আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! একজন ইভটেজার
সিগারেটে একটা টান দিতেই মেজাজটা গরম হয়ে গেল । শালা মুকিমকে বলেছিলাম ভালটা কিনতে । আর শালারপুত কিনছে কোনটা !
এই জিনিস খাওয়া আর আকিজ বিড়ি খাওয়া একই কথা । তবুও খাজা ভরা সিগারেটটা ফেলে দিতে পারলাম না । তবে মেজাজটা গরম হয়েই রইল ।
মুকিমকে হাতের কাছে পেলে হয় এখন ! শালার পৃষ্ঠদেশে জোরে একটা লাথি কশাতে পারলে ভাল লাগবে । একথা ভাবতে ভাবতেই দেখলাম মুকিম এদিকে আসছে ।
হালার শয়তানের নাম নাও আর শয়তান হাজির ।
-দোস্ত জলদি চল ।
মুকিম এসে কেবল এই কথাটা বলে আমার হাত ধরে টান দিলো ।
পাশে তুহিন আর জহির বসে ছিল ।
-কি হইছে টানস ক্যান ?
-আরে চল না মামা , স্টার কাবাবের কাছে এক জব্বর মাল দাড়িয়ে আছে ।
আমার মনে খানিকটা কৌতুহল জেগে উঠল ।
মুকিমের এইসব দিকে অভিজ্ঞতা খুব ভাল । বললাম
-দেখতে কেমন ?
-জোস মামা জোস !
-একা নাকি দোকা ?
জহির বলে উঠল
-দোকলা হলে কি হইছে ।
সব সাইজ করে দিবো । চল অনেক্ষন ধরে হাত নিশপিশ করছে ।
আমি বললাম
-চল ।
আসলেই অনেকক্ষন ধরে কিছু করা হচ্ছে না । গাজার স্বাধটাও ঠিক মত ধরে নি কিছুতো একটা করা উচিত্ ।
স্টার কাবাবের দিকে এসে মালটাকে দেখশাম । মুকিম শালা ঠিকই বলেছে । আসলেই জোস । আমি বললাম
-চল একটু মজা করি ।
আমরা চারজনই আস্তে আস্তে মেয়েটার দিকে এগিয়ে যাই ।
মেয়েটা কিছু লক্ষ্যই করেনি । একপরেই যে মেয়েটার সাথে কি হবে এটা ভাবতেই নিজের মনে হাসি চলে এল ।
ঐ তো মেয়েটার কোমরের এক জায়গায় পায়জামাটা বের হয়ে রয়েছে । মেয়েটার খুব কাছে যখন চলে এলাম ঐ জায়গাটা ধরেই টান দিলাম ।
ধ্যাত ! খুলল না ।
বেশ শক্ত করে বেধেছে শালী ।
টান মারার পর আমরা হাসতে হাসতে চলে আসছি একবার পেছন ফিরে তাকালাম । দেখলাম মেয়েটা কেবল অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
একটু আগে ওর সাথে কি হল মেয়েটা যেন ঠিক মত বুঝতেই পারছে না । অধিক শোকে মানুষ যেমন পাথর হয়ে যায় মেয়েটা তেমন অধিক টানে পাথর হয়ে গেছে ।
এখনিই মেয়েটা নিশ্চই চিৎকার করে উঠবে তার আগেই আমি মাথা ঘুরিয়ে নিলাম ।
আর দেখার টাইম নাই । আর চিৎকার করলেও খুব একটা লাভ নাই ।
এটা আমাদের এলাকা ।
একটু আদতু মজা না করলে কে করবে ?
মনে আনন্দ নিয়ে দুই কদম গিয়েছি ঠিক এমন সময় কেউ আমার পেছন থেকে কলার চেপে ধরল ।
-এই খানকিরপুত ! জামা ধরে টান দিলি ক্যান ?
একজন ভুক্তভোগী
মোবাইলে সময় দেখেই চোখ কপালে উঠে গেল । সাড়ে নয়টা বাজে !
ও মাই গড !
এতো রাত হয়ে গেছে । একটা মিরপুরের গাড়ি যদি আসে !
আর এতো দুর তো রিক্সায় যাওয়াও সম্ভব না ।
কি যে করি ? আম্মুকে ফোন দিলাম
-কি রে তুই কোথায় ?
