ঘাটের এই পারে বসে আছি ঐ পারে যাওয়ার অপেক্ষা। মুসাফিরের ব্লগ। আমার গোপন প্রেয়সিকে আমি বড় আপন করে এতোদিন গোপনে রেখেছি। পরিবারের একান্ত আপনজনেরাও জানেনা আমার প্রেয়সীর কথা। সারপ্রাইজ দেবো বলে এবং লজ্জায় গোপন করেছিলাম।
অনেকে বারবার জানতে চেয়েছে, সরাসরি প্রশ্ন করেছে, কিন্তু আমি সলাজ হাসিমুখে বলেছি ওরকম কেউ যে আমার নেই।
গত সপ্তাহে হঠাৎ করে দু দিনের জন্য লং ড্রাইভে যেতে হলো। আবহাওয়া সংবাদে জানলাম- যাত্রাপথে থাকবে ঝকঝকে সোনালী রোদ। প্রেয়সীকে বললাম-তুমি কি আমার সাথী হবে?
ও আমাকে হ্যাঁ ও বললোনা, আবার না ও বললো না। মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ হিসাবে আমি ধরে নিলাম সে আমার সাথে যাবে।
পরদিনভোরে, আমি ব্যাগ গুছিয়ে নিচে নেমে এসে দেখি সে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েই আছে। কী সুন্দর অপরুপ রুপ। আমি কোনো কথা বলতে পারলাম না। শুধু মুগ্ধ হয়েই চেয়ে রইলাম।
আমি লাজুক ভাবে তার পাশে বসলাম।
আলতো করে স্পর্শ করলাম। সে একটু শিহরিত হলো। দু ঠোঁটের মাঝে রুপালী আলোর ঝিলিক দিয়ে সে আমার যাত্রা পথের সাথী হলো।
কোলাহলমুখর শহর ছেড়ে আমরা নির্জন হাইওয়েতে এসে পড়লাম। ছুটে চলেছি দুজনে ঘন্টায় প্রায় ৮০ মাইল বেগে।
মাইলের পর মাইল পথ। রাস্তার দুপাশে শুধু সবুজ বনানি। আর মাঝে মাঝে দুয়েকটি গাড়ী।
তুমি একের পর এক গান শুনিয়ে আমার ভ্রমণের সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দিচ্ছো। প্রায় ১৬৫ মাইল চলার পর আমার খুব ক্ষুধা পেলো।
তোমাকে জিগ্গাসা করলাম, তুমি কিছু খাবে কিনা?
তুমি কিছু বললেনা- সংগীত তোমার কন্ঠে যেন দ্যুতি ছড়াচ্ছে।
তুমি কিছু না বললেও আমি যে বুঝতে পারি। বুঝলাম-তোমার খুব তৃষ্না পেয়েছে। পাশে একটা রেস্ট হাউজে থেমে আমি কিছু খেয়ে নিলাম। আর তুমি শুধু ত্বষ্না মিটালে।
একসময় মূল হাইওয়েকে বিদায় জানিয়ে আমরা একটা নির্জন পথে এসে পড়লাম। শুধু সবুজ, চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। আশেপাশে কোনো মানুষ নেই, জন নেই, গাড়ী নেই, বাড়ি নেই। শুধু দীর্ঘ পিচঢালা পথ। এ পথের যেন আর শেষ নেই।
আমার যেন একটু ভয় ভয় লাগছে। যদি হারিয়ে যাই এই অজানায়। তুমি সাহস দিলে- কানে কানে বললে- এতো ভয় কীসের, আমি সাথে আছিনা। আর জানোতো, সব রাস্তাঘাট নিজের মেমোরিতে জমা করে রেখেছি।
দূরে আকাশে থাকিয়ে দেখলাম-ঝকঝকে সোনালী রোদ যেন-মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ছে।
টুপ টুপ করে কয়েকফোঁটা বৃষ্টি তোমার গায়ে এসে পড়লো। এরপর বাড়তে থাকলো বাতাসের বেগ। বাড়তে থাকলো অঝোর বরষণ।
তুমি বললে- বড় বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। আমার গায়ের ওপর চাদর জড়িয়ে দাও।
আমি বললাম- তুমি দাও ।
তুমি বললে, না । তুমিই নিজ হাতে জড়িয়ে দাও।
আমি আলতো করে ভালোবাসার চাদর তোমার ওপর জড়িয়ে দিলাম। এরপর তুমুল বর্ষার মাঝে ছুটে চললাম নির্জন,নিস্তব্ধ এক পথে ।
একসময়-পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। ফুলের মতো, প্রজাপতির মতো একটু বড় হওয়া শিশুরা তোমার চারপাশে ঘিরে ধরলো। তোমাকেই নিয়ে সবার আগ্রহ। আমার একবার রাগ হলো, কিন্তু ভালো লাগলো তোমাকে নিয়ে সবার প্রশংসা । নিজের প্রেয়সীর প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে।
কারো কারো ক্যামেরা ক্লিক করে ওঠলো। সবচেয়ে ভালো লাগলো আমার মামার। মামা,তোমাকে খুব পছন্দ করলেন। বললেন,আমার মায়েরও তোমাকে বেশ লাগবে। এই দেখো,তোমার সাথে তোলা মামার ছবি।
এইমাত্র পাঠালেন।
আমি ও ভাবলাম-আর গোপন করে লাভ কি? তাইতো দিলাম মামার সাথে তোলা তোমার ছবি সবার সাথে শেয়ার করে-। ভালো থেকো , সংগে থেকো প্রেয়সী আমার । একসাথে যে অনেক পথ চলতে হবে ,নতুন প্রেমিকা না আসা পর্যন্ত ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।