জাতীয় দলের প্রধান কোচ স্টুয়ার্ট ল শনিবার ভোরেই চলে যাচ্ছেন। এই যাওয়া সাবেকের তালিকায় নিয়ে যাবে তাকে। শুক্রবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রধান কোচ হিসেবে ১০ মাসের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন এই অস্ট্রেলিয়ান।
প্রশ্ন: একজন কোচ হিসেবে এখান থেকে কি নিয়ে যাচ্ছেন?
স্টুয়ার্ট: অনেক কিছু নিয়ে যাচ্ছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রধান কোচ হিসেবে এটাই ছিলো আমার প্রথম চাকরি।
ভিন্ন সংস্কৃতির অচেনা খেলোয়াড়দের নিয়ে কি করে কাজ করতে হয় তা শিখেছি। বলতে গেলে এই অল্প সময়ে অনেক কিছু শিখেছি।
প্রশ্ন: অভিষেকে ভালো না হলেও এক বছরের অনেক উন্নতি চোখে পড়েছে। এর পেছনে রহস্য কি?
স্টুয়ার্ট: সব সময় ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। শেষ ছয় মাসে ধারাবাহিক অগ্রগতি হয়েছে।
খেলোয়াড়রা অনুধাবন করতে শিখেছে শীর্ষ প্রতিপক্ষের সঙ্গেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে তারা। অনেক প্রতিভা আছে, একটু শৃঙ্খলা এবং নির্দেশনা পেলেই হয়। তারা ভালো ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছে। একদিন বাকি বিষয়গুলোতেও উন্নতি হবে।
প্রশ্ন: খেলোয়াড়দেরকে বুঝতে বিপিএলের কোচিং আপনাকে কতটা সাহায্য করেছে?
স্টুয়ার্ট: বিপিএল খেলোয়াড়দের অনেক সাহায্য করেছে।
ওখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদেরকে মোকাবেলা করে এশিয়া কাপে ভালো খেলেছে। বিপিএল বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য খুবই ভালো একটা টুর্নামেন্ট। আশা করি ভবিষ্যতেও বিপিএল হবে।
প্রশ্ন: এশিয়া কাপের অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?
স্টুয়ার্ট: সত্যি বলতে, আমি আবেগ দেখাতে পছন্দ করি না, শান্ত থাকতে ভালো লাগে। আমি শান্ত থাকলে, দলও শান্ত থাকবে।
শিরোপা জিতলে আনন্দ করতে অসুবিধা নেই। খেলোয়াড়দের জন্য আমার খুব গর্ব হচ্ছিলো। আমি জানতাম তারা এটা করতে পারবে। আমি বিশ্বাস করলেও তাদের মধ্যে অতটা আত্মবিশ্বাস ছিলো না। অনুশীলনে যা যা করেছি এশিয়া কাপের প্রতিটি ম্যাচে ঠিক তাই তাই হয়েছে।
প্রশ্ন: আলাদা করে এমন কিছু কি করেছিলো যার জন্য সবাই এত ভালো খেলেছে?
স্টুয়ার্ট: আলাদা করে আমারা কিছুই করিনি। প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় ছিলো না। কিভাবে স্কিলের প্রয়োগ করতে হবে সে সব নিয়ে আলোচনা করেছি। অন্য দল নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি। এশিয়া কাপে আমরা একপ্রকার অপরাজিতই ছিলাম।
পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটো খেলায় জেতা উচিৎ ছিলো। কি করলে আমরা ভালো করবো তা নিয়ে কথা বলেছি।
প্রশ্ন: সাকিব এবং তামিম কেমন ছিলো?
স্টুয়ার্ট: তারা খুবই ভালো খেলোয়াড় এবং এই দু’জন বাংলাদেশকে বয়ে নিচ্ছে। দলের বাকিরা তাদের দু’জনের মতো নয়। নাসির হোসেনও বেরিয়ে এসেছে।
সাকিব তামিমের সঙ্গে সেও যোগ হয়েছে। এই দুজনের ওপর বেশি চাপ থাকে, বিশেষ করে সাকিব প্রতিটি খেলায় ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে অবদান রাখে।
প্রশ্ন: সাকিব পুরোদস্তুর পেশাদার কি না?
স্টুয়ার্ট: মাঠের ভেতরে সে খুবই পেশাদার। কিন্তু মাঠের বাইরে অন্যরকম। আমি খারাপ অর্থে বলছি না।
কিন্তু সে আরও বেশি মানিয়ে নিতে পারতো। এই জায়গায় সে আরেকটি মনোযোগ দিতে পারে। খেলার বাইরে কোনো কিছু ছাড়াই আলোচনায় চলে আসে। সে খুবই ভালো মানের খেলোয়াড়। যখন ব্যাট করে দেখতে অসাধারণ লাগে।
প্রশ্ন: অধারাবাহিক ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কিভাবে কাজ করতেন?
