সাদা মনের মানুষ প্রথমেই বলে রাখি আমি কিন্তু চেলসি-বার্সা ২ টা ক্লাবেরই ক্রেজি ফ্যান। একই সাথে আমি ডাই হার্ড ফ্যান মেসি আর আর্জেন্টিনারও। কিন্তু আমি কখনো ক্লাব ফুটবলের মধ্যে আর্জেন্টিনা,ব্রাজিলের সম্পর্ক খুজতে যাই না। তাই একদম নিরপেক্ষভাবে আমার মতামত ব্লগে প্রকাশ করলাম।
গত কয়েক সিজন ধরেই বার্সা টপ ফেভারিট।
তাদের অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী, বিশেষ করে মেসি-জাভি-ইনিয়েস্তার অসাধারন কেমিস্ট্রি, আর মেসির পর পর তিনবার ব্যালন ডি অর জিতে নেয়া, একজন আর্জেন্টিনা সমর্থক, বার্সা সমর্থক হিসেবে আমাদের সবার জন্যই সেটা ছিল খুবই আনন্দের বিষয়।
পেপ গার্দিওলার অধীনে ক্যাটালানরা প্রথম উয়েফা জেতে ২০০৯ তে। সবগুলা খেলা আসলে ব্যস্ততার কারণে দেখতে বসা হয়নি। সেমিতে যখন চেলসি-বার্সা খেলা পড়ে গেল, দোটানায় পরলাম, কাকে সাপোর্ট করব, ২টাই তো ফেভারিট। তারপরেও দ্রগবা, কালু, ল্যাম্পার্ড, টেরি,বালাক, আনেলকা,মালুদা প্রত্যেকটা প্লেয়ারের খেলা অনেক ভালো লাগতো।
তাই বেশী সাপোর্ট চেলসির দিকেই ছিল। তারপরেও বার্সা যদি জিতে যেত খারাপ লাগতো না।
ন্যু কাম্পে প্রথম লেগে চেলসি-বার্সা ড্র করে শূন্য গোলে। সবাই ভেবেছিল স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে বার্সাকে চেলসি উড়িয়ে দেবে, কারণ শেষ ৩০ টা ম্যাচে স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে চেলসি একবারো হারেনি। দুরুদুরু উত্তেজনায় খেলা দেখতে বসলাম।
সম্ভবত প্রথম হাফেই চেলসি এক গোল দিয়ে বসে!! আনন্দে লাফ দিয়া উঠলাম, কারণ এইবার চেলসি জিতলে আবার ম্যান ইউ এর সাথে ফাইনাল; ২০০৮ এর প্রতিশোধ হইয়া যাবে। চেলসির অসাধারন ট্যাকলিং এ বার্সা চান্সই পাচ্ছিল না। পুরা ম্যাচে আলভেজ মেসি ইনিয়েস্তা পাগলের মত মাঠের এমাথা থেকে ওমাথা দৌড়াচ্ছিল। হঠাত সম্ভবত আনেলকা বা দ্রগবা কাউন্টার এটাকের চান্স নিয়ে বার্সার পোস্টে ঢুকে যায় ২৬ মিনিটের মাথায়, একদম নিশ্চিত সেটা গোল হত,কিন্তু বার্সার ডীফেন্ডাররা ফাউল করে তাদের আটকে দেয়। নরয়েইজিয়ান রেফারী টম হেনিং তা একদম না দেখার ভান করে।
ক্লিয়ার পেনাল্টে ছিল, রেফারী সেটাও নাকচ করে দেয়। অবিশাস্যভাবে তার ঠিক পরের মিনিটে আরেকটা ফাউল হয় ডীবক্সেই, এবারো কোন পেনাল্টি পেল না চেলসি।
ছবিঃ দেখুন পরিস্কার একটা পেনাল্টি কিভাবে না দেখার ভান করে রেফারী অন্যদিকে হাটা দিছে!!!!!আর এই সেই বদমাস রেফারি টম হেনিং
বার্সেলোনা তাদের চিরাচরিত সর্ট পাসের ফুটবল বাদ দিয়ে পুরা এটাকিং খেলতে থাকে, এবং এর মাঝেই একটা গোল ও খেয়ে যায়। দুঃখজনক ব্যাপার হলো পুরা ম্যাচে বার্সা এত বেশী ফাউল করেছিল, মনে হচ্ছিল তারা তাদের সবগুলা ম্যাচেও এত ফাউল করেনি। যতই সময় আগায়, চেলসি বার্সেলোনাকে আরো ভালোমত চেপে ধরে।
দ্রগবা-আনেলকার আক্রমণে মুহুর্মুহ বার্সা ডিফেন্স ভেদ করে বল চলে যাচ্ছিল পোস্টের কাছে, এবং বার্সা কোন সঙ্কোচ না করে তাদেরকে ডিবক্সেই ফাউল করে যাচ্ছিল
