আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেমন আছে ভুতের বাড়ির রিতা ও মিতা?

......... ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন শীতল ঘর। সে ঘরে ঘুরে বেড়ায় ধেড়ে ইঁদুর। নাকে আসে তীব্র উৎকট দুর্গন্ধ। এ সবই এখন ডা. আইনুন্নাহার রিতা ও প্রকৌশলী নুরুন্নাহার মিতার কাছে দুঃস্বপ্ন। এই দুই বোন এখন সাধারণ মানুষের মতোই সুন্দর ও পরিপাটি জীবনযাপন করছেন।

গায়ে মাখছেন নামি ব্রান্ডের দামি সুগন্ধি। প্রিয় পোশাক পরে বের হচ্ছেন কর্মস্থলে। নিজের বিদ্যাবুদ্ধিকে কাজে লাগাচ্ছেন গবেষণার কাজে। মিরপুরের কথিত ভূতের বাড়ির বাসিন্দা দুই বোন অনেক দিন হলো ‘ভূতের বাড়ি’র অভিশপ্ত জীবন ত্যাগ করে নতুন জীবন শুরু করেছেন। স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।

নতুন জীবনে পা দেওয়ার পথেই তারা ত্যাগ করেছেন বড় বোন কামরুন্নাহার হেনার বাসা ‘রয়েল গার্ডেন’। জীবিকানির্বাহের জন্য দুজনের একজন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ নিয়েছেন। নিজেদের আত্দতৃপ্তির জন্য করছেন পবিত্র কোরআন শরিফের ইংরেজি অনুবাদের কাজ। স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য বোনের বাড়ি থেকে সামান্য দূরেই শংকরের একটি দুই রুমের ভাড়া বাসায় থাকছেন তারা। নিজেদের খাবার তারা নিজেরাই রান্না করছেন।

জানতে চাইলে রিতা বলেন, ‘পরনির্ভরশীলতা কাটাতেই এ ব্যবস্থা। বহু দিন বোনের বাড়িতে থেকেছি। কিন্তু এতে নিজেদের স্বাধীন মনে হয়নি। তাই দুজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আলাদা থাকার। ’ রিতা-মিতার বড় বোনের বাসায় তাদের খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, দুই মাস আগে তারা বড় বোনের বাড়ি ছেড়ে কাছাকাছি একটি একতলা ভাড়া বাসায় উঠেছেন।

গত ডিসেম্বরে রিতা-মিতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের যখন শেষ সাক্ষাৎ হয়, তখনই দুই বোন বড় বোনের সঙ্গে থাকার ব্যাপারে নিজেদের অনিচ্ছার কথা জানান। এ ধারাবাহিকতায় গত মার্চে তারা বড় বোনের দোতলা বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। এ ব্যাপারে রিতা-মিতার দুলাভাই ও হেনার স্বামী আবদুল মমিন বলেন, ‘স্বাধীনভাবে বসবাসের জন্যই রিতা-মিতা আমাদের ছেড়ে গেছে। বহু অনুরোধের পরও দুই বোন আমাদের কথা রাখেনি। নিজ পরিবার ও একমাত্র সন্তানের মঙ্গলের কথা ভেবে আমরাও আর তাদের ধরে রাখেনি।

’ জানা যায়, গত বছর জুনে ভূতের বাড়ি থেকে রিতা-মিতাকে উদ্ধারের পর বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান কিছুদিন তাদের চিকিৎসা করেন। রিতা-মিতার দাবি, তাদের সিজোফ্রেনিয়া নেই। বর্তমানে তারা চিকিৎসা বন্ধ রেখেছেন। তবে নতুন জীবনে তারা কারও সাহায্য নিচ্ছেন না।

এরই মধ্যে ডা. রিতা ধানমণ্ডির একটি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন। তা ছেড়ে দিয়ে বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। মিতা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাজে জড়িত না থাকলেও পবিত্র কোরআন শরিফের ইংরেজি অনুবাদ নিয়েই বর্তমানে ব্যস্ত। তাকে এ কাজে মিতাও সহযোগিতা করছেন। মিরপুরে ভাড়া দেওয়া ফার্নিচারের দোকান ‘উডল্যান্ড’-এর টাকা দিয়ে ভালোই কাটছে দুই বোনের জীবন।

