আমার পোস্ট আমার মতামতঃ যে কারো মতের সাথেই দ্বিমত হতে পারে। -
সম্প্রতি মিরাক্কেলের মীর তার প্রোগ্রামে নাকি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের মুখ্যমন্ত্রী বলেছে। এতে অনেকেই ব্যাপক আপত্তি প্রকাশ করছেন কিন্তু আমি খুঁজে পাচ্ছিনা এখানে আপত্তি কোথায়!! তারা কি বাস্তবতা দেখেন না!!! চোখ কান খোলা থাকলে তো বুঝতে পারার কথা, এখানে হাসিনাকে মুখ্যমন্ত্রী বলাটা ভুল নয়, ভুল হয়েছে বাংলাদেশ বলাটা, এখানে হবে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যেমন তাদের পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানারজি। আমাদের দেশের উচ্চপর্যায়ের বেশ কিছু নীতিনির্ধারক ইতোপূর্বেই আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছেন অদূর ভবিষ্যতে ভারত মাতাই আমাদের পূজনীয়। ভারত মাতা আমাদেরকে যতটুকু অনুগ্রহ করেন তা আমাদের জন্য প্রসাদতুল্য।
যেহেতু বাংলাদেশ আলাদা রাষ্ট্র নয় সেহেতু আন্তর্জাতিক আইন নামক কোন কিছু এখানে আমাদের সম্পর্কের মাপকাঠি হতে পারেনা। করিডোরের বিনিময়ে শুল্ক চাওয়া অসভ্যতা, সীমান্তে হত্যার বিরোধিতা করা দেশদ্রোহিতার শামিল, আমাদের মন্ত্রী বলেন টিপাই বাঁধে আমাদের দেশের ক্ষতি হবেনা, আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক অধিকারের বিনিময় তৈরি করি নিজেদের স্বকীয়তাকে, নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে ট্রাক ভর্তি ইলিশ মাছ, বিশেষ জামদানি শাড়ী আর নানা উপঢৌকন দিয়েও আমরা নিজেদের অধিকার আদায় করতে পারিনা, অথচ ২০০ ভরি স্বর্ণ উপহার দিয়ে আমরা ক্ষমতার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি।
আর বাংলাদেশ নামক সদ্য সাবেক* ভুখন্ডের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য ফেসবুক ব্লগে লাফালাফি না করে বাস্তব জীবনের প্রতিটা পর্যায়ে স্বতন্ত্র জাতিসত্তা গড়ে তুলে ইন্ডিয়ানদেরকে জানিয়ে দিতে হবে এই ভুখন্ডের মানুষ স্বাধীনতাকামী বলেই পাকিস্তান থেকে সংগ্রাম করে আলাদা হয়েছে, ঐ পশ্চিম বঙ্গীয় মেনি বিড়ালদের মত ভারতের উচ্ছিষ্ট ভোগী এই বাংলার মানুষ কখনও হবেনা।
সকাল থেকে গভীর রাত অবধি যেই দেশের মানুষ স্টার প্লাস, সনি, স্টার জলসা, জি বাংলার সিরিয়াল, রিয়ালিটি শো, সিনেমা নিয়ে সময় কাটায়, যেই দেশের মেয়েরা স্কুল ক্যাম্পাসে শীলা কি জাওয়ানি/উলালা উলালা গান গেয়ে আনন্দ উৎসব করে, তরুন প্রজন্মের কাছে আদর্শ হয় মুম্বাইর পর্দা তারকা আর ক্যাল্কাটার গাঁজাটি সিঙ্গার, যেই দেশের ফ্যাশন মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করে ইন্ডিয়ান ডিজাইনাররা, আমরা ঈদে কি পরব, বৈশাখে কি পরব, সবকিছু শিখি ইন্ডিয়ান সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছ থেকে। এক্ষেত্রে আমাদের আদর্শ আমরা প্রগতিশীল, আমরা মডারেট।
মুসলমানদের ঈদ উৎসবে তাদের দেখানো নকশা অনুযায়ী আমরা এখন ধুতি পরে মসজিদে যাই, সিল্কের/লাল/উজ্জ্বল রঙের ঝকমকে আড়ম্বরপূর্ণ পোশাক পরে নামাজ পড়তে যাই, এসব পোশাক আমাদের ধর্ম সমর্থন করেনা, তাহলে আমরা কিভাবে নিজেদেরকে আলাদা স্বাধীন জাতিসত্তা ভেবে পুলক অনুভব করি!! আমরা বাংলাদেশী, আমাদের দেশের কিছু ছেলে মেয়ে এই ক্যাল্ক্যাটার অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করতে পেরে গর্বে গর্ভবতীও হয়(!), আমাদের দেশের জাতীয় দিবসের স্বাতন্ত্র্য নস্ট করে ভাষা দিবস, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসের মাসে ইন্ডিয়ান সেলিব্রিটিদেরকে কোলে তুলতে পেরে/চুমু খেতে পেরে আমাদের তরুণীরা উচ্ছাসে ফেটে পড়ে সেই আমরা কি নিজেদেরকে একটা স্বাধীন জাতি ভাবতে পারি!!
