হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া না দেওয়া নিয়ে দলের বিভক্ত নেতাদের বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামীকাল রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন। নেতাদের এক পক্ষ সোমবারের গণমিছিলের বদলে চেয়েছেন প্রভাবশালী নেতা এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় টানা হরতাল, গণঅবস্থান, ঘেরাও কর্মসূচি। অন্য পক্ষ চায় জনদুর্ভোগের কর্মসূচি দিয়ে পরীক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক মহল ও ব্যবসায়ীদের সহানুভূতি না হারাতে। তাই গণমিছিল, বিক্ষোভ ও জনসভার মাধ্যমে জনমত পক্ষে আনতে চান তারা। দুই পক্ষের বাকবিতণ্ডার মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া বললেন রবিবার শীর্ষ নেতাদের অবস্থা আদালতে কী দাঁড়ায় দেখতে।
ইলিয়াস ইস্যুতে তিনি ছাড় না দেওয়ার পক্ষে। দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ইলিয়াসঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, সরকারের বিরুদ্ধে এখন দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে আগামী দিনে তাদের জীবনের নিরাপত্তাও থাকবে না। এ নিয়ে তারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে নানা যুক্তিও তুলে ধরেন। তবে অন্য পক্ষ দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার শেষ পর্যায় কী দাঁড়ায়, সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বেগম জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছেন।
সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে বিএনপি চেয়ারপারসন নেতাদের বলেছেন, আগামীকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। নেতাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলায় বিভক্ত রায়ে প্রধান বিচারপতির গঠন করা তৃতীয় বেঞ্চে কী ফলাফল আসে, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। তবে রায় নেতিবাচক হয়ে দলীয় নেতাদের আত্দসমর্পণের পর নিম্ন আদালত কর্তৃক গ্রেফতারের খড়গ নেমে এলে সোমবার ঢাকায় গণমিছিল থেকে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। জানা যায়, গত বুধবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠকের পর দলের প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, নাজিমউদ্দিন আলম, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, নিতাই রায় চৌধুরী, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।
বৈঠকে হিলারি-প্রণবের বাংলাদেশ সফর ও পরবর্তীতে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। শুরুতেই তিনি বিএনপি নেতাদের আত্দগোপনের ব্যাখ্যা দেন বেগম জিয়া। তিনি বলেন, মামলা হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতাদের আত্দগোপন নিয়ে অনেকেই নানা প্রশ্ন তুলেছেন। এটা ঠিক নয়। কৌশলগত কারণেই আমার নির্দেশে তারা আত্দগোপনে ছিলেন।
মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার এড়াতে তিনিও এর আগে আত্দগোপনে ছিলেন_ এ বিষয়টি উপস্থিত নেতাদের স্মরণ করিয়ে দেন। পরে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আগামী ১১ জুনের আল্টিমেটামকে মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে টিম করে মাঠপর্যায়ে সফরের কথা তুলে ধরেন। বেগম জিয়া এর জবাবে বলেন, নেতাদের বিরুদ্ধে এখন মামলার খড়গ বইছে। এ মুহূর্তে ঢাকার বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন জানতে চান পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে।
শীর্ষ নেতাদের মামলা থাকায় আইনজীবীরা এ মুহূর্তে হরতাল কর্মসূচি না দিয়ে আইনগতভাবে মোকাবিলা করার কথা বলেন। এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, তারা আশা করছেন উচ্চ আদালতেই বিএনপি নেতারা জামিন পাবেন। জামিন নিয়ে দ্বৈত বেঞ্চে দ্বিধাবিভক্ত রায়ের পর তৃতীয় বেঞ্চে দীর্ঘমেয়াদি জামিন পাওয়ার আশা করেন তিনি। তাই এ মুহূর্তে হরতাল না দিয়ে বিক্ষোভ মিছিলের পক্ষে মত দেন তিনি। তিনি এ সময় জনগণের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে বলেন, এখন পরীক্ষা চলছে।
তা ছাড়া আন্তর্জাতিক মহলেও ঘন ঘন হরতালে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ সময় অন্য আইনজীবীরা মওদুদের বক্তব্যে সায় দেন। তবে এর বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন দলের স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তিনি বলেন, এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ এবং বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় এখন সাদামাটা কর্মসূচি দেওয়া ঠিক হবে না। তাই টানা হরতালসহ লাগাতার কর্মসূচি দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমানউল্লাহ আমান। এক পর্যায়ে এ নিয়ে সামান্য বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। তবে বেগম জিয়া সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ইলিয়াস ইস্যুতে কিংবা নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় সরকারকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তবে জনগণের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তাই রবিবার পর্যন্ত উচ্চ আদালতে কী হয়, তা পর্যবেক্ষণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি।
এ সময় তিনি গণমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশের কথা জানান। খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর নেতারা আর বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলেননি। জানা যায়, রবি-সোমবার রাজপথে ঢিলেঢালা কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা বেগম জিয়ার রুম থেকে বেরিয়ে আসেন। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে বেগম জিয়া কর্মসূচি নিয়ে কথা বলেন। বিক্ষুব্ধ এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপিকে আসলে বিরোধী দলে শোভা পায় না।
ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হলেন, আর দু-একটি হরতাল ও বিক্ষোভ মিছিলেই এর প্রতিবাদ শেষ। এটা মেনে নেওয়া যায় না। তা ছাড়া হরতালে জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করলে তো কর্মসূচি না দিয়ে বাসায় বাসায় মিলাদ পড়ানোই ভালো। হরতালে জনগণের ভোগান্তি না বাড়লে তো সরকারের টনক নড়বে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইলিয়াস আলীকে গুম করে সরকার নিজেদের পতন ডেকে এনেছে।
তাকে সন্ধান না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই। তারা জাতীয় দাবির কোনো ইসু্যুকেই ছাড় দেবেন না বলে জানান। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, যেহেতু দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাই আগামীকাল পর্যন্ত জামিন আবেদনের ফলাফল কী দাঁড়ায়, সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে।
যদি নেতিবাচক কিছু হয় তাহলে সোমবার গণমিছিল থেকে কঠোর কর্মসূচি আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মোদ্দা কথা, আন্দোলন নিয়ে খোদ বিএনপি’র মধ্যেই দ্বিধাবিভক্তি।
খালেদাও হরতালের বিপক্ষে। বাকিদের মধ্যেও রয়েছে মতবিরোধ। বিএনপিও বুঝতে পেরেছে, জনগণ আর হরতাল চায় না। বিএনপির এই শুভবুদ্ধিকে ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।