আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রেয়সীর বুক, জনৈক হিজড়া ও একজন "সংবেদনশীল" পুরুষ

যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।

রহমতের অনেকদিন ধরেই ‘সংবেদনশীল’ পুরুষ হইবার শখ। এই শব্দটি সে শিখিয়াছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িতে আসিয়া। প্রথম প্রথম সে তার নারী লিপ্সুতার কারণে বান্ধবী মহলে এমন ধরণের প্রতিরোধের সম্মুক্ষীণ হইয়াছিল যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তাহার ভাগ্যে কোন নারী জুটিবে কিনা এই নিয়া তাহার মনে দৃঢ় সংশয় তৈয়ার হইয়াছিল।

সমস্যা আরো বাড়িয়া গিয়াছিল এই কারণে যে তাহার সেই প্রতিবাদমূখর বান্ধবীদের প্রতিও সে এমন এক ধরণের আকর্ষণবোধ করিত যা সে আগে কখনোই কোন নারীর প্রতি করে নাই। ফলে সে তাহাদের থেকিয়া পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হইতে পারিত না আবার যুক্তও হইতে পারিতো না। সেই সব বান্ধবীরা কথাচ্ছলে তাহাকে ‘পারফেক্ট লিবিডো ফ্রিক’ বলিয়া কি বুঝাইতো, সেইটা বুঝতেও তাহার অনেক সময় লাগিয়া গিয়াছিল। তাহারা তার দৃষ্টি নিয়াও অনেক মশকরা করিত। তবে দীর্ঘদিন মেলামেশার ফলশ্রুতিতে রহমতের একটা সহনীয় অবস্থান তাহাদের মাঝে তৈরী হইয়া গিয়াছিল।

কিন্তু সেটারও অন্য হ্যাপা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ও তার বিভাগের অধিকাংশ পুরুষ বন্ধুরা এই বান্ধবীদের উপেক্ষা করিতে চাইত এমনকি কিছু কিছু বান্ধবীরাও তাদের পছন্দ করিত না। ফলে তাহাদের কাছেও তার একধরণের ভেন্দামারা ইমেজ পরিস্ফুটিত হইয়া উঠিত। কেবলমাত্র ভাল ফলাফলের জোরে বিশ্ববিদ্যালয়ে রহমত তার ন্যুনতম সম্মানটা ধরিয়া টিকাইয়া রাখিতে সক্ষম হইয়াছিল। ছোটবেলা থেকিয়াই রহমত চালাক চতুর ও আলাপী।

যেইসব তীক্ষ্ণ বান্ধবীরা তাকে একসময় দূর দূর করিয়া ব্যাঙ্গ করিয়া চলিত, কালের বিবর্তনে তাহারাই তাকে একটু আধটু করিয়া আপন করিয়া নিল। তাহারা তার সাথে, ‘লৈঙ্গিক সর্ম্পক’,’নিজের শরীরের উপর অধিকার’,’মাচো’,‌’ফেমিনিটি-ম্যাসকুলিনিটি’‌,’ধর্ষণ’,’উত্তর-আধুনিকতা’, ‘স্ট্যান্ড-পয়েন্ট থিওরী’ ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়া আলাপ করিত। এমনকি সর্ম্পক একটু গভীর হইবার পরে রহমত অন্যান্য পুরুষ বন্ধু কতৃক তাহার তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য হইবার খবরও বান্ধবীদের জানাইয়া ছিল। বান্ধবী গোষ্ঠীর প্রায় সকলেই তার প্রতি সহমর্মী হইলেও একজন তাকে পূর্ববত সন্দেহের চোখেই দেখিত। ঘটনাক্রমে ইনার প্রতিই রহমতের আকর্ষণ ছিল সবচেয়ে বেশি, এবং ইনাকেই সে সবচেয়ে বেশি ভয় পাইত।

কেননা আলাপচারিতার সময় রহমতের চোখ বান্ধবীদের কোন কোন প্রত্যঙ্গের দিকে যায়, সেটা সেই বান্ধবীটিই সবচেয়ে খেয়াল করিত এবং সময়মত ব্যাঙ্গচ্ছলে তা প্রকাশ করিয়া দিত। রহমত বুঝিতে পারিতে ছিল যে তাহার আরো সতর্ক হইতে হবে। কিন্তু সতর্ক হওয়া যে আর হয়ে ওঠে না। নারীদের প্রতি নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাহার মন সবসময় গুমড়াইয়া উঠিত কিন্তু তাহার নারী-আকষর্ণের কোন সুরাহা তাতে হইত না। ইত্যবসরে তাহার সেই তীক্ষ্ণ বান্ধবীরা অনেকেই প্রেমে পড়িলেন এবং অনেকেই আর প্রেমের প্রতি আস্থা রাখিলেন না আবার অনেকে বিয়েও করলেন।

