(১)
মাহফুজের বউঃ কি?
মাহফুজঃ কাল রাতে ফোন কর নাই কেন?
মাহফুজের বউঃ কাল রাতে বাসায় আসছিলা?
মাহফুজঃ এইজন্য তুমি ফোন কইরা খোজ নিবা না?
মাহফুজের বউঃ তুমি জানাও নাই কেন যে রাতে ফিরবা না?
মাহফুজঃ এইজন্য তুমি একটু ফোন কইরা খোজ নিবা না? মানুষটা কই গেল, কই ঘুমাইল?
মাহফুজের বউঃ তুমি খোজ নিছিলা, আমি রাতে খাইছি কি খাই নাই?
মাহফুজঃ আমি করিনাই বইলা তুমি ফোন না কইরা থাকতে পারলা? এই গরমে আমি ঘুমাইতে পারছি কি পারি নাই, একটু জানতেও চাইলা না?
মাহফুজের বউঃ কেন? আমি কথা বইলা বিরক্ত না করলে তোমার ঘুমাইতে সমস্যা কই?
মাহফুজঃ ওই বেটা কালা মইষ জাহিদের লগে ঘুমানি যায়? কতক্ষণ বাদে বাদে বেটা যদি জড়াইয়া ধরে, ঘুমাই কেমনে, কও তো দেহি?
মাহফুজের বউঃ তাইলে বাসায় আসো নাই কেন?
মাহফুজঃ বাসায় তো আসতাম, সন্ধ্যার পরে কেমন ঝড়ের মত আসতেছিল, দেখনাই?
মাহফুজের বউঃ তাইলে ফোন কর নাই কেন?
মাহফুজঃ সব দোষ কি আমার? তুমি এরকম করবা জানলে কেউ ফোন করে? আমি না হইয়া অন্য কেউ হইলে এখন ফোন করত?
মাহফুজের বউঃ তাইলে এখন ফোন করছ কেন?
মাহফুজঃ আমার বউরে আমি যখন ইচ্ছা তখন ফোন করব, তাতে কার কি হইছে?
মাহফুজের বউঃ বেশি ঢং করা শিখছ? তাইনা?
মাহফুজঃ এইখানে ঢঙ্গের কি দেখলা?
মাহফুজের বউঃ সকালে কি খাইছ?
মাহফুজঃ আমার জন্য সকালে কে নাস্তা বানাইয়া বইসা ছিল? অফিস যাওয়া লাগবে না?
মাহফুজের বউঃ তুমি না বলে সকালে নাস্তা না খাইলে দিন শুরু করতে পারনা?
মাহফুজঃ আমি পারিনা, এমন কিছু কখনো দেখছ?
মাহফুজের বউঃ আচ্ছা, একটাবার প্রশ্ন না কইরা উত্তর দেয়া যায় না? কথা মাটিতে পড়তে পারেনা, খালি ফাপড়-বাজি। এখন ফোন করছ কেন, কিছু বললে বল, আমার অফিসের জন্য রেডী হইতে হবে।
মাহফুজঃ আচ্ছা বাবা, আমার ভুল হইছে, মাফ চাই। রাতে ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করছিলা?
মাহফুজের বউঃ রাতে খাইছি। কারো জন্য রাগ কইরা না খাইয়া বইসা থাকার আমার সময় নাই।
মাহফুজঃ ভাত খাইছিলা?
মাহফুজের বউঃ অফিস থেকে আইসা ভাত রান্না করার এনার্জি ছিলনা। বিস্কিট খাইছি।
মাহফুজঃ এইটা কিন্তু ঠিক হয়নাই।
মাহফুজের বউঃ আমি কি করব, আমারে ভাত খাইতে সাধার মততো আর কেউ নাই, বিস্কিট খাইয়া পানি খাইয়া শুইয়া ছিলাম। আর তুমি ফোন কর নাই কেন? এখন ফোন কইরা বলতাছ, তোমার ভুল হইছে।
আমারে ভাত না খাওয়াইয়া রাখছ, তোমরা পারো বটে।
মাহফুজঃ আমিতো বলছি, আমার ভুল হইছে, খালি প্রশ্ন করতাছিলাম, যদিও তুমিও প্রশ্ন করতাছিলা। ঝগড়াতো লাগাইছ তুমি।
মাহফুজের বউঃ ও, তাহলে সকালবেলা ঝগড়া করার জন্য ফোন দিছ, তাই না?
মাহফুজঃ না না, বিশ্বাস কর, কাল রাতে ঘুমাইতে পারি নাই। খালি তোমার কথা মনে হইতেছিল আর ভাবতাছিলাম, তুমি ফোন করবা।
তোমারে খুব মিস করছি, বুঝছ?
মাহফুজের বউঃ মিস করছ, বিশ্বাস করিনা। মিস করলে ফোন করনাই কেন? তোমার জন্য বাপ-মায়ের কথা না শুইনা চইলা আসছি বইলা মনে করছ, আমিই সব কিছু করব?