আমরা দেখি আমাদের তিতাসের বুকে বাঁধ দিয়ে দাদারা নিজেদের স্বার্থের মহোৎসব করলেন, হাজার হাজার খাল বন্ধ হল করিডোরের কারণে, আর আমাদের দেশের দালাল শ্রেনি এর সমর্থন দিয়ে গেল। তিস্তার বুকে বাঁধ দিয়ে আমাদের দেশকে মরুভূমি করা হচ্ছে, ফেনী নদীর তলদেশে ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন বসিয়ে পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে সম্পূর্ণ গায়ের জোরে, টিপাই মুখে বাঁধ দেয়া হচ্ছে আমাদেরকে চূড়ান্তরুপে হত্যা করার জন্য, সীমান্তে আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের পণ্যের প্রসারের জন্য চোরাচালানের সুযোগ দেয়া হচ্ছে বখরার বিনিময়ে, ভাগাভাগিতে কমবেশি হলেই পাখির মত ঝুলিয়ে গুলি করা হচ্ছে, মেয়ে হলে তাকে ক্যাম্পে রেখে পাশবিক নির্যাতন করা হচ্ছে, আর আমাদের দেশের হর্তাকর্তারা তাদের পক্ষেই সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন। এরপরও কি আমরা স্বাধীন জাতি বলে বিশ্বাস করব!! কেন এসব আইওয়াশ!!
তুলা রপ্তানি বন্ধ করে আমাদের শিল্পকারখানা ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, অথচ সংস্কৃতির অবাধ প্রবেশ ঘটিয়ে আমাদের একটা স্বতন্ত্র মুসলিম বাংলাদেশী জাতিসত্ত্বার গলা টিপে গুম করে ফেলা হচ্ছে।
আমাদের দেশের শিক্ষিত নামধারী তথাকথিত প্রফেসররা আমাদেরকে ধর্মীয় অনুভূতি শেখাচ্ছেন ক্যাল্কাটাকে উদাহরণ টেনে আর সেই ক্যাল্ক্যাটা কি অবস্থায় আছে, কতটা আধুনিক, কতটা অসাম্প্রদায়িক, কতটা সহনশীল আর অন্য জাতির প্রতি কতটা শ্রদ্ধাবোধ রাখে তা আমাদের কাছে তুলে ধরা হয়না। ভুলেচক্রে ২-১ জন ক্যাল্কেশিয়ান বা ইন্ডিয়ানের উদ্ধত আচরণে ভাগ্যক্রমে কিছু প্রকাশ পায় মাত্র।
একজন মীর বা একজন শেবাগ এই সাধারণ চক্রেরই একটা অনুষঙ্গ মাত্র।
আর ব্লগ ফেসবুকে এসব রাজনৈতিক ভাবনা পোষণ করলে সস্তা একটা ট্যাগ দিয়ে বলা হয় ‘স্বাধীনতা বিরোধী’!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।