কিন্তু পুরো বিশ্ববিদ্যালয় কালে রহমতের প্রেম যেন আর হয় না। এদিকে তাহার পুরুষ বন্ধুরা মুখ বাহিয়া ও মোবাইল ভরিয়া তাহাদের প্রেম-কাম লীলা বর্ননা করিয়া রহমতের আত্মবিশ্বাসকে একেবারে দুমঢ়াইয়া মুচঢ়াইয়া দিতে থাকিল। এমতাবস্থায় রহমতের পরিচয় হইল বিদিতার সাথে। বিদিতাও সৌভাগ্যক্রমে রহমতকে পছন্দ করিয়া ফেলিল। রহমতও তাহার সকল প্রতিভা নিয়া বিদিতার সাথে লিপ্ত হইয়া গেল।

বিদিতার সাথে সর্ম্পকের ফলে রহমতের মনে এক বিচিত্র ধরণের আত্মবিশ্বাস জন্মাইল। তার মনে হইল, এখন থেকে যতজন পারা যায় সকলের সাথেই প্রেম করিতে হইবে এবং এখানেই শেষ করিলে চলিবেনা শোয়ন পর্যন্ত যাইতে হইবে। ইহাতেই সর্ম্পূণতা অর্জন হয়। ঠিক এই সময়টাতেই তাহার সেইসব তীক্ষ্ণ বান্ধবীদের সাথে তার প্রায় ছেদ হইয়া গেল। তাহার মনে হইতে লাগিল যে এতদিন তাহাদের সাথে চলিয়া তার ক্ষতিই হয়েছে।

এতদিনে সত্যিকারের পুরুষ হইয়া উঠিয়াছে। বিদিতার সাথে নানা টানাপোড়েনের মধ্যেও রহমতের সর্ম্পক আর্শ্চয্যজনকভাবে টিকিয়া ছিল। বিদিতার মনপ্রাণ সঁপিয়া দেয়া তার কাছে যেমন উৎফুল্লের ছিল তেমনি বিরক্তিরও ছিল। বিবাহ পূর্ববর্তী শারীরিক সর্ম্পকে বিদিতার দূরবর্তীতাকে তার দোষ হিসেবেই রহমত প্রতিষ্ঠা করিল। সে তাহাকে ‘শীতল’ নারী হিসেবে আখ্যা দিল।

আবার একই সাথে তাকে নানাভাবে বোঝাইবার চেষ্টাও করিতে থাকিল। তীক্ষ্ণ বান্ধবীদের কাছ থেকে শেখা শরীরের অধিকার বিষয়ক গল্পকে সে নানাভাবে ঘুরাই মুড়াইয়া বুঝাইতে লাগিল। উচ্ছল, মুক্ত, স্বাধীন নারীর কি কি করা উচিৎ ইত্যাদি বয়ান করিল। কিন্তু বিদিতাকে কোনভাবেই কিছু বোঝেনা। রহমতের তখন মনে হইল যে বিদিতা তার তীক্ষ্ণ বান্ধবীদের মত হইলেই ভালো হইত।

একটু কটাক্ষ হয়ত সহ্য করিতে হইত কিন্তু সামান্য বিষয় নিয়া এত কথা বলিবার বোঝাইবার প্রয়োজন হইত না। এমনি যখন অবস্থা তখন রহমত আর বিদিতা উদ্যানে বসিয়া আছে। আরেকটু সামনে নিবিড় নৈকট্য জোন। কিন্তু তারা একরকম সতর্কতা বশতই মাঠের মাঝখানে। ‘শীতল’ নারী প্রসঙ্গটা রহমত আবার উঠাইল কিন্তু বিদিতা এটা নিয়ে উচ্চবাচ্চ করল না।