সম্ভবত ফুটবল ইতিহাসে এমনটা আগে কখনো ঘটেনি, একদম পানির মত স্বচ্ছ ৬ টা ফাউলে চেলসি পেনাল্টি পেত, কিন্তু রেফারি টম হেনিং তা হতে দেয়নি। কখনো সে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল ফাউলের সময়, কখনো চেলসির প্লেয়ারদের হলুদ কার্ড ধরিয়ে দিচ্ছিল তার সাথে তর্ক করার কারণে। কিন্তু ন্যায্য ৬ টি পেনাল্টির একটিও পায় নি চেলসি। ৬টির ভিতরে ৪ টি পেনাল্টী ছিল ১০০% কনফার্মড।
অবাক হয়ে দেখলাম এতটা নির্লজ্জ্বভাবে কিভাবে খেলে যাচ্ছিল বার্সেলোনার প্লেয়ার রা, একের পর এক ফাউল একের পর এক ফাউল, এ যেন রিয়াল মাদ্রিদের খেলাই দেখছি বার্সেলোনার না।
যাই হোক, অবশেষে ৯২ মিনিটে ইনিয়েস্তা গোল করে ফেলে এবং এওয়ে গোলের সুবাদে বার্সা জয় পায়। হতবাক হয়ে দেখতে থাকি চেলসির হতাশা; কিভাবে চেলসিকে এতগুলা পেনাল্টি থেকে বঞ্ছিত করে বার্সাকে হাতে তুলে জয় ধরিয়ে দেয়া হয়। আর থাকতে না পেরে দ্রগবা আর বালাক রেফারির উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, কিন্তু লাভই বা কি, ম্যাচটা তো আর ফেরত পাবে না।
ম্যাচ শেষে দিদিয়ের দ্রগবা ফেটে পড়ে রেফারির উপরে। তবে সম্ভবত উপর থেকে রেফারিকে যথাযথ পেমেন্ট এবং সেফটির ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তাই সে এমন নির্বিকার
“barca, more than a club...বার্সা ভিন গ্রহের ফুটবল খেলে,”চিরাচরিত এই প্রবাদ্গুলো থেকে বেড়িয়ে ভিন্ন চরিত্রে দেখা বার্সাকে আসলেই একদম ভালো লাগছিল না।
এর মধ্যেই পাচ পাচটা এল ক্লাসিকোতে বার্সা সিংহভাগের জয় তুলে নেয়। বার্সা ভক্ত হিসেবে সেটা অনেক উপভোগ করেছিলাম, রিয়াল মাদ্রিদ ফ্যান ফ্রেন্ডদের ইচ্ছামত পচিয়েছিলাম।
সবার একটা অভিযোগ ছিল, বার্সা নাকি সবসময় রেফারি থেকে সাপোর্ট নিয়ে ম্যাচ জেতে। কথাটা মানতাম না। উদাহরন হিসেবে চেলসি-বার্সা সেমির কথাটা তুলে ধরা হলে একে এক্সেপশন বলেই উড়িয়ে দিতাম।
কিন্তু এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লীগে নিজ চোখে আবার দেখলাম কথাগুলা কতটা সত্যি। কোয়ার্টার ফাইনালে এসি মিলানের সাথে প্রথম লেগে ড্র করে বার্সা। ২য় লেগে ২টা গোল, ২টাই দিল বার্সা পেনাল্টিতে। এর মধ্যে নেস্তার ফাউলের গোলটা ছিল চরমভাবে বিতর্কিত। বার্সা আবারো ভিন্ন গ্রহের ফুটবল থেকে বেড়িয়ে ভিন গ্রহের চিটারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হল।
বিতর্কিত ভাবে এসি মিলান কে হারিয়ে বার্সা সেমিতে। কি কপাল, সেই চেলসির সাথেই আবার পড়ে গেল সেমি ফাইনালের খেলা।
এদিকে চেলসির অবস্থা তো একদম খারাপ। বার্ক্লেস প্রিমিয়ার লীগেই তাদের শেষ চারে জায়গা নেই, আর এরা খেলবে বার্সার সাথে? আশা করছিলাম যেই যিতুক ২ দলকেই সমর্থন দেব, কিন্তু ২০০৯ এর মত আবার কলঙ্কময় বিজয় যেন বার্সা না নেয়।
প্রথম লেগে চেলসি খুব সিস্টেমেটিক ডিফেন্সিভ খেলায় বার্সাকে পরাজিত করে।
চেলসির ইংলিশ ওয়াল ভেদ করতে প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হয়ে হয়ে মেসি বাহিনী একদম নাকাল। এর মধ্যে দ্রগবার গোলে প্রথম লেগে বিজয় পায় বার্সা।
পিওতর চেক জিনিস বটে এক খান
দেখতে দেখতে সেকেন্ড লেগ শুরু হয়ে গেল। সবাই ভেবেছিল ন্যু ক্যাম্পে চেলসির আর কোন আশা নাই। একে তো রিয়ালের কাছে লাস্ট লা লিগা ম্যাচে হেরে বার্সা পাগল হয়ে আছে, তারপর হোম গ্রাউন্ডে খেলা।
চেলসির তো খবরই আছে!!!!!
