সর্বত্রই দূর্নীতি এবং মানবিক মুল্যবোধের চুড়ান্ত অবক্ষয় আমাদের ধংশ করে দিচ্ছে...... বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম পথ হলো রফতানি, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক ঋণ ও বিদেশি বিনিয়োগ। সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় ও বিদেশি বিনিয়োগের পরিস্থিতির নাজুকতা এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথকে সংকুচিত করে দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ যেখানে একই সময়ে আমদানি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৭ শতাংশ। অর্থাত্ বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হারে বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে একমাত্র আশার দিক ও ভরসার দিক হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আয়।
বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা পরিস্থিতি সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্স আয়ের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের ওপরে। এটা অর্থনীতির জন্য অবশ্যই ইতিবাচক। জনশক্তি রফতানিতে অধিক খরচ ও দূতাবাসের সহযোগিতার অভাবসহ নানা সমস্যার পরও এ খাত বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ বেশ ইতিবাচক। এর একটি বড় কারণ হলো ডলারের উচ্চমূল্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে আমাদের অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হবে কৃষি ও এসএমইতে ব্যাংকগুলোর অর্থায়ন বাড়ানোর মাধ্যমে এ খাতের বিকাশে তার অসামান্য অবদানের জন্য। ব্যাংকগুলো বর্তমানে কৃষি ও এসএমই খাতে তাদের অর্থায়নের পরিমাণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি করেছে। যার প্রভাবে সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিতে উচ্চ ফলন দেখা যাচ্ছে। ফলে কমেছে খাদ্য আমদানির পরিমাণ, যা দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখছে। এসএমইতে ঋণের প্রবাহ বাড়ায় অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
এ প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে গ্রামীণ জনগণের উন্নয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন প্রয়োজন।
অর্থনীতির সার্বিক দিক বিবেচনা করে বলা যায়, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথকে আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে বিদেশি বিনিয়োগ ও বৈদেশিক সাহায্য বাড়ানোয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রেমিট্যান্স আয় বাড়ানোর ওপর। জনশক্তি রফতানিতে দূতাবাসগুলোর সহযোগিতা বাড়ানো ও রফতানিতে খরচ কমিয়ে আনার জন্য সরকারের সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
ব্যাংকগুলো সিএসআর বাবদ যে খরচ করে থাকে তার একটি অংশ বিদেশ যাওয়া শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে ব্যয় করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতি বছর ব্যাংকগুলোর পক্ষে ১০০ কোটি টাকা খরচ করা কঠিন কিছু নয়। এ ব্যয় করা যেতে পারে একটি ইনস্টিটিউট করে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে। যা বিদেশে জনশক্তি রফতানি প্রক্রিয়া সহজ এবং তাদের আয় বাড়াতে সাহায্য করবে। তাছাড়া জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে সরকারও বিভিন্ন প্রণোদনা দিতে পারে।
বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে দেশের রফতানি আয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। রফতানি আয়ের প্রবাহ বাড়াতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবদান বাড়াতে হবে।
একটি দেশের মুদ্রানীতি নেওয়া হয় সাধারণত কয়েকটি উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে। এর মধ্যে প্রধান হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আয় বৈষম্য কমানো। চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে তার মূল উদ্দেশ্য হলো মূল্যস্ফীতির হারকে কমিয়ে আনা।
এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমানো হলে কমে যাবে বিনিয়োগ, কমবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ, কমবে মানুষের আয় এবং সবশেষে জনগণের চাহিদাজনিত চাপ কমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির চেয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দেওয়া বেশি যৌক্তিক। এদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিকে চাপের মুখে ফেলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমানোর পরিকল্পনা করা হলেও সরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। যা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিতে পারে।
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত সাহসী ও পরিশ্রমী। তারা প্রয়োজনে বড় কোনো ঝুঁকি নিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। তাই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মানবসম্পদ একটি বড় ইতিবাচক দিক। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও গ্রামাঞ্চলে মানুষের অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হওয়া সম্ভব। যা আমাদের ৬৮ হাজার গ্রামের উন্নয়নের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনকে ত্বরান্বিত করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।