মাহফুজঃ আহা, এমন কর কেন? বলছিতো আমার ভুল হইছে। আমি তোমারে কত ভালবাসি, তুমি এইভাবে বললে জানোযে আমার বুকটা ফাইটা যায়। তাউ তুমি এইভাবে বল। সকালে কিছু খাইছ?
মাহফুজের বউঃ তুমি নাস্তা বানানোর সময় দিস?
মাহফুজঃ আহা, তাই বইলা এইরকম অনিয়ম করলেতো হবেনা।
বুয়া কই?
মাহফুজের বউঃ বুয়া মনে হয় ছুটি নিছে। সপ্তাহে একদিন না একদিন ছুটি করবেই।
মাহফুজঃ ওহ। অবশ্য ওদেরোতো একটু ছুটি দরকার।
মাহফুজের বউঃ আমি না খাইয়া আছি, আর তুমি দরদ দেখাইতেছ বুয়ারে?
মাহফুজঃ আরে বাবা, আমি ভাবতেছি, তোমার খুব কষ্ট হইতেছে, তাইনা?
মাহফুজের বউঃ চাকরী ছাড়তে বলবানা।
আজকাল একজনের বেতনে সংসার চালানো যায়না।
মাহফুজঃ না না, ওই রকম কিছু বলতেছিনা। আচ্ছা, অফিস গিয়া পিয়নরে দিয়া নাস্তা আনাইয়া খাইও। রাতে আমি আইসা তোমারে ভাত রান্না কইরা খাওয়াবো।
মাহফুজের বউঃ ইসস।
কোনদিন তুমি ভাত রান্না করছ?
মাহফুজঃ আচ্ছা বাবা, এখন হালকা কিছু খাইয়া অফিস যাও। একেবারে না খাইয়া বের হইওনা।
মাহফুজের বউঃ আজকেযে খুব দরদ দেখানো হইতেছে?
মাহফুজঃ এই তোমারে নিয়া এই সমস্যা, এই বললা, আমি বুয়ারে দরদ দেখাই, এখন বল, এত দরদ দেখাইতেছি কেন। আচ্ছা, তুমি গোসল করে অফিস যাও। পানি আছেতো?
মাহফুজের বউঃ পানি আছে।
তুমি সকালে গোছল করছ?
মাহফুজঃ নাহ, ওই হালা জাহিদ বাথরুমে ঢুকলে আর বাইর হয় না। গোছল করার আর সময় পাইলাম কই? তার উপর রাতে ভাল ঘুম হয় নাই। সকালে একটু না ঘুমাইলে বাচুম কেমনে?
মাহফুজের বউঃ আচ্ছা, আচ্ছা, আমার দেরী হইয়া যাইতেছে, অফিস গিয়া নিই, এরপর ফোন দিও।
(২)
মাহফুজঃ বস, ব্যস্ত নাকি? একটু কথা কউয়া দরকার।
ম্যানেজার মিনহাজ ভাইঃ আরে নাহ, কও কি কইবা।
মাহফুজঃ বস, আমরাতো শহীদ হইয়া যাইতেছি।
ম্যানেজার মিনহাজ ভাইঃ আস, মীটিং রুমে আস। কউ কি হইছে।
মাহফুজঃ মিনহাজ ভাই, আমাদেরতো তেল বাইর হইয়া যাইতেছে।
ম্যানেজার মিনহাজ ভাইঃ কি হইছে ঘটনা?
মাহফুজঃ আমাদেরতো দম, তেল, জুস, সব বাইর হইয়া যাইতেছে।
ম্যানেজার মিনহাজ ভাইঃ কাজের প্রেসার বেশি? আরে তোমরা আমারে দেখ। আমি কি করতাছিনা?
মাহফুজঃ বস, বাড়িওয়ালা হারামজাদা বছর শেষ না হইতেই দ্বিতীয়বারের মত ভাড়া বাড়াইতাছে। পানির দাম বাড়ছে, তাও পানি থাকেনা। জেনারেটরের লাইগা সার্ভিস চার্জ বাড়াইছে, তাও দিনে ২ ঘন্টার বেশি চালাইবনা। ২ টা মানুষ, বিদ্যুত বিল সাড়ে তিনহাজার টাকা কেমনে আসে।
কয়বার যে বিদ্যুতের দাম বাড়াইছে আর কয়বার যে কারেন্ট যায়, কিছুই তাল করতে পারতেছিনা। একটা আইপিএস কিনা দরকার, রাত এগারোটায় কারেন্ট যায়। টাকাই জমাইতে পারতাছিনা। আগের জমানি সবতো শেয়ারে আটকা।
ম্যানেজার মিনহাজ ভাইঃ কি করবা বল, কোম্পানী পলিসি হইতেছে এই বছর ইনক্রিমেন্ট দিবেনা।
আর আমারে দেখ, ৫০ জনের কাজ, ২০ জন দিয়া বলছে, ম্যানেজ করতে। আর, চাকরী না করলে কি করবা বল। আমি একদিন বাসায় থাকলে আমার ভালো লাগেনা, জানো?
