(২)
মাহফুজঃ বস, ব্যস্ত নাকি? একটু কথা কউয়া দরকার।
ম্যানেজার মিনহাজ ভাইঃ আরে নাহ, কও কি কইবা।
মাহফুজঃ বস, আমরাতো শহীদ হইয়া যাইতেছি।
ম্যানেজার মিনহাজ ভাইঃ আস, মীটিং রুমে আস। কউ কি হইছে।
মাহফুজঃ মিনহাজ ভাই, আমাদেরতো তেল বাইর হইয়া যাইতেছে।
ম্যানেজার মিনহাজ ভাইঃ কি হইছে ঘটনা?
মাহফুজঃ আমাদেরতো দম, তেল, যুস, সব বাইর হইয়া যাইতেছে।
ম্যানেজার মিনহাজ ভাইঃ কাজের প্রেসার বেশি? আরে তোমরা আমারে দেখ। আমি কি করতাছিনা?
মাহফুজঃ বস, বাড়িওয়ালা হারামজাদা বছর শেষ না হইতেই দ্বিতীয়বারের মর ভাড়া বাড়াইতাছে। পানির দাম বাড়ছে, তাও পানি থাকেনা।
জেনারেটরের লাইগা সার্ভিস চার্জ বাড়াইছে, তাও দিনে ২ ঘন্টার বেশি চালাইবনা। ২ টা মানুষ, বিদ্যুত বিল সাড়ে তিনহাজার টাকা কেমনে আসে। কয়বার যে বিদ্যুতের দাম বাড়াইছে আর কয়বার যে কারেন্ট যায়, কিছুই তাল করতে পারতেছিনা। একটা আইপিএস কিনা দরকার, রাত এগারোটায় কারেন্ট যায়। টাকাই জমাইতে পারতাছিনা।
আগের জমানী সবতো শেয়ারে আটকা।
ম্যানেজার মিনহাজ ভাইঃ কি করবা বল, কোম্পানী পলিসি হইতেছে এই বছর ইনক্রিমেন্ট দিবেনা। আর আমারে দেখ, ৫০ জনের কাজ, ২০ জন দিয়া বলছে, ম্যানেজ করতে। আর, চাকরী না করলে কি করবা বল। আমি একদিন বাসায় থাকলে আমার ভালো লাগেনা, জানো?
মাহফুজঃ মিনহাজ ভাই, লাইফ ইজ পেইন হইয়া যাইতেছে।
ম্যানেজার মিনহাজ ভাইঃ আরে, তোমরাতো আরামে আছ। আমারে বলছে, সাইটে যাইতে। ম্যানেজাররা নাকি সাইটে যায়না। সারাদিন মীটিং আর ঝামেলা সামলাইয়া আবার সাইটে যাওয়ার সময়টা কই?
মাহফুজঃ ভাই, বেতন না বাড়াইলে বাচুম কেমনে? আর, একটা আইপিএস কিনা ফরজ হইয়া দাড়াইছে।
ম্যানেজার মিনহাজ ভাইঃ আরে, এত কারেন্ট যায়, আইপিএস চার্জ হউয়ার সময় পায় না, জানো? যাও, কাজ কর, কাজ কর।
(৩)
মাহফুজের বউঃ আই, তোমার ফেসবুকে এই নিশাতটা কে?
মাহফুজঃ কোন নিশাত, কি হইছে? কই কি দেখছ তুমি?
মাহফুজের বউঃ মনে হয়, কিছুই বুঝনা। এইযে, তোমার কোন পোস্ট পড়লেই আইসা লাইক দেয়, সবখানে এলওএল লিখে কমেন্ট দেয়।
মাহফুজঃ ওহ! অইটা আমাদের অফিসের নতুন ইন্টার্ন। আমি কাজ-কাম অনেক ভাল জানিতো, আমারে দিছে ওরে কাজ শিখাইতে। তাই, আমারে একটু-আধটু তেল দেয় আরকি।
কয়দিন পর অন্য জায়গায় চইলা গেলে আমারে আর চিনবনা, বুঝলা? আর তুমি হুদাই আমারে ফাপর নিলা। তুমিতো জানোই, তুমি আমার সব। তাও ফোন কইরা শুরু করলা ফাপর দিয়া।
মাহফুজের বউঃ বুঝছি, কাজ-কাম ভাল জানোতো বেতন বাড়ায় না কেন?
