আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -দোস্ত মেয়েটা কেমন রে ?
নিলয়ের কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম ।
-কোনটা ?
-আরে নিশির ডান পাশের মেয়েটাকে দেখ ।
আমি তাকালাম । তবে ডান পাশের মেয়েটার দিকে না ।
নিশির দিকে ।
কতদিন পর নিশিকে দেখতে পেলাম !
আগে এমন কোন দিন ছিল না যে নিলয়দের বাড়ি আমি আসতাম না । কিন্তু ঐ ঘটনা টার পর থেকে এই বাড়িতে আসতেই কেমন জানি অস্বস্থি লাগত ।
নিলয় শত বলার পরও আসতে পারতাম না ।
কিন্তু আজকে আসতেই হল । আজকে নিশির জন্মদিন ।
নিলয় আমাকে এক প্রকার জোর করেই নিয়ে এল । নিলয়ের মাও ফোনে আসতে বলল । তারপর আর মানা করতে পারলাম না ।
রাতে কেক কাটার পর এখন আমরা নিলয়দের ছাদে বসে গল্প করছি ।
নিশির দুজন বন্ধুও এসেছে ।
তাদেরই একজন কে পছন্দ হয়েছে নিলয়ের ।
-কি বললি না কেমন ?
-হু .... হুম ! হ্যা ভাল ।
-ভাল মানে কি খুব ভাল ।
আমি বললাম
-নিশিকে বল ও একটা ব্যবস্থা করবে ।
-আর বলিস না ।
বলেছিলাম না আবার । বোন হয়ে ভায়ের একটু উপকার করবে তা না । সাফ বলেদিয়েছে এসব তাংফাং চলবে না । তা না হলে মাকে বলে দেবে ! এখন কোথাই যাই বলতো !!
-হবে একটা ব্যবস্থা হবে ।
এমন সময় দেখলাম নিশি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে ।
কাছে এসে বলল
-ভাইয়া ঝুমুরকে একটু বাসায় পৌছে দিয়ে আয়তো । ওর বাসা থেকে ফোন এসছে ।
আমি বললাম
-চল আমিও যাই । রাত হয়ে যাচ্ছে । হলের গেট বন্ধ হয়ে যাবে ।
নিশি বলল
-আপনাকে আম্মু খেয়ে যেতে বলেছে ।
নিলয় বলল
-আরে হ্যা তাই তো । মা তো তাই বলেছে । আর আজ না হয় না গেলি ।
তারপর নিশিকে বলল
-যা বন্ধুকে নিচে নামতে বল আমি আসছি ।
নিশি একটু দুরে যেতেই নিয়ল বলল
-তুই কাবাবের মধ্যে হাড্ডি হতে যাচ্ছিস ক্যান ?
-মানে কি ?
-মানে বুঝিস না ! তুই থাকলে কি আর শান্তি পাবো । তুই থাক । আমি ওর সাথে একা যাই ।
নিলয় চলে গেল ।
ছাদের ও পাশটাতে নিশি আর ওর আরেক বান্ধবী এখনও দাড়িয়ে গল্প করছে ।
হঠাৎ আমার অস্বস্থি শুরু করলো ।
মনে হল যদি এখন নিশি এদিকে আছে ?
ঐ দিনের কথা জিজ্ঞেস করে ? তাহলে ? আমিতো নাই হয়ে যাবো ! আমি এই কথাটা ভাবতে না ভাবতেই দেখলাম নিশি আমার দিকে এগিয়ে আসছে ।
আমি ছাদের রেলিংয়ের উপর বসে ছিলাম । নিশি ঠিক তার পাশে এসে দাড়াল । রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রইল কিছুক্ষন ।
মনে হল কথা গুলো গুছিয়ে নিচ্ছে । তারপর বলল
-আপনি এখন আর আমাদের বাড়ি আসেন না কেন ?
এই প্রশ্নটা করার মানে কি ? নিশি খুব ভাল করেই জানে আমি কেন আর আসি না ।
এরকম ন্যাকামো মার্কা প্রশ্ন করার কোন মানে আছে ?
