এসো আবার চড়াই উৎড়ই.......... আমাদের একাডেমিক সহবাস ও আনন্দঘন মুহুর্তসমূহ-২
প্রাথমিক শিক্ষার প্রক্কালে আমার এক সহপাঠীর প্রশ্ন “হুজুর মা আগেনা শুনতে কেমন শুনা যায় বলেন তো”। (উল্লেখ্য সূরা “ফালাক” এর একটি আয়াতের তিলাওয়াতের পর”। এই যদি হয় প্রাথমিক ধর্মীয় জ্ঞান, তবে মাদ্রাসায় কেন ধর্ম শিক্ষা বাংলায় দেওয়া হবে না?
ছেলেবেলায় মসজিদে যখন আরবী পড়তে যেতাম, আমাদের তখনকার হুজুর/ঈমামদের ধর্মজ্ঞান, নীতিজ্ঞান বা যুক্তিতর্ক চর্চা আমাদের আমোদিতই করত না, তারচেয়েও বেশী অনুপ্রাণিত করত। আজকালকার দু-পাতা কুরআন পড়া মোল্লাদের যখন মাইকে আওয়াজ তুলে রাজনৈতিক চর্চা, টাকা ভিক্ষা, আর অশ্লীল খিস্তি করতে দেখি, তখন এটাই মনে পড়ে, সম্ভবত ঈমাম, মাওলানা এদের পদবীর সংজ্ঞাটা পাল্টে দেওয়া উচিত।
বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষককে আমার কখনও ঠিক সুস্থ মনে হয়নি, ধর্ম শিক্ষার অবসর পেলেই জড়িয়ে পড়তেন রসালো আলোচনায়।
আমাদের ইংরেজী পড়াতেন যে জাপানী শিক্ষক তিনি এখনও ছাত্রদের লিঙ্গ ধরে থাকেন কিনা জানা দরকার।
বেদনার নাম কালবৈশাখী, সিস্টেম অব ডাউনের পর আবার আনন্দের অবসর।
ধুমকেতু দেখে যদি কেউ ভেবে বসেন যে, ধরে বাসায় পুড়বেন, জেনে নিবেন আপনার ঘরটাও গেল.............. ।
সায়েন্স ল্যাবে এতোগুলো মানুষকে কড়ে আঙ্গুল দেখিয়ে ব্যাঙটি ধরে এনেছিল যে, সে একজন ছাত্রী।
প্রথমবার মনে হয়েছিল গণিত বুজি এতোটাই সহজ, প্রাণবন্ত ও আনন্দময়, ধন্যবাদ ইউনূস স্যারকে, যে কয়টা মাস ছিলেন প্রচন্ড অভিমানী ও শিশুসুলভ আচরণের এই শিক্ষক।
তাকেই কিনা অপমান করে তাড়াল পরিচালনা কমিটি। স্যার আপনার বিদায়ের প্রতিশোধ নিয়েছিলাম দু-বছর পর। এরপরও বলে কিনা আমরা নাকি ‘আগাছা’ “মাথা মোটা বেকুব কাহাকে”।
নাম্বারিং সিস্টেম বুঝতে আনোয়ার স্যারের একটি ক্লাশই যথেষ্ট ছিল। মনে আছে, কয়েকজন তৎকালীন কয়েকজন শিক্ষকও ছিলেন, ছাত্র হিসেবে সেই ক্লাশে।
সময়ের বাইরের উপড়ি সময়ের ক্লাশ.............
যথেষ্ট আন্তরিকতা ও ভালো ব্যবহারও একজন শিক্ষককে মনে রাখার জন্য যথেষ্ট, ধন্যবাদ সোহেল স্যারকে। মনে পড়ে নিজের সামান্য ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য দেড় ঘন্টা পরে অন্য টীচারের ক্লাশে কড়া নাড়া।
ভদ্রলোক চিৎকার করে কথা বলতেন, পরবর্তীতে জেনেছিলাম কানে কম শুনতে পান। তার আহবানটা আজও মনে আছে “আমার সময় খুব অল্প, আর বেশীদিন বাঁচব না, তোমরা যা পার আমার কাছ থেকে শিখে নাও”। তিনি ইশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন, তারপরও জ্ঞান ছিল তার কাছে ইশ্বরের সমান।
মোস্তফা স্যার কি এখনও বেঁচে আছেন?
শব্দ আমাকে প্রতিনিয়ত ছিড়ে-কুঁড়ে খায়................