মাহফুজঃ মিনহাজ ভাই, লাইফ ইজ পেইনফুল হইয়া যাইতেছে।
ম্যানেজার মিনহাজ ভাইঃ আরে, তোমরাতো আরামে আছ। আমারে বলছে, সাইটে যাইতে।
ম্যানেজাররা নাকি সাইটে যায়না। সারাদিন মীটিং আর ঝামেলা সামলাইয়া আবার সাইটে যাওয়ার সময়টা কই?
মাহফুজঃ ভাই, বেতন না বাড়াইলে বাচুম কেমনে? আর, একটা আইপিএস কিনা ফরজ হইয়া দাড়াইছে।
ম্যানেজার মিনহাজ ভাইঃ আরে, এত কারেন্ট যায়, আইপিএস চার্জ হউয়ার সময় পায় না, জানো? যাও, কাজ কর, কাজ কর।
(৩)
মাহফুজের বউঃ আই, তোমার ফেসবুকে এই নিশাতটা কে?
মাহফুজঃ কোন নিশাত, কি হইছে? কই কি দেখছ তুমি?
মাহফুজের বউঃ মনে হয়, কিছুই বুঝনা। এইযে, তোমার কোন পোস্ট পড়লেই আইসা লাইক দেয়, সবখানে এলওএল লিখে কমেন্ট দেয়।
মাহফুজঃ ওহ! অইটা আমাদের অফিসের নতুন ইন্টার্ন। আমি কাজ-কাম অনেক ভাল জানিতো, আমারে দিছে ওরে কাজ শিখাইতে। তাই, আমারে একটু-আধটু তেল দেয় আরকি। কয়দিন পর অন্য জায়গায় চইলা গেলে আমারে আর চিনবনা, বুঝলা? আর তুমি হুদাই আমারে ফাপর নিলা। তুমিতো জানোই, তুমি আমার সব।
তাও ফোন কইরা শুরু করলা ফাপর দিয়া।
মাহফুজের বউঃ বুঝছি, কাজ-কাম ভাল জানোতো বেতন বাড়ায় না কেন?
মাহফুজঃ তুমিওতো চাকরি কর, জানোতো, দুনিয়াডা কেমন।
মাহফুজের বউঃ হুমম। আমরাতো মেয়ে বলে আমাদের কাজের কোন দাম নাই। আমরা নাকি অফিসে দেরী করে আসি, আগে আগে বাসায় যেতে চাই, খালি বাহানা খুজি অফিস ফাকি দেবার, সুযোগ পেলেই ফোনে গল্প জুড়ে দেই, নয়ত মেয়েরা মিলে আড্ডা দেই।
মাহফুজঃ তোমারে কে কি কইছে, খুইলা কউতো দেহি। তোমার বস মির্জা হারামজাদা কিছু কইছে? অর নল্লি কাইটা আমি ডুগডুগি বাজামু।
মাহফুজের বউঃ ইস! কিসব কথা বল। উনি কেন এসব বলতে যাবেন। অফিসের লোকজন পাশ থেকে বলে।
মাহফুজঃ আরে, এইসবে পাত্তা দিওনা। তোমরাতো কাজ করই। দেখতা যদি আমাদের অফিসের গুলা। আমাদের অফিসে একটা আছে, বসে অন্য ফ্লোরে, লাঞ্চের সময় ভীড়ের মধ্যে আমাদের ফ্লোরে আইসা সব কয়টা মিল্লা খালি হাহাহিহি। উফফ।
মাহফুজের বউঃ আর তুমিও ওদের সাথে বইসা লাঞ্চ কর, তাইনা?
মাহফুজঃ আরে ধুর! ওদের পাত্তা দেয় কে? আমি এমনেই আমার কাজ নিয়া ব্যস্ত থাকি। আর, নতুন ইন্টার্ন গুলাতো আছেই। দেখতা যদি একেকটারে। আমি বুঝিনা, ইন্টার্ন এত মেয়ে নেয় কেন?
মাহফুজের বউঃ কেন, মেয়েরা কি কাজ পারেনা?
মাহফুজঃ আরেনা, ১০টার ৬টাই দেখি মেয়ে। আর, একটা আছে, মুখে যেন মার্বেল নিয়া কথা কয়, এতই ঢং, নাকি করে বলে, ভাইয়া...
মাহফুজের বউঃ আর, তুমি ওদের নিয়া সময় কাটাও, তাইনা?
মাহফুজঃ এইসব কিসব বল? মাঝে মাঝে টীম বিল্ডিংয়ের জন্য এক সাথে হয়ত চা-নাস্তা খাইতে যাওয়া হয়।
মাহফুজের বউঃ কিইই?!
মাহফুজঃ আরে, এগুলা পুরাই অফিসিয়াল।
মাহফুজের বউঃ আমিও তাহলে মির্জা ভাইয়ের সাথে টীম বিল্ডিং করতে যাই?
মাহফুজঃ ছিহ, এইগুলা কি বল? তুমিনা আমার সোনা বউ?
