আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাহফুজের সংসার (৫) ও (৬)

(৫) মাহফুজের বউঃ কি করে ছিনতাই হল? ব্যথা পাও নাইতো? একটু বস। মাহফুজঃ আর বইল না, এই বাসায় ঢোকার আগে, মাত্র ২ বাড়ি আগে মোড়টায় ছিনতাই হইছে। দেশটায় আর মানুষের বাঁচার কোন উপায় নাই। মাহফুজের বউঃ আহহা! মোবাইল নিয়া গেছে, না? মাহফুজঃ সেইটাতো নিছেই। বদমাইশের বাচ্চা আবার খেয়াল করে, কে আসে যায়।

তুমি নাকি আধা-ঘন্টা আগে আসছ, সেই খবর দিতাছে। মাহফুজের বউঃ আচ্ছা, তুমি রেস্ট নেও। পানি খাবা? মাহফুজঃ দেও। এই গরমে ঘামাইয়া অস্থির অবস্থা। মাহফুজের বউঃ আচ্ছা, তুমি চিন্তা কইরো না।

কত টাকা আসবে, যাবে। মোবাইল আমার পুরানাটা আছেনা, অইটা ইউজ কইরো। মাহফুজঃ শালার ব্যাটারা আবার সীম আর খালি মানিব্যাগ ফেরত দিয়া গেছে। মাহফুজের বউঃ আচ্ছা, গোসল করতে যাও। আমি রান্না বসাইতেছি।

মাহফুজঃ ভাবছিলাম তোমারে রান্না কইরা খাওয়াব। এখন শরীরে কোন এনার্জি পাইতেছিনা। শালার এই দেশেই থাকা অসম্ভব হইয়া দাড়াইতাছে। মাহফুজের বউঃ থাক, গোসল করতে যাও। রান্না নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা।

আসলে সময় নিয়ে রান্না করলে রান্না মজার হয়। সময়টাইতো পাই না। মাহফুজঃ কারেন্ট কখন আসছে? মাহফুজের বউঃ আসছে এই মাত্র। (৬) লোডশেডিং। অন্ধকার বারান্দায় দুজন বসে আছে।

মাহফুজঃ বুঝছ, এই দেশে আর থাকা যাবেনা। পালাতে হবে এখান থেকে। মাহফুজের বউঃ কি বল এইসব? কই পালাবা? মাহফুজঃ এমনভাবে বল্লা, এখনতো ব্যাপারটা খারাপ শুনাইতেছে। মাহফুজের বউঃ আমি আবার কখন কি বলি। বলত সব তুমি।

আমার শুনতে ভাল লাগে। মাহফুজঃ Two little mice fell in a bucket of cream. The first mouse quickly gave up and drowned. The second mouse, wouldn't quit. He struggled so hard that eventually he turned that cream into butter and crawled out. Catch me if you can. আমাদেরো একই অবস্থা। হাল ছাইড়া দিলে হবেনা। পরিস্থিতি বদলাইতে হবে। আগে ভুল বুঝতাম।

আগে মনে করতাম, জিততে হলে অবস্থান আকড়ে থাকতে হবে। কিন্তু, পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে ডিফেন্সিভ পজিশনে যেতে হয়। বিদেশে গিয়া অড জব করলেই কি? এইখানে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়া পইড়া প্রজেক্ট ম্যানেজ করি। পাবলিকের ট্যাক্সের পয়সায় পইড়া কি কাজটা করি? কোন সাইটে কি মাল-পত্র যায়, হিসাব ঠিকমত আছে কিনা, সময়মত কাজ শেষ হয় কিনা, এইসব করি। ভাবছিলাম, সরকারী ভার্সিটি থেকে পাশ করতেছি, টাকা দিয়া সার্টিফিকেট কিনতাছিনা।

কিছু লেখা-পড়া শিখে বের হইতেছি। কিন্তু, যা শিখছি, তার ১ আনাওতো কোথাও ব্যবহার করলামনা। পন্ডিতেরা কয়, ব্রেন ড্রেন। আরে, ব্রেনতো অলরেডি ড্রেনেই আছে। সেইখান থেকে উইঠা যদি কেও কোনদিকে যাইয়া কিছু করতে পারে, তাহলেতো লস কারো কিছু দেখি না।

