প্রাচীর
প্রেমের কবিতাগুলো ডানা মেলে উড়ে পালাতে চায়,
এটা আমারই ব্যর্থতা, আমি তাদের ধরে রাখতে পারছি না।
আমার অস্ত্বিত্বের প্রতি তীব্র বিতৃষ্ণায়
তারা ক্রমাগত তুলছে অসহ্যকর আর্তনাদ,
“ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও!”
আমার অনুভূতিরাও ক্রমাগত আর্তনাদ করে চলছে
যেন আঁধার কবরে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে তাদের
মুক্তির নেশায় পৃথিবী কাঁপিয়ে চিৎকার করে চলছে তারা,
“বাচঁতে চাই, বাচঁতে চাই!”
রক্তলাল চোখ, এলোমেলো চুল, ধূসর চায়ের ধোঁয়া এবং আমি।
রক্তলাল চোখ যেদিকেই তাকায়, বেদনার নীল নকশা।
যেন সীমাহীন বেদনার খোঁজে ছুটে বেড়িয়েছে আমার অস্ত্বিত্ব,
যেখানেই পাবে বেদনাকে আঁকড়ে ধরবে ভালবাসায়।
জানালার দিকে তাকালে জটাধারী বৃক্ষ, রুক্ষ দেহে
লালন করছে হাজারো নিষ্প্রাণ লতা।
এ নির্জীব বৃক্ষ ও তাকে আঁকড়ে ধরা লতা যেন
আমি এবং আমার অশান্ত বেদনার অস্থিরতার প্রাচীর।
যে প্রাচীর ভেঙ্গে চুরে একাকার করে সমস্ত অনুভূতিরা বলতে চায়,
“ভালবাসি, ভালবাসি!”
আকাশের দিকে তাকালে ভয়াবহ শূন্যতা
অস্ত্বিত্ব গ্রাস করা অসীম একাকিত্বের নিষ্ঠুর হাতছানি।
যে আকাশ ছিল মুক্ত সৌন্দর্য,
যে আকাশ জুড়ে ছিল তোমার অপূর্ব হাসি।
যে আকাশের কল্পনা পরী ছিলে তুমি
আলতো পায়ে স্পর্শ করতে মেঘের শীতল বুক।
তোমার মনের অরন্যে পুষ্প ফুটিয়েছি কত,
যে পুষ্পের ছোঁয়ায় আনন্দে হেসে বেড়িয়েছ তুমি
মনে হয়েছিল স্নিগ্ধতার পরী তুমি,
কল্পিত বাগানে জেগে থাকা সুখের অবয়বের উপর পা ফেলে ফেলে
আনন্দে নেচে বেড়াচ্ছ।
অসীম আনন্দের উপর দাঁড়িয়ে থাকা তোমাকে
স্পর্শ করেছে অহমিকা।
যে অহমিকার তীব্র স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছো আমাকে,
আমার আলোকিত অস্ত্বিত্বকে।
তোমার শান্ত চোখে জেগে ওঠা অশান্ত আকুতি হারিয়ে গেছে,
যে আকুতির তীব্রতা তৈরী করেছিল অদ্ভূত ভাললাগা
আমাকে জানিয়ে দিয়েছিল আরও একবার,
কত সুন্দর তুমি, তোমার আঁধারঘেরা মায়াময় চোখ।
তোমার চুপ থাকা রক্তিম ঠোঁটদুটোর পবিত্রতা ও দুষ্টুমি
আমাকে ক্রমশ ঠেলে দিয়েছিল দুর্বলতার অজানা তীরে।
এখন আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছি, শুধু
তোমাকে আর ভালবাসাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছি
বিশূন্য যন্ত্রণাকাতর পৃথিবীর বুকে।
অথচ-
তোমায় নিয়ে একেঁছিলাম কত ডানা মেলা স্বপ্ন
যে স্বপ্নে ছিল তোমার সোনালী আলোয় ঘেরা হাত,
ছিল মায়ার প্রাচীরে ঘেরা তোমার অতুলনীয় চেহারা,
ছিল আমার পথে উড়ে আসা তোমার অনুভূতিরা।
তোমার হাতের লজ্জাভরা কচি আঙ্গুলগুলোর বিস্তৃত কোমলতায়
চুমু খেতে চেয়েছিলাম। সেই কোমলতার হাত ধরে
ছুটে যেতে চেয়েছিলাম কত দূর প্রান্তরে,
পাড়ি দিতে চেয়েছিলাম কত কাঁটাঘেরা পথ,
পুষ্প ঘেরা পথের স্বপ্ন নিয়ে।
আজ কোনো এক কাঁটাঘেরা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে আছি আমি একা,
রক্তাক্ত, খন্ডিত আমার দেহ প্রাণ।
তুমি নেই, কাঁটারা আছে।
কাঁটারা বিঁধে আছে মনের প্রতিটি কোণে।
তোমায় নিয়ে স্বপ্নময় পৃথিবী, আমিও চেয়েছিলাম
যে পৃথিবী ক্ষণে ক্ষণে চমকে উঠতো ভালবাসার অনাবিল নির্মলতায়।
যে ভালবাসায় জেগে থাকতো হৃদয়ের গভীর অনুভূতিরা,
প্রদীপের কোমল আলো জেগে থাকতো আমাদের চারপাশে।
কথা বলে উঠতো কম্পিত শিখা,
“তোমাদের জন্য পৃথিবী, তোমাদের জন্য ভালবাসা। ”
