সাধারণ অর্থে দেহের দাবীকে প্রবৃত্তি এবং আত্মাকে বিবেক বলা হয়ে থাকে । মানুষ যখনি বিবেকের বিপরীতে কাজ করে তখন সে তাকে দংশন করে থাকে । সহজাত প্রবৃত্তি একটি জাতির অন্তর্ভুক্ত সবার মধ্যেই বিদ্যমান থাকে, শুধু ব্যক্তিবিশেষ বা প্রাণীবিশেষের নয় এবং এদের সহজাত প্রবৃত্তি বলা যায় না । ধূমপান, চা-পান মাদকদ্রব্য বা নেশাদ্রব্য গ্রহণ ইত্যাদি এগুলো জন্মগত নয় বা বংশপরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত নয় ।
এসব প্রবৃত্তি নিজের চেষ্টায় অর্জিত হয়।
কিন্তু পাখির বাসা তৈরি করার প্রবৃত্তি, শিশুর স্তন্য পানের প্রবৃত্তি-এগুলো হলো সহজাত প্রবৃত্তি । প্রাণী এগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করে । মানুষের মধ্যে এমন কতকগুলো সহজাত প্রবণতা আছে যেগুলো মানুষের কি ব্যক্তিগত, কি সমষ্টিগত সব রকম চিন্তা এবং কার্যের প্রয়োজনীয়তার উৎস । মাঝে মাঝে মনুষ্যত্বের প্রাণীর আচরণের মধ্যে এমন অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায় যে তার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না । কোনো কোনো ক্ষেত্রে বানর তার মৃত সন্তানের মৃতদেহটি বহন করে দিনের পর দিন ঘুরে বেড়ায় ।
বর্তমান বিশ্ব মানুষের জৈবিক ও দৈহিক চাহিদার পূরণের ক্ষেত্রে দুভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে । এক শ্রেণী দৈহিক ও জৈবিক চাহিদাকে মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং একেই তারা পার্থিব জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেছে । ‘মানুষ কখনো প্রবৃত্তি থেকে আলাদা হতে পারবে না, যতদিন সে আছে ততদিন তার প্রবৃত্তিও আছে, এর থেকে মুক্ত হওয়া অসম্ভব, তাই ইসলাম তাকে প্রবৃত্তি থেকে আলাদা হতে বলেনি বরং তা নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দিয়েছে । যেমন তাকে নারীর প্রতি আসক্তি ত্যাগ করতে বলেনি, বরং তাকে বিবাহের নিদের্শ দিয়েছে এবং এর মাধ্যমে তার চাহিদা পূরণ করার বিধান দিয়েছে । ইসলাম এক থেকে চারটি পর্যন্ত বিবাহের অনুমতি দিয়েছে ।
এভাবেই ইসলাম মানুষের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে । যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানব জাতিকে নৈতিক পদস্খলন, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করা । ’ (জাম্মুল হাওয়া : ৩৫ ইবনে জাওজি) প্রেম-ভালবাসা মূলত ইমানের দুর্বলতার পরিচয় । কারণ, অন্তরে যখন ইমানের উপস্থিতি কম হয়, তখনই প্রবৃত্তি ও কু-কামনা বৃদ্ধি পায়, বরং তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে । ’ (আল-ফাওয়ায়েদ : লি-ইবনিল কাইয়ূম-পৃ : ৭৫)
বর্তমান পরিবেশ ও পরিস্থিতির ওপর দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, মানুষ বিভিন্নভাবে ও নানান পদ্ধতিতে প্রবৃত্তির অনুসরণ করছে ও শয়তানের দাসত্বে লিপ্ত হচ্ছে ।
কারো আছে নারীর প্রতি অবৈধ আসক্তি, কারো আছে সম্পদের মোহ, কারো আছে অভিজাত পোশাক-আশাকের লোভ, কারও আছে বাড়ি-গাড়ি ও ঐশ্বর্যের সীমাহীন আকাঙ্খা । কারও আছে ক্ষমতার লোভ । কারো আছে খেল-তামাশা ও গান-বাজনার অধীর আগ্রহ ইত্যাদি । প্রবৃত্তি মানুষের এ কামনা-বাসনাকে অতি সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে পেশ করে । তেমনিভাবে ভোগবাদ, বিলাসিতা, অহমিকা, অহংকার, ক্ষমতার লোভ, দাপট, অন্যায়, অত্যাচার, দুর্নীতি ইত্যাদি হলো প্রবৃত্তির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ও বৈশিষ্ট্য ।
আর এগুলো হলো প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার উপকরণ । যাদের মধ্যে প্রবৃত্তি প্রবল হয়, তারা মন্দ কাজের দিকে বেশি আকর্ষিত হয় । আর যত প্রকার আকর্ষণীয় খারাপ কাজ আছে, সবগুলোতেই তারা লিপ্ত হয় । কারণ এতে রয়েছে আনন্দ । বিবেক সেখানে পরাজিত ।
যাদের মধ্যে বিবেক প্রবল, তারা মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে, আর ভালো কাজ করে ।