-মা এখনও ধানমন্ডিতে ।
-এতো দেরি করছিস কেন ? তোর আব্বু এখনই চলে আসবে ! তোকে বাসায় না দেখলে কি হবে ভেবে দেখেছিস ?
-মা এইতো ! বাস আসলেই চলে আসবো ।
-আয় । জলদি আয় ।
মা ফোন রেখে দিল । আসলেই এখন একটু চিন্তা লাগছে । কি যে করি !
তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়া দরকার ।
এসব কথা ভাবছি ঠিক এমন সময় আমার পাশে কে যেন এল । একটু গরম অনুভব হচ্ছে । ঠিক তখনই কে যেন পিছনের লেগিং ধরে টান দিল । আমি ভাবতেই পারি নি এমন কেউ করতে পার ।
ভাগ্য ভাল শক্ত করে বাধা ছিল ।
তা না হলে ....
আমি আর ভাবতে পারলাম না । আমার বাস্তবে আসতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল । ছেলেগুলোর দিকে তাকালাম ।
তাকিয়ে দেখি ছেলেটা বীশ্রি ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে । আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারলাম না ।
আমার এখন কি করা উচিত্ । খ্যাল করলাম নিজের চোখ দিয়ে অটোমেটিক পানি পড়ছে ।
বারবার মনে হচ্ছে কেউ দেখে নিতো । দেখলে লজ্জার সীমা থাকবে না । ছেলে গুলো হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে ঠিক তখনই দেখলাম একটা লম্বা মত ছেলে ঐ ছেলেগুলোর মধ্যে যে ছেলেটা আমার দিকে হাসছিল তার কলার চেপে ধরল ।
একজন সাধারন পাবলিক
স্টার কাবাব থেকে কাবাব খেয়ে বের হচ্ছিলাম ঠিক তখনই দেখলাম একটা লম্বা মত ছেলে অন্য একটা ছেলের কলার চেপে ধরল ।
কি কথা কাটাকাটি করতে করতে দেখলাম মারামারি বেধে গেল ।
লম্বামত ছেলেটা একা ছিল আর ঐ ছেলে গুলো চারপাঁচ জন ।
ঠিক বুঝলাম না ছেলেটা ওমন এগ্রেসিভ হল কেন ? ছেলেটাকে সাথে ঐ গুপটার সাথে গন্ডগোল বেঁধে গেল । আসেপাশে পাশে লোক জড়হতেও সময় লাগল না ।
একটু পরেই দেখলাম একটা মেয়ে ঐ লম্বা মত ছেলেটার পাশে এসে হাওমাও করে কাঁদতে লাগল ।
কিছুক্ষন দাড়িয়ে যা বুঝলাম তার সারমর্ম হল ছেলেগুলো মেয়েটার গায়ে হাত দিয়ে টিজ করেছিল । আর লম্বা মত ছেলেটা সেটার প্রতিবাদ করে মার খাচ্ছে ।
দেখলাম আসেপাশের কোন লোকজন ছেলেটাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে না । তবে ঐ ছেলেগুলোও হাতপা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে দিল ।
এতো মানুষ জন দেখে ছেলেগুলোও কেমন হিজিটেইড ফিল করা শুরু করেছে ।
কেউ কেউ আবার লম্বা ছেলেটাকে দোষ দিতে লাগল । বলল
-এতো বাড়াবাড়ি করার কি দরকার ! পথ চলার ক্ষেত্রে একটু আডটু ধাক্কা লেগেই যেতেই পারে ।
আমি আর থাকলাম না ।
কি দরকার পরের ঝামেলায় নাক গলানো !
আমি আমার সমস্যা নিয়া বাচি না ! পরের সমস্যা নিয়ে ভাবার সময় কোথায় ?
একজন সাহসী ব্লগার
সুমন সেই কখন থেকে দাড়িয়ে আছে ।
হাত ঘড়ি দিকে তাকিয়ে আবার পা চালালাম আরো দোড়ে ।
সুমন নিশ্চই রেগে পম হয়ে আছে । স্টার কাবারের কাছে এসেছি ঠিক তখনই একটা অদ্ভুদ একটা দৃশ্য দেখলাম ।
দেখলাম একটা মেয়ে দাড়িয়ে ছিল স্টার কাবারের সামনে । মনেহয় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল ।
কয়েকটা ছেলে মেয়েটার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল । প্রথমে ভেবেছিলাম ছেলে গুলো হয়তো এমনিতেই ওর পাশ দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তখনই একটা কাজ হল । ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলে মেয়েটার পেছনের ল্যাগিংস ধরে টান দিল ।
মাই গড !
