বাংলাদেশ বোটানিক্যাল গার্ডেন এখন ভাড়ায় এক নিরাপদ
ডেটিং জোন। কেবল ডেটিং জোনই নয় কেউ কেউ
বোটানিক্যাল গার্ডেনকে অভিহিত করছেন
রাজধানীর সেক্স প্লেস হিসেবে। গার্ডেনকে ভাড়ায়
ডেটিং জোন বানিয়েছে এখানকার কিছু মাস্তান
টাইপের লোক। তাদের পরিচিতি ইজারাদারের লোক
হিসেবে। তাদের একজন প্রতিবেদককে বলছিলেন, মামু
গরম মাথা ঠাণ্ডা করার ব্যবস্থা করবো আমি,
লগে করে লইয়া আইবেন শুধু।
বাকি সব ট্যাকেল
করবো আমি, এই চুমাটুমা একটু আধটু ডলাডলি ৩শ’
আর আসল কাজের রেট একটু বেশি ৫শ’ পর্যন্ত।
আমি গরিবউল্লা কথা দিলাম, কোন ঝামেলা নাই।
নিরিবিলি ঝোপের আড়াইলে বসাইয়া দিমু, কোন
হালায়রে এদিক দিয়া হাঁটতে দিমু না, সব হালা ওপর
দিয়া হাঁটবে, বিশ্বাস না হয় নিচে পানির কিনারে এক
ঝলক তাকায়া দেখেন তারা কত আরামে চালাইতেছে,
আমি কথা রাখার লোক, দেখলেন না আপনাদের
ওদিকে যেতে দিলাম না। মামু কিছু মনে করবেন না,
একটু ঘুরে যান, সোজা ওপর দিয়ে যান, ঝোপঝাড়ের
দিকে যাবেন না। এটা আমার এলাকা, মন
চাইলে চইলা আইবেন।
কথাগুলো বলে হাতে থাকা বাঁশের চিকন
লাঠিটা ঘোরাতে ঘোরাতে চলে গেলেন গরিবউল্লা।
বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রথম গেট পেরিয়ে দ্বিতীয়
টিকিট চেকিং গেটের সামান্য দূরে গাছের নিচের
দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন এক
চল্লিশোর্ধ্ব রমণী। পরনে অফ ওয়াইট কালারের
শাড়ি। এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছেন তিনি, এ্যাই
তুমি কোথায় জলদি আসো,
আমি ছেলেকে কোচিংয়ে দিয়ে এসেছি, সময় মাত্র তিন
ঘণ্টা। ও কুড়িগ্রাম গেছে।
ও তুমি গেট পর্যন্ত
এসে গেছো। গুড। আমি রানার
ওখানে মানে রানা যেখানে ডিউটি করে,
আরে বুঝলা না, গত শুক্রবার যেখানে বসেছিলাম,
হিজল গাছের আড়ালে। ওই জায়গাটা ভাল, ওখানে কেউ
যায় না। না না পেপার আনা লাগবে না, ওরা পেপার
বিক্রি করে, ওদের কাছে থেকে নিয়ে নেবো।
ওকে।
ওকে। রাখলাম। সোজা ওখানে চলে আসো।
আমি চলে যাচ্ছি।
ফোনটা ভ্যানিটি ব্যাগে রেখে মধ্য
বয়সী ওই রমণী সোজা চলে গেলেন ঝোপের কাছে।
মিনিট কয়েকের ব্যবধানে সেখানে এলেন প্রায় একই
পুরুষ। এক পিচ্চির কাছ থেকে প্রায় কেজিখানেক
পেপার নিয়ে মাটিতে বিছিয়ে অন্তরঙ্গ
পরিবেশে বসে পড়লেন দু’জন। জাতীয় উদ্যান।
পরিচিত বোটানিক্যাল গার্ডেন হিসেবে।
মিরপুরের
ওই উদ্যানটি এখন রাজধানীর সেক্স প্লেস
হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেছে। বোটানিক্যাল
গার্ডেনের প্রবেশপথ থেকে একটি সোজা পাকা সড়ক
চলে গেছে উদ্যান কর্তৃপক্ষের অফিস পর্যন্ত।
প্রবেশদ্বার থেকে কয়েক কদম এগোলে পাকা সড়কের
পূর্ব পাশ দিয়ে একেবারে উত্তরের শেষ
মাথা পর্যন্ত লেকের পাড় দিয়ে অসংখ্য ঝোপঝাড়।
ওই সব ঝোপঝাড়ের আড়ালে জোড়ায় জোড়ায় কপোত
কপোতী। শুধু এখানেই নয়, উদ্যান কর্তৃপক্ষের
অফিসের পেছনে, পদ্মপুকুর পাড়ে ওরা আছে সব
খানে।
কোন ঝোপঝাড়ের দিকে প্রবেশাধিকার নেই
সাধারণ দর্শনার্থীদের। ওদিকে যেতে চাইলে বাধা।
বাঁশের ছোট ছোট চিকন লাঠি হাতে পাঁচ-সাত জন
