অসতী মাতার পুত্র সে যদি জারজ-পুত্র হয়, অসৎ পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চয়! সবাইকে আসন্ন বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। কথিত আছে, রাজা শশাঙ্কের ৬ষ্ঠ শতাব্দীর সময় থেকে বাংলা সন চালু হয়। কিন্তু কৃষিভিত্তিক বাঙ্গলায় খাজনা আদায় ও ফসলের উৎপাদন কাজে সুবিধার জন্য ফসলী সন হিসেবে বাংলা সনের যাত্রা শুরু হয় সম্রাট আকবরের সময় ১৫৫৩ গ্রেগোরিয়ান সাল বা ৯৬৩ হিজরী সালে, এটা আজ সর্বজন স্বীকৃত। ইরান হতে আগত জোতির্বিদ ফতুল্লাহ সিরাজী নক্ষত্রমণ্ডলের তারার সাথে মিল রেখে বারো মাসের নাম ঠিক করেন। রাজকার্য পরিচালনার সুবিধার্তে হিজরী সন ভিত্তিক বাংলা সনের যাত্রা শুরু হয়।
সে সময় হতে পহেলা বৈশাখে রাজার খাজনা পরিশোধ, হালখাতা সহ প্রয়োজন মাফিক বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চলে আসছে। এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে মানুষের সাংস্কৃতিক জীবন। কালে কালে মানুষের অর্থনৈতিক জীবন পরিবর্তিত হয়েছে। কৃষি থেকে শিল্পের দিকে যাত্রা যেমন জীবনযাত্রা নির্বাহের উপকরণের পরিবর্তন ঘটিয়েছে তেমনি পরিবর্তন এনেছে সামাজিক অবকাঠামো ও মানস সংস্কৃতিতে। মানুষ ধীরে ধীরে বৈশ্বিক হতে শিখেছে।
যন্ত্র সভ্যতার আমূল পরিবর্তন হতে শুরু করে ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের পর থেকে। নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করে সমগ্র পৃথিবীর উৎপাদন ব্যবস্থার উপর আধিপত্য বিস্তারে সমর্থ হয় পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী গোষ্ঠী। বাঙ্গালীর জীবনাচরণে আমুল পরিবর্তন আসতে শুরু করে। অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রাত্যহিক নানা কর্মকাণ্ডে পাশ্চাত্য প্রভাব আজ সুস্পষ্ট। পরিবর্তন হচ্ছে সমাজব্যবস্থা।
আমরা আজকে ১লা বৈশাখকে উদ্যাপনের জন্য যা কিছু করি তার শুরু ১৯৬৭ সালে পাকিস্থানী শাসকের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্যে।
বাঙ্গালীর ইতিহাসে একটি কথা স্মরণীয়, এই বাঙ্গালী দুই হাজার বছরের ইতিহাসে অতি অল্প সময়ই চালকের আসনে ছিল। গরীব চাষীরা অতি কষ্ট করে খাজনার টাকা সংগ্রহ করত। বিলাসিতা নয়, অতিঅল্পে মনের আনন্দে ভরপুর ছিল জীবন। এ বাঙ্গালীপনায় ধর্মের অবস্থান ছিল অতি স্পষ্ট।
প্রত্যেকে যার যার ধর্ম পালন করত। একজন বাঙ্গালী যেমন বাঙ্গালী জাতির অংশ তেমনি সে মুসলমান অথবা হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতীর মিলনক্ষেত্র এ বাংলা। প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান মানার পাশাপাশি হাজার হাজার বছরের বাঙ্গালী সংস্কৃতি মনের মধ্যে লালন করে আসছে।
আজকে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনের জন্য যে সকল বিষয়ের অবতারনা করা হচ্ছে এবং যা না হলে বাঙ্গালী হওয়া যায় না এ তত্ত্ব দাঁড় করিয়ে একাধারে যেমন ধনী সম্প্রদায়ের মানুষ হিসাবে আমাদের প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে আবার অন্যভাবে যা না তা বলার মাধ্যমে নিজেকে ছোট করা হচ্ছে।
পান্তা বাঙ্গালীর নিত্য দিনের সাথী। ইলিশ মাছ বৈশাখ মাসে কোনদিনই বাঙ্গালীর কাছে সহজলভ্য ছিল না। নতুন পোশাক কৃষক বাঙ্গালীর বিশেষ দিনের চাহিদার সাথে সম্পৃক্ত নয়। নিজেকে বাঙ্গালী করতে এমন বিষয়ের অবতারণা করা হচ্ছে যা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ধর্মের সাথে মিলে যায়। মনে হয় এ বাংলায় শুধুমাত্র সনাতন ধর্মের মানুষরাই ছিল।
মুসলমানরা একাধারে যেমন মুনসলমান তেমনি আবার বাঙ্গালীও। আর্যদের পূর্বে দ্রাবিড়, অস্ট্রিকরা ছিল যারা বৈদিক ধর্মে অনুসারী নয় প্রকৃতপক্ষে তারাই এ মাটির সন্তান। এভাবে হিসেব করতে গেলে আমরা অতীতের অতল গহব্বরে হারিয়ে যাব। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবন্থান এ বাংলায় এ কথা প্রমানিত। তাই শুধুমাত্র একটি ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা নয় ধর্মকে ধর্মের যায়গায় রেখে একটি দিন আনন্দের মাথে কাটানো দরকার।
নিজেকে বাঙ্গালী করার জন্য উঠেপড়ে লাগার দরকার নেই। জীবনোপকনের পরিবর্তনের সাথে সাথে সংস্কৃতির রূপান্তর হবে। আজকে যেমন ইউরোপী সংস্কৃতি তার নিজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক শক্তির জোরে আমাদের মাঝে বহাল তবিয়তে নিজের অবস্থান করে নিয়েছে, আমরা যদি নিজের অবস্থান শক্তিশালী করি তাহলে আর গলা ফাটিয়ে বলতে হবে না সংস্কৃতি গেলে গেল। নিজে সহ সারা বিশ্ব আমাদেরকে অনুসরণ করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।