আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাস্থ্য খাতে থ্রিজি টেকনোলজি!!

মনের মহাজন খুঁজে ফিরি.... ডাক্তাররা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চেম্বারে বসে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন। বড় ডাক্তারদের সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা, এমনকি ১২টা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হয়। মেডিকেল কলেজে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নেয়া, হাসপাতালে রোগী দেখা ও অপারেশন করা ছাড়াও তাদের বিকালে প্রাইভেট চেম্বারে বসতে হয়, উপরন্তু সংসারের ব্যক্তিগত কাজও থাকে। অনেক ডাক্তার আছেন যারা প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার পথে নিজের গাড়িতে বসেই অথবা অবসর সময়ে নিজস্ব ল্যাপটপ ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করে থাকেন। আবার অনেক চিকিত্সক ছুটির দিনে ঢাকার বাইরে গিয়ে চিকিত্সাসেবা প্রদান করলেও কারও কারও পক্ষে সময়ের স্বল্পতায় ও অবস্থানগত কারণে তা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।

ডাক্তারি পেশায় উপার্জনের পাশাপাশি অনেকের ইচ্ছা থাকে নিজ গ্রামের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা দেয়া। যারা এই সেবা দিতে পারেন না, তাদের মনের মধ্যে একটি চাপা কষ্ট বারবার পীড়া দেয়। কবে আসবে সেদিন, যেদিন আধুনিক ডিজিটাল চিকিত্সা ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রামে ফেলে আসা মা, বাবা, ভাই, বোন, আত্মীয়-স্বজনদের সেবা দেয়া যাবে? সেই স্বপ্ন পূরণের জন্যই স্বাস্থ্যখাতে আসছে থ্রিজি টেকনোলজি! স্বাস্থ্যখাতে থ্রিজি বা থার্ড জেনারেশন টেকনোলজি চিকিত্সকদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে সরকারের একার পক্ষে গ্রামে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে উন্নত চিকিত্সাসেবা এই স্বল্পসংখ্যক চিকিত্সকের মাধ্যমে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোয়ও ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে এদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে আধুনিক চিকিত্সাসেবা পৌঁছে দেয়া যাবে।

গত ১০-১২ বছরে আমাদের এই নদীমাতৃক দেশে রাস্তাঘাট, ট্রেন ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থায় যথেষ্ঠ উন্নতি হয়েছে, উন্নতি হয়েছে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায়ও। এই টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে থ্রিজি টেকনোলজির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতকে আরো আধুনিকায়ন করা যেতে পারে। বাংলাদেশে থ্রিজি টেকনোলজি আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। এখন হয়তো এই প্রত্যাশা পূরণ করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনকি ভারত ও নেপালে থ্রিজি টেকনোলজির মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতকে ডিজিটাল করার পরিকল্পনা চলছে।

যেহেতু বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতাল মেশিনারি, যেমন—এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, আলট্রাসনোগ্রামসহ অনেক মেশিন কম্পিউটার দ্বারা পরিচালিত হয় এবং ডাটা সরাসরি সার্ভারে সংরক্ষণ করা যায়, সেহেতু বর্তমান সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলো থ্রিজি টেকনোলজি ব্যবহারের সুযোগ পেলে দেশের স্বাস্থ্যখাতে অনেক উন্নতি ঘটবে। থ্রিজি টেকনোলজি কী? থ্রিজি টেকনোলজি এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে ছবি ও কথা একই সঙ্গে মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে অত্যন্ত অল্প খরচে অন্য জায়গায় পাঠানো সম্ভব। এই টেকনোলজি ব্যবহার করে সিটি স্ক্যান, এমআরআই, আলট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন ল্যাবরেটরি টেস্ট রিপোর্ট চিকিত্সকরা সরাসরি কোনো মেশিন থেকে কম্পিউটার সার্ভারের মাধ্যমে নিজস্ব ল্যাপটপে সংরক্ষণের মাধ্যমে দূরের কোনো রোগীকে চিকিত্সা প্রদান করতে পারবেন। এই টেকনোলজি ব্যবহার করে টেলিমেডিসিন ও কম্পিউটারাইজড হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে আরও গতিশীল করা যেতে পারে, যা ভবিষ্যত্ স্বাস্থ্যখাতকে করতে পারে অধিকতর উন্নত। হেলথ সিস্টেম অটোমেশনে অসুবিধাগুলো বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত স্বাস্থ্যব্যবস্থা একটি নতুন ক্ষেত্র।

এক্ষেত্রে কাজ করতে গেলে নিম্নলিখিত অসুবিধা দেখা যায়— ১. প্রযুক্তিগত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় কম্পিউটার বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে। ব্যাংক ও টেলিযোগাযোগ খাতে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হলেও স্বাস্থ্যখাতে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের তেমন মূল্যায়ন করা হয় না। তাই মেধাবী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়াররা এই ব্যবস্থায় আসতে চায় না। ২. অধিকাংশ হাসপাতালগুলোয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ডাক্তার এবং তাদের হাসপাতালের কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের ওপর অভিজ্ঞতা নেই। এজন্য তারা ওই সিস্টেমটি হাসপাতালে কার্যকর করতে চান না।

তবে অনেক তরুণ ডাক্তার স্বাস্থ্যখাতে ডিজিটাল সিস্টেম করা সময়ের দাবি বলে মনে করেন। ৩. সরকারের পাশাপাশি প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে এই সিস্টেম চালু করার জন্য যথেষ্ট আন্তরিক হতে হবে। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে একটি করে কম্পিউটার ইউনিট করা যেতে পারে। ৪. সাধারণত রোগীরা সরাসরি ডাক্তারের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র গ্রহণে অভ্যস্ত। প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগীদের চিকিত্সা গ্রহণের সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. কম্পিউটারাইজড হাসপাতাল সিস্টেমের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কোর্স চালু করা যেতে পারে। ৬. মেডিকেলে শেষ বর্ষে ইন্টার্নি করার সময় অন্যান্য ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি কম্পিউটারের ওপর বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ৭. কোনো একটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল তৈরির আগে এ খাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকতে হবে এবং আর্কিটেকচারাল ডিজাইনে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৮. প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কম্পিউটারাইজড হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করার পর ওই সিস্টেমগুলোকে একটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্কের আওতায় আনা যেতে পারে। বলা যেতে পারে, দেশে যেহেতু থ্রিজি টেকনোলজি যেহেতু খুব শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে, তাই এখনই সময় এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের পশ্চাত্পদতা দূর করার।

আমার এই লেখাটি আজ ২৯ মে ২০১২ মঙ্গলবার দৈনিক আমারদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে| ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।