আবারও অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ। হাতে নতুন একটি আবেদন। গন্তব্য সেই একই কোর্ট। বিচারপতি বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের কোর্ট। তিনি গেলেন, আবেদন করলেন এবং যথারীতি তার পক্ষেই নির্দেশনাও নিয়ে এলেন।
এ যেনো মানিক-মোরশেদ যৌথ পরিচালনায় বিগত দিনের মতো আরেকটি নাটকের আত্ম প্রকাশ।
দৈনিক সমকালের রিপোর্ট অনুযায়ী ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট দাখিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইন-২০০৯-এর সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো বাস্তবায়ন করে ডিসিসি নির্বাচনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না_ এ রুল জারির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করা হয়। রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে জনস্বার্থে রিট আবেদনটি গতকাল রোববার সকালে দাখিল করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল বিকেলে আংশিক শুনানি করেন রিট আবেদনকারী
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ। সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের মৌখিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার বেলা পৌনে ১টায় পরবর্তি শুনানির দিন ধার্য রেখেছেন আদালত। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের পরবর্তী কার্যক্রম না চালানোর জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবেন বলে আদালতকে আশ্বস্ত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান ও নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।
এর আগে শুনানিতে আবেদনকারীর আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ এর ২৭, ২৮ ও ২৯ ধারা অনুযায়ী নতুন সিটি করপোরেশনের কয়টি ওয়ার্ড হবে তা নির্ধারণ করতে হবে এবং এসব ওয়ার্ডের সীমানাও নির্ধারণ করতে হবে। এ সীমানা নির্ধারণের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।
আইনের সুনির্দিষ্ট এসব ধারা কার্যকর না করে নির্বাচন করা যাবে না। আর আইনের এ ধারাগুলো সিটি করপোরেশন পালন করেনি। তাই আইন অনুযায়ী নির্বাচন করার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আইন মেনে নির্বাচন করার জন্য এ রিট আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া এ রিটের শুনানি চলাকালীন নির্বাচনের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে আবেদন করা হয়েছে।
এর পর আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমানের বক্তব্য শোনেন। পরে আদালত ড. শাহদীন মালিককে শুনতে চাইলে তিনি বলেন, আবেদনের কপিটি এখনও দেখিনি। কপি দেখে কমিশনের সঙ্গে আলাপ করে শুনানি করব। এ পর্যায়ে আদালত আজ সোমবার পর্যর্ন্ত সময় মঞ্জুর করেন।
রিট আবেদনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, দুই সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসকসহ সাত জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
গত ৯ এপ্রিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ আগামী ২৪ মে বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এর তিন দিন পর গত বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন কার্যক্রম বন্ধ রাখতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ তিন জনের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ (আইনি নোটিশ) পাঠানো হয়। নোটিশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের সব কার্যক্রম বন্ধ করে তা জানাতেও বলা হয়। অন্যথায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা নোটিশে উল্লেখ করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার প্রতি পাঠানো নোটিশে স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইন-২০০৯-এর তিনটি ধারা বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠান না করতে বলা হয়।
গতকাল মনজিল মোরশেদ সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচন কমিশনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কোনো জবাব না পাওয়ায় নির্বাচনের পরবর্তী কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চেয়ে রিট করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া আইনের আওতায় না এনে যেভাবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, তার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই রিট আবেদন করা হয়েছে এবং রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের পরবর্তী কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, আইনটির ধারা ২৭ অনুসারে নতুন কোনো সিটি করপোরেশন হলে সীমানা নির্ধারণকারী কর্মকর্তার সুনির্দিষ্ট ওয়ার্ডের বিষয়ে সুপারিশ করতে হবে এবং করপোরেশনকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিভক্ত করতে হবে।
ওই ওয়ার্ডের সংখ্যা গেজেট জারির মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। ধারা ২৮ অনুসারে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে গেজেট জারির মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। সীমানা নির্ধারণের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নতুনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং ওয়ার্ডের বিভাগ ও সংখ্যা নির্ধারণ, স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইন-২০০৯-এর ২৭ ও ২৮ ধারা বাস্তবায়ন না করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সুযোগ নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।