আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"চাকরি ছেড়ে দিবা, খাবা কি" ?? "তোমাকে চুমু খাবো" !!!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! মোবাইল ফোনটায় একবার ভাইব্রেট করে উঠল । কেউ কি মিসকল দিল ? নিশির মনে হল অপু হয়তো মিসকল দিয়েছে । আগে ও এই কাজটা খুব করতো । নিশি যখনই ওর উপর রাগ করত , কথা বলত না, ফোন দিত না ওর ফোন রিসিভও করত না , অপু তখন ওকে বার বার মিস কল দিত । এতো ছোট আর দ্রুত হত মিসকল গুলো ধরা যেত না ।

এই ভাবেই খেলা করতো । নিশিকে বিরক্ত করত খুব । যতক্ষন না ঘুরে ওকে ফোন করতো ততক্ষন জ্বালাতন করে মারতো । ফোন রিসিভ করেই অপু বলত -কি ব্যাপার ফোন করবে না বলে ? -তুমি মিসকল কেন দিচ্ছিলে ? খানিকটা রাগত স্বরেই বলতাম । -কথা সেটা না ।

তুমিতো বলেছিলে আমি যাই করি না কেন তুমি ফোন দিবা না । তাহলে ফোন দিলে কেন ? -শোন ফাজলামি করবে না ! ফাজিল কোথাকার ! -শোন নিজের হবু বর কে এভাবে যে ফাজিল বলে সেও ফাজিল । ফাজিল না , মহিলা ফাজিল । -আহা সখ কত ! আমার বর হবার স্বপ্নই দেখো ! -আরে স্বপ্নইতো দেখছি । জানো কাল রাতেই তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি ।

-কচু দেখেছ ! মিথ্যা কথা । -সত্যি বলছি । আচ্ছা থাক তুমি যখন বিশ্বাস করছো না তখন বলব না । -সত্যিই দেখেছ ? -হুম । -কি দেখেছো ? -তুমি তো বিশ্বাস করছো না ।

আর আমি তো ফাজিল ছেলে ! ফাজিল ছেলের কথা কেন শুনবে ! -আহা বল না । এভাবেই কথা এগিয়ে চলত । প্রত্যেক বারই অপু কোন না কোন ভাবে নিশিকে মানিয়ে নিত । নিশির মনে হল অপু বোধহয় আবার ওরকম করবে । কিন্তু আর একটা বারও মোবাইলটা কেঁপে উঠল না ।

সেলফোনটা হাতে নিয়ে দেখে মেসেজ এসেছে । অপুই পাঠিয়েছে । একটা মাত্র লাইন । I am sorry for what happened yesterday. ব্যস ! এই টুকুই । আর কোন কথা নাই ।

আগে যখন রাগ হলে অপু কত রকম ভাবেই না ওর রাগ ভাঙ্গাত । আর এখন কেমন যেন সব ফর্মাল হয়ে গেছে । এমন কেন হচ্ছে ! কিছুতেই নিজের মনকে বোঝাতে পারে না ও । এমনটা কেন হচ্চে ! আগেও অপু নিশিকে অবহেলা করতো কিন্তু এখন যেন এর মাত্রাটা আরো বেড়ে গেছে । অপুর কাছে সব সময়ই ওর বন্ধুদের বন্ধুদের গুরুত্ব ছিল সব থেকে বেশি ।

অপুর বন্ধুরা থাকলে অপুকে কেমন যেন অপরিচিত মনে হত ! একবার টিএসসিতে বসে ওরা গল্প করছিল । এমন সময় অপুর এক বন্ধু এসে অপুকে ডেকে নিয়ে গেল । বলে গেল দুমিনিটের মধ্যেই ও ফিরে আসছে । নিশিকে ঐ দিন পাক্কা দুই ঘন্টা ওয়েট করতে হয়েছিল অপুর জন্য । এর মাঝে নিশি বেশ কয়েকবার ফোন দেবার চেষ্টা করেছে কিন্তু অপু একবারও ফোন ধরে নি ।