মাহফুজের বউঃ ইসস, ঢং। অফিসে এইসব বলযে, লোকজন শুনেনা।
মাহফুজঃ আর কে শুনব, জাহিদ বইসা ফিক ফিক কইরা হাসতাছে। অর ঘাড়ের উপর দিমু।
মাহফুজের বউঃ আচ্ছা, আজকে কখন আসবা?
মাহফুজঃ ইনশাল্লাহ, আজকে যত কাজই থাকুক, সব শেষ কইরা টাইমলি বাসায় আসব, ইনশাল্লাহ। আজকে তোমারে ভাত রান্না কইরা খাওয়াব।
মাহফুজের বউঃ আমার শরীর খুব টায়ার্ড লাগতেছে।
মাহফুজঃ এই দুপুরে শরীর টায়ার্ড লাগে, খাওয়া-দাউয়া করছতো ঠিকমত? শরীর ভাল আছেতো?
মাহফুজের বউঃ শরীর ভাল আছে। আর খারাপ করলেও কিছু করার নাই।
রেসপন্সিবিলিটিটা আগে। ছুটি নিলে আবার মানুষজন পাশ থেকে বলবে, খালি আরাম করে, কত্ত ছুটি নেয়, ইত্যাদি ইত্যাদি।
মাহফুজঃ আচ্ছা, কাজ কর, কিন্তু, বেশি প্রেসার নিওনা। এখন রাখি, হ্যাঁ? অনেক কাজ জমছে। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে যে ২ দন্ড স্বস্তির নিশ্বাস ফেলব, সেই উপায় নাই।
অফিস ছুটির আধা-ঘন্টা আগে যদি কাজ কমাইয়া প্রেসার কমাইয়া নিয়া আসি, কই থেকে একজন আইসা বলবে, আপনিকি ফ্রি?
মাহফুজের বউঃ আচ্ছা, ঠিক আছে, রাতে দেখা হবে, খোদা হাফেজ।
মাহফুজঃ সাবধানে আইস, খোদা হাফেজ।
(৪)
১ম যুবকঃ সালাম দাদা।
মাহফুজঃ ওয়ালাইকুম।
১ম যুবকঃ দাদা ভাল আছেন?
মাহফুজঃ এইত মোটামুটি।
২য় যুবকঃ আপনারা মোটামুটি থাকবেন কেন? এত সুন্দর বউ। আপনারাইতো সুখে থাকবেন।
১ম যুবকঃ আহ! বৌদিকে নিয়ে কথা বলিস না। উনি দাদার একলার ধন।
মাহফুজঃ এইসব কি বলছেন আপনারা?
১ম যুবকঃ দাদা, মানিব্যাগটা একটু এদিক দিন দেখি।
২য় যুবকঃ দিন, মোবাইলের সীমটা আমিই বের করে দিচ্ছি।
মাহফুজঃ আপনারা ভাল কিছু করেন না কেন?
১ম যুবকঃ দাদা, আমরা ভাল কাজই করছি। আপনারাতো দেশটা লুটে-পুটে খেলেন, আমরা আমাদের ভাগ আদায় করছি। আর, ভবিষ্যতে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে মানিব্যাগটা না ভরে আরো কিছু ক্যাশ টাকা রাখবেন।
২য় যুবকঃ যান, বৌদি আধ-ঘন্টা আগেই আসছেন।
আপনার জন্য নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছেন।
(৫)
মাহফুজের বউঃ কি করে ছিনতাই হল? ব্যথা পাও নাইতো? একটু বস।
মাহফুজঃ আর বইল না, এই বাসায় ঢোকার আগে, মাত্র ২ বাড়ি আগে মোড়টায় ছিনতাই হইছে। দেশটায় আর মানুষের বাঁচার কোন উপায় নাই।
মাহফুজের বউঃ আহহা! মোবাইল নিয়া গেছে, না?
মাহফুজঃ সেইটাতো নিছেই।
বদমাইশের বাচ্চা আবার খেয়াল করে, কে আসে যায়। তুমি নাকি আধা-ঘন্টা আগে আসছ, সেই খবর দিতাছে।
মাহফুজের বউঃ আচ্ছা, তুমি রেস্ট নেও। পানি খাবা?
মাহফুজঃ দেও। এই গরমে ঘামাইয়া অস্থির অবস্থা।
মাহফুজের বউঃ আচ্ছা, তুমি চিন্তা কইরো না। কত টাকা আসবে, যাবে। মোবাইল আমার পুরানাটা আছেনা, অইটা ইউজ কইরো।
মাহফুজঃ শালার ব্যাটারা আবার সীম আর খালি মানিব্যাগ ফেরত দিয়া গেছে।
মাহফুজের বউঃ আচ্ছা, গোসল করতে যাও।
আমি রান্না বসাইতেছি।
মাহফুজঃ ভাবছিলাম তোমারে রান্না কইরা খাওয়াব। এখন শরীরে কোন এনার্জি পাইতেছিনা। শালার এই দেশেই থাকা অসম্ভব হইয়া দাড়াইতাছে।
মাহফুজের বউঃ থাক, গোসল করতে যাও।
রান্না নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। আসলে সময় নিয়ে রান্না করলে রান্না মজার হয়। সময়টাইতো পাই না।
মাহফুজঃ কারেন্ট কখন আসছে?