মাহফুজের বউঃ (মাহফুজের হাত ধরে) কি হইছে আজকে তোমার? মাহফুজঃ কিছুনা। জানো, একবার এক লোকে ইঞ্জিনিয়ার পোলা খুজতাছিল মাইয়া বিয়া দিব কইয়া। আমি কইলাম, দেশে থাকব। জোয়ান বয়সে বিদেশ গিয়া তারুণ্যের শক্তি বিদেশের জন্য ব্যয় করা ঠিক না। ওই লোক কইল, হুমম, দেশেই অনেক টাকা পয়সা করে আরামে থাকা যায়।

এর জন্য বিদেশ যাওয়া লাগে নাকি। মাহফুজের বউঃ আমার আব্বাওতো এইরকম বলে। মাহফুজঃ তোমার আব্বাতো ঠিকাদারী ব্যবসার টেন্ডারবাজী কইরা যা কামাইছে, আমি বাবা তোমার বাপেরে খুব ডরাই। আর ওই লোকে ছিল শিল্পপতি। মাহফুজের বউঃ (মাহফুজের হাত ছেড়ে দিয়ে) তা ওই শিল্পপতির মেয়েরে বিয়া করলা না কেন? মাহফুজঃ আরে, ওই বড়লোকের বইখা যাওয়া মাইয়া বিয়া কইরা কি লাইফটারে তামা-তামা বানামু নাকি? আজকাল এফেয়ার ছাড়া মেয়ে পাওয়া যায় নাকি? তোমারোতো আগে কোন এক ফ্রেন্ড ছিল।

মাহফুজের বউঃ দেখ, খবরদার, বাজে কথা বলবানা। আমি তোমারে বলছি যে, আমি শুধু ফোনে কথা বলতাম আর তোমার সাথে দেখা হউয়ার অনেক আগে থেকেই যোগাযোগ বন্ধ করছিলাম। মাহফুজঃ আরে, রাগ কর কেন? আমিতো শুধু উদাহরণ দিলাম। তোমার মত ভাল মেয়েও যদি আমার মত পোলার সাথে প্রেম করতে পারে, আগের প্রেম থাকতে পারে... মাহফুজের বউঃ কি বললা? তুমি প্রমিজ করছিলা, কখনো এইসব কথা উঠাবা না। আমি শুধু ফোনে কথা বলতাম।

মাহফুজঃ আহা, সরি বাবা। আমার পয়েন্টটা বুঝতে পারতেছনা। আমি বলতেছি, শিল্পপতি যেমন আমারে পছন্দ করলেও উনার মেয়ে পছন্দ করে নাই, তেমনি, তোমার বাপে তোমার জন্য সরকারী চাকরিজীবি ঠিক করলেও তুমি আইসা এই আমারে বিয়া করলা। আমি এইখানে তোমার মহত্ব বর্ণনা করতেছি। তোমার সততার কথা বলতেছি।

তোমার বাপে গতবার না পারলেও পরেরবার ঠিকই এমপি ইলেকশন করব। আর, তুমি সারাদিন খাটুনীর চাকরি কইরা রাতে আমারে ভাত রাইন্ধা খাওয়াও। মাহফুজের বউঃ হুমম, এতক্ষণ কি বলতেছিলা? মাহফুজঃ এইটাই বলতেছিলাম, ওই শিল্পপতি আর তোমার বাবা কেওই চায়নাই, আমি বিয়া কইরা তাদের মেয়েরে নিয়া বিদেশ চইলা যাই। তারা ভাবছে, টাকার জন্য বিদেশ যাওয়া লাগে নাকি। মাহফুজের বউঃ আসলে অনেক মেয়েও যেতে চায় না, আবার অনেক মেয়ে বিদেশ বলতে পাগল হয়ে যায়।

আমি তোমার সাথে যাব। তুমি যেখানে থাকবা, আমাকে সংগে নিয়া যাইও। মাহফুজঃ তুমি খুব ভাল। আমার মনে আছে, তোমার বাবা আমারে কি গালি-গালাজ করছিল। কিন্তু, তোমারে পাউয়ার জন্য সাহস কইরা আমি সেইদিন দাড়াইয়া ছিলাম।

তোমার বাবাযে আমারে গুম কইরা দেয় নাই, এইতো বেশি। আমারে বলল, যেই ইঞ্জিনীয়ার রাস্তা বানাইতে পারে না, ব্রীজ বানাইতে পারেনা, বাড়ি বানাইতে পারেনা, সে আবার কিসের ইঞ্জিনীয়ার। আমার সাহস হয় নাই বেশি কিছু বলার। মনে আছে? মাহফুজের বউঃ হুমম, আব্বা কখনো আমার আবদার ফেলে নাই। আব্বা খুব রাগী, কিন্তু কখনো আমারে মারে নাই।

