দেশের স্বাস্থ্যসেবা এগিয়ে চলছে। এ খাতে গত চার দশকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বহুগুণ বেড়েছে। ইতিমধ্যে দেশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও আধুনিক যন্ত্রপাতি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, স্বাস্থ্যসেবা খাতে আরো বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া রয়েছে হেলথ ট্যুরিজমের সুযোগ। আরো উন্নত মানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ অনেক বিদেশি রোগী আসবে। ১৬ কোটি মানুষের বিশাল জনগোষ্ঠীর কারণে এ খাত থেকে ভালো আয়ের সুযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি দেশের দুটি হাসপাতালে বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাজ্যের জেনারেল ইলেকট্রিকের স্বাস্থ্যবিষয়ক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জিই হেলথ কেয়ার। বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনিয়োগ করে আসছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
জিই হেলথকেয়ার, ইউনাইটেড হাসপাতাল ও মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস বাংলাদেশে প্রথম দুটি মলিকুলার ইমেজিং সেন্টার চালু করেছে।
জিই হেলথকেয়ারের কারিগরি যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে ইউনাইটেড হাসপাতাল ও মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস। এতে পিইটি বা সিটি ইমেজিং সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কেন্দ্রটি ক্যান্সার নির্ণয়ে ব্যবহৃত আইসোটোপ, ট্রেসার উৎপাদনের জন্য দেশের প্রথম মেডিক্যাল সাইকোলট্রন স্থাপন করছে। মেডিক্যাল সাইকোলট্রন স্থাপনের জন্য জিই হেলথকেয়ার ও ইউনাইটেড হাসপাতাল যৌথভাবে এ খাতে বিনিয়োগ করেছে ২৫ লাখ ইউএস ডলার।
মলিকুলার ইমেজিং সেন্টার ও সাইকোলট্রন প্রযুক্তি স্থাপনের কারণে দ্রুত ক্যান্সার নির্ণয় ও নিরাময় প্রক্রিয়া সহজ হবে বলে দাবি করছেন হাসপাতাল দুটির কর্মকর্তারা
জিই হেলথ কেয়ারের প্রধান টম জেন্টলির কাছে বাংলাদেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা প্রযুুক্তির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা এবং এর সম্ভাবনার বিষয়ে তিনি খুবই আশাবাদী। ১৬ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনিয়োগে যথেষ্ট আন্তরিক। পাশাপাশি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমেও এ খাতের উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী।
টম বলেন, ঢাকায় বেশ কিছু ক্ষেত্রেই বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও সেবা দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
ইতিমধ্যে আমরা ইউনাইটেড হাসপাতালে আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে দেখা করেছি এবং তাদের প্রযুক্তি ও সেবাগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। তাদের আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি বিশেষত সাইক্লোট্রন এবং পিইটি সিটি স্ক্যানার রয়েছে, যা ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের সাইক্লোট্রনের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে, মেডিনোভা হেলথ সার্ভিসেস তাদের রেডিও ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনাইটেড হসপিটাল থেকে সংগ্রহ করছে। তারা একটি পিইটি সিটি স্ক্যানার প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগও করেছে।
উভয় প্রতিষ্ঠানে বিশ্বমানের প্রযুক্তি রয়েছে এবং আমরা তাদের অংশীদার হিসেবে গর্বিত।
জিইর সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট টেরি বেরেনহাম বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতে যথেষ্ট বিনিয়োগের সুয়োগ রয়েছে। এখানে সরকারি-বেসরকারি সবাই বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসছে। এখানকার বাজার এত বড় যে বর্তমান বিনিয়োগ ধারা এখনো পর্যাপ্ত নয়। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক ক্যান্সার রোগী রয়েছে।
কিন্তু তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসার সুযোগ নেই। সরকার ইতিমধ্যে পাবলিক-প্রাইভেট পাটনারশিপের ঘোষণা দিয়েছে। এ কারণে এই খাতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা এখনো বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবা খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেখতে পাচ্ছি।
টেরী আরো বলেন, বাংলাদেশে হেলথ ট্যুরিজমেরও সুযোগ রয়েছে।
এ খাতের উপযুক্ত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ অনেক বিদেশি রোগীকে আকর্ষণ করতে পারবে। যদিও বর্তমানে এ সুযোগ ও বাজার খুবই সীমিত।
দেশে বিশ্বমানের বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে ওঠায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগী এখন আর বিদেশ যেতে চান না। দেশের হাসপাতালগুলোয় রয়েছে বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক। তাঁরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল সম্প্রতি স্থাপন করছে বিশ্বমানের ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার, যা দেশি ও বিদেশি চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিচালিত। এখানে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের সহায়তায় প্রাথমিক অবস্থায় সঠিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়।
ডা. দবির আরো বলেন, হাজার হাজার বাংলাদেশি ক্যান্সার নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ভারত, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ক্যান্সার নির্ণয়ে দেরি হয়ে যায়। ফলে শেষ মুহূর্তের চিকিৎসা কোনো কাজে লাগে না।
এ ক্ষেত্রে খরচও খুব বেশি হয়। ক্যান্সারের ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা এতদিন পর এখন বাংলাদেশে সম্ভব হচ্ছে।
দেশে চিকিৎসাসেবা খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। সম্প্রতি মেডিনোভা ক্যান্সার রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয়ের জন্য মেডিক্যাল সাইকোলট্রন যন্ত্র স্থাপনে যৌথভাবে বিনিয়োগ করেছে জিই হেলথ কেয়ারের সঙ্গে। তিনি আরো বলেন, দরিদ্র জীবনব্যবস্থা আর পরিবেশগত সমস্যার কারণে বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত্র এবং মৃতের সংখ্যা রেকর্ড স্থাপন করেছে।
বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা গেছে, সারা দেশে ১০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত। দুই লাখ মানুষ প্রতিবছর ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে মহিলাদের বেশি পরিমাণে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা। প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
দেশে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল তৈরি হওয়ায় উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ।
লেখার সূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।