আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুদিন হরতালে সময় পেলাম তাই ছোট গল্পটা লিখে ফেললাম। প্রথম লেখা কেমন হলো জানি না তবে খুব আনন্দ হচ্ছে।

সূচনা লিনার খুব ইচ্ছে সুমনকে নানাপদ রান্না করে খাওয়াবে। এমনিতে লিনার রান্না করার প্রতি এক ধরনের দুর্বলতা আছে। প্রতিটি মেয়ের যেমন থাকে। বিয়ের আগে সে প্রায়ই বিভিন্ন রান্নার বই, টিভি দেখে এটা সেটা বানাতো। ওর বাবা ছিল তার রান্নার একজন অন্ধ ভক্ত।

যাই সে রান্না করে তাই বাবার খেতে মজা লাগে। ওর বিয়ের পর বাবা তো নাম ধরে ধরে কতগুলো পদের কথা বলে বললেন ‘তোর মাকে এগুলো শিখিয়ে দিয়ে যাস তো। ‘সুমনের সাথে বিয়েটা পুরোই পারিবারিক। বিয়ের দিন পারলারে যাওয়ার আগে তার বাবা তাকে কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। তার মধ্যে একটি ছিল পরিবারের সবার সাথে মিলেমিশে থাকবে।

বাবার প্রতিটি কথা সে মেনে চলেছে। সুমন ছেলে হিসেবে চমৎকার। এরকম মা ভক্ত ছেলে এখন খুব কমই দেখা যায়। সুমন কে ভাল লাগার অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটা ও একটা। লিনার এই ভাল লাগাটা যে কখন ভালবাসায় রূপ নিয়েছে সে নিজে ও তা জানে না।

ভালবাসার মানুষকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে কেনা ভালবাসে? বাবা, মা আর ছোট বোনকে নিয়ে ছোট পরিবার সুমনদের। পরিবারের ছোট বড় সব ব্যাপারে সুমনের মায়ের সিদ্ধান্তই সব সময় কার্যকর হয়। বিয়ের পর থেকে লিনা দেখছে তার শাশুড়িমা রান্না করেন। মাঝে মধ্যে উনার যখন ইচ্ছে হয় তখন হয়ত ওকে একটা পদ রান্না করতে বললেন। কিন্তু তেল মসলা সব উনি নিজের হাতে দিয়ে যাবেন।

ফলে লিনা যা করে তা হল চুলায় রেখে নাড়াচাড়া করা। সুমনের মামী একদিন বলে বসলেন ‘আপা আপনি তো এবার রেস্ট নিতে পারেন, বৌ কে রান্নার দায়িত্ব ছেড়ে দেন। ‘ উত্তরে মা বললেন ‘আমার বয়স হয়েছে তোমাকে কে বললো? তাছাড়া ও তো চাকরী করে ও কখন রাঁধবে?’ মামীর উত্তর ‘কেন সকালের টা তো রাঁধতে পারে? আপনি রাতে বলে রাখলেন কি করতে হবে ও করে রাখবে। আপনার আর কষ্ট করে সকালে উঠতে হল না। ‘ ‘আচ্ছা আচ্ছা দেখা যাবে?’ বলে একদম অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলেন তিনি।

এবং আগের মতই সব চলতে লাগলো। চরম অস্বস্তি নিয়ে লিনা প্রতিদিন সকাল বেলা শাশুড়িমায়ের রান্না করা খাবার খেয়ে অফিস যায়। সুমন আসার অনেক আগেই লিনা বাসায় ফেরে। এই বাসায় বিকেলে নাস্তা হয়না। চায়ের সাথে একটা বিস্কিট অথবা একেবারে কিছুই না খেয়ে এরা বিকেল কাটিয়ে দেয়।

মাঝে মাঝে সুমনের মায়ের ইচ্ছে হলে উনি পায়েস বা অন্য কোন বিশেষ নাস্তা বানান। সেটাও অনিয়মিত। সুমন বিয়ের আগে অফিস থেকে সোজা বন্ধুদের আড্ডায় চলে যেত। সেখানে আড্ডার সাথে সাথে বিকেলের নাস্তাও খেয়ে আসতো। ওদের বিয়ের আগে পরে বন্ধুরা কেউ বিয়ে করলো, কেউ ট্রান্সফার হলো, ওদের আড্ডাটা ভেঙ্গে গেল।

এখন অফিস থেকে সোজা বাসায়। লিনা দুএকদিন ডালপুরী, আলুপুরী এটা সেটা বানিয়েছে। সুমন আর তার বোন দুজনেই তার নাস্তার ভক্ত হয়ে গেল। কিন্তু সুমনের মা একদিন ও তার বানানো নাস্তা খেলেন না। নানা উছিলা দিয়ে মুড়ি বা বিস্কিট খেয়ে রইলেন।

লিনা কষ্ট পেল খুব। এই ঘটনার পর সে নাস্তা বানানো বন্ধ করে দিল। সুমন প্রতিদিন অফিস থেকে বের হওয়ার আগে ফোন করে জিজ্ঞেস করে ‘কি আজ কি বানাচ্ছ?’ সে নিরুত্তর থাকে। সুমন অফিস থেকে যখন অনেক ক্লান্ত হয়ে ফিরে মন মত নাস্তা পায় না তখন কিন্তু ওর উপর রাগ করে। দুই একদিন লিনা ওর সমস্যা বোঝাতে চেয়েছে।

কেন ওর ইচ্ছে থাকা সত্ত্বে ও তার প্রিয় মানুষটির জন্য ও কিছু বানায় না। হিতে বিপরীত হয়েছে। ও মানতেই চায় না এগুলো কোন সমস্যা। সুমন বলে ‘মার হয়তো শরীর খারাপ ছিল। তুমি শুধু শুধু মাকে ভুল বুঝছো।

‘ লিনা বলে ‘নাহয় বুঝলাম প্রতিদিন বিকেলবেলাতেই মার শরীর খারাপ করে। কিন্তু সেদিন রাতে আমি বিরিয়ানি রান্না করলাম তার এক কণা ও তো উনি খেলেন না। দুপুরের ভাত খেলেন। এটা কি ঠিক করেছিলেন?’ ‘মা ঠিক করলেন কি ভুল করলেন সেটা তোমার বা আমার জাস্টিফাই করা উচিৎ নয়। তোমার আসলে কষ্ট করে আমার জন্য নাস্তা বানাতে ইচ্ছে করে না।

তাই এসব উছিলা বের করেছ। ‘রাগান্বিত উত্তর সুমনের। লিনা হতভম্ব হয়ে যায়। লিনা শুধু এটুকু বলে ‘কখনো তো মেয়ে হয়ে জন্মাবে না আর বিয়ের পর সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে ও হবে না কখনো। আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে তোমাকে ইন্টার্নশিপের জন্য মেয়ে বানিয়ে কোন যৌথ পরিবারের বউ করে পাঠাতাম।

‘ মনে মনে ভাবে মা ভক্তি ভাল তা বলে অন্ধ ভক্তি কি ভাল? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.