সর্বত্রই দূর্নীতি এবং মানবিক মুল্যবোধের চুড়ান্ত অবক্ষয় আমাদের ধংশ করে দিচ্ছে......
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গর্বের অনেক বিষয় রয়েছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং ঝুঁকিগ্রহণসহ জনশক্তি ও পোশাক রফতানির মাধ্যমে বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করা বাংলাদেশের জন্য বড় গর্বের বিষয়। চল্লিশ বছরের ব্যবধানে তলাবিহীন ঝুড়ির খেতাব থেকে বাংলাদেশ এখন সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিবিদও বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আশা প্রকাশ করছেন। সমপ্রতি ডব্লিউটিওর মহাসচিব ড. প্যাসকেল লামিও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।
এটি বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই গর্বের। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অর্জন রয়েছে অনেক। চলতি বছরের বাজেটের সময় থেকে দেশের অর্থনীতিতে কিছু চাপ পড়তে শুরু করে। ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক থেকে সরকারের অতিরিক্ত ঋণগ্রহণ, ভর্তুকির চাপ বৃদ্ধি ও শেয়ারবাজারের অস্থিরতা অর্থনীতিকে চাপের মুখে ফেলে দেয়। বিদেশি দাতাগোষ্ঠীর অর্থ সহায়তা ছাড়ের ক্ষেত্রে শ্লথতাও অর্থনীতির জন্য বড় চিন্তার বিষয়।
রফতানি প্রবৃদ্ধি ভালো হলেও আমদানি প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে বেশি। রেমিট্যান্স আয়ে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হলেও তা আরও বেশি হওয়ার দাবি রাখে। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় আমদানিপণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতি ত্বরান্বিত হয়েছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।
আজকে আমাদের যে প্রবৃদ্ধি অর্জন আমরা ব্যাংকাররা তার অন্যতম দাবিদার। ব্যাংক হলো অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। ব্যাংকের কাজ হলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সঞ্চয়গুলোকে সংগ্রহ করে তা শিল্পে বিনিয়োগের জন্য ঋণ দেওয়া। পুঁজিবাজার শিল্পে বিনিয়োগের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজার থেকে মূলধন তুলে শিল্পে বিনিয়োগ করার প্রক্রিয়া সহজ হয়ে ওঠেনি তাই ব্যাংক ঋণই এক্ষেত্রে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে সঞ্চয়কারীদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে। তাই শিল্প ঋণের সহজপ্রাপ্যতার জন্য আমানতের ভালো প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন।
গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের ব্যাংকগুলোর ডিমান্ড ডিপোজিটের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। এ সময়ে ডিমান্ড ডিপোজিটের প্রবৃদ্ধি হয়েছে (-) ৩.৪৬ শতাংশ। এ তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো নেই।
তাই ডিমান্ড ডিপোজিটের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। কারণ, যখন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হয় তখন ব্যবসায়ীরা এ ধরনের আমানত বেশি বেশি রাখে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যাংকগুলোর টার্ম ডিপোজিটের প্রবৃদ্ধির গতিও বেশ কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য থেকে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের টার্ম ডিপোজিটের প্রবৃদ্ধি ৯.১৪ শতাংশ, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১০.৬৭ শতাংশ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জনগণ হাতে টাকা রাখতে পারছে না।
মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা একটি দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। তাদের সঞ্চয়, আয় ও ব্যয় সবই অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ যত আয় করবে তত তাদের খরচ করার প্রবণতা বাড়বে যা অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করে তুলতে সাহায্য করবে। সঞ্চয় না হলে বিনিয়োগের পথ সম্প্রসারিত হয় না এবং সুযোগ সৃষ্টি হয় না কর্মসংস্থানের।
(আগামী পর্বে বাকী টুকু)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।