করে যুবক দাঁড়িয়ে। ওরা পাহারাদার। হাতের
লাঠি হচ্ছে ওদের পরিচিত।
লাঠি হাতে দেখলে বুঝে নিতে হবে ওরা উদ্যান
ইজারাদারের নিয়োজিত লোক।
পুরো উদ্যানে লাঠি হাতে ওদের সংখ্যা পঞ্চাশ
থেকে ষাট জন। ওদের কাজ গার্ডেনের দর্শনার্থীদের
নিরপাত্তা বিধান করা, যাতে কেউ
উদ্যানে গিয়ে প্রতারণার কবলে বা ছিনতাইয়ের
কবলে না পড়ে। সরজমিন বোটানিক্যাল গার্ডেন
ঘুরে দেখা গেল লাঠি হাতে ওই বাহিনী। পাঁচ-সাত
জনের গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঝোপঝাড় এলাকায় বিশেষ
দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে ব্যস্ত।
দেখা গেল
বেশ কয়েক জায়গায় দল বেঁধে বসে সিগারেট
ফুঁকছে তারা। তাদের সামান্য দূরে ঝোপের
মধ্যে অপত্তিকর অবস্থায় তিন জোড়া প্রেমিক
যুগল। ও দিকটায় এগোতে চাইলে দল
বেঁধে বসা যুবকদের একযোগে উচ্চারণ- এদিকে নয়,
ওদিকে যান। তাদের ভাবগতিক
দেখে ওদিকে এগোতে সাহস পায় না কেউ।
দেখা গেল বোটানিক্যাল
গার্ডেনে ডেটিং করতে আসা বেশির ভাগই মধ্যবয়সী,
এখানে টিনএজার প্রেমিক জুটির সংখ্যা কম।
বোটানিক্যাল গার্ডেনের এক কর্মচারী বললেন,
দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছি, একটা বিষয় লক্ষ্য করি,
এখানে যারা ফিলিংস নিতে আসে তাদের বেশির ভাগই
পরকীয়া করে, এখানে স্কুল-কলেজের ছেলে-
মেয়েরা কম আসে। ওই কর্মচারী স্বীকার করেন,
ইজারাদার কোম্পানি তাদের বেশি আয়ের জন্য এখন
এখানে সেক্স পর্যন্ত ওপেন করে দিয়েছে। পরিবেশ
এখন নোংরা হয়ে গেছে। ২০৮ একর জায়গার ওপর
প্রতিষ্ঠিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে আছে প্রায় ৮শ’
জাতের বৃক্ষরাজি, তাদের পরিচর্যার জন্য আছেন
১শ’ কর্মচারী। জাতীয় উদ্ভিদ
উদ্যানটি বনবিভাগের অধীনে।
প্রতি বছর উদ্যানের
প্রবেশদ্বার ইজারা দিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা আয়
করে সরকার। গত বছর ১
কোটি টাকা দিয়ে উদ্যানের প্রবেশদ্বারসহ
পার্কিং ইজারা নিয়েছেন হালিম এন্টারপ্রাইজ নামের
একটি প্রতিষ্ঠান। সরজমিন ঘুরে দেখা গেল বড়ই
অসহায় উদ্যানের নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি। এখন
আর উদ্যানের শোভা উপভোগ করতে বা বৃক্ষরাজির
সঙ্গে পরিচিত হতে উদ্যানে কেউ যান না। আমাদের
জাতীয় ওই উদ্যানটি এখন একটি ভাড়ায়
চলা ডেটিং জোনে পরিণত হয়েছে।
পরিবার পরিজন
নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন দেখতে এসে বিব্রতকর
পরিস্থিতির
মুখে পড়তে হবে বলে অনেকে এখানে আসতে চান না।
গতকাল মা ও ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে এসে বিব্রতকর
পরিস্থিতির মুখে পড়ে ছিলেন ঢাকায় কর্মরত একজন
পুলিশ কর্মকর্তা। শেষে উদ্যান কর্তৃপক্ষের
অফিসের কাছে পরিবারের লোকদের নিয়ে কিছু সময়
কাটিয়ে ফিরে যান তিনি। এ বিষয়ে প্রধান সংরক্ষক
বলেন, এমন কোন অভিযোগ কেউ করেনি, যদি এমন
ঘটনা ঘটে তবে নিশ্চয়ই সেটা নিয়ন্ত্রণ
করা দরকার। আমি গার্ডেনের বিষয়টি দেখবো।
কপি পেস্ট ফরম (ব্রেকিং নিউজ (Breaking News))
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।