আমি রুষে উঠি যবে মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত-নরক হাবিয়া দোজখ,
নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া।
এরপর আসুন সেই মানুষটির সাথে পরিচিত হই “প্রথমবার যখন হাওয়াই চপ্পল আর তাবলীগের গেট-আপে ক্যাম্পাসে দেখেছিলাম, ভেবেই নিয়ে ছিলাম ইনি সর্ব্বোচ্চ একজন অভিবাবক হতে পারেন। তথ্যটিকে ভুল প্রমাণিত করতেই হাতে মাইক্রোপ্রসেসরের বই ছিল। শফিক স্যারের ক্লাশ পিন পয়েন্ট সাইলেন্ট থাকলেও কিছুটা নীরস, বাড়তি কথার কোন আড়ম্ভর নেই, ইনি জানতেন কোথায় কতটুকু পড়াতে হবে এবং কি কি উদাহরণ টানতে হবে। শফিক স্যারের সাথে তুলনা চলে একমাত্র মাসুদ স্যারের।
মাসুদ স্যারই সম্ভবত ইনস্টিটিউটে সর্বপ্রথম সাংস্কৃতিক আবহ এনে দিয়েছিলেন, তারা জানতেন কোনটা প্রয়োজনীয় আর কোনটা নয়। তারপরও দুজনই এক কথায় ‘বস’।
সুমন স্যারকে স্মরণ করতেই হয় যতবার কোডিং করতে যাই, হেলে-দুলে কোডিং।
বৈঠায় জোড় লাগিয়ে অনেকেই এসেছেন, নিন্দুকেরা বলত মেয়েটারে বিয়া দেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায়, টীচার বানায়া দাও, ভালো বর জুটে যাবে। ম্যাডামদের কথা বলতে গেলে মায়ের কথাই মনে পড়ে।
স্কুলে রমা আপা, মীনা আপাদের মতো মমতাময়ী ও বিচক্ষণ শিক্ষীকা আর কখনও পাওয়া হয়নি, মনে আছে রমা আপার বিদায় অনুষ্ঠানে কেঁদে ফেলেছিলাম। বহুবছর পর এখনও মনে হয় এরা এমন মানুষ যে দেখলেই পা ছুঁেয় প্রণাম করতে ইচ্ছে হয়। এমন হয়তো আরেকজনকে পাওয়া যেতে পারে, ডিপ্লোমা লেভেলে লীনা ম্যাডাম, ইনাকে দেখলেই মনে হত ইনি বুঝি চিরকালই মা থেকে যাবেন। কখনও বৃদ্ধা দাদী হবেন না।
ধন্যবাদ লীমা সাহা ম্যাডামকে ইংরেজী নিয়ে ব্যাপক সময় দেওয়ার জন্য।
আমি এখনও সন্দিহান আমি ইনার কাছে ঠিক ইংরেজী শিখতে বসে থাকতাম, নাকি ওনার সৌন্দর্য আমাকে বেশী টানতো। বীথিকা ম্যাডামকে নিয়েতো একটা কবিতাই লিখে ফেলেছিলাম। পরবর্তী জেনারেশনে যারা এসেছেন শিক্ষিকার চেয়ে ছাত্রীই মনে হয়েছে বেশী।
একটা ঘটনা বলার লোভ সামলাতে পারছি না, দেয়ালিকার জন্য লেখা আহ্বান করা হয়েছে, লীমা ম্যাডামকে অন্য কারো ক্লাশে নক করে একটি কবিতা ধরিয়ে দিলাম, ম্যাডাম প্রথম লাইনটি পড়েই অপ্রস্তুত,কবিতাটি দ্রুত ব্যাগে ঢুকিয়ে বললেন পরে যোগাযোগ করো। কবিতাটি এখানে তুলে দিচ্ছি...................................
‘মহান দিবসের গান’
আমাদের ভদ্র- পল্লীতে প্রায়ই অসভ্য গান চলে..............................
স্কুলে এক টীচার দাঁত মাজতেন না বলে তার নাম ছিল ‘ঘীঁ’।
যে স্যারটির মাথা ছোট ছিল তিনি হলেন ‘স্টিক’, ‘কুট্টি মাথা’, ইত্যাদি।
যার চেহারা জাপানীদের মতো দেখতে ছিলেন বলে তিনি জাপানী।
একজনকে তো আমরা বলতাম মিয়া ‘তানসেন’। উল্লেখ্য ইনার নাম পূর্বে ছিল ‘লাল পানি’। পড়া বলতে ডাকার পর বলতেন।
“কি নাম তওব হে, মেরে লাল পানি বের করে দেব যে মানি”। পরবর্তীতে প্যারালাইসিস হওয়ার আগে শরীরের অঙ্গভঙ্গী দেখে এ নামকরণ, তিনি পড়া পড়তে দিয়ে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তানসেনের মতো হাত নাড়তেন।
মিঃ নেক্সট্ এখনও নেক্সট্ বলেন কিনা জানিনা।
হেডমাস্টার ‘ডব্বা’র মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিলাম। ‘ডব্বা’ কিছু পাথরের আংটি পড়তেন চড় দেওয়ার পূর্বে পাথরটিকে হাতের তালুর দিকে ঘুরিয়ে নিতেন।
একবার সেই দশমনি চড় খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল ফলাফলে
২০ মিনিট মাথা ঝিম ঝিম...................।
যে শিক্ষকের প্রভাব এখনও কাজ করে তিনি একটা কোচিং চালাতেন, অদ্ভুত মানুষ কখনও মাস শেষের তাগাদা নেই, গ্যাপ দিলে টিউশন ফি নিতে চাইতেন না, বলতেন পড়তেইতো আসো নাই আবার টাকা দিয়া ছোট করবা ? এখনও মাঝে মাঝে যাই কথা বলি, সেই মানুষটি একটুও বদলাননি এখনও আছেন আগের মতোই।
***** পুনশ্চঃ যাদের কথা বলিনি, তারা আবার গাল ফুলিয়ে বসে থাকবেন না, আপনারা আপনাদের সেরাটুকুই দিতে চেয়েছেন, আমি হয়তো নিতে পারিনি অন্যরা পেরেছেন বা আমিও হয়তো নিয়েছি। একজন শিক্ষক কি কখনও গাল ফুলিয়ে বসে থাকেন ? লোকে কি বলবে ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।