আমি বুঝতাছিলাম, যতই রাগারাগি করুক, তোমারে মারবেনা। আমি আব্বার একমাত্র মেয়ে। আব্বারে কষ্ট দিতে চাই নাই। কিন্তু, আব্বার কালো টাকায় এত জাক-জমকের সাথে বিয়া না করে আমাদের এই সংসারটাইকি ভাল না? আমরা ঝগড়া করি। পরে সারাদিন একে অন্যের কথা ভাবতে থাকি।

যখন সামনে থাকনা, ফোনে কথা না বললে ভাল লাগে না। জানো, আমার বান্ধবী রুনুর সাথে এক ছেলে চীট করছিল। রুনু খুব কষ্ট পাইছিল। ও বলছিল, মানুষ নাকি একবারই ভালবাসতে পারে। খুব লাকী হইলে নাকি কখনো দ্বিতীয়বার ভালবাসতে পারে।

মাহফুজঃ হুমম। মাহফুজের বউঃ কি হইল আবার? মাহফুজঃ না কিছুনা। এমনেই ভাবতাছিলাম। মাহফুজের বউঃ আরে বাবা, আমি শুধু তোমারেই ভালবাসছি। আমি যেমন তোমার সব, তুমি তেমনি আমার সব।

মাহফুজঃ হুমম। ভাবতেছিলাম, অস্ট্রেলিয়ায়তো অনেকেই গেল, আমরাও ট্রাই করি না কেন। মাহফুজের বউঃ অইখানে আত্মীয়-স্বজন ছাড়া মানুষ কিভাবে থাকে? মাহফুজঃ এইখানেই বা আমরা কিভাবে থাকি? তাওতো, আমরা হয়ত ভাল অবস্থাতেই আছি। তোমার বাবা যদিও আমার সাথে কোনদিন ভাল কইরা কথা বলে নাই, হয়ত একদিন তার সব কালো টাকার সম্পদ তোমার হবে। অবশ্য, তুমি কখনো আমারে অবৈধ ভাবে টাকা কামাইতে বলনাই।

আমিযে সততা, নৈতিকতা মাইনা চলি, এটাতে তুমি কখনো আমারে বাধা দেউ নাই। সবসময় আমারে সাপোর্ট দিছ। তোমার মত মেয়ে পাওয়া যায়না। মাহফুজের বউঃ হইছে, বুঝছি। মাহফুজঃ না আসলেই, চিন্তা করে দেখ।

আমরা হয়ত বিদেশে চলে গেলাম, আমাদের সন্তানরা বড় হয়ে খান একাডেমী করবে। নয়ত, গুগলের মত কাজের শুরু থেকে থাকবে। এখানে যারা আটকা পড়ে থাকবে, তাদের কি হবে? মাহফুজের বউঃ আচ্ছা আসো। এইবার কারেন্ট আসছে, ঘুমাইতে যাবা, চল। মাহফুজঃ Leave no man behind. মাহফুজের বউঃ কি বল? মাহফুজঃ নাহ, কিছু না।

টিভি চলতেছে ওই রুমে। মাহফুজের বউঃ হুমম, তোমার নজরুল সঙ্গীত বাজে, মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম। মাহফুজঃ এইটা নজরুল সঙ্গীত না, এইটা হইতেছে বিষ। কোন সব বোক্স এইসব বানায়, জানিনা। এত্ত সুন্দর গানটারে সুর বদলাইয়া কি করছে।

আর, শালার কিছু বজ্জাত পোলাপান রাতে হেলমেট ছাড়া আঁকাবাঁকা কইরা মটর সাইকেল চালাইতাছে, ৪-৫ টা জিন্স-টি শার্ট পরা মাইয়া, সব গুলার হাতে স্মার্ট ফোন, যেন এটাই স্মার্টনেস, রাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাছে, এইগুলার জন্য নজরুল এই গান লিখছিল? মাহফুজের বউঃ আহা, তুমি এত উত্তেজিত হউ কেন সব কিছুতে? মাহফুজঃ আমি উত্তেজিত হই? তুমি আমারে এইসব অন্যায় দেইখা শান্ত হইতে বলতেছ? যাইনা রাখ, নজরুল আমাদের জন্যই লিখছিল, আমি বিদ্রোহী, রণক্লান্ত। আমি সেইদিন হব শান্ত, যবে উতপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না... মাহফুজের বউঃ হিহিহি। (চলবে) মাহফুজের সংসার (১) মাহফুজের সংসার (২) ও (৩) মাহফুজের সংসার (৪) মাহফুজের সংসার (সম্পূর্ণ উপন্যাস) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.