় কিছু লেখালেখি হচ্ছে।

তাতো প্রতিবছরই হয়। তেমন অসুবিধা হয় না। সংবাদ পূর্ণাঙ্গ করার প্রচলিত ধারায় যারা কারণ জিজ্ঞেস করতে আসে তাদের বলে দিলেই হয়, অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে দেখবো। ওই বলা টুকুই। এরপর অন্য খবরের চাপে বছরের প্রথম মাসের অতিরিক্ত ফি নিয়ে রিপোর্ট বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে আর মাথা ঘামানোরও দরকার হয় না। তবে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একটু অন্যরকম। প্রচলিত মন্ত্রীদের সাথে কেন যেন তাকে অপরিচিত লাগে। আজ প্রথম আলো পত্রিকায় প্রথম পাতায় বড় শিরোনাম : বাড়তি টাকা ফেরত দিতে হবে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বাড়তি নেওয়া টাকা অবশ্যই ফেরত দেওয়া হবে। সাবাশ শিক্ষামন্ত্রী, সাবাশ। যারা ভাবছেন এটা এমন কি এত প্রশংসা করার মত কাজ হলো, মন্ত্রী তো এমন আদেশ দিতেই পারেন। সেটার করার জন্যই তো মন্ত্রী। নাহ ভাই।

আমাদের বাংলাদেশে কথা বলা সহজ। কিন্তু কাজ করে দেখানো কঠিন। আর এসব বাড়তি ফি আদায়ের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে নিজের পদ চলে যাওয়ার একটা ঝুঁকি থাকে, সেটা মন্ত্রীর ক্ষেত্রেও সত্য। আর্থিক সুবিধা নিয়ে কেউ চুপ থাকেন আবার পদ হারানোর ঝুকিতে এম্নেতেই মুখ বুঝে সহ্য করে যান। বিদ্যালয় এমপিও ভুক্তকরণের সময় অনেক সাংসদের অযোথচিত সুপারিশ আমলে নেননি বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী।

তখন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এক সভায় তাকে চরম সমালোচনায় পড়তে হয়। হায়রে দেশ! মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সংবাদ বাড়তি ফি নিয়ে সংবাদ করতে গিয়ে ঢাকার এক জনপ্রতিনিধি, মাননীয় সাংসদের হাতে লাঞ্চিত হয়েছেন সাংবাদিক। সেটার বিষয়ে কোন মন্ত্রী কিছু বলার সাহস করেননি। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী প্রকাশ্যে ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। খারাপ কিছু খারাপ বলার সাহস যখন দায়িত্বশীলদের কাছে থাকে না তখনই দেশের বারোটা বাজে।

আমাদের দেশে এ ব্যাপারটাই ঘন ঘন হচ্ছে। খারাপ কিছু বলার সৎ সাহস দেখানোর চেষ্টা করছিলেন ওবায়দুল কাদের ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। কিন্তু যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে ওই মন্ত্রণালয় ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে কথা বলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। অন্যদিকে রেল মন্ত্রী হওয়া সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও এখন অন্য বিষয়ে তেমন কথা বলেন না। স্কুলগুলোর বাড়তি ফি অনেক বড় প্রভাবশালীদের পকেটেও কিছু যায়।

সে প্রভাবশালীদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে এ ধরণের নির্দেশ দেওয়াটা বেশ কঠিন। সে কঠিন কাজটি করতে পারার কারণে অভিনন্দন শিক্ষামন্ত্রীকে। যেখানে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সীমান্তের ঘটনা নিয়ে সরকার চিন্তিত না। এমন ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটবে। সেখানে ভাল কিছু প্রত্যাশা করাটা দিবা স্বপ্নের মতই।

শিক্ষামন্ত্রীর ভাল কাজগুলো দেখে মনে হয় তিনি বাংলাদেশের মন্ত্রী তো!! নাকি স্বপ্ন দেখছি! মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা রইলো। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.