ভাষা মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, কোন অর্জিত কৌশল নয় - এ মতবাদের প্রচলক হিসেবে পিংকার বিখ্যাত । বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা, সুপার হিট হলিউড মুভি, নামী-দামী ফ্যাশন ম্যাগাজিন কিংবা চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপনের সাহায্যে তারা মুসলিম বিশ্বেও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করছে তাদের মুক্ত-স্বাধীন নারীদের । তাদের ইলেক্ট্রনিক আর প্রিন্ট মিডিয়াতে আধুনিকা নারীদের দেখলে মনে হয় জীবনের সবক্ষেত্রেই তারা প্রচন্ড রকম স্বাধীন । নারী-পুরুষের লাগামহীন মেলামেশা আর প্রবৃত্তি পূরণের অবাধ স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ ফলাফল স্বরূপ পশ্চিমা সমাজের নারীরা অহরহ হয় ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার ।
নারীর প্রতি আকর্ষিত হওয়া পুরুষের সহজাত প্রবৃত্তি । আগুনের পরশে যেমন মোম না গলে পারে না, তেমনি নারীর সংশ্রবে পুরুষ উদ্বেলিত না হয়ে পারে না । সম্প্রতি স্পেনের ইউনিভার্সিটি অফ ভ্যালেন্সিয়ার গবেষকরা জানিয়েছেন, কোন সুন্দরীর সঙ্গে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় কাটালেই ঘটতে পারে যেকোন দুর্ঘটনা । সুন্দরী নারীর সঙ্গে মাত্র ৫ মিনিট সময় কাটালে পুরুষের শরীর থেকে কর্টিসল নামের একটি হরমোন নির্গত হয় । শরীরে কর্টিসল তৈরী হয় কোন শারীরিক বা মানসিক চাপের ফলে ।
আর এর সঙ্গে সঙ্গে তৈরী হয় হার্টের সমস্যাও । এমনকি ডায়াবেটিক ও উচ্চরক্তচাপেরও কারণ হয় কর্টিসলের হঠাৎ মাত্রা বৃদ্ধি ।
মেয়েরাও আজকাল বহুগামী হয়, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশে । প্রাকৃতিক কারণেই হোক কিংবা সামাজিক কারণেই হোক, বিষয়টা নারীদের সাপেক্ষে কখনো কখনো প্রতারণার পর্যায়ে পরে । অতএব এ ব্যাপারে পুরুষ একটু সংযমী হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যাবে ।
প্রত্যেকটি জীবের তাঁর নিজস্ব কিছু প্রবৃত্তি আছে । কিন্তু একটা জায়গায় সকল জীবের প্রবৃত্তি এক; তা হল নিজের মৃত্যুর আগে নিজের মত আরও কতগুলো জীবকে তৈরি করে যাওয়া । এই বৈশিষ্ট্যটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এটিকে জীব আর জড়র মধ্যে পার্থক্য করতে ব্যবহার করা হয় । এটা দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত যে সকল প্রবৃত্তির মধ্যে বংশবৃদ্ধির এই প্রবৃত্তিই সবথেকে শক্তিশালী । প্রবৃত্তির একটা সাধারণ ধর্ম হচ্ছে যে তাকে যদি কোনভাবে অবদমিত করে রাখা হয় তাহলে তা জীবের ওপর শারীরিক এবং উচ্চশ্রেণীর জীবের (যেমন স্তন্যপায়ী) ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে ।
মানুষই একমাত্র জীব যার কিনা প্রবৃত্তিকে জয় করার ক্ষমতা আছে । তাহলে কেন সে প্রবৃত্তির হাতে নিজেকে সপে দিয়ে পরিতৃপ্তির মাধ্যমে নিজের জীবনের পূর্ণতা খুজবে ? নারীবাদ বলে, নারীর পূর্ণতা আসবে মানুষ হিসেবে তার প্রকৃত পরিচয় খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমে । তার জন্য যদি তাকে তার প্রবৃত্তিকে বিসর্জন দিতে হয় তাহলে তাই সই ।
মানুষ সৃষ্টির সাথে সাথে তার মধ্যে আবার দুটি প্রবৃত্তি ও প্রবণতা দিয়া দেয়া হয়েছে । একটি ভালো আরেকটি মন্দ ।
আর সে তার প্রবৃত্তি ও প্রবণতা অনুযায়ীই তার প্রতিভা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে থাকে। প্রবণতা যেটা তার মধ্যে প্রভাবশালী হয়ে দেখা দেয়, তার যোগ্যতাও সেদিকই বিস্তার লাভ করে । জৈবিক প্রয়োজন তিনটি খাদ্য, পানীয় এবং যৌন অনুভূতি । এই তিনটি প্রয়োজন পশু, মানুষ সকলেরই সামন কিন্তু মানুষের পশু অপেক্ষা আর একটি কামনা প্রবল তা হচ্ছে অর্থ ও সম্পদের আকাঙ্ক্ষা ।
আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে---
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?।
আমরা যা খুশি তাই করি, তবু তাঁর খুশিতেই চরি,
আমরা নই বাঁধা নই দাসের রাজার ত্রাসের দাসত্বে---
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।