ভালো।
আতঙ্কের অপর নাম কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাহউদ্দিন খান। রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, আইনজীবী, ছাত্রনেতা, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি শ্রেণীর মানুষ প্রতিনিয়ত তার নির্যাতন কিংবা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কোতোয়ালি থানার অধীনে এমন কোন পরিবার কিংবা ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন যে তারা কোন না কোন সময় ওসি সালাহউদ্দিনের নির্যাতন কিংবা হয়রানির শিকার হননি। পুরান ঢাকায় ব্যবসা শুরু করতে হলে আগেই তাকে জানাতে হয় এবং মাস শেষে থানায় গিয়ে তাকে মাসোহারা দিয়ে আসতে হয়।
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ব্যবসার লাভের একটা নির্দিষ্ট অংশ চলে যায় তাকে মাসোহারা দিতে। ব্যবসায়ীরা আরও অভিযোগ করেন, যারা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন তাদের বিরুদ্ধে নানারকম মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। চাঁদাবাজির কারণে পুরান ঢাকার অনেক ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া তিনি পুরান ঢাকার বিভিন্ন গণপরিবহন ও পরিবহন স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, হোটেলে চাঁদাবাজি, ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী, চশমা ও ঘড়ি ব্যবসায়ী, শাঁখারিবাজার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও মাসোহারা নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওসি সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আদালতপাড়ায় সন্ধ্যার পর যে ভাসমান দেহকর্মীরা বসে তাদের কাছ থেকে মাসোহারা নেন তিনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে হামলা, ১৫ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, আদালতপাড়ায় আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের ওপর যে হামলা হয়েছিল তার নেতৃত্বে ছিলেন ওসি সালাহউদ্দিন। সর্বশেষ মঙ্গলবার আদালতপাড়ায় এক তরুণীকে শ্লীলতাহানির পর সাংবাদিক এবং আইনজীবীদের ওপর যে পুলিশি হামলা হয়েছে তারও নেতৃত্ব দেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও রমনা জোনের এসি শিবলি নোমানের (সালাহউদ্দিনের মামা) দাপটে আর গোপালগঞ্জের পরিচয়ে তিনি একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছেন। তার কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছেন পুরান ঢাকাবাসী। তারা দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, নীতিহীন ওসির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পরই সালাহউদ্দিন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পান।
অল্প দিনের মধ্যে তিনি পুলিশের সিনিয়র অফিসারদের খুব কাছাকাছি চলে যান। তাছাড়া তার দাপটে অনেক সিনিয়র কর্মকর্তাও তাকে অনেকটা সমীহ করে চলে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সালাহউদ্দিন একের পর এক অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান কোতোয়ালি থানায় তার এক আÍীয়ের খবর নিতে গেলে সালাহউদ্দিন তাকে লাঞ্ছিত করেন। শুধু তাই নয়, ওই আইনজীবীকে তার কক্ষে নিয়ে এক ঘণ্টা আটকে রাখে এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন।
চলতি বছরের ২১ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী এলাকার ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের নেপথ্যে ছিল কোতোয়ালি থানা পুলিশের চাঁদাবাজি। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ কৌশলে ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে। পুলিশের টিয়ারশেলে সুনীল ঘোষ নামের এক ব্যাংক কর্মচারীর মৃত্যুর ঘটনাকে সালাহউদ্দিন অপমৃত্যুর মামলা বলে চালিয়ে দেয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডাকাত শহীদের কাছ থেকে মাসোহারার বিনিময়ে ওসি সালাহউদ্দিন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এছাড়া সালাহউদ্দিন ভিক্টর পরিবহন, আজমেরী পরিবহন, তানজিল, স্কাইলাইন, ইউনাইটেড পরিবহনসহ বিভিন্ন পরিবহনের মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে থাকে।
এছাড়া ভিক্টোরিয়া পার্ক সংলগ্ন বিভিন্ন পরিবহনের বাসস্ট্যান্ড, লেগুনা স্ট্যান্ড ও বাহাদুরশাহ পরিবহন থেকে চাঁদা উঠান। ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী, চশমা ও ঘড়ি ব্যবসায়ী, শাঁখারিবাজার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের থেকে সালাহউদ্দিন মাসে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার চাঁদা আদায় করে থাকেন। তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ী ঢাকা জজকোর্টে তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করেছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।