দুঘন্টা পর অপু যখন ফিরে এল অপু এমন একটা ভাব করলো যেন কিছুই হয় নি । রাগে দুঃখে নিশির মরে যেতে ইচ্ছা করছিল । কিন্তু নিশি কিছু বলে নি । কেবলই কষ্টটা গিলে ফেলেছে । নিশি ছোটবেলা থেকেই বড় আদরের মাঝে বড় হয়েছে ।

সারা জীবন কেবল আদর পেয়ে এসেছে । ওর বাবা মা ভাই ওর সব বন্ধুবান্ধব সব সময় ওকে সব সময় কেয়ার করে এসেছে । কিন্তু যে মানুষটাকে ও সব থেকে বেশি ভালবাসে সে মানুষটাই যখন ওকে অবহেলা করে তখন কিছুতেই সহ্য হয় না । নিশির ইচ্ছা করে চলন্ত বাসের নিচে ঝাপ দিতে ! আগে তো কেবল অপুর জীবনে ওর স্কুল আর ভার্সিটি লাইফের বন্ধুরা ছিল আর চাকরিতে ঢুকার পর এখন তার সাথে যোগ হয়েছে ওর কলিগ রা । পৃথিবীর সব কিছু থেকে অপুর কাছে এদের গুরুত্ব সব থেকে বেশি ।

নিশি যে ওর গার্লফ্রেন্ড এটা মনে থাকে না । তবুও নিশি সব কিছু মেনে নিয়েছিল । কিন্তু কিছুকিছু ব্যাপার মেনে নেওয়াটা বড় কঠিন । গত কালকের ঘটনাই ধরা যাক । চাকরীর কারনে অপুকে ঢাকার বাইরেই থাকতে হয় ।

ঢাকায় আসে খুবই কম । আগে যেখানে প্রতিদিন দেখা হত এখন মাসে একবার । খুব বেশি হলে দুবার । তাও আবার এক দের ঘন্টার বেশি না । গতকাল ঠিক এমন একটা দিন ছিল ।

কতদিন পর অপুর সাথে দেখা হল । কিন্তু বেশি সময় থাকার উপায় নেই । অপু আসলো বিকেল বেলা । নিশি মাত্র কথা শুরু করেছে । কত কথা জমে আছে ! কতদিন পর ওকে সরাসরি দেখলো ওকে ! যদিও প্রতিদিনই ফোনে কথা হয় তবুও সরাসরি কথার আবেদনই আলাদা ।

অপুর সাথে যখন সারাসরি কথা বলে তখন নিশি কেবলই ওর চোখের দিকে তাকায় । কি যে মনে হয় ওর নিজের কাছে !! মনে হয় কেবল ওর দিকেই তকিয়ে থাকতে !! কালও ঠিক ও তাই ভাবছিল !! কিন্তু ঐ বদমাইশ ফোনটা সব কিছু ওলট পালট করে দিল । পাঁচ মিনিট কথা বলতে না বলতেই ফোন এসে হাজির । নিশি চাচ্ছিল অপু যেন ফোনটা না ধরে !! কিন্তু ও ফোন ধরলো অপু ফোন রাখলো ঠিক ২৯ মিনিট পর । নিশি মুখ ততক্ষনে গম্ভীর হয়ে গেছে ।

ফোন রাখার পর অপু বলল -কি ব্যাপার মুখ এমন পেচার মত করে রেখোছে কেন ? বলে অপু মুখটা হাসি হাসি করার চেষ্টা করল । কিন্তু নিশি গম্ভীরই রইল । বলল -তোমার সাথে আমার কতদিন পর দেখা হল ? -এই এক মাস । -২৭ দিন পর । কতক্ষনের জন্য দেখা হল ? -ঘন্টা খানেক ।

-এর মধ্যেও যদি তুমি ২৯ মিনিট ফোনেই কথা বল তাহলে দেখা করার মানে কি ? -আসলে অফিস থেকে ফোন দিছিল । -অফিস থেকে ফোন দিছিল ? কে দিছিল তোমার ঐ মহিলা বস ? ফাজিল মহিলা অফিস আওয়ারের বাইরে এতো কিসের আলাপ তোমার সাথে ? -নিশি এসব কি বলছ ? -আচ্ছা ? এসব কি বলছি ? -তুমি বুকে হাত দিয়ে বলতো এই যে আধা ঘন্টা গ্যালাইলা তার সাথে , অফিসের কথা কোন কথা বলেছ ? অপু কোন কথা বলল না । নিশি আবার বলল -কথা বলবা না কেন ? অবশ্যই বলবা । কিন্তু একটু সময় জ্ঞান থাকবে না ? কোথায় আছে ? কার সাথে আছো এটা দেখবে না ? শোন আমি খুব ভাল করে জানি আমার ইম্পর্টেন্স তোমার কাছে কমে গেছে । আর যেখানে আমার দরকার নাই সেখানে আমি থাকবো না ।

নিশি আর দাড়ায় নি ওখানে । অপু প্রথম একটু থাকানোর চেষ্টা করেছিল । তারপর আর কোন খোজ নাই । এমন একটা ভাব থাকলে থাকো না থাকলে না থাকো ! বিকেল পর্যন্ত এমন ভাবেই কাটল । কোন ফোন আসলো না ।

বিকেলের পর মিস কল আসা শুরু হল ওর ফোন । পুপ পুপ করে আসতেই থাকল । প্রথমে ভাবল যে ফোন করবে না । কিন্তু নিশি জানে এরকম ভাবে অপু জ্বালাতেই থাকবে । -কি হল ? -কিছু হয় নি ।

-তাহলে জ্বালাচ্ছ কেন ? -না মানে তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে । আসবা একটু ? -না । -একেবারে না করে দিলে ? -হুম । তোমার সাথে আমি আর দেখা করবো না । -কেন ? -শোন তোমার সাথে প্যাচাল পারতে ভাল লাগছে না ।

আমি এখন রাখি । -শোন শোন শোন ! আমি তো সরি বলেছি তাই না !! -তোমার সরির আমার দরকার নাই । -আচ্ছা তোমার যা ইচ্ছা । শুধু একটা কথা শোন প্লিজ । অপুর কণ্ঠস্বর কেমন যেন বিষন্ন মনে হল ।

নিশির মনটাও কেমন যেন বিশন্ন হল । -কি কথা ? -আমি চাকরী ছেড়ে দিচ্ছি । -কেন ? -না চাকরীর কারনে অনেক সমস্যা হচ্ছে । ফ্যামিলি ফ্রেন্ডস কাউকে ঠিক মত সময় দিতে পারছি না । তোমাকে সময় দিতে পারছি না ।

-চাকরী ছাড়লে খাবে কি ? -তোমাকে চুম খাবো । -আহা!!!! আচ্ছা চুম খেলে পেট ভরবে ? -একবার খেয়েই দেখো ! তুমি যদি এখন আমাকে কিস কর তাহলে আজ সারা রাত আমার আর কিচ্ছু খাওয়া লাগবে না । -আচ্ছা ? -সোনাপাখি প্লিজ আসো না!! এই ড্রেনের দুর্গন্ধ আর সহ্য হচ্ছে না । -মানে ? নিশিদের হলের ঠিক সামনেই একটা ড্রেন আছে । মাঝে মাঝে ব্যাপক গন্ধ ছরায় ।

-তুমি কোথায় ? -তোমার হলের সামনে ! নিশি আর রাগ করে থাকতে পারলো না । বলল -একটু দাড়ায় সোনাপাখি । আমি আমি এখনই আসছি । নিশি আর কিছু ভাবলো না । ওর সব রাগ কোথায় উড়ে গেছে এরই মধ্যে !! ওর কেবল মনে হচ্ছে অপু দারিয়ে আছে ওর জন্য !!! গল্পটা এখানে আছে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.