আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আধুনিক বিলাসী ঃপি

পাক্কা দুই ঘন্টা জ্যামে আটকা থাকিবার পর অসহ্য হইয়া প্রত্যহই হাটিয়া বিদ্যা অর্জন করিতে যাই। আমি একা নই-প্রায় সবাই। যাহাদের বাড়ি ঢাকা শহরে, তাহাদেরই ছেলেদের শতকরা নব্বই জনকে এমনি করিয়া বিদ্যালাভ করিতে হয়। ইহাতে লাভের অংকে শেষ পর্যন্ত ০ থাকিলেও রাস্তাঘাটে দুর্নীতি বিদ্যা বেশ শিখিতে পারে। তারপর এই কৃতবিদ্য শিশুর দল বড় হইয়া ঢাকায় মানুষের ভীড়ে জায়গা না পাইয়াও গ্রামের পথে পা বাড়ায় না।

অলিতে গলিতে বান্দরের মতো অর্জিত দুর্নীতি বিদ্যাকে কাজে লাগায়। কিন্তু থাক এ-সকল বাজে কথা। স্কুলে যাই-বিশাল জ্যামে পড়িয়া বসিয়া থাকিতে হয়। কে কয়টা মেয়ের সাথে রিলেশন করিল, কে কত টাকার নেশা করিল, কে কোন সিরিয়ালে কী দেখিল ইহা লইয়া আড্ডায় মাতিয়া উঠে। কাজেই পরীক্ষার খাতায় ১ এর অভাবে এদের ১০০ নম্বর ০০ হইয়া যায়।

আমাদের এলাকার এক ছেলের সাথে মাঝে মাঝেই জ্যামে আটকা পড়িয়া দেখা হইত। তাহার নাম ছিল মৃত্যুঞ্জয়। আমাদের চেয়ে সে অনেক বড়। নবম শ্রেণীতে পড়িত। কবে যে সে ৯ম শ্রেণীতে উঠিয়াছিল তাহা বেশ রহস্যের ব্যাপার।

মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা মা কেহই ছিল না। সে তাহার একমাত্র চাচার সহিত থাকিত। মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা মা কেহই না থাকায় তাহার চাচা তাকে কখনই কষ্ট দিতেন না। এমনকি গাঁজা, গুলি খাইয়া পড়িয়া থাকিলেও কিছু বলিতেন না। উপরন্তু যে বাসায় ভাড়া থাকিতেন উহার অর্ধেক তাঁহার ভাতিজার বলিয়া দাবি করিতেন।

সেদিন দেখিলাম ওভার ব্রিজের নিচে নেশায় বুদ হইয়া পড়িয়া আছেন। তাঁহাকে দেখিলে দূর সরিয়া যাইতে চেষ্টা করিতাম। কেননা, অপরের টাকা মারিয়া খাওয়ায় এর বেশ খ্যাতি আছে। যাহাকেই পায় টাকাটা মারিয়া বড়লোকের পার্টিতে গিয়ে ভীড় জমায়, নেশা করে। একদিন শোনা গেল সে মর-মর।

আরেকদিন শোনা গেল সে দুর্নীতিবাজ কোটিপতি মন্ত্রীর টাকায় চিকিত্সা পাইয়া সুস্থ হইয়া উঠিয়াছে এবং এক ডি.জে পার্টিতে ঐ মন্ত্রীর মেয়ে বিলাসীর সহিত নগ্ন ও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। সে এখন মন্ত্রীর ১৫ তলা বিশাল অট্টালিকায় বাস করে। তাহার এ পরিবর্তনের কথা শুনিয়া দেখা করিবার প্রয়াসে গেলাম মন্ত্রীর বাসায়। বিশাল অট্টালিকা। ১১ তলায়, উজ্জল বৈত্যুতিক বাতির আলোয় দেখিলাম মৃত্যুঞ্জয় একটি ১৮ কি ২৮ বছর বয়সি মোটা সোটা মেয়ের পা কোলে তুলিয়া টিপিয়া দিতেছে… আমাকে দেখিয়া মৃত্যুঞ্জয় বলিয়া উঠিলঃ -কে! ন্যাড়া!! কিন্তু মেয়েটি ক্ষেপিয়া গেল।

