আমি একজন পাঠক
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে “বাঘে ছুলে ১৮ ঘা আর পুলিশে ছুলে ৩৬ ঘা”। পুলিশের লাঠি, বন্দুকের বাট আর বুটের ঘা যার শরীরে লেগেছে শুধু সেই বুঝতে পারে পুলিশ কতটা ভয়ংকর। কতটা জানোয়ার! আজ অনেকদিন পর ব্লগে লিখতে বসলাম। শনিবার দুপুরে কর্তব্যরত অবস্থায় তিন জন ফটো সাংবাদিক আমার অতি পরিচিত খালেদ সরকার এবং তার আরো দুই সহকর্মী জাহিদুল করিম ও সাজিদ হোসেনকে কোন কারণ ছাড়াই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুলিশ যেভাবে হায়েনার মত পিটিয়েছে তা ভীষণভাবে আমাকে তো বটেই গোটা সমাজকে মর্মাহত করেছে। শুধু মর্মাহত কিংবা দুঃখিত বললেই শেষ হয়ে যাবে না...পুলিশের এই আচরণ গোটা দেশবাসীকে, সভ্য সমাজকে ভীষণভাবে আতংকিত করে তুলেছে।
একই সাথে ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশ নামের এমন জানোয়ারের কতটা প্রয়োজন আছে সমাজে। বার বার জানোয়ার শব্দটা লিখছি এই কারণেই যে, পুলিশ যে শুধু খালেদ, সাজিদ ও জাহিদুল করিমকেই পিটিয়েছে তা কিন্তু নয়। এই তালিকা অনেক দীর্ঘ...। তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই সাংবাদিকদের পিটিয়েছে অবলীলায়। আর পেটানোর সময় বেশ হাঁক দিয়েই বলে, সাংবাদিক পেটালে কিছু হয় না।
এমন দাম্ভিকতা নিয়ে যে উদ্যোত কর্মকান্ড পুলিশ দিনের পর দিন ঘটিয়ে যাচ্ছে তা সত্যিই ভয়ংকর। শুধু যে সাংবাদিক পিটাচ্ছে তা কিন্তু, তারা যখন যাকে খুশী নিজেদের ইচ্ছেমত ধরে নিয়ে পিটাচ্ছে। যেখানে পুলিশের কাছে মানুষ আশ্রয় চাইবে, বিপদে পুলিশের সাহায্য নেবে সেখানে পুলিশ অবলীলায় মানুষের উপর চড়াও হয় দৈত্য-দানবের মত।
পুলিশ যখনই বিপদে পড়ে তখনই সাংবাদিকদের শরণাপন্ন হয়ে বলে, ভাই, পুলিশ আর সাংবাদিক তো ভাই ভাই। আমরা দুই পক্ষই সমাজের জন্য কাজ করছি।
আমরা একে অন্যের অতি কাছের জন। আর নিজেদের স্বার্থ শেষ হয়ে গেলে কিংবা কাজ উদ্ধার হয়ে গেলে মুহুর্তের মধ্যেই চোখ উল্টে ফেলে। বলে শালা সাংবাদিকের বাচ্চা...দাঁড়া তোকে মজা শিখাচ্ছি। সাংবাদিকতা শিখাচ্ছি।
পুলিশ নিয়ে আমার নিজের অভিজ্ঞতা খুবই তিক্ত।
আমি একাধিকবার পুলিশের হাতে শারিরীর ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। যখনই সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছি তখনই আরো বেপরয়ো হয়ে উঠতে দেখেছি এই জানোয়ারদের।
পুলিশের যোগ দেয়া ঘাপটি মেরে থাকা একদল জানোয়ারই মূলত পুলিশের ভাবমূর্তীকে প্রতিনিয়ত ুন্ন করছে সমাজের কাছে। জনগণের টাকায় বেতন নেয়া পুলিশ সদস্যরা যখন সাধারণ মানুষ কিংবা পেশাজীবীদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়, বেধড়ক পেটায় তখন সে ভুলে যায় রাষ্ট্র তাকে তাকে জনগণের টাকায়ই পুষছে। তাই আমাদের এমন পুলিশের কোন প্রয়োজন নেই, যে আমাদের জনগণের টাকায় বেতন-ভাতা, সুযোগ সুবিধা নিয়ে আমাদরকেই আবার কোন কারণ ছাড়াই পেটাবে।
শনিবার দুপুরের ঘটনার পর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তপক্ষ সাংবাদিকদের উপর হামলাকারী ঘটনার মূল নায়ক মহানগর পুলিমের তেজগাঁও জোনের সহকারি কমিশনার(এসি) শহিদুল ইসলামকে প্রত্যাহর করেছে। একই সঙ্গে বরখাস্ত করেছে সাংবাদিকদের মারধরের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আট পুলিশ সদস্যকে। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে, অতীতের মতই এগুলো শুধুই আইওয়াশ। কয়েকদিন পরই এই পুলিশ নামের জানোয়াররা পুরস্কৃত হবে। পদোন্নতি পাবে।
আর যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটি একটি হাস্যকর প্রতিবেদন দেবে। যাতে এসি শহিদুল ইসলামসহ সবাই হবেন নির্দোষ। অপরদিকে আমার সহকর্মী তিন ফটো সাংবাদিক হবেন দোষী। বলা হবে, তারা উল্টো পথে মোটরসাইকেল চালিয়ে গিয়ে পুলিশের কর্মকান্ডে বাধা দিয়েছে....
বিশেষ দ্রষ্টব্য- সাংবাদিক ভাইদের কাছে আহ্বান আর সময় নষ্ট করা যাবে না। এখনই পুলিশের এই অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
না হলে পরবর্তিতে আরও কতোজনকেই না এভাবে পুলিশের লাঠি, বুট আর বন্দুকেতর বাটের আঘাত সহ্য করতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।