বেদখল হল উদ্ধার, নতুন হল নির্মাণ, দুই পুলিশ কর্মকর্তার অপসারণ ও ক্যাম্পাসের ভিতরে অবস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখার স্থানান্তরের দাবিতে গতকাল ব্যাংকের মূল ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ এবং বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় সব ধরনের লেনদেন বন্ধ হয়ে গেলে অচল হয়ে পড়ে ব্যাংকটি। এ ছাড়াও জবির মূল ফটকের বিপরীতে অবস্থিত সমবায় ব্যাংকের দখলে থাকা ফাঁকা জায়গাটির সাইন বোর্ড, ইটের দেয়াল ও টিনের বেড়া ভাঙচুর করে নিজেদের দখলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা। সেখানে থাকা ঝুট কাপড়ে আগুন জ্বালিয়ে দিলে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। পরে সদরঘাট স্টেশনের ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে জরুরি বৈঠকে বসেন ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটির আহ্বায়ক কাজী ফিরোজ রশীদ। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত করার আহ্বান জানান। এর আগে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় ব্যাংকের মূল ফটক তালা দিয়ে সেখানেই বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সমাবেশে শিক্ষক, কর্মকর্তা, জবি ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও কর্মচারীরা একাত্দতা ঘোষণা করেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় লালবাগ জোনের ডিসি হারুনুর রশীদ ও কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামানকে অপসারণসহ আট দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধন ও মৌন মিছিল করেছে জবি শিক্ষক সমিতি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল ১০টা থেকে হলের দাবিতে ক্যাম্পাসের ভাস্কর্য চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। মিছিল শেষে একই স্থানে এসে সমাবেশ করেন তারা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মানববন্ধন করেন শিক্ষকরা। মানববন্ধন শেষে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেন তারা।
ভাস্কর্য চত্বর থেকে সমাবেশ শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক সদরঘাট শাখার মূল ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে তারা সেখানেই অবস্থান নিয়ে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় সদরঘাট-গুলিস্তানের সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংক ভবনটিতে ব্যানার টানিয়ে বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবন ঘোষণা করা হয়। এর পরই জবির মূল ফটকের বিপরীতে অবস্থিত সমবায় ব্যাংকের দখলে থাকা ফাঁকা জায়গাটির সাইনবোর্ড ও দেয়াল ভেঙে ফেলে দখলে নিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষার্থীরা সেখানে থাকা ঝুট কাপড়ে আগুন জ্বালিয়ে দিলে তা ভয়াবহতার রূপ ধারণ করে। পরে সদরঘাট স্টেশনের ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সমবায়ের জায়গাটি দখলে নিয়ে সেখানে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে কয়েকজন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মারধর করেন জবি ছাত্রলীগে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতিতে বেলা ১২টায় শিক্ষক প্রতিনিধিদের জরুরি বৈঠকে বসেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।
দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে জরুরি বৈঠক করেন ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটির আহ্বায়ক কাজী ফিরোজ রশীদ।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ জানান, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখলকৃত হল উদ্ধারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি দ্রুত কাজ শুরু করেছে। দ্রুত তথ্যানুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হবে। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত করার আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তপ্ত পরিস্থিতি দমানোর জন্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমার কাছে এমনটা মনে হয় না। কারণ আগেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তবে এবার সংসদে প্রস্তাব উত্থাপনের পরিপ্রেক্ষিতে এই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাজী ফিরোজ রশীদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও হল পুনরুদ্ধার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের আন্দোলন চলবে। আজও বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখা ঘেরাও করে আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে জবি ছাত্র ইউনিয়ন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।