বরং তার মধ্যে কেমন যেন একটা সমর্পন ভাব রহমতের দেখিতে পাইল। কিন্তু তীক্ষ্ণ বান্ধবীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার কারণে সে পুরোপুরি সমর্পিত নারীর অস্তিত্ব নিয়াও ইতমধ্যে ব্যপক সন্দিহান হইয়া উঠিয়াছিল। বিদিতাকে নিয়াও তার সেই সন্দেহ গেল না। এবং সেই সন্দেহের দোলাচালেই, তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানুষ (কথ্য ভাষায় হিজড়া) তাদের সামনে এসে উপস্থিত হল। রহমত প্রথমে একটু ভয় পেয়ে গেলেও সংবেদনশীল হবার বাসনার তাকে বসতে বলল এবং তার সাথে আলাপ জুড়ে দিল।

মানুষটির নাম শুমি। খুব রসিক মানুষ। রহমত কিছুক্ষণ আগে বিদিতার সাথে যেই সংবেদনশীলতা নিয়ে কথা বলছিল এবার সেটার সাথে আরো কয়েকমাত্রা সংবেদনশীলতা যুক্ত করে শুমির সাথে কথা বলে চলল। মাঝে মাঝে বিদিতাও অংশ নিচ্ছিল। শুমি এক সময় তাদের দুজনার উদ্দেশ্যে বলল, আপনারা স্বামী স্ত্রী অনেক মানাইছে ভাল।

তখন হঠাৎ করেই বিদিতা বলে উঠল, না না আপনার ভাইতো আমাকে বিয়ে করবে না। তখন শুমি বলল বিয়ে না করলে এখানে আসছো ক্যান? শুমি উদ্যান সর্ম্পকে রহমতকে অনেক কথাই বললো, যেগুলো উচ্চারণের কারণে বিদিতা বুঝতে পারছিল না। বিশেষত যৌনজ সবকথা বিদিতা শুনতে পাক সেটাও শুমি চাইছিল না। দূরের বিশের কোঠায় বয়স এমন দুটো মেয়েদের দিকে তাকিয়া বলিল ঐ যে ওরা ‘সিস্টেমে’ ব্যস্ত। এমনি দেখলে মনে হয় চকলেট আর ফুল বিক্রি করে আসলে সিস্টেম করে।

সে উপদেশ দিল সন্ধ্যার পর এখানে না থাকার। শুমি চলে জাবার পর বিদিতা রহমতকে বলিল শুমি মনে হয় তোমার দিকে এট্রাক্টেড। রহমত কিঞ্চিত লজ্জা পাইল এবং সেটি কাটাইবার জন্য বলিল যদি তুমি “শীতল” হইয়াও ইইতে পার তাহলে শুমির দোষ কি? বিদিতা এই প্রশ্নের কোন উত্তর করিল না বরং বলিল শুমির বুদ্ধি খুব তীক্ষ্ণ, বিয়ে নিয়ে যে কথাটা বলছে খুব ভালো বলছে। এই কথা বলিয়া প্রায় বিষ্ময় করিয়া দেবার মত সাবলীলতায় বিদিতা রহমতকে আষ্টেপৃষ্টে জড়াইয়া ধরিল। রহমত উত্তেজনার ধাক্কাটা সামলাইয়া উঠিবার আগেই প্রেয়সীর বুকের ছোঁয়ায় শিহরিত হইয়া উঠিল।

সে স্পষ্ট বুঝিল বিদিতা তাহার হাত দুটিকে শাসন মুক্ত করিয়া দিয়াছে সে এখন এ দুটি দিয়া বিদিতার সর্বাঙ্গে স্পর্শ করিতে পারে। সংবেদনশীল স্পর্শ প্রদান করিবার নিমিত্তে উদ্যগী হইতেই, রহমতের সেই তীক্ষ্ণতম বান্ধবীর কথা মনে পড়িয়া গেল। প্রথম তার মনে হল যে সে আবারো তার হাত আর চোখের প্রগমণের দিকে তীক্ষ্ণ নজরদারী করছে কিন্তু পরবর্তীতে তার মনে হল যেন এক গভীর বিদ্রুপ আর বিষণ্নতা নিয়ে সে রহমতের দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েক মুহুর্তের জন্য রহমতের ভেতরে একটা তোলপাড় চলল, তার ভেতরে জমে থাকা তীক্ষ্ণ বান্ধবীদের অনেক কথা একেবারে দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যেতে থাকল। নিজের সংবেদনশীল আচরণকে তার হাস্যকর মনে হতে থাকল।

যদিও এই পরিস্থিতি বেশিক্ষণ তার ভাল লাগছিল না। সে ছটফট করতে করতে থাকল এবং পরিশেষে পরিত্রাণ পাবার আশায় দুই হাতে শক্ত করে বিদিতার বুক চেপে ধরে থাকল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।