মাহফুজের বউঃ আসছে এই মাত্র।
(৬)
লোডশেডিং।
অন্ধকার বারান্দায় দুজন বসে আছে।
মাহফুজঃ বুঝছ, এই দেশে আর থাকা যাবেনা। পালাতে হবে এখান থেকে।
মাহফুজের বউঃ কি বল এইসব? কই পালাবা?
মাহফুজঃ এমনভাবে বল্লা, এখনতো ব্যাপারটা খারাপ শুনাইতেছে।
মাহফুজের বউঃ আমি আবার কখন কি বলি।
বলত সব তুমি। আমার শুনতে ভাল লাগে।
মাহফুজঃ Two little mice fell in a bucket of cream. The first mouse quickly gave up and drowned. The second mouse, wouldn't quit. He struggled so hard that eventually he turned that cream into butter and crawled out. Catch me if you can. আমাদেরো একই অবস্থা। হাল ছাইড়া দিলে হবেনা। পরিস্থিতি বদলাইতে হবে।
আগে ভুল বুঝতাম। আগে মনে করতাম, জিততে হলে অবস্থান আকড়ে থাকতে হবে। কিন্তু, পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে ডিফেন্সিভ পজিশনে যেতে হয়। বিদেশে গিয়া অড জব করলেই কি? এইখানে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়া পইড়া প্রজেক্ট ম্যানেজ করি। পাবলিকের ট্যাক্সের পয়সায় পইড়া কি কাজটা করি? কোন সাইটে কি মাল-পত্র যায়, হিসাব ঠিকমত আছে কিনা, সময়মত কাজ শেষ হয় কিনা, এইসব করি।
ভাবছিলাম, সরকারী ভার্সিটি থেকে পাশ করতেছি, টাকা দিয়া সার্টিফিকেট কিনতাছিনা। কিছু লেখা-পড়া শিখে বের হইতেছি। কিন্তু, যা শিখছি, তার ১ আনাওতো কোথাও ব্যবহার করলামনা। পন্ডিতেরা কয়, ব্রেন ড্রেন। আরে, ব্রেনতো অলরেডি ড্রেনেই আছে।
সেইখান থেকে উইঠা যদি কেও কোনদিকে যাইয়া কিছু করতে পারে, তাহলেতো লস কারো কিছু দেখি না।
মাহফুজের বউঃ (মাহফুজের হাত ধরে) কি হইছে আজকে তোমার?
মাহফুজঃ কিছুনা। জানো, একবার এক লোকে ইঞ্জিনিয়ার পোলা খুজতাছিল মাইয়া বিয়া দিব কইয়া। আমি কইলাম, দেশে থাকব। জোয়ান বয়সে বিদেশ গিয়া তারুণ্যের শক্তি বিদেশের জন্য ব্যয় করা ঠিক না।
ওই লোক কইল, হুমম, দেশেই অনেক টাকা পয়সা করে আরামে থাকা যায়। এর জন্য বিদেশ যাওয়া লাগে নাকি।
মাহফুজের বউঃ আমার আব্বাওতো এইরকম বলে।
মাহফুজঃ তোমার আব্বাতো ঠিকাদারী ব্যবসার টেন্ডারবাজী কইরা যা কামাইছে, আমি বাবা তোমার বাপেরে খুব ডরাই। আর ওই লোকে ছিল শিল্পপতি।
মাহফুজের বউঃ (মাহফুজের হাত ছেড়ে দিয়ে) তা ওই শিল্পপতির মেয়েরে বিয়া করলা না কেন?
মাহফুজঃ আরে, ওই বড়লোকের বইখা যাওয়া মাইয়া বিয়া কইরা কি লাইফটারে তামা-তামা বানামু নাকি? আজকাল এফেয়ার ছাড়া মেয়ে পাওয়া যায় নাকি? তোমারোতো আগে কোন এক ফ্রেন্ড ছিল।
মাহফুজের বউঃ দেখ, খবরদার, বাজে কথা বলবানা। আমি তোমারে বলছি যে, আমি শুধু ফোনে কথা বলতাম আর তোমার সাথে দেখা হউয়ার অনেক আগে থেকেই যোগাযোগ বন্ধ করছিলাম।
মাহফুজঃ আরে, রাগ কর কেন? আমিতো শুধু উদাহরণ দিলাম। তোমার মত ভাল মেয়েও যদি আমার মত পোলার সাথে প্রেম করতে পারে, আগের প্রেম থাকতে পারে...
