দেশের শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ নামমাত্র পর্যায়ে নেমে এসেছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে স্টক ডিলার সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই নিষ্ক্রিয়। বাজারে তাদের তেমন কোনো বিনিয়োগই নেই।
আবার যেসব ডিলারের শেয়ার রয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই বুক বিল্ডিং পদ্ধতির দরপত্রের মাধ্যমে পাওয়া শেয়ার। মাধ্যমিক বা সেকেন্ডারি বাজারে এসব প্রতিষ্ঠানের তেমন কার্যক্রম নেই।
এর ফলে বর্তমান শেয়ারবাজার হয়ে পড়েছে অনেকটাই ব্যক্তিশ্রেণীর সাধারণ বিনিয়োগকারী নির্ভর। কয়েক মাস ধরে বাজারে লেনদেনের বড় অংশ-জুড়েই রয়েছে ব্যক্তি শ্রেণীর সাধারণ বিনিয়োগকারী।
ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও স্টক ডিলাররা বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ভূমিকা পালন করে থাকে। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষে এসইসি যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনেক সুবিধা দেওয়া হয়।
অথচ তার বিপরীতে প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা নেই বললেই চলে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে পরিমাণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তার বিপরীতে তাদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতায় পাচ্ছে না বর্তমানের অস্থির বাজার। প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইনি বিধান না থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে এসইসি সূত্র মনে করছে।
এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাজারে ব্যক্তিশ্রেণী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর মধ্যে আচরণগত তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যাচ্ছে না। অথচ দুটি শ্রেণীর আচরণে ভিন্নতা থাকার কথা।
কিন্তু সেটি নেই। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ’
এসইসি ও ডিএসই সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ২০১টি স্টক ডিলার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩০টি প্রতিষ্ঠানের ডিলার হিসেবে বিনিয়োগ রয়েছে। এই বিনিয়োগের পরিমাণ এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবার ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের সহযোগী হিসেবে নিবন্ধিত মাত্র ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।
এর বাইরে বাকি ডিলার প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র ১৫০ কোটি টাকা। বাকি ডিলার প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজারে কোনো কার্যক্রম নেই।
নিবন্ধিত এসব ডিলার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৮০টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা বা তারও বেশি। আর শূন্য থেকে ৫০ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগ রয়েছে এমন স্টক ডিলারের সংখ্যা শতাধিক।
জানা যায়, নিবন্ধিত ২৪টি স্টক ডিলার প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়।
এদের মধ্যে ব্যাংক এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এমনই এক নিষ্ক্রিয় প্রতিষ্ঠান বিএলআই সিকিউরিটিজ লিমিটেড।
যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনহাজ মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিলার প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা সনদ নেওয়ার পর থেকেই বাজারে অস্থিরতা চলছে। তাই বেশ কয়েকবার বিনিয়োগের চেষ্টা করেও আর্থিক সংকটের কারণে তা পারিনি। ’
ডিএসইর সভাপতি শাকিল রিজভী এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর যে পরিমাণ অংশগ্রহণ দরকার, সেই পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না।
দুটি কারণে এমনটি হতে পারে। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা হয়তো অর্থ সংকটে রয়েছে, নয়তো তাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাজার অতিমাত্রায় ব্যক্তিশ্রেণী বিনিয়োগকারীনির্ভর হয়ে গেলে সেখানে অস্থিরতাও বেশি থাকে। তাই বাজারের অস্থিরতা বন্ধ ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।