আমি ভাবতেই পারলাম না এমন একটা কাজ কেউ করতে পারে ?
কেন জানি নিজের মধ্যেই খুব রাগ অনুভব করলাম ।
আর কিছু ভাবলাম না আর কিছু মনেও এল না সোজা গিয়ে হারামজাদার কলার চেপে ধরলাম ।
-খানকির পুত ! জামা ধরে টান দিলি ক্যান ।
ছেলেটা প্রথমে খানিকটা অবাক হল । কিন্তু সামলে নিল । বলল
-ক্যান তোর কি লাগে ? বউ লাগে নি ?
দেখলাম ছেলেটার আশেপাশের ছেলে গুলোও সামনে চলে এসেছে । কথা কাটাকাটি বেধেই গেল ।
আমি একা ওরা চার জন তবুও বুকের মাঝে কেন জানি ভয় লাগলো না । আমার বারবার মনে হচ্ছে আমি একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি । আসেপাশের কত লোক আছে । তাদের বিবেক আছে । তারা আমার সাথে আসবেই !
কিছু ক্ষনের মধ্যেই লোকজন জমে গেল ।
কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম । একটা মানুষও আমার সাহায্যের জন্য এল না ।
তার চেয়েও বেশি অবাক হলাম কেউ যখন বলল যে আমি নাকি বাড়াবাড়ি করছি ।
আমি ভুক্তভোগী মেয়েটার দিকে তাকালাম । মেয়েটা কাঁদছে ।
মেয়েটাকে দেখিয়ে বললাম মেয়েটা যদি আপনাদের মেয়ে হত কিংবা বোন তবুও কি এই কথা বলতেন ?
তবুও কেউ কিছু বলল না ।
আমি ভাবতেই পারলাম না আমাদের দেশের মানুষ গুলো এমন বিকেক হীন কেন হল ।
পরিস্কার দেখা যাচ্ছে একজন অন্যায় করছে কিন্তু কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে না ।
এমন কি একটু সামর্থনও কেউ করছে না । দেখলাম ছেলেগুলো ততক্ষনে কেটে পড়েছে ।
মেয়েটা তখনও কেঁদে চলেছে ।
আমি মেয়েটাকে নিয়ে ভীড় ঠেলে বাইরে চলে এলাম । খুব সংকোচের সাথে বললাম
-আমি খুবই দুঃখিত । তোমার প্রতি হওয়া অন্যায়ের কোন সুস্থ বিচার হল না ।
কিছুকথাঃ
এটা একটা কাল্পনিক গল্প ।
কিন্তু গল্পটার প্রেক্ষাপট একদম বাস্তব । আমাদের চারপাশে এমন ঘটনা হারহামেসাই হয় । এবং এমনটাই হয় । আমার ভাবতে কষ্ট হয় আমাদের চারপাশে এই চার রকমের লোকই আছে ।
ইউ ল্যাবের ছাত্র পরিচয়ে ঐ ইভটেজার যেমন আছে ভুক্তভোগী ঐ মেয়ের মত অনেক মেয়ে আছে ।
আর সব থেকে হতাশার কথা হল পড়ালেখা বিকেকবান আমাদের মত সাধারন লোকও আছে । যারা কেবল ঝামেলা এড়িয়ে চলে । যারা কেবল নিজেদের কথা ভাবে । অন্যের ঝামেলা তারা নিজেদের ঝামেলা মনে করে না ।
কিন্তু ..............
কিন্তু আমাদের সমাজে ঐ সাহসী কিছু মানুষও আছে ।
যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে । অন্যের ঝামেলা যারা নিজেদের ঝামেলা মনে করে । নিঃশর্ত ভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে ।
আমাদের সমাজে এখনও এমন মানুষ আছে । এটা ভাবতেই মন ভাল হয়ে যায় ।
একজন সাহসী মানুষ ।
একজন সাহসী ব্লগার । সামহোয়ারের সাহসী ব্লগায় সর্বনাশা আপনাকে স্যালুট জানাই । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।