কিছু প্রিয় মুখ, কিছু সুখ স্মৃতি..... -হ্যালো...
-মহিব, আমি মুক্তা।
মুক্তা? মেয়েলী নাম। কিন্তু কন্ঠটা ছেলে ছেলে লাগে কেন? তার উপর রাত কয়টা বাজে এখন? কলেজ-ভার্সিটি-তেও তো পড়ি না এখন যে মাঝ রাতে ফোন করে এসাইনমেন্টের কথা জিজ্ঞাস করবে। পোলাপাইনের আক্কেল দেখলে অবাক লাগে।
-কোন মুক্তা?
-দোস্ত চিনতে পারস নাই? আমি মুক্তা।
নুপুর-মুক্তা। - এই কথাটা শুনা মাত্রই ঘুম কেটে গেল। মুক্তা। আমার স্কুল ফ্রেন্ড। ১০ বছর আগের ছেড়ে আসা কিন্ডারগার্ডেন স্কুল ফ্রেন্ড।
আমার শৈশব-কৈশোর গড়ে উঠার সাক্ষী আমার স্কুল। সেই স্কুলের ফ্রেন্ড মুক্তা। বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম।
-আমার নম্বর পেলি কোথায়?
-নুপুরের কাছ থেইকা পাইছি।
কিছুদিন আগে কি মনে করে নুপুরের পুরো নাম দিয়ে ফেসবুকে সার্চ দিয়েছিলাম।
ভাবলাম দেখি স্কুলের কাউকে খুজে বের করা যায় কিনা। বেশ কয়েকটি নাম আর ছবির মাঝে একটি ছবি দেখে মনে হল ওই হবে। একটি অফলাইন মেসেজ দিয়ে রেখে ছিলাম। পরের দিনই রিপ্লাই আসল। নুপুর আমাকে ঠিকই চিনতে পেড়েছে।
-তা দোস্ত, এত রাতে?
-দোস্ত আমি ইতালি থেইকা ফোন দিছি।
-ইতালি থেকে? কবে গেলি?
-দোস্ত ইতালিতে আসছি ৫ বছর হইতেছে। স্কুলের মোটামুটি সবার সাথেই যোগাযোগ আছে। কিন্তু তোর সাথেই কারওর যোগাযোগ নাই। শোন, আগামী রবিবার দেশে আসতেছি।
আমরা একটা গেট টুগেদার করতে চাইতেছি। তান তোর সাথে যোগাযোগ করব। তুই অবশ্যই অবশ্যই আসবি।
-হ্যা দোস্ত আমি অবশ্যই আসব।
-তাইলে দোস্ত রাখি এখন।
ঘুমা।
-ওক্কে দোস্ত। আল্লাহ হাফেজ।
বলে ফোনটা রেখে দিলাম। হাজারো স্মৃতি এসে মাথায় উকি দিচ্ছে।
স্কুলে থাকতেই মুক্তা আর নুপুরের মধ্যে একটা গাড় বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। তখন কে কার বন্ধু হব এ নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতা চলত। স্কুলের পরে ওদের মাঝের বন্ধুত্ব আরেকটু দূরে গাড়িয়েছিল। এর পরে আমিই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি সবার থেকে। নুপুর কি মুক্তাকে বিয়ে করেছে? কি জানি।
ফেসবুকেই নুপুরকে জিজ্ঞাস করতে পারতাম। কিন্তু কিসে যেন আটকে গেল।
মুক্তা বলল যে তান যোগাযোগ করবে আমার সাথে। কেমন আছে তান? স্কুলে মাঝে মাঝে তান আমাদের সবার জন্য কলম নিয়ে আসত। সাধারন ইকোনো ডিএক্স কলম না।
বেশ চমৎকার চমৎকার কলম। কিন্তু মজার ব্যাপারটা ছিল, যেদিন ও কলম নিয়ে আসত হয় সেদিন ওর সাথে আমার আড়ি চলছে নয়তো সেদিন আমি স্কুলে যাইনি। আর পড়ালেখা নিয়েতো অদৃশ্য একটা প্রতিযোগিতা সবসময়ই ছিল। তবুও তান আর আমার মাঝের বন্ধুত্বটা অন্যদের থেকে একটু বেশিই ছিল বলব। অংক স্যারের কোচিং শেষে প্রায়ই তান আমাকে সাইকেলে করে বাসায় পৌছে দিত।
আর প্রতিদিনের মজার মজার টিফিন তো বেশ লোভনীয় ছিল সবার কাছে। দেখা যেত সবাই খেয়ে শেষে তানের ভাগেই কিছু নেই। আন্টি মনে হয় ব্যাপারটা টের পেতেন। এজন্যে মাঝে মাঝে দেখা যেত, টিফিনে এক ডজন কোয়েলের ডিম। যেন তান একটি হলেও ভাগে পায়।
বাংলাদেশে প্রথম প্রথম যখন ডিস লাইন আসে তখন তানদের রঙিন টিভির রিসিভার কয়েকটি হিন্দি চ্যানেল ধরতে পারত। আমাদের সাদাকালো টিভিতে বিটিভি দেখতেও বিরক্ত লাগত। হিন্দি চ্যানেল দেখার লোভে মাঝে মাঝেই হানা দিতাম ওদের বাসায়। কেমন আছে তান এখন?
(ক্রমশ...)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।