আগের মতো তারা কখনো বসুন্ধরা, কখনোবা নন্দন মেগাশপে গিয়ে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন। রিতা-মিতার ভাগি্ন সামিনা জানান, খালারা যত দিন তাদের রয়েল গার্ডেনের বাসায় ছিলেন ততদিন তাকে নিয়েই ঘুরতে যেতেন বা আড্ডা দিতেন। রিতা-মিতার এখন অধিকাংশ সময় কাটে লেখালেখিতে। শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে তারা এখন সুস্থ। কথাবার্তায় নেই কোনো অসংলগ্নতা।

কোরআন শরিফ অনুবাদের পাশাপাশি সাম্প্রতিক বিশ্ব সংকটের কারণ নিয়েও তারা একটি বই অনুবাদ করছেন। দুজনই জানান, পুরনো পেশায় ফিরে যাওয়ার আর ইচ্ছা নেই। রিতা-মিতা বলেন, ‘ইসলাম ধর্মের প্রচারে বাকি জীবন কাজ করে যেতে চাই। আমাদের মা রওশনারা বেগমেরও ইচ্ছা ছিল আমরা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দেব। এ জন্য আমরা সমমনাদের নিয়ে একটি গ্রুপ গড়ে তুলতে চাই।

‘বিয়ে করবেন না?’ এমন প্রশ্নে প্রকৌশলী মিতা জানান, ধর্মপ্রচার করতে গিয়ে মতের মিল হবে এমন কাউকেই বিয়ে করব। এ প্রসঙ্গে ডা. রিতা জানান, যে ছেলে অন্য ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করবে তাকেই বিয়ে করবেন। রিতা-মিতা বলেন, বড় বোন হেনা ও তার স্বামী আবদুল মমিন তাদের অনেক যত্ন নিয়েছেন। এটি তাদের বড় পাওয়া। হেনা জানান, ‘বহু দিন অভিভাবকহীন থাকার কারণে রিতা-মিতা স্বাধীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত।

তাই তারা যখন আবারও আলাদা থাকতে চাইল আমি আর বাধা দেইনি’। তিনি বোনদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন বলে জানান। ১৯৯৬ সালে রিতা-মিতার মা রওশনারা বেগম মারা যাওয়ার পর লাশ দাফনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথমবারের মতো তাদের অস্বাভাবিক জীবনযাপনের বিষয়টি জনসমক্ষে আসে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তারা পুরোপুরি লোকজন এড়িয়ে চলেছেন। এ সময় রিতা-মিতা মিরপুরের ভূতের বাড়িতে রহস্যজনক জীবনযাপন করেন।

২০০৬ সালে চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলেও ২০০৮ সালে তাদের আচরণ আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এর মধ্যে তাদের খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেন এ দুই বোনের আত্দীয়, প্রতিবেশী ও গণমাধ্যমের লোকজন। কিন্তু তারা কারও আহ্বানে সাড়া দেননি। অবশেষে গত বছরের ১৭ জুন বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর এই প্রতিবেদক ও চিত্রগ্রাহক জয়িতা রায় অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় মিরপুরের কথিত ‘ভূতের বাড়ি’ বাড়ির বাসিন্দা ডা. আইনুন্নাহার রিতা ও ইঞ্জিনিয়ার নুরুন্নাহার মিতাকে উদ্ধার করেন। সে সময় টানা ৪০ দিন শুধু পানি খেয়ে বেঁচে ছিলেন রিতা-মিতা! মিতার চেয়ে রিতার অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক।

মূলত সামাজিক যোগাযোগ না থাকার কারণেই দুই বোনের এ বেহাল অবস্থা হয়েছিল। সে সময় দুই বোন জানিয়েছিলেন, তাদের এ বাড়িতে ইচ্ছা করেই বন্দী রাখা হয়েছিল। আত্দীয়-পরিজনবিহীন অসহায় দুই বোন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সাহায্যের আকুতি জানিয়ে বলেছিলেন, ‘এই বন্দী জীবন থেকে আমরা মুক্ত হতে চাই’। ১৭ জুন রিতা-মিতাকে উদ্ধারে আঙিনার কাঁটাযুক্ত আগাছা পেরিয়ে যখন তাদের ঘরে প্রবেশ করা হয় তখন তীব্র দুর্গন্ধ নাকে আসে। বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন ঘরটি ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন।

দেয়াল হাতড়ে ঘরের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ঘরে শুকনো পাতা, ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ। ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল বড় ইঁদুর ও আরশোলা। দেয়ালে ঝুলছিল মাকড়সার বড় জাল। সব মিলিয়ে ভূতের বাড়ি আদতেই সৃষ্টি করেছিল এক ভুতুড়ে পরিবেশ! (সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন)  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.