খেলা শুরু হওয়ার আগে টেন একশনের কমেন্টেটার বলছিল রেফারির ব্যাপারে। এবারকার রেফারি নাকি তুরস্ক থেকে এসেছে, এবং টার্কিশ এয়ারলাইন্স এর সাথে নাকে বার্সার স্পন্সরশীপের একটা ব্যাপার স্যাপার আছে। তাই কমেন্টেটার সন্দিহান, এবারো সম্ভবত বার্সা রেফারীর কাছ থেকে ব্যপক সুবিধা পাবে।
হলোও তাই। বার্সার প্লেয়ার রা এবার দেখাতে থাকলো একের পর এক অভিনয় প্রতিভা।
পুয়োল, সানচেজ, ইনিয়েস্তাকে কিছু না করতেই দেখি এরা মাঠে গড়াগড়ি শুরু করে দিয়েছে ফাউলের ভাব করে। সানচেজের অসাধারন অভিনয় প্রতিভায় ক্যাপ্টেন টেরি খেয়ে গেল লাল কার্ড। চেলসি শিবির এখন মাত্র ১০ জন নিয়ে মাঠে।
পুরাটা খেলাই ডীফেন্ডিংএ ব্যস্ত। এর মধ্যে ভালো সুযোগ খুজে বার্সা ২ টা গোল দিয়েও দিল।
কাউন্টার এটাকে রামিরেজের গোলে চেলসি আবারো ১-২ গোলে এসে ম্যাচে লীড পজিশন পেয়ে গেল। এর মধ্যে ল্যাম্পার্ড, ইভানোভিচ, রামিরেজ বিনা অপরাধে হলুদ কার্ড পেয়ে গেছে। শেষে অবস্থা হল এমন, চেলসির প্লেয়াররা বার্সার প্লেয়ারদের গায়ে হাত রাখতেই ভয় পাচ্ছিল, ফুটবল খেলবে কি। দ্রগবা, ল্যাম্পার্ড, মাতা, মেইরেলস, সবার দৃষ্টিতে ছিল ভয়াবহ হতাশা। সব আশা ভরসা ছেড়ে দিয়ে আবারো তারা ডীফেন্সে মনযোগ দিল।
সম্ভবত ফ্যাব্রিগাসের অসাধারন ফাউল নৈপুণ্যে ডীবক্সের ভেতরে পেনাল্টি পেয়ে গেল বার্সা,ঠিক যেভাবে তারা পেনাল্টি পেয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে এসি মিলানের বিপক্ষে। কি আর বলব, প্রিয় বার্সার এহেন আচরনে রাগে দুঃখে চোখে পানি এসে যায়। তবে যাই হোক, আল্লাহর হস্তখেপেই মনে হয় মেসি পেনাল্টি মিস করে গেল। এতবড় অন্যায় আল্লাহরও তো সহ্য হবে না।
দেখতে দেখতে এক্সট্রা মিনিটও পার হয়ে যায়, শেষ মিনিটে টোরেসের সুযোগ সন্ধানী গোলে চেলসি ২-২ সমতায় এনে বেশ ভালো ব্যবধানেই ফাইনালে চলে গেল।
বেচারা ভালদেস বল দেইখা লাফ দিয়া ঘুম থেইকা উইঠা গেলো
খারাপ লাগে এইটাই, বার্সা নাকি ভিন গ্রহের ফুটবল খেলে। তবে রেফারি কেন তাদের প্রতি এতটা পক্ষপাত দুষ্ট। একই জিনিস বার বার, বার্সার পক্ষে যাওয়া ছোটখাট ফাউলকেই রেফারি পেনাল্টী দিয়ে দেয়, অথচ বিপরীত দলের পক্ষে যাওয়া হালি হালি পেনাল্টি ফাউল রেফারী দেখেও না দেখার ভান করে। বার্সার বিপক্ষে খেলতে এসে চেলসি তার বিশাল ম্যানপাওয়ারকে হাড়িয়ে বসেছে হলুদ কার্ডের ফাদে পড়ে। উয়েফার এই পক্ষপাতদুষ্ট আচরন আমার মত কোটি কোটি বার্সা সাপোর্টারের মনেও দাগ ফেলেছে।
তবে সব ভাল যার শেষ ভাল, এত কিছু করেও চেলসিকে তারা দমাতে পারলো না। দেখা যাক ফাইনালে বায়ার্ন বা রিয়াল যেই হোক না কেন চেলসি তাদের বিপক্ষে কেমন করে। তবে আমার পার্সোনাল পেডিকশন হচ্ছে চেলসি ফাইনালে পারবে না। কারণ এমনিতেই ভালো ভালো ডিফেন্ডারের গায়ে হলুদ হয়ে গেছে, তার উপর চেলসির ব্যাড লাক সবসময় খারাপ থাকে!!!!দেখা যাক কি হয় মিউনিখে।
পোস্ট শেষ করি ফার্নান্দো টোরেসের মহামুল্যুবান বানী দিয়া
“ I DO NOT SCORE DAILY, BUT WHEN I SCORE, MESSI CRIES”
বার্সার সাথে টোরেসের শেষ আট টা ম্যাচেই আট গোল, এই কথা টোরেস বলবে না তো বলবে কে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।