আমার মতে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হচ্ছে মানুষের হাসি। তাই আমি সারাজীবন মানুষকে হাসি মুখে দেখতে চাই সে অনেক দিন আগের কথা । এক দেশে এক সওদাগর বাস করত। তার অর্থ সম্পদের কোন অভাব ছিল না। যদিও সেই দেশে কোন শান্তি ছিল না মানুষের মধ্যে ঝগরা,ফ্যাসাদ লেগেই থাকত তবুও সওদাগর তার স্ত্রী ও কন্যা নিয়ে বেশ সুখেই ছিল ।
সওদাগরের মেয়ের নাম ছিল রাফিয়া । সে দেখতে যেমন রুপবতী ছিল তেমনি খুব দয়ালু ছিল । তাদের বাড়িতে কোন ফকির বা মুসাফির এলে খালি হাতে ফিরে যেত না। সে পাখিদের খুবই পছন্দ করত । পাখিরাও তাকে পছন্দ করত।
পাখিদের সাথে তার এত ভাব হয়েছিল যে সে পাখিদের ভাষাও বুঝতে পারত। তার বাবা আহমেদ আলী একবার এক ভিনদেশে ব্যাবসায়ের কাজে গেল । আসার সময় রাফিয়ার জন্য এক জোড়া পাপিয়া পাখি নিয়ে এল । পাখিগুলো এত সুন্দর ছিল যে বলার বাহিরে। রাফিয়ার সাথে পাখিগুলোর খুব ভাব হয়ে গেল ।
সে সারাদিন পাখিদের সাথে খলত কথা বলত। ধীরে ধীরে রাফিয়া বড় হয়ে উঠল । একদিন সে মাহের নামে এক যুবকের প্রেমে পরে গেল । ও বলা হয় নি পাখিদুটোর ফুটফুটে একটি ছানাও হয়েছিল। মাহেরের একটা দামি আংটি ছিল।
যাতে একটি খুব মুল্যবান পাথর বসানো ছিল। একদিন তারা বাগানে বসে গল্প করছিল। হটাত্ পুরুষ পাপিয়াটা আংটিংর পাথরটা খুটে উঠিয়ে গিলে ফেলল । মাহের ব্যাপারটা খেয়াল করলেও কিছু বলল না। রাফিয়াও অন্যমনষ্ক ছিল।
বাসায় যাবার পর গলা থেকে পাথরটা বের হয়ে এল। রাফিয়া পাথরটা হাতে নিয়ে চিনতে পারল এটা মাহেরের । তাই সে এটা সজত্নে তুলে রাখল এদিকে মাহেরেরও মন খারাপ এত প্রিয় আংটিটার এরকম অবস্থা হল । হটাত্ সে ঠিক করল আজ রাতে রাফিয়াদের বাসা থেকে আংটি চুরি করবে যেই ভাবা সেই কাজ রাতের আধারে সে রাফিয়ার ঘরে ঢুকল বড় পাখি দুটোকে কাপড়ে মুড়িয়ে সে ঘর থেকে বেড়িয়ে জঙ্গলে গেল । তারপর ছুড়ি বের করে পুরুষ পাখিটার বুক এক টানে চিড়ে ফেলল।
স্ত্রী পাখিটা প্রান বাচানোর জন্য ডানা ঝাপটাতে লাগল । যেভাবেই হোক তাকে বাঁচতে হবে কারন তার ছোট্ট শিশুসন্তান আছে। কিন্তু পাষন্ড মাহের তাকে ধরেও চিরে ফেল । কিন্তু হায় পেটের ভেতর নারী ভুরি ছাড়া কিছুই নেই এতক্ষনে মাহেরে হুশ এল হায় কি করলাম আমি?রাফিয়াকে এখন কি বলব?এদিকে শিশু ছানাটির কিচির মিচিরে রাফিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল । সে খাচার সামনে এসে চিত্কাুর দিয়ে উঠল ।
তার বাবা মা চিত্কাুর শুনে ঘরে এসে দেখল খাচায় বড় পাখি দুটি নেই এবং রাফিয়া খাচার সামনে বসে কাদছে । তারা তাকে শান্তনা দিয়ে বললেন সকাল হলেই খুজে দিবেন । এদিকে রাফিয়া মাহেরের বাসায় ছুটে গেল এবং কাঁদোসুরে বলল মাহের আমার পাখিদুটো চুরি হয়ে গেছে । মাহের বলল ও তাই নাকি। মাহেরের আচরন কেমন অস্বাভাবিক লাগল ।
সে মাহেরেয়কে বল এই পাথরটাকি তোমার । মাহের পাথরটা দেখে দৌড়ে এসে হাতে নিয়ে বলল এইতো আমার পাথর । হটাত্ বিছানার পাশে রাফিয়া রক্তমাখানো ছুড়ি ও জামা দেখে এগিয়ে গেল। ততক্ষনে রাফিয়ার বাবা মাও সেখানে উপস্থিত হয়েছে। রাফিয়ার আর বুঝতে বাকি রইল না যে তার প্রানপ্রিয় পাখিদের তার প্রেমিকই হত্যা করেছে।
সে চিত্কাবর দিয়ে মুর্ছা গেল । তার বাবা মাও তার এই অবস্থা দেখে কাঁদতে লাগল । মাহের পাথরের মত নিশ্চুপ হয়ে গেল । এরপর হাকিম বদ্যি এল কিন্তু রাফিয়া যে চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে গেছে। যাদের নিয়ে সে সারাদিন সময় কাটাত তারাই যদি পৃথিবীতে না থাকে সে আর পৃথিবীতে না থাকে সে আর থেকে কি করবে ?পাহাড় সমান কষ্ট আর অপমানবোধ নিয়ে মাহেরও গলায় দড়ি দিয়ে আত্নহত্যা করল।
একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে বাবা মাও পাগলপ্রায় । তারা বাসায় গিয়ে ছানাটিকে ছেড় দিল । ছানাটি সবেমাত্র ওড়া শিখেছে । কিন্তু সেও বাবা মাকে হারানোর ব্যাথা বুঝতে পেরেছে। এরপর থেকে ছানাটি প্রতিদিন রাফিয়াদের জানালার কার্নিশে করুন সুরে ডেকে যেত।
(সমাপ্ত)
উপরের গল্পটি আমার মনের কল্পনা মাত্র । দুই পাপিয়ার মত আমাদের দেশেও দুটি মানুষের করুন পরিস্থিতি স্বীকার করতে হয়েছে । তারা হচ্ছেন সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর রুনি। হত্যাকাণ্ডের ৭৫ দিন পররাসায়নিক (ভিসেরা) পরীক্ষার জন্য আজ বৃহস্পতিবার সকালে আজিমপুর কবরস্থান থেকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনিরলাশ উত্তোলন করা হয়েছে।
এরপর লাশ দুটি পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
হায়রে কপাল তাদের পরিবার এবং তাদের সন্তান মেঘের সারাজীবন এই কষ্ট বয়ে যেতে হবে। সাগর সরওয়ার ও মেহেরুনিকেও পাপিয়া দুটির মত করুন পরিস্থিতি বরন করতে হয়েছিল। আর মেঘ সারা জীবন শিশু পাখিটার মত আর্তচিত্কার করতে থাকবে।
গল্পের সকল চরিত্র কাল্পনিক।
-কাজী অভন
অনেক দিন আগেই লিখেছিলাম।
আজকে আবার শেয়ার করলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।