মাহফুজের বউঃ কি বললা? তুমি প্রমিজ করছিলা, কখনো এইসব কথা উঠাবা না।
আমি শুধু ফোনে কথা বলতাম।
মাহফুজঃ আহা, সরি বাবা। আমার পয়েন্টটা বুঝতে পারতেছনা। আমি বলতেছি, শিল্পপতি যেমন আমারে পছন্দ করলেও উনার মেয়ে পছন্দ করে নাই। তেমনি, তোমার বাপে তোমার জন্য সরকারী চাকরিজীবি ঠিক করলেও তুমি আইসা এই আমারে বিয়া করলা।
আমি এইখানে তোমার মহত্ব বর্ণনা করতেছি। তোমার সততার কথা বলতেছি। তোমার বাপে গতবার না পারলেও পরেরবার ঠিকই এমপি ইলেকশন করব। আর, তুমি সারাদিন খাটুনীর চাকরি কইরা রাতে আমারে ভাত রাইন্ধা খাওয়াও।
মাহফুজের বউঃ হুমম, এতক্ষণ কি বলতেছিলা?
মাহফুজঃ এইটাই বলতেছিলাম, ওই শিল্পপতি আর তোমার বাবা কেওই চায়নাই, আমি বিয়া কইরা তাদের মেয়েরে নিয়া বিদেশ চইলা যাই।
তারা ভাবছে, টাকার জন্য বিদেশ যাওয়া লাগে নাকি।
মাহফুজের বউঃ আসলে অনেক মেয়েও যেতে চায় না, আবার অনেক মেয়ে বিদেশ বলতে পাগল হয়ে যায়। আমি তোমার সাথে যাব। তুমি যেখানে থাকবা, আমাকে সংগে নিয়া যাইও।
মাহফুজঃ তুমি খুব ভাল।
আমার মনে আছে, তোমার বাবা আমারে কি গালি-গালাজ করছিল। কিন্তু, তোমারে পাউয়ার জন্য সাহস কইরা আমি সেইদিন দাড়াইয়া ছিলাম। তোমার বাবাযে আমারে গুম কইরা দেয় নাই, এইতো বেশি। আমারে বলল, যেই ইঞ্জিনীয়ার রাস্তা বানাইতে পারে না, ব্রীজ বানাইতে পারেনা, বাড়ি বানাইতে পারেনা, সে আবার কিসের ইঞ্জিনীয়ার। আমার সাহস হয় নাই বেশি কিছু বলার।
মনে আছে?
মাহফুজের বউঃ হুমম, আব্বা কখনো আমার আবদার ফেলে নাই। আব্বা খুব রাগী, কিন্তু কখনো আমারে মারে নাই। আমি বুঝতাছিলাম, যতই রাগারাগি করুক, তোমারে মারবেনা। আমি আব্বার একমাত্র মেয়ে। আব্বারে কষ্ট দিতে চাই নাই।
কিন্তু, আব্বার কালো টাকায় এত জাক-জমকের সাথে বিয়া না করে আমাদের এই সংসারটাইকি ভাল না? আমরা ঝগড়া করি। পরে সারাদিন একে অন্যের কথা ভাবতে থাকি। যখন সামনে থাকনা, ফোনে কথা না বললে ভাল লাগে না। জানো, আমার বান্ধবী রুনুর সাথে এক ছেলে চীট করছিল। রুনু খুব কষ্ট পাইছিল।
ও বলছিল, মানুষ নাকি একবারই ভালবাসতে পারে। খুব লাকী হইলে নাকি কখনো দ্বিতীয়বার ভালবাসতে পারে।
মাহফুজঃ হুমম।
মাহফুজের বউঃ কি হইল আবার?
মাহফুজঃ না কিছুনা। এমনেই ভাবতাছিলাম।
মাহফুজের বউঃ আরে বাবা, আমি শুধু তোমারেই ভালবাসছি। আমি যেমন তোমার সব, তুমি তেমনি আমার সব।
মাহফুজঃ হুমম। ভাবতেছিলাম, অস্ট্রেলিয়ায়তো অনেকেই গেল, আমরাও ট্রাই করি না কেন।
মাহফুজের বউঃ অইখানে আত্মীয়-স্বজন ছাড়া মানুষ কিভাবে থাকে?
মাহফুজঃ এইখানেই বা আমরা কিভাবে থাকি? তাওতো, আমরা হয়ত ভাল অবস্থাতেই আছি।
তোমার বাবা যদিও আমার সাথে কোনদিন ভাল কইরা কথা বলে নাই, হয়ত একদিন তার সব কালো টাকার সম্পদ তোমার হবে। অবশ্য, তুমি কখনো আমারে অবৈধ ভাবে টাকা কামাইতে বলনাই। আমিযে সততা, নৈতিকতা মাইনা চলি, এটাতে তুমি কখনো আমারে বাধা দেউ নাই। সবসময় আমারে সাপোর্ট দিছ। তোমার মত মেয়ে পাওয়া যায়না।
মাহফুজের বউঃ হইছে, বুঝছি।
মাহফুজঃ না আসলেই, চিন্তা করে দেখ। আমরা হয়ত বিদেশে চলে গেলাম, আমাদের সন্তানরা বড় হয়ে খান একাডেমী করবে। নয়ত, গুগলের মত কাজের শুরু থেকে থাকবে। এখানে যারা আটকা পড়ে থাকবে, তাদের কি হবে?
