চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি, তা নিয়ে কথা বলবোই ! বাংলাদেশ সরকারের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সমবায় অধিদপ্তর হল একটি শক্তিশালী সমবায় সমিতি গুলোর নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ধরণের সমবায় সমিতি নিবন্ধন দেওয়ার পাশাপাশি মাল্টিপারপাস সোসাইটিকেও নিবন্ধন দিয়ে থাকে। তবে সমবায় বিভাগ মাল্টিপারপাস সমিতি নিবন্ধন দিতে বিভাগটির অতি উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। কারন উক্ত সমিতি গঠনে সমাজের রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, টাউট সম্প্রদায়, প্রতারক শ্রেনীর লোকজনেরই আনাগোনা এবং দুই পয়সা কামানোরও সুযোগ বেশী।
সিলেট অডিটোরিয়াম মাঠে বিগত বছরের সপ্তাহব্যাপী বিভাগীয় সমবায় দিবস ও মেলা, ২০১১ উৎযাপন বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হল।
এতে হাতেগোনা অন্য ক্যাটাগরির সমবায় সমিতির স্টল দেখা গেলেও অধিকাংশ স্টলই ছিল মাল্টিপারপাস সোসাইটির ও তাদের চটকদার বিজ্ঞাপন। বিভিন্ন মাল্টিপারপাস সোসাইটির স্টলে দর্শনার্থীরা গেলে রকমারি লিফলেট দ্বারা টাকা বিনিয়োগ করার আহ্বান জানায়। কোনোটা মাসিক মুনাফা, ত্রৈমাসিক মুনাফা, বাৎসরিক মুনাফা ও দ্বিগুণ মুনাফা পাওয়ার আকর্ষণীয় অফার। মাল্টিপারপাস সোসাইটির পাশাপাশি সঞ্চয় ও ঋণ দান সমিতির স্টলও পিছিয়ে নেই। তারাও তাদের মত লিফলেট বিতরণ করছে।
এই বিভাগীয় মেলা উদ্ভোধন করেন সিলেটের মেয়র ও বিভাগীয় কমিশনার। সাথে ছিলেন যুগ্ম নিবন্ধক, সমবায় সমিতি সমুহ, সিলেট বিভাগ, জেলা সমবায় কর্মকর্তা প্রমুখ সকলেই স্টলগুলো ঘুরে দেখে চটকদারী লিফলেট গুলো হাতে নেন।
এ হেন অবস্থার ফসলেই আজকের ডেসটিনি মাল্টিপারপাস সোসাইটি সহ অন্যান্য হায় হায় সমিতি গুলো।
বাস্তবিকই, এই সকল সমবায় সমিতিগুলো দেখভাল করার জন্য বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমবায় দপ্তর রয়েছে, রয়েছে অসংখ্য কর্মকর্তা কর্মচারী। কারও মুখে টু শব্দটিও নাই, দিব্যি জনগণকে প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
হাতানো টাকার একটি বড় অংশ সমবায় বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর হাতেও রয়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, আইন সংশোধন করার এবং আইনও সংশোধন হবে। কিন্তু তার আগে ওই সব মাল্টিপারপাস সোসাইটি বা সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতিগুলো প্রতি বছর দক্ষ একজন অডিট অফিসার দ্বারা অডিট করা এবং অডিট প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় ও জেলা সমবায় দপ্তরে দাখিল করা হয়।
অডিট কালে বড়ধরণের কোনো অনিয়ম বা জালিয়াতি ধরা পড়লে তাৎক্ষনিক বিভাগীয় বা জেলা কর্মকর্তার নজরে আসার কথা। আবার যদি অনিয়ম বা ভুলত্রুটিগুলো সংশোধন করে না থাকে পুনরায় অডিট কার্যক্রম চালু না করার সুপারিশ করে অডিট কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাল্টিপারপাস সোসাইটি বা সঞ্চয় ও ঋণদান সোসাইটি কর্তা ব্যক্তিরা অডিট প্রতিবেদনকেও কোনো মূল্যই দিতে চায় না। এক কথায়, সমবায় বিভাগ হতে নিবন্ধন দেওয়ার পর সমবায় সমিতিগুলিকে সমবায় বিভাগের আওতায় রাখার ক্ষমতা দিন দিন হারিয়ে ফেলেছে।
এখন প্রশ্ন হল, সমবায় বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজসে সারাদেশে ব্যাঙয়ের ছাতার নায় নিবন্ধন পেয়ে গজিয়ে উঠা মাল্টিপারপাস সোসাইটি বা সঞ্চয় ঋণদান সমিতিগুলোতে সাধারন জনগন কোটি কোটি টাকা খুইয়ে নিঃস্ব হয়েছে। তার দায় দায়িত্ব সরকার তথা স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সমবায় ও পল্লীউন্নয়ন বিভাগের সমবায় অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। চিহ্নিত করে অসৎ পথে অর্জিত অর্থের সম্পদ ও তার ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রি করে অসহায় জনগনকে তার ক্ষতিপূরণ বাবত বিলিয়ে দিতে হবে।
এটা যদি করা যায় তবে সরকারের সুনাম বৃদ্ধি পাবে এবং অন্যান্য বিভাগের অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের টনক নড়বে। না নড়লেও ক্ষতি নেই। কথায় আছে “আজ আমার কাল তোমার”।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।