আমার হতবাক, মুগ্ধ চোখদুটো চেয়ে থাকতো,
আমাকে ঘিরে শুধু তুমি, তোমার ফুটন্ত স্নিগ্ধতা।
তোমার মায়াময় চোখ, রক্তিম ঠোঁট, আহ্লাদী আদুরে কথা
যেন আমার কাঙ্খিত পৃথিবী।
তোমার অহমিকাগুলো ধরা দিত আমার ভালবাসার কাছে,
তুমি বলে যেতে প্রিয় কিছু কথা,
যে কথা শোনার জন্য প্রেমিক হৃদয়
স্পন্দণ বন্ধ করে দেয়।
তোমাকে আজ আমি দেখি কাঁটাঘেরা প্রাচীরের ওপারে
যে প্রাচীর ঘিরে আছে তোমায় আমায়।
মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো বেদনার শৈল্পিক কাঁটার এ প্রাচীর
স্তব্ধ করেছে ভালবাসার ছুটন্ত পথ।
যে পথ ছিল তোমার আমার, আমাদের অনেক লালিত স্বপ্নের।
আজ সে পথ আর বেঁচে নেই
হঠাৎ জেগে ওঠা বাঁধা যেন ফুঁসে ওঠা জলোচ্ছ্বাস,
চারিদিকে ভালবাসাহীনতার কথা যেন আগ্রাসী ঝড়ের দাপট।
এসবই ডেকে এনেছে জীবনে আঁধারের নিস্তব্ধতা,
বেদনার সংগীত তান্ডব ছড়িয়ে দিয়েছে মেঘে ঢাকা আকাশে।
এ সংগীত তোমার, এ সংগীত আমার,
আমাদের আঘাত জর্জরিত ভালবাসার।
এখন শুধু বেঁচে আছে,
ভালবাসার জাল বুনে চলা বিচ্ছিন্ন স্বপ্নেরা।
স্বপ্নেরাও নিশ্চুপ হয়ে যাচ্ছে,
স্বপ্নের ভেতরেও যেন দীর্ঘশ্বাস কেঁপে কেঁপে উঠছে,
যেন কিছুতেই আর হবে না কিছু।
তবে আমি এখনও দুটো প্রশ্ন দিয়ে স্বপ্নহীনতার আঁধারের স্তব্ধতাকে
দীর্ণ বিদীর্ণ করে দিতে চাই,
আমরা কি পারি না বাঁধার প্রাচীর ভেঙ্গে চুরে একাকার করে দিতে?
উন্মত্ত নেশায় পৃথিবী কাঁপিয়ে
চিৎকার করতে কি পারি না, “ভালবাসি”?
জানি তুমি পারবে না, হয়তো পারবো না আমিও।
প্রচন্ড ইচ্ছে হয়,
ভালবাসার বিজয় পতাকা গেঁথে দেই পৃথিবীর বুকে,
জানি এতে, শান্তির সময় পরিণত হবে রণাঙ্গণে,
রক্তাক্ত, খন্ডিত হবে দেহ প্রাণ।
তখন আমার রক্তাক্ত হাত কেঁপে কেঁপে ছুঁতে চাইবে
তোমার কোমল হাতদুটোকে।
বিরহের যাতনায় কাতর তোমার হাতদুটো
আঁকড়ে ধরবে আমার রক্তভেজা হাত। যা দিয়ে
ইচ্ছা হবে তোমার পা দুটোকেও রাঙ্গিয়ে দেই,
ভালবাসার রক্ত-আলতায়।
যদি তা করি, তুমি লজ্জা পাবে,
তোমার লাজুক হাসি ঝলকে উঠবে আমার হৃদয়ের গভীরে।
চারিদিকে প্রতিকূলতার প্রাচীর,
ফুঁসে ওঠা অসংখ্য বাঁধার বেড়াজাল, আমাদের ঘিরে।
তুমি আমার দিকে ছুটে আসতে চাইলে,
হিংস্র শিকল জড়িয়ে ধরবে তোমার পা,
কোমল পাদুটো থেকে রক্ত ঝড়িয়ে দেবে ক্ষণিকেই।
আমি চিৎকার করে উঠবো, “ছেড়ে দাও!”
ক্ষুব্ধ শিকল আঁকড়ে ধরবে আমাকেও, আমার ফুলে ওঠা বাহুকে
চাপ দিয়ে ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো করতে চাইবে রক্তের ঝরনায়।
হিঁসিয়ে ওঠা নিষ্ঠুর চাবুক, ক্রমাগত আঘাত করে চলবে আমাদের
আঘাতে জর্জরিত, পেষিত আমার বুক রক্তে ফেটে যাবে।
তোমার রক্তিম ঠোঁট কেঁপে উঠবে অসহনীয় যন্ত্রণায়।
আমি আগলে ধরব তোমাকে,
আঘাতে ক্ষতবিক্ষত বুকে আঘাত পরবে আরও।
হৃদয়ের সমস্ত রক্ত যেন ছিনিয়ে নেয়া হবে,
তোমার প্রতি আছড়ে পড়া ভালবাসার অনুভূতির অশান্ত ঢেউগুলো
যেন রক্তের স্রোতে ভাসিয়ে দেয়া হবে।
তবুও চিৎকার করে উঠবো, “ভালবাসি, ভালবাসি!”
তুমিও আমাকে জড়িয়ে ধরে তুলবে অস্ফূট আর্তনাদ, “ভালবাসি। ”
এরকম হলে হয়তো আমাদের বিচ্ছিন্ন করা যেত না,
রক্তে রক্তে ভিজে যেতাম,
আঘাতে আঘতে অস্ত্বিত্ব বিলীন করে দিতাম,
তবু বলতাম ভালবাসি।
তবু থাকত,
তোমার হাতে আমার হাত আর
তোমার চোখে আমার চোখ।
সবকিছু নিঃশেষ হয়ে গেলেও জেগে থাকতো,
তুমি, আমি আর ভালবাসা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।