আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফার্স্ট লাভ মেকিং

জানতে চাই জানাতে চাই ফুসমন্তরের মতো একটা বারান্দা ছিল মেয়েটির ঘরের সঙ্গে। আর ফুসমন্তরের মতো দুটো একটা গাছ রাখত সে সেখানে। সেই বারান্দায় মেয়েটি অবলীলায় মেলতে পারত অন্তর্বাস, গোলাপি ব্রা, সাদা প্যান্টি। মা শিখিয়েছিল অন্তর্বাস মেলে তার ওপর দিয়ে একটা পাতলা ওড়না বা ওই জাতীয় কিছু বিছিয়ে দেওয়া উচিত। ব্রা, প্যান্টি সর্বসমক্ষে মেলাটা রুচিসম্মত নয়।

মেয়েটি মানত না এই কারণ। বকা খেত, খেয়ে আবার সেই কাজটাই করত। মেয়েটি ছিল ছোট থেকেই একটু দুষ্টু। যেই কেউ তাকে বলত, “তুমি একটা মেয়ে তোমাকে এটা করতে নেই …”। যুক্তি তৈরি করত সে।

যে যুক্তি দিয়ে “করতে নেই” –কে খন্ডন করে ফেলা যায়। স্কুল ফাইনালের পরীক্ষার সময় সে তার ফুসমন্তর বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খেত। এই সব ছোট ছোট প্রতিবাদ দিয়ে সে নিজে একটা অজানা অঙ্ক মেলাতে চেষ্টা করত আর কি! ফুসমন্তর বারান্দা – কেন ফুসমন্তর? ফুসমন্তর দিয়ে বড় কোন ম্যাজিক ঘটান সম্ভব হয় না। ওই রুমালকে বেড়াল, বিস্কুটের টিনকে সিভাস রিগাল করে দেওযা যায়, নারীর জীবন বদলে মানুষের জীবন বানানো যায় কি? ওই ছোট্ট বারান্দা – ওইটুকুই মুক্তি, ছোট দুটো পাতাবাহার পান – ওইটুকুই সবুজ! যে সব ছোট ছোট বিষয়ে সে প্রতিবাদ করতে চাইত তার মধ্যে অন্যতম ছিল তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া সতীত্বের ধারনা। তাকে সবাই শিখিয়েছিল শরীর একজনকেই দিতে হয়।

বৈধ সম্পর্ককেই কেবল মাত্র শরীর দিয়ে ভালবাসতে হয়। বৈধ সম্পর্ক অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক!এমন কি স্কুলে তার সমবয়সী বন্ধুদেরও এই বিষয়ে নানা প্রেজুডিস ছিল। নানান নীতি নিয়ম তারা আরোপ করে বসত নিজেদের ইচ্ছে অনিচ্ছার ওপর। তারা সকলেই একমত ছিল এই বিষয়ে যে যাদের সঙ্গে তারা চুপিচুপি প্রেম করছে তারা প্রেমিক হলেও সর্বগ্রাসী পুরুষ, তারা সব সময় হাত ধরতে চায়, আর তাদের হাত চেটো তখন ঘামে ভিজে থাকে, তারা প্রেমিকার পাশে পাশে হাঁটতেও কুনুই ব্যবহার করে প্রেমিকার স্তনে ঠেলা মারে। যে সব ছেলেরা প্রেমের এক বছরের মধ্যে প্রেমিকাকে চুমু খেতে চায় তাদের সম্পর্কে মেয়েরা যথেষ্ট সন্দিহান।

আমাদের মেয়েটির বন্ধুদের মধ্যে একজন তো প্রেমিক বরের চুম্বন প্রস্তাব আসা মাত্র তার সঙ্গ ত্যাগ করেছিল। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সেটা কুড়ি বছর আগের। তখন মনের রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত না হলে শরীরে পৌঁছনও যেত না। শরীর তখন মেয়েরা “দিত”, ছেলেরা “নিত’’, বলা যায় ‘ভোগ করত’। শরীর দেওয়াটা ছিল তখন শর্ত সাপেক্ষ – মেয়েটিকে বিবাহ করার শর্তে একটি ছেলে মেয়েটির শরীরে অবগাহনের সুযোগ পেত, এখনও কবিতায় ছেলেরা মেয়েদের শরীরে অবগাহন করে, মেয়েদের পুরুষের শরীরে অবগাহন করার কথা শোনা যায় না।

যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সেই সময়ে একটা মেয়ে মনে করত ‘ছেলেটা আমাকে যথার্থই ভালবাসে’, যদি ছেলেটা দেখা হলে শুধু প্রেমের বচন দিয়ে অনায়াসে অমনোযোগী হতে পারত মেয়েটির শরীরের প্রতি। অথচ আমাদের মেয়েটি প্রেমে পড়ে ছটফট করছিল আলিঙ্গনের জন্য, চুম্বনের জন্য। প্লেটোনিক প্রেমের সম্পর্কে ততদিনে সে পড়াশুনো করে ফেলেছে। প্লেটোনিক প্রেম সম্ভব কি সম্ভব নয় তা নিয়ে বিতর্ক থাকুক কিন্তু তার প্রেমটা শরীর এবং মন দুটোকেই আলোড়িত, আন্দোলিত করে, মন চায় শরীর দিয়ে বুঝতে অনুভব করতে। নর্থ ক্যালকাটার মেয়ে নর্থের অলিগলি ঘুরে প্রেম করবে এটাই স্বাভাবিক, ছেলেটা ছিল ‘বিয়ে করবই’ টাইপ।

সদ্য চাকরি পেয়েছে, এবার বিয়ে। ছেলেটা জানে মেয়েটা একটু অন্যরকম, বুদ্ধিবৃত্তি প্রখর আবার ঢের আবেগে ঘাঁটা মেয়েটা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলেও মেয়েটার শরীর কথা বলে। এই সব মেয়েদের চট করে বিয়ে করে দুটো বাচ্চা দিয়ে দিতে হয় কোলে, তবেই মেয়েগুলো মাটির বাড়ির মত হয়ে যায়। এই সব ভেবেই ছেলেটা প্রেম করেছিল মেয়েটার সঙ্গে। একদিন গলির মধ্যে দাঁড়িয়ে বাড়িতে বকা খাওযা মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল ছেলেটাকে।

ছেলেটা কাঠ। সেই কাঠকে মেয়েটা গভীর চুম্বন করল একটা। সেই মেয়েটার জীবনে প্রথম চুম্বন, ছেলেটারও তাই। চুম্বন শেষে আরও কিছু কথার পর দুজনে বাড়ির পথ ধরল। আর ছেলেটা ভাবল, একি মেয়ে রে ভাই? রাস্তার মধ্যে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল? মাত্র এক মাস চেনে আমাকে, চুমু খেয়ে ফেলল? এ তো চরিত্রহীন মেয়ে, খেলুড়ে, শরীর হ্যাংলা।

একে তো কাল বিছানায় নিয়ে যেতে চাইলেই চলে যাবে। সতীত্ব ফতিত্ব তো এর কাছে ইস্যুই নয়। এই মেয়েকে বিয়ে করলে তো সর্বনাশ। আমি খেটে মরব আর এ পুরুষ সঙ্গের জন্য উলুক ঝুলুক করবে! যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। ছেলেটা কিছুই বুঝতে দিল না মেয়েটাকে।

মিশল মেয়েটার সঙ্গে, মেয়েটার শরীর নিল ধীরে ধীরে। আস্তে আস্তে তারিয়ে তারিয়ে। তারপর মেয়েটাকে অন্ধকারে রেখে একদিন বিয়ে করল অন্য একটা মেয়েকে। ছেলেদের সতীত্বের ধারনাটা খুব অদ্ভুত। একটা মেয়ে একটা ভার্জিন মেয়ে যদি তার ভার্জিনিটি তার প্রেমিককে দেয়, তাহলে যে পুরুষ সেটা পেল, সে সেটা নিল – এমন কি তার কাছেও মেয়েটা আর ফ্রেশ থাকে না।

‘মেয়েটা আমাকে দিয়ে দিল’টা হয়ে যায় ‘মেয়েটা বিয়ে না করেই একজনকে দিয়ে দিল?’ তাই তখন ছেলেটা বিয়ে করার জন্য আর একটা ফ্রেশ মেয়েকে খোঁজে যে মেয়েটারও ভার্জিনিটি কি না নিয়ে চলে গেছে আর একটা ছেলে। ওই একই রকম মানসিকতা নিয়ে। আমি দেখেছি পুরুষরা সব্বাই একটা বিষয়ে ভয়ঙ্কর আত্মপ্রতারণা করে। কোনও ছেলেকে জিজ্ঞেস করো ‘তোমার বউয়ের সঙ্গে ফার্স্ট লাভ মেকিং-এ তোমার বউ ব্লিড করেছিল?’ মানে হোয়াট ডু ইউ থিংক? ওয়াজ শি আ ভার্জিন? ছেলেটা একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় উত্তর দিতে আর অবধারিত ভাবে বলে, ‘হ্যাঁ, ব্লিড করেছিল!’ কুড়ি বছরে অনেক কিছু বদলেছে, এমন কি এই বিষয়ে লেখার প্রয়োজনীয়তা পর্যন্ত অবসোলিট হয়ে গেছে, শুধু বদলায়নি ছেলেদের এই অন্যমনস্ক মিথ্যেটা!!! [collected] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.