প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতি বছর ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এদিনে বিশ্ববাসীর সচেতনতার জন্য বিশ্বব্যাপী দরকারি বা আলোচিত কোন বিষয়কে থিম হিসেবে গ্রহন করে প্রচারণা চালায়। যেমন গত বছর থিম ছিল অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা। এবছরের থিম হল ‘এইজিং এন্ড হেলথ : গুড হেলথ এডস লাইফ টু ইয়ার’, মানে হল ‘বার্ধক্য ও স্বাস্থ্য : সুস্বাস্থ্য জীবন দীর্ঘায়িত করে’।
চিকি?সা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মানুষের আয়ু বেড়েছে, কমেছে মৃত্যুহার।
ফলে দিন দিন বয়স্কদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ১৯৮০ সালের পর বয়স্কদের সংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে বয়স্কদের সংখ্যা ২০০ কোটিতে পৌঁছবে। এদের প্রায় ৮০ ভাগের বাস হবে নি¤œ ও মধ্য আয়ের দেশে। বিশ্বব্যাপী বয়স্ক লোকের সংখ্যা বাড়ায় একদিকে তারা তাদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করছেন।
কিন্তু অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতার কারণে তারা অন্যের গলগ্রহে পরিনত হয়েছেন। বয়সের কারণে নিজের কাজগুলো ঠিকমত না করতে পারায় তারা অন্যের মুখাপেক্ষী হন। সংস্কৃতির পরিবর্তনের কারণে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবার হচ্ছে। নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত সবাই। আগের দিনের মত বয়স্কদের দেখাশোনা করার মত পরিবারে কাউকে দেখা যায় না।
ফলে বিশ্বব্যাপী সরকারি বা বেসরকারিভাবে পরিচালিত বৃদ্ধাশ্রমে বয়স্কদের আবার শারীরিক অক্ষমতার কারণে আয় না করার কারণে অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। ভবিষ্যতে বার্ধক্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। শুধু তাই নয়, বৃদ্ধ বয়সে একাকী চলতে নানান সমস্যার মুখোমুখি হন তারা। অনেকক্ষেত্রে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্জিত হন। এ কথা মাথায় রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবার বাধ্যর্ক্য ও স্বাস্থ্যকে থিম হিসেবে গ্রহন করেছে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন দেখা দেয়। এক সময়ের শক্তি সামর্থ্য যুবক হয়ে ওঠেন অক্ষম, চলশক্তিহীন। যে চোখ প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হয়ে গান গল্প রচনা করত তা ঝাপসা হয়ে এখন শুধুই আবছা দেখে। যে হৃদয় সাহসে বলীয়ান হয়ে ঝাপিয়ে পড়ত অনাচার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে নিজের ঘাতকে পরিনত হয়। যার মস্তিষ্কপ্রসূত আবিষ্কার দেশ ও দশের কল্যানে কাজ করছে তা আজ হারিয়ে গেছে অতল গহরবে।
স্মৃতিশক্তি লোপ তাকে করেছে অসহায়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরণের রোগবালাই বেশি দেখা দেয়। এর মধ্যে চোখের ছানি, গ্লোকোমা, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, এজ রিলেটেড মেকুলার ডিজেনারেশন। হৃদপিন্ডের রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার কারণে দেখা দেয় হার্ট অ্যাটাক। ডায়াবেটিস তো তাদের বড় ধরণের ঘাতক।
এ থেকে হতে পারে কিডনি রোগ। মেয়েদের সবচেয়ে ভোগায় অস্টিওপোরোসিস। হাড়ের ঘনত্ব কমে এটি দেখা দেয়। সাধারনত মেনোপজের পরে এটি বেশি হয়। অস্টিওপোরোসিস থেকে সবচেয়ে মারাত্মক যে জটিলতা দেখা দেয় তা’হল হিপ ফ্রাকচার বা নি¤œাঙ্গের হাড় ভেঙে যাওয়া।
