এমন যদি হত,
ইচ্ছে হলেই আমি হতাম
প্রজাপতির মত!!
উপরের লাইনকটি ভালো লাগা একটি কবিতা ও গান। ছোটোবেলায় যখন তখন খেলার ফাঁকে,ছবি আঁকার মাঝে গুন গুনিয়ে গাইতাম। আজো গাই। প্রজাপতি, রংধনু, লালনীল বেলুন,রুপকথার পরীরা ছেলেবেলায় আমার যেমন প্রিয় ছিলো আজো ঠিকঠিক তেমনি আছে। মানুষের ভালোলাগারা রং বদলায়, আমার খুব একটা বদলায়নি।
শৈশব,কৈশোরের ভালোলাগা স্মৃতিগুলো আজো আমাকে আনমনা করে দেয়। ভালো লাগায় মন ভরায়।
ভুলিনি বাসার জামাল দারোয়ানের ছোট্ট একটুকরো ভাংগা সবুজ ক্রেয়ন দিয়ে চিরদিনের জন্য আমার মনে স্থান করে নেবার স্মৃতি,ভুলিনি ক্লাস টু তে পড়ার সময় এক বান্ধবীর দেওয়া এক টুকরো রংগীন কাঁচের কথা!সেই রংগীন কাচের টুকরোটি আমার কাছে ধরা দিয়েছিলো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য্য হিসেবে। বাসায় এনে মাকে দেখাতেই মায়ের ছিছিকারে আত্নারাম খাঁচাছাড়া হবার দশা। মা বলেছিলেন,ছি ছি ছি এখুনি ফেলে দিয়ে আয়।
হাত পা কাঁটবে কোথায় কোন ময়লা ঝয়লা থেকে তুলে আনা, কে জানে?
আমি ফেলে দেয়নি । লুকিয়ে রেখেছিলাম। এত সুন্দর, আলো পড়লেই নানান রং ঝকমকিয়ে চিমকিয়ে ওঠা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য্য কাঁচের টুকরো কি মায়ের সামান্য এক বকাঝকায় ফেলে দেওয়া যায়?কখনই না।
গুটি খেলা নামে একটা মজার খেলা শিখিয়েছিলো একটা পিচ্চি কাজের মেয়ে। তার দুই হাতের অসাধারণ নৈপুন্যে পাঁচগুটির ছুড়ে ছুড়ে দিয়ে আবার ধরে ফেলা খেলা দেখে আমি রীতিমত মুগ্ধ!! চক্ষু বিস্ফারিত করে দেখতাম সেসব খেলা।
অপরিসীম চেস্টায়ও কিছুতেই সে খেলায় দক্ষতা অর্জন করতে পারতাম না। কিছুতেই পারতাম না জুলেখার মত করে ঠিক ঐ রকম নৈপুন্যে গুটিগুলো ছুড়ে দিয়ে আবার ধরে ফেলতে।
গ্রাম থেকে আসার সময় ওর দ্বীন দরিদ্র শত ছিন্ন জামা কাপড় গুলোর সাথে ও এনেছিলো ওর একমাত্র খেলনা, ওর সেই লাল সাদা কালোয় মেশানো ৫টা গুটি/ পাথরের টুকরোগুলো।
মা আমাকে ঐ খেলা শিখানোর খবর জানতে পেয়ে ওর গুটি গুলো কেড়ে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিলেন। আমাকেও ওর সাথে খেলা বন্ধ করতে হোলো।
এরপর এক সপ্তাহের মাঝে ও কান্নাকাটি শুরু করলো । এইবাসায় মন টিকেনা, বাড়ী চলে যেতে চায়। মা অনেক বকাঝকা করে ওর বাবাকে খবর দিয়ে বাড়ী পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন।
বাড়ী যাবার সময় জুলেখা আমাকে এক পাশে ডেকে নিয়ে ওর একমাত্র সেই খেলনা ৫ গুটি আমাকে লুকিয়ে হাতের মধ্যে দিলো। ফিসফিস করে বল্ল "আপামনি, আমি টোকাই নিয়া লুকাই রাখছিলাম তুমি নাও"।
এতদিন পরেও সেই ভালোবাসা যখন মনে পড়ে....................
একটা গলপ পড়েছিলাম। জুলেখা বাদশাহের মেয়ে......তার একটি ফুল বাগান আছে.............তারপর কি কি ছিলো মনে নেই। শুধু এইলাইনটাই মনে আছে জুলেখা বাদশাহের মেয়ে তার একটি ফুলবাগান আছে। আমার কাছে জুলেখা বাদশাহের মেয়ের চেহারাটা আমার সেই ছোটোবেলার জুলেখা। যার পরনে বাদশাজাদীর মত জামা কাপড় নেই, মাথায় মুকুট নেই।
শতছিন্ন জামা পরে হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে জুলেখা। আমার দেখা বাদশাহের মেয়েটা। যার হাতে রয়েছে অমুল্য সেই উপঢৌকন, লাল সাদা, কালোয় মেশানো ৫টি গুটি/ ৫টি রত্ন!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।