তাত্ক্ষণাত্ তর্জন গর্জন করিয়া লাফ দিয়া খাট হইতে নামিল। তাহার লাফে আমি ভূমিকম্প অনুভব করিলাম। তাকে আমার দিকে তেঁড়ে আসতে দেখে আমি চম্পট মারলাম। পেছন থেকে শুনতে পেলামঃ -অই ন্যাড়া বেটা। আজ তোর খবরই আছে।

তুই ঢুকেছিস এ বাড়ীতে আমার অনুমতি ছাড়া। আমি বিলাসী হয়ে থাকলে তোরে ছাড়ব না। আমি তৎক্ষনাৎ দৌড়াইয়া রাস্তায় আসিয়া পড়িলাম। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোতেও আমার ব্যাপক ভয় লাগিতেছিল। পাছে পেছন থেকে আবার আসিয়া ধরিয়া ফেলে.... “দেশটা একদম রসাতলে গেল! নিজের মেয়েকে দিয়ে লিভটুগেদার! সিঃ সিঃ!!” - বিরোধী দলের নেতার বক্তব্য।

তিনি সবাইকে আহ্বান করিলেন ঐ মন্ত্রীর বাড়ী ঘেরাও করিবার জন্য। পরের দিন অনেক মানুষ আসিয়া ঘিরিয়া ধরিল। আমি বিলাসীর স্বভাব জানিতাম। তাই সবার পেছনে ছিলাম। একটু পর প্রবল হট্টগোল আরাম্ভ হইল।

ভেতর হইতে বিলাসীর কন্ঠ শুনিতে পাইলামঃ “আমার বিয়ে হয়েছে কী হয় নি তা দিয়ে তোদের কী?" যে যার মত দৌড়াইতে লাগিল। দৌড়াইতে গিয়া এক সময় পড়িয়া গেলাম। এবং পদদলিত হইয়া জ্ঞান হারাইলাম। জ্ঞান ফিরিলে নিজেকে হাসপাতালে পাইলাম। শুনিলাম বিলাসীর ধাওয়া খাইয়া সবাই ভয়ে দৌড়াইতে আরাম্ভ করিয়াছিল।

সেই সময় শতাধিক আহত হয়। “দেখ! ভাতিজাটা কার! ওর কেউ ক্ষতি করিতে পারিবে না। কোন আদালতও না!!” - মৃত্যুঞ্জয়ের চাচা চায়ের দোকানে, হাট বাজারে এসব কথা বলে বেড়াতেন। একদিন খবর শুনলাম মৃত্যুঞ্জয় কঠিন রোগে আক্রান্ত। কিছুদিন পর দেখা করিতে হাসপাতালে গেলাম।

দেখা করিয়া আসার কয়েক ঘন্টা পর খবর আসিল মৃত্যুঞ্জয় মারা গিয়াছে… এরপর পুলিশ আসিয়া আমাকে ধরিল। আমি নাকি তাহাকে বিষ খাওয়াইয়া মারিয়াছি। এর কারণ হিসাবে দেখানো হইল যে, আমি বিলাসীকে ভালোবাসিতাম। তাহাকে পাইবার জন্য মৃত্যুঞ্জয়কে খুন করিয়াছি। পুলিশ যখন আমায় ধরিয়া নিল, বিলাসী আমায় চোখ মারিল।

আমি তার চোখের পাতায় দেখতে পেলুম “এইটা কী সাপের বিষের চাহিয়াও কম?” আট বছর পর জেল হইতে ছাড়া পাইলাম। বাহিরে আসিয়া শুনিলাম, বিলাসী এইডস রোগে মারা গেছে। মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর কারণটাও আমার কাছে পরিষ্কার হইয়া দাড়াইলো..!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।