দেখা গেছে ১৯৯০ সালে বিশ্বব্যাপী ১.২ মিলিয়ন লোকে হিপ ফ্রাকচার হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৬.৪ মিলিয়ন হবে। আর এর ৮০ ভাগই নারী। হিপ ফ্রাকচার হলে বৃদ্ধদের কষ্টের পরিসীমা থাকে না। তারা পুরোপুরি বিছানায় পড়ে যান।
এমনকি মারাও যেতে যান।
চলাচলে অক্ষমতা বয়স্কদের সবচেয়ে বড় শত্রু। পেশীর শক্তি কমে যাওয়া, অপুষ্টিহীনতা, রক্তস্বপ্লতা, চোখে কম বা না দেখা, বিভিন্ন রোগে-শোকে ভোগার কারণে তারা চলাচলে শক্তি হারিয়ে ফেলেন। এতে করে তাদের অন্যদের ওপের বেশি নির্ভরশীল হতে হয়। যদিও এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
তারপরও এ প্রক্রিয়া দেরি করতে নিয়মিত ব্যায়াম করার পাশাপাশি পুষ্টকর খাবার খেতে হবে। ব্যায়াম বলতে হতে পারে মুক্ত বাতাসে হাটাহাটি, ফ্রি এক্সাসাইজ, সাঁতার কাটা। যৌবনকাল থেকে ব্যায়াম করলে বৃদ্ধ বয়সে ভালো ফল পাওয়া যায়। হাঠা? করে পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়া বয়স্কদের একটি বড় সমস্যা। কানের রোগ যেমন মেনিয়ারর্স ডিজিজ, বিনাইন প্যারোক্সিসমাল ভার্টাইগো, ল্যাবিরিনথাইটিস, শরীরের ব্যালেন্স না ধরে রাখতে পারা, অমসৃন তল, পিচ্ছিল তলের কারণে বয়স্করা পড়ে যান।
এটি প্রতিরোধ করতে তাদের নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। চিকি?সকের পরামর্শ চলতে হবে। তাদের চলার পথ যেন অসমৃন বা পিচ্ছিল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
পুষ্টিকর খাবার বয়স্কদের জন্য চ্যালেঞ্জ। দেখা গেছে বিশ্বব্যাপী ৮০ ভাগ বয়স্কই পুষ্টিকর খাবার পান না।
এতে তাদের শরীরের ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া বেশি পরিমানে চলতে থাকে। শুধু তাই নয় এখনও আমাদের মত গরীব দেশেগুলোতে এ বয়সেও অনেককে সংসারের হাল ধরতে দেখা যায়। ফলে তাদের কাছে পুষ্টিকর খাবার অধরাই থেকে যায়। তারপরও তাদের পুষ্টিকর খাবারের দ্বায়িত্ব পরিবারের সদস্যদের। খাবার হতে হবে সুষম।
প্রতিদিনের খাবারে পর্যাপ্ত পরিমানে ফলমুল ও শাকসবজি থাকতে হবে। পানি পান করতে হবে প্রচুর পরিমানে। চর্বি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করতে হবে। আমিষজাতীয় খাবার খেতে হবে।
প্রতিদিন মাছ-মাংসের দরকার নাই। ডাল আমিষের ঘাটতি মেটাতে সক্ষম। ডালকে তাই গরীবের মাংস বলে। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট সেবন করতে হবে।
অস্টিওপোরেসিস থেকে রক্ষা পেতে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিজেকে কর্মক্ষম রাখতে হবে। অ্যালকোহল ছোয়াও যাবে না।
বয়স বেশি হলেই তারা অপাংক্তেয় হয়ে যান এ ধারনা ঠিক নয়। তাদের অভিজ্ঞতা ও মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। তাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।
তাদের আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে। অসংক্রামক ক্রনিক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য রোগের চিকি?সা সহজলভ্য করতে হবে। সরকারিভাবে তাদের প্রতিপালনের ব্যবস্থা করতে হবে। বয়স্করা সমাজের বোঝা নন।
তাদের ভালবাসায় আমরা এ পর্যায়ে। আমাদের সেবা পাওয়া তাদের অধিকার। পিতামাতাকে অবহেলা কোন ধর্মেই গ্রহনযোগ্য নয়। আজকে যারা যুবক তারাও একদিন এ অবস্থায় অবতীর্ণ হবেন মনে রাখতে হবে সবার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।