নিলয়ের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম থেকেই আমার বন্ধুত্ব । বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছে বাসা হওয়াতে প্রায়ই ওদের বাসায় আসা হত । আন্টিও নিজের ছেলের মতই আমাকে আদর করা শুরু করা করে ।
নিশিকে প্রথম প্রথম যখন দেখতাম কিছু মনে হত না । বন্ধুর ছোট বোন হিসাবেই দেখতাম ।
কিন্তু আস্তে আস্তে লক্ষ্য করলাম নিশির প্রতি অনুভূতি গুলো কেমন যেন পরিবর্তন হচ্ছে । কিছু দিন পর আমি বুঝতে পারলাম যে আমি নিশির প্রেমে পড়েছি ।
তারপর থেকে নিলয়ের বাসায় যাওয়ার পরিমানটা বেড়ে গেল ।
যেতাম প্রায় প্রতি দিনই । নিশিকে দেখতাম । টুকটাক কথা বলতাম ।
আহা !
কত চমৎকার অনুভূতিই না ছিল !!
কিন্তু এতো কিছুতে যেন মন ভরছিল না । মনে হচ্ছিল ও যদি একটু বুঝতো !
তাই একদিন ঠিক করলাম যে নিশিকে বলব সব ।
আমার মনের কথা । তার প্রতি আমার অনুভূতির কথা ।
ঐ দিনের কথা আমার আজও মনে পড়ে । আমি ওর কলেজের সামনে দাড়িয়ে ছিলাম । হাতে বেশ কিছু গোলাপ আর রজনীগন্ধা নিয়ে ।
কিছুক্ষন পরেই ও বেড়িয়ে এল ।
আমি যখন ওকে ফুল গুলো দিলাম নিশি তখন বেশ খানিকটা চমকালো । কিছুক্ষন কি যেন ভাবলো । তারপর বলল
-অপু ভাই আমি কখনও এমন করে ভাবি নি আপনার ব্যাপারে । আর আমার এসব পছন্দও না ।
নিশি ফুল গুলো ফেরৎ দিয়ে চলে গেল ।
তারপর থেকে নিলয়দের বাসায় যাওয়া আমার একদম কমে গেল । কেমন জানি একটা অস্বস্তি লাগতো সবসময় ।
আর একটা ভয় ছিল সব সময় যে নিশি যদি নিলয়কে সব কিছু বলে দেয় ?
অথবা ওর মাকে ?
আমার ব্যাপারে কি ভাববে ! লজ্জায় শেষ হয়ে যাবো !
তাই মোটামুটি ওদের বাসায় আসাটা বন্ধ করে দিলাম ।
নিশি আবার প্রশ্নটা করলো ।
-কই বললেন না তো এখন আর কেন আসেন না ।
-না এমনি । ঠিক সময় হয় না আর কি !
-আগে তো ঠিক সময় হতো । আমি খুব ভাল করে জানি আপনি আমার উপর রাগ করে আর আসেন না ।
নিশির কথায় কেমন একটা অভিমানের সুর ।
আমি অবাক না হয়ে পারলাম না । ঐ দিনকার সুর আর আজকের সুর কেমন যেন এক না । নিশি আবার বলল
-আসলে আমি নিজেও ঠিক বুঝতে পারি নি । আগে আপনাকে প্রতিদিন দেখতাম তো তাই কিছু মনে হয় নি । কিন্তু আপনি যখন আমাদের বাসায় আসা বন্ধ করে দিলেন মনে হত কি যেন নেই ! মনে হত আমি যেন কি একটা মিস করছি ! একটা সময় পরে আমি বুঝতে পারলাম যে আমি আপনাকে মিস করতে শুরু করেছি ।
আমি আপনাকে ....
নিশি কথাটা শেষ করলো না ।
কিন্তু আমি ঠিকই বুঝতে পারলাম ঐ শূন্য স্থানে ও আসলে কি বলতে চেয়েছিল ।
নিশি আবার বলল
-আগের মত আসবেন আমাদের বাসায় । কেমন?
-আচ্ছা ।
তারপর আমার দিকে একটা কাগজ বের করে দিয়ে বলল
-আর এটা আপনার জন্য ।
বলে নিশি আর দাড়াল না । এক প্রকার দৌড়েই চলে গে্ল । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।