আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুন্দরের পূর্ব-পশ্চিম



কেউ কি কখনো ভেবেছেন, বলিউডের সাবেক সুপারস্টার মাধুরী দীক্ষিত হলিউড কিংবদন্তী মেরিলিন মনরোর মত সুন্দরী সাজার জন্য মেকআপ নিতেন? অথবা ক্লদিয়া শেফারকে অনুসরণের জন্যই সুপার মডেল নাওমি ক্যামবেল মুখে ব্রাশ বুলাতেন? উত্তরাটা সবারই জানা এবং তা হচ্ছে, একটা বিশাল 'না'। কারণ সৌন্দর্য সম্ভবত সেই শেষ শব্দ যার বস্তুগত সংজ্ঞা নিরূপিত হয়নি। 'সৌন্দর্য' এবং তার 'স্তুতি' সবসময়ই মনোগত। সৌন্দর্যের মানদণ্ডে হলিউড ক্রেজ মেরিলন মনরো যে মেকআপ নিয়ে ভুবন কাঁপিয়েছেন, একই মেকআপ মাধুরী দীক্ষিতের জন্য সর্বাংশে উপযোগী হবে, তা ভাবার কোন কারণ নেই। মাধুরীর যে হাসি উপমহাদেশ কাঁপায়, মনরোর মাঝে সে ক্যারিশমা কোথায়? বিপরীত দিক থেকে বলা যায়, মনরো যেভাবে সেক্স-সিম্বলের প্রতিশব্দ হয়ে আছেন, মাধুরী সেভাবে পারেননি।

বিশ্ব জুড়ে মেকআপ আর্টিস্টরা খদ্দেরদের জন্য হয়ত একই ব্রাশ, একই কসমেটিকস ও একই ব্রান্ড ব্যবহার করেন। তবে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মাঝে যোজন যোজন ফারাক। এ ভিন্নতার ভিত্তি প্রধানত দুটি প্রাথমিক স্তেরে নিহিত থাকে। প্রথমত, শরীরগত মিল আর উপলব্ধিগত বেমিলের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করেই সামনে এগোয়। জাঁকালো ফেস-কাট, বড় ও গভীর কালো চোখ দেখেই প্রাচ্যের একজন সুন্দরী তরুণীকে শনাক্ত করা যায়।

কিন্তু পশ্চিমা সৌন্দর্যকে প্রধানত শরীরের ফিটনেস, ত্বকের বুনন এবং হেয়ার-স্টাইলের ভিত্তিতে মাপা হয়। উপমহাদেশের নারী পোশাকের পরিপাট্য অথবা ন্যাচারাল অথবা সিনথেটিক কসমেটিক দিয়ে শরীরের প্রকৃত রঙ লুকাতে যতটুকু সময় ঢালে, সোনালি চুলের একজন পাশ্চাত্য তরুণী সে সময়টুকু লাইফ এনজয়ে ব্যয় করে। ঘর থেকে বাইরে পা ফেলতে গেলেই পাশ্চাত্য নন্দিনী সানব্লক ক্রিম মাখবেই। কারণ সে সানবাথ কামনা করে এবং প্রাচ্যের তরুণীদের মত সূর্যকিরণে এত তাড়াতাড়ি বিবর্ণ হয় না। কিন্তু রোদে পুড়ে চামড়াটা তামাটে বানানোর কথা প্রাচ্যের নন্দিনী ভাবতেই পারে না।

তাই সানবাথের সঙ্গে তার ভাব জমে না। পাশ্চাত্যের সোনালি চুলের একজন টিনএনজার নিজেকে মোহনীয় করার জাগতিক প্রয়োজনটুকু সহজেই আয়ত্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশের দৃশ্যপট ভিন্ন। এখানকার উঠতি বয়সের একজন মেয়ে গাঢ় রঙের লিপ পেনসিলের মাধ্যমে সৌন্দর্যচর্চার হাতেখড়ি নেয়। বাদামি, লাল অথবা গোলাপি নিদেনপে একই রঙের লিপস্টিকও ঠোঁটে মাখে।

মুখমণ্ডলে কসমেটিকস মাখার প্রক্রিয়াতেই উভয় গোলার্ধের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। পশ্চিমা নন্দিনী এক বা দু’ স্ট্রোকের বেশি মাসকারা নেয় না। অন্যদিকে উপমহাদেশের নারী মাসকারার স্টিক হাতে পেলে যেন থামতেই চায় না। গাঢ় রঙের আইশ্যাডোই তাদের প্রিয়। তবে অনুষ্ঠানভেদে মাসকারা ও আইশ্যাডোর পুরত্ব বাড়ে।

সোনালি চুল, ফর্সা চামড়া আর ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে পশ্চিমা মেয়েদের মুখমণ্ডলে এমনিতেই প্রাকৃতিক একটা রক্তিমাভা থাকে। এ কারণে কসমেটিক আইটেম কম হলেও তাদের চলে। ত্বকের স্বাভাবিক রক্তিমাভার কারণে লিপস্টিকের হালকা আঁচড়েই ওদের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। আর উপমহাদেশের মেয়েরা কসমেটিকের সম্ভাব্য সব কালার ব্যবহার করার মাঝেই সার্থকতা খুঁজে পায়। এটা ঠিক, চুলের রঙ, চুলের গঠন, ফ্যাশন ও দৈহিক উচ্চতার ভিত্তিতেই নির্ধারণ করা সম্ভব, মেকআপের পর একজন নারীকে কেমন দেখাবে।

যেমন কাঁধ অথবা কোমর পর্যন্ত কালো চুলের বিপুল সমাবেশে থাকলে প্রাচ্যের একজন নারী ডার্ক পেস্টেল শেড যেমন ক্রিম লিপস্টিক, আইশ্যাডো, আইলাইনার, মাসকারা ইতাদি প্রয়োগ করে নতুন ধরনের একটা ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারে। কারণ এ মেকআপের কারণে তার স্বাভাবিক চেহারা বোঝার কোন উপায় নেই। সৌন্দর্য সম্পর্কে একজন মেকআপ আর্টিসস্ট বা পেশাদার বিউটিশিয়ানের যে ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য উপলব্ধি সৃষ্টি হয়, তার ভিত্তি সম্ভবত খদ্দেরদের ব্যক্তিগত রুচি ও সাধারণ পর্যবেক্ষণ। তারপরও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, তার সৌন্দর্যের চেতনাটি সামাজিক ধ্যান-ধারণা, প্রথা ও ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত। রণশীলতা ও উদারনৈতিকতা সম্ভবত মেকআপের মূল চালিকা শক্তি নয়।

সৌন্দর্যের ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য ধারণা অপ্রত্যক্ষভাবে হলেও সামাজিক মাপকাঠি ও প্রথার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। সৌন্দর্যের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সৃষ্ট বির্তকটি হয়ত শেষহীন। তাই এটা বলাই সবচেয়ে নিরাপদ যে, সৌন্দর্যের মনোগত চেতনাটি সংশ্লিষ্ট মেকআপধারীর চোখেই নিহিত থাকে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।