স্টুয়ার্ট: প্রথম ছয় মাস তাদেরকে বুঝতে সময় লেগেছে। আমি সময় নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করেছি তারা কোথা থেকে এসেছে। পাঁচ মাস পরে যখন দেখলাম তারা আর বলছে না জেমি এটা করেছে, ওটা করেছে, তখন আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। জেমির বিপক্ষে অনেক খেলেছি। সম্পূর্ণ আলাদা চরিত্রের মানুষ আমরা।
কত জোরে এবং কিভাবে বল খেলতে হয় সেটা আমার দেখার নয়, এটা বেসিক। গ্যাপে খেলতে পারলে বল বাউন্ডারিতে যাবে।
প্রশ্ন: এখন তো বাংলাদেশের কোনো খেলা নাই। একটা লম্বা বিরতি পরে যাচ্ছে?
স্টুয়ার্ট: বিসিবি খেলা আয়োজনের অনেক চেষ্টা করছে। এই সময়টা হয়তো এভাবে যাবে।
কিন্তু পরের বছরের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। এফটিপি হয়ে গেছে এখন ফোনে অন্য দেশের সঙ্গে সূচি মিলিয়ে খেলা করতে হবে। সম্ভবত ওভাবেই এগুতে হবে। খেলোয়াড়রা যত বেশি খেলবে তত ভালো। জিম্বাবুয়ে সফরের শেষ দিকে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি।
শুরুতে আমরা বেশি খেলার সুযোগ পাইনি, শেষের দিকে পেয়েছি। এ থেকে পরিষ্কার যত খেলবে তত উন্নতি হবে।
প্রশ্ন: টেস্ট ক্রিকেট সম্পর্কে আসি। টেস্টে উন্নতির জন্য কি করা দরকার?
স্টুয়ার্ট: বেশি বেশি খেলতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডকে টার্গেট করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সূচির ফাঁকে সহযোগী দেশের সঙ্গে চারদিনের ক্রিকেট খেলা যেতে পারে।
প্রশ্ন: এই অল্প সময়ে তরুণদের নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কি?
স্টুয়ার্ট: বিজয় কোয়ালিটি খেলোয়াড়। আমি মমিনুল হককে দলে নিতে চেয়েছিলাম। সে এ দলের সফরে রান করেছে। সিলেকশন মিটিংয়ে অনেক আলোচনা করেও লাভ হয়নি।
তার মধ্যে প্রতিভা আছে। রাজু, তাকে আমি খুবই পছন্দ করি। জোরে বল করে, ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে। কিন্তু বিজয়কে বিপিএলে দেখে মনে হয়েছে পারফরর্ম করার জন্যই তার জন্ম হয়েছে। একটা কথা সে আমাকে বলেছে, যা কোনো দিনই ভুলবো না।
তাকে আমি বলেছিলাম তুমি কোথায় ব্যাট করতে চাও, সে বলেছে, ‘আমি তিন নম্বরে খেলে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হতে চাই। ’
প্রশ্ন: মাশরাফির ফিরে আসা কতটা দরকার ছিলো?
স্টুয়ার্ট: সে অসাধারণ একজন খেলোয়াড়। হাঁটুর চোট থেকে ফিরে সে অভাবনীয় বোলিং করেছে। আমার মনে হয় সে শিখেছে কিভাবে কঠিন পরিশ্রম করে বেরিয়ে আসতে হয়। সাজঘরে তার উপস্থিতি সবাইকে উজ্জীবিত করতো।
বিপিএল এবং এশিয়া কাপে অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে। আমার দৃষ্টিতে সে একজন চ্যাম্পিয়ন।
প্রশ্ন: বিসিবির সঙ্গে কাজ করা কতটা কঠিন ছিলো?
স্টুয়ার্ট: সব জায়গায় এটা হয়। তারা আমাকে সাহায্য করার জন্য সব কিছুই করেছে। যদিও নিজেদের মতো করে করেছে।
কিছু কিছু সময় এতে হতাশ হয়ে পড়েছি। শেষপর্যন্ত আমরা একই ভাবে দেখতে চেষ্টা করি। এজন্য অনেক আলোচনা করতে হয়েছে। পরে কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছিলো। আমার জন্য তারা খুবই ভালো ছিলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।