মাহফুজঃ তুমিওতো চাকরি কর, জানোতো, দুনিয়াডা কেমন।
মাহফুজের বউঃ হুমম।
আমরাতো মেয়ে বলে আমাদের কাজের কোন দাম নাই। আমরা নাকি অফিসে দেরী করে আসি, আগে আগে বাসায় যেতে চাই, খালি বাহানা খুজি অফিস ফাকি দেবার, সুযোগ পেলেই ফোনে গল্প জুড়ে দেই, নয়ত মেয়েরা মিলে আড্ডা দেই।
মাহফুজঃ তোমারে কে কি কইছে, খুইলা কউতো দেহি। তোমার বস মির্জা হারামজাদা কিছু কইছে? অর নল্লি কাইটা আমি ডুগডুগি বাজামু।
মাহফুজের বউঃ ইস! কিসব কথা বল।
উনি কেন এসব বলতে যাবেন। অফিসের লোকজন পাশ থেকে বলে।
মাহফুজঃ আরে, এইসবে পাত্তা দিওনা। তোমরাতো কাজ করই। দেখতা যদি আমাদের অফিসের গুলা।
আমাদের অফিসে একটা আছে, বসে অন্য ফ্লোরে, লাঞ্চের সময় ভীড়ের মধ্যে আমাদের ফ্লোরে আইসা সব কয়টা মিল্লা খালি হাহাহিহি। উফফ।
মাহফুজের বউঃ আর তুমিও ওদের সাথে বইসা লাঞ্চ কর, তাইনা?
মাহফুজঃ আরে ধুর! ওদের পাত্তা দেয় কে? আমি এমনেই আমার কাজ নিয়া ব্যস্ত থাকি। আর, নতুন ইন্টার্ন গুলাতো আছেই। দেখতা যদি একেকটারে।
আমি বুঝিনা, ইন্টার্ন এত মেয়ে নেয় কেন?
মাহফুজের বউঃ কেন, মেয়েরা কি কাজ পারেনা?
মাহফুজঃ আরেনা, ১০টার ৬টাই দেখি মেয়ে। আর, একটা আছে, মুখে যেন মার্বেল নিয়া কথা কয়, এতই ঢং, নাকি করে বলে, ভাইয়া...
মাহফুজের বউঃ আর, তুমি ওদের নিয়া সময় কাটাও, তাইনা?
মাহফুজঃ এইসব কিসব বল? মাঝে মাঝে টীম বিল্ডিংয়ের জন্য এক সাথে হয়ত চা-নাস্তা খাইতে যাওয়া হয়।
মাহফুজের বউঃ কিইই?!
মাহফুজঃ আরে, এগুলা পুরাই অফিসিয়াল।
মাহফুজের বউঃ আমিও তাহলে মির্জা ভাইয়ের সাথে টীম বিল্ডিং করতে যাই?
মাহফুজঃ ছিহ, এইগুলা কি বল? তুমিনা আমার সোনা বউ?
মাহফুজের বউঃ ইসস, ঢং। অফিসে এইসব বলযে, লোকজন শুনেনা।
মাহফুজঃ আর কে শুনব, জাহিদ বইসা ফিক ফিক কইরা হাসতাছে। অর ঘাড়ের উপর দিমু।
মাহফুজের বউঃ আচ্ছা, আজকে কখন আসবা?
মাহফুজঃ ইনশাল্লাহ, আজকে যত কাজই থাকুক, সব শেষ কইরা টাইমলি বাসায় আসব, ইনশাল্লাহ। আজকে তোমারে ভাত রান্না কইরা খাওয়াব।
মাহফুজের বউঃ আমার শরীর খুব টায়ার্ড লাগতেছে।
মাহফুজঃ এই দুপুরে শরীর টায়ার্ড লাগে, খাওয়া-দাউয়া করছতো ঠিকমত? শরীর ভাল আছেতো?
মাহফুজের বউঃ শরীর ভাল আছে। আর খারাপ করলেও কিছু করার নাই। রেসপন্সিবিলিটিটা আগে। ছুটি নিলে আবার মানুষজন পাশ থেকে বলবে, খালি আরাম করে, কত্ত ছুটি নেয়, ইত্যাদি ইত্যাদি।
মাহফুজঃ আচ্ছা, কাজ কর, কিন্তু, বেশি প্রেসার নিওনা।
এখন রাখি, হ্যাঁ? অনেক কাজ জমছে। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে যে ২ দন্ড স্বস্তির নিশ্বাস ফেলব, সেই উপায় নাই। অফিস ছুটির আধা-ঘন্টা আগে যদি কাজ কমাইয়া প্রেসার কমাইয়া নিয়া আসি, কই থেকে একজন আইসা বলবে, আপনিকি ফ্রি?
মাহফুজের বউঃ আচ্ছা, ঠিক আছে, রাতে দেখা হবে, খোদা হাফেজ।
মাহফুজঃ সাবধানে আইস, খোদা হাফেজ।
... (চলবে)
মাহফুজের সংসার (১) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।