মাহফুজের বউঃ আচ্ছা আসো।
এইবার কারেন্ট আসছে, ঘুমাইতে যাবা, চল।
মাহফুজঃ Leave no man behind.
মাহফুজের বউঃ কি বল?
মাহফুজঃ নাহ, কিছু না। টিভি চলতেছে ওই রুমে।
মাহফুজের বউঃ হুমম, তোমার নজরুল সঙ্গীত বাজে, মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম।
মাহফুজঃ এইটা নজরুল সঙ্গীত না, এইটা হইতেছে বিষ।
কোন সব বোক্স এইসব বানায়, জানিনা। এত্ত সুন্দর গানটারে সুর বদলাইয়া কি করছে। আর, শালার কিছু বজ্জাত পোলাপান রাতে হেলমেট ছাড়া আঁকাবাঁকা কইরা মটর সাইকেল চালাইতাছে, ৪-৫ টা জিন্স-টি শার্ট পরা মাইয়া, সব গুলার হাতে স্মার্ট ফোন, যেন এটাই স্মার্টনেস, রাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাছে, এইগুলার জন্য নজরুল এই গান লিখছিল?
মাহফুজের বউঃ আহা, তুমি এত উত্তেজিত হউ কেন সব কিছুতে?
মাহফুজঃ আমি উত্তেজিত হই? তুমি আমারে এইসব অন্যায় দেইখা শান্ত হইতে বলতেছ? যাইনা রাখ, নজরুল আমাদের জন্যই লিখছিল, আমি বিদ্রোহী, রণক্লান্ত। আমি সেইদিন হব শান্ত, যবে উতপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না...
মাহফুজের বউঃ হিহিহি।
(৭)
মাহফুজের পুরো পৃথিবী যেন কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে।
সবকিছু ভোঁতা আর ধূসর। পিক আপের সীট থেকে কি করে নেমে হেঁটে গেল, টের পর্যন্ত পেলনা যেন। নাকি এইসব এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন। কিছুক্ষণ পর পরিচিত-আপন একজোড়া হাতের ঠেলায় ঘুম ভাংবে। উদ্বেগ নিয়ে একজোড়া চোখ তাকিয়ে থাকবে, নরম গলায় বলবে, “কি হইছে তোমার?” ক্ষুদ্র থেকে অনেক ধনী হউয়া তার শ্বশুর তাকে “বাবা” বলে জড়িয়ে ধরেছেন।
দুঃস্বপ্নেতো এমন হবার কথা নয়। কখনো একটু ভাল করে কথা বলেননি যিনি, সকালেও বিরক্ত মুখে ভুরু কোঁচকানো অবস্থায় ছিলেন, তাকে এখন এভাবে দেখাতো শুধু স্বপ্নেই সম্ভব।
মাহফুজ মনে করার চেষ্টা করল, কোথায় সে, কি হচ্ছে চারদিকে। সকালে জাহিদকে রেখে গিয়েছিল বিরক্ত হয়ে থাকা শ্বশুরের সাথে, বলে গিয়েছিল যেন তার ভাবীকে দেখে রাখে। কিছুক্ষণের মাঝেই ফিরে আসবে।
এসব কাজ যেহেতু আগে কখনো করেনি, নিজেরই যাওয়া উচিত। জাহিদকে জড়ানো ঠিক হতনা। ড্রাইভার মোকলেস ভাইকে নিয়ে এক ড্রাম কেবল দিয়ে আসল জায়গামত। এক লাখ দশ হাজার টাকায় রফা হয়েছে। কেউ যেন টের না পায়, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ড্রাইভার মোকলেস ভাই এমনিতেই তেল এর স্লিপ বাড়িয়ে নেয় এবং রাস্তায় এর স্বপক্ষে বলতে বলতে যায়। কেবলের ড্রাম নিয়ে অইদিকে যাবার কথা শুনে মহা খুশি হয়ে স্যার স্যার শুরু করে দিল। কোম্পানীর ৫ লাখ টাকার কেবল গেলেও কোম্পানী কিছু টেরই পাবেনা। শুধু বেতনের সময় যত কিপটামী। টাকার ভাগ এখনো কাউকে কিছু দেয়া হয়নি।
দারোয়ান গুলোকে দিতে হবে কিছু। চিরকালীন সততা কত সহজে আজ বিসর্জন দিয়ে দিল।
দুইদিন জ্বরে ভোগার পর ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল মাহফুজ। দেশের হাসপাতালগুলোর অবস্থার কোন উন্নতি নাই। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছড়াছড়ি।
কিন্তু, সেবার কোন উন্নতি নাই। বেসরকারী হাসপাতালের ডাক্তারটা এক গাদা টেস্ট লিখে দিল। আবার ভর্তি হয়ে যেতে বলল। অসুখের কথা কিছু বললনা। গরমে ঠান্ডায় ঠান্ডা লাগছে, এতে জ্বর আসছে।
বাসায় সেবা করার কেউ নাই, তাই ভাল হইতে কয়দিন সময় নিতেছে। কিন্তু, এইসব টেস্ট করতেই একগাদা টাকা বের হয়ে গেল। আবার, বিদেশে যাবার আবেদনের জন্য কাগজ-পত্র তৈরি করতে গিয়ে কত দিকে কত খরচ। হাতে জমানো কোন টাকাই নাই। এইসময় এই কেবলগুলা সরানো কত সুবিধা করে দিল।
হাসপাতালের বিল নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, শ্বশুরের কাছেও হাত পেতে ছোট হতে হবেনা। এমনসময় ফোন আসে। কে ফোন দিল, ডিস্প্লেতে ভাল করে দেখার চেষ্টা করে। পুরনো মোবাইলটায় অনেক সমস্যা। কথাও ঠিকমত বোঝা যায়না।
এই টাকাটা পাউয়া যাওয়াতে এখন আর কোন সমস্যা নেই। নতুন একটা হ্যান্ডসেট কিনতে হবে। ওকেও একটা কিছু উপহার দিতে হবে। অনেকদিন ওকে কোন উপহার দেয়া হয় না, বাইরে কোথাও দুজনে ঘুরতে যাওয়া হয় না। কিন্তু, ফোনে কি শুনল, কিছুই বুঝল না।
হয়ত বুঝতে চাইলওনা। ডাক্তারের লিস্ট অনুযায়ী সব অষুধ কিনে দিয়ে এসেছে। কোথায় কি গন্ডগোল হয়েছে, বুঝতে পারল না।
আজকাল এত প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হয়েছে। সরকারী গুলোতে ছেলে-পেলে সারা বছর খেটেও পাশ করতে পারেনা।
আর, প্রাইভেটেরগুলো সারা বছর হাটে-মাঠে চড়ে বেড়ায়। কিযে শিখে, খোদাই জানেন। এই ডাক্তার বেটার ডিগ্রীগুলাও কি প্রাইভেটের? ভাবে মাহফুজ। ভাবে, এই ভুলের সংশোধন কিকরে সম্ভব। খোদা, তুমি সাক্ষী, সারাজীবন আমি হারাম খাই নাই।
আজকের এই হারাম পয়সা ঠেকায় পইড়া দরকার হইছে। এইজন্য আমার উপর এখনই গযব দিবা? সারা দুনিয়ায় কত পাপী। আর আমার এইটুকু পাপে আমারে সর্বস্বান্ত করে দিলা?
ছেলেদের সততা আর মেয়েদের সতীত্ব, একবার গেলে আর ফিরে আসে না। কে বলেছিল, অনেক চেষ্টা করেও আর মনে আসেনা মাহফুজের। হাসপাতালে ঢুকে দেখে, হাউ মাউ করে এরাবিয়ান নাইটসের কালা-জ্বীনের মত জাহিদ কাঁদছে।
বোতাম একটা ছেঁড়া, ঠোটের কোণায় রক্ত। মাহফুজকে দেখে বলে উঠল, “ডাক্তারের কানের উপর কয়েকটা দিছি”। শ্বশুর মশাই এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “বাবা, তুমিই আমার সব”। কিন্তু, মাহফুজ কাকে ধরে বলবে, “তুমিই আমার সব”?
মাহফুজ কক্ষণো জানতে দেয়নি তার আগের ভালবাসার কথা। কক্ষণো বুঝতে দেয়নিযে, তার বুকের মাঝে হৃদয়ে অন্য কেউ কখনো ছিল।
সে ছিল ভাগ্যবান, দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়তে পেরেছিল। মাহফুজকে জড়িয়ে ধরে জাহিদ আর শ্বশুর মশাই কেঁদে যাচ্ছেন। কিন্তু, উপন্যাস মুভি দেখে আবেগাক্রান্ত মাহফুজের মুখে আজ কোন আবেগের অভিব্যক্তি নেই। আজ মাহফুজের সংসার ধ্বংস হয়ে গেল যেন ভূমিকম্পের আঘাতে। কোন কবি বলে গিয়েছিলেন, সংসার সমরাঙ্গন।
আজ সেই সমরাঙ্গনে মাহফুজ হারাল তার সবচেয়ে আপন সহযোদ্ধাকে। কিন্তু মাহফুজের চোখে কেন জল নেই, মাহফুজ বোঝেনা। স্কুলের বাংলা স্যার বলেছিল, মহাকাব্যের মহানায়কদের সাথের সকল সহযোদ্ধারা একে একে নিহত হয়। কিন্তু মহানায়কেরা কখনো কাঁদেনা। মাহফুজ বুঝে উঠতে পারেনা, সহযোদ্ধাদের মৃত্যুতে জলহীন চোখে সংসার সমরাঙ্গনে একাকী দাঁড়িয়ে থাকা সে কি তবে সংসারের মহা সমরের